![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নৌকোটি যখন দুলছিল তখন সবাই আনন্দে হই চই করছিল। নৌকার নড়াচড়া আর হেলা-দোলার মাঝে বিরাট আনন্দ খুঁজে পেলো তারা। পঁয়ত্রিশ জন কিশোরকে নিয়ে নৌকোটি তরতর করে এগিয়ে চলেছে চিনাদী বিলের বুকে। তারা বনভোজন করবে নেীকায় চড়ে। প্যাকেট খাবার নিয়ে হই-হুল্লোড় করে নেীকা ভ্রমণে বেরিয়েছে কিশোরেরা। বর্ষার জলে পরিপূর্ণ বিলের বিস্তীর্ণ পানিতে নৌকোতে ছুটে চলার আনন্দই আলাদা। ছেলেরা আনন্দে চিৎকার করে নৌকোতে লাফালাফি করতে লাগল।
তাদের আনন্দ মুহূর্তে কান্নায় পরিণত হলো যখন নৌকোটি একদিকে কাৎ হয়ে গেল।
নৌকোটি তলিয়ে যাচ্ছে। কিশোররা যে যার মতো লাফিয়ে পড়ে সাঁতরে পাড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে অভিভাকরা তড়িঘড়ি করে কোন্দা কোষা যে যা হাতের কাছে পেয়েছে তাই নিয়ে ছুটে গেছে নৌকোটির দিকে। ততক্ষণে সব শেষ। নৌকোটি পানিতে তলিয়ে গেছে। কিশোরের দল বিলের পূর্ব পাড়ে গিয়ে উঠে একজন আরেকজনকে খোঁজাখুঁজি করতে লাগল।
সবাই বাড়ি ফিরে গেল। কিন্তু একজনের মাইনদ্দিনের সন্ধান পাওয়া গেলো না। সে সাঁতার জানে না। অভিভাবক ও পাড়ার ছোট বড় সবাই সারা রাত তন্ন তন্ন করে খুঁজলো। কোথাও পাওয়া গেলোনা তাকে।
পরের দিন ভোরে একটি লাশ ভেসে ওঠেছে। মাইনদ্দিনের লাশ। চিনাদী বিলের নিস্তব্দ জলে মাইনদ্দিনের সলিল সমাধী হয়ে গেলো।
দুই.
ছেলে হারনোর শোকে মা দিশেহারা। বাবাও শোকে কাতর। কিন্তু এই শোকের ভেতরে তার মাথায় একটি চমৎকার আইডিয়া খেলা করে গেলো। সাঁতার না জানার কারণে তার ছেলের অকাল মৃত্যু হয়েছে। যারা সাঁতার জানে তারা নদীর অথই পানি কেটে পাড়ে উঠতে পেরেছে। সে আর কারো ছেলেকে এভাবে অথই পানিতে হারিয়ে যেতে দেবে নাÑএই তার পণ।
তিন.
মাইনদ্দিনের বাবা সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলে ফেললেন। ছেলেকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য নাম দিলেন ”মাইনদ্দিন সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।”
বিলপাড়ের মানুষ এমনিতেই সাঁতার জানে। কিন্তু সেই সাঁতার জানার জ্ঞান কোন নিয়মসিদ্ধ জ্ঞান নয়। গভীর পানিতে কীভাবে দীর্ঘ সময় ভেসে থাকা যায়, স্রোতের মধ্যে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হয়। লঞ্চ বা নৌকা ডুবে গেলে কীভাবে সাঁতকে কুলে উঠতে হয়। পানিতে তলিয়ে গেলে কীভাবে দীর্ঘসময় শ্বাস ধরে রাখা যায়, সাঁতারের জন্য শারীরিক যোগ্যতা অর্জনের জন্য শরীরচর্চা ইত্যাকার নানান কৌশল আর বিষয়-আশয় আছে সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে।
চার.
মাইনদ্দিনের বাবা এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখার ব্যাপারে সচেতনতার জন্য প্রচার অভিযান শুরু করে দিলেন। শুধু মুখে বলে কয়ে নয়। লিফলেট বিতরণ, সেমিনার করে তিনি রীতিমত হই চই ফেলে দিয়েছেন এলাকায়। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে যে সাঁতার শিখতে হবে এ বিষয়ে তার একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য আছে। সন্তানহারা পিতার এ বক্তব্য মানুষের হৃদয় ষ্পর্শ করে।
অন্য দশটি খেলার মতোই এটিও একটি খেলা নয়। সাঁতার উত্তম ব্যায়াম আর নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষের জীবন রক্ষারও খেলা এটি। সাঁতার শেখার জন্য দূরদুরান্ত থেকে শিশু-কিশোররা ছুটে আসে মাইনদ্দিন সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাঁতার শেখার জন্য। এখানে আছে পেশাদার সাঁতার প্রশিক্ষক। দেখতে দেখতে মাইনদ্দিন সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র একটি বিনোদন ও আকর্ষণীয় সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রূপ নিল।
অভিভাবকেরা তাদের ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে চলে আসেন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। শিশুরা চিনাদী বিলের নিস্তব্দ স্বচ্ছ পানিতে যখন সাঁতার কাটে তখন তাদের পিতামাতারা খুব আনন্দ পায় এবং স্বস্তিবোধ করে। চিনাদী বিল এখন আর নিস্তব্দ বিল নয়। শিশু-কিশোরদের হাত ও পায়ের তাড়নে প্রতিনিয়ত ঢেউখেলে যায় পানিতে আর কুলে কুলে চুমু খায় ঢেউগুলো। এভাবে এলাকার শত শত শিশু-কিশোর সাঁতার শিখে বিভিন্ন স্থানে প্রতিযোগিতায় পুরষ্কার নিয়ে আসে। গর্বে বুক ভরে যায় মাইনদ্দিনের বাবা-মার। তাঁরা এই সব শিশু-কিশোরদের মাঝে খুঁজে পান তার হারিয়ে যাওয়া মাইনদ্দিনকে।
পাঁচ.
গেলো ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে এলাকায় মহৎ কাজের স্বীকুতি স্বরূপ একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সেরা পুরষ্কার পেলো ”মাইনদ্দিন সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।”
সন্তানহারা মাইনদ্দিনের মা ও বাবা পুরষ্কার নিয়ে আনন্দ অশ্রু মুছতে মুছতে মহাগৌরবে বাড়ি ফিরলেন।
ছবি: নেট থেকে সংগৃহীত
১৫ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫২
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: তাড়াতাড়ি সাঁতার শিখুন। পরিসংখ্যান আপনার কাছেই আছে।
২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১০
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সাঁতার সবার জন্য খুবই প্রয়োজন।
১৫ ই নভেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৫২
বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।
আমার প্রীতি নিন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই নভেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: সাঁতার শেখা জরুরী।
আমি সাঁতার পারি না। নি যে ভয় লাগে নদী পথে।
প্রতি বছর বহু লোকের মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে।