নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেকুব কি গাছে ধরে?

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:১১

বেকুব কাহিনী এক:
২/৩ দিন আগে এক পুলিশ ভদ্রলোক একটি ডুবন্ত বাচ্চাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাচান। ভার্চুয়াল জগতে এই নিয়ে ব্যপক লেখালেখি। তার ঘটনায় আমার আরেকটা কাহিনী মনে পড়ে গেল। একবার এক সরল ভদ্রলোক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ দেখেন একজন মহিলা বর্ষার জলে ডোবা রাস্তায় ম্যানহোলে পড়ে কোমর পর্যন্ত নোংরা নিয়ে পা ভেঙে পড়ে আছেন। ভদ্র (বা অভদ্র) নারীর স্বাস্থ্য মাশাল্লা। ওনার স্বামী বেচারা আবার অতিকায় কৃশ। বউকে দু’হাতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছেন না। দর্শকরা নানান মন্তব্য করলেও কেউ সাহায্য করতে এগোচ্ছে না। আমাদের সজ্জন বেকুব ভদ্রলোকের মানবতাবোধ (কিঞ্চিত বাঙালীত্ববোধও) চাগিয়ে উঠল। তিনি ছুটে গিয়ে ভদ্রমহিলাকে পাজাকোলা করে তুলে দৌড়ে হাসপাতাল নিয়ে গেলেন। ভদ্রমহিলার স্বামী এতক্ষণ কথাবার্তা বলেননি। তবে এইবার তিনি তার পৌরুষ নিয়ে স্বমুর্তিতে আাবির্ভুত হলেন। আমাদের সরল ভদ্রলোক ভেবেছিলেন তিনি উপঢৌকন না হোক স্বামী ভদ্রলোকের কাছ থেকে একটা বিরাট ধন্যবাদ অন্তত পাবেন। কিন্তু গল্প এত সোজা হলেতো আমি এই গপ্পটা ফেঁদে বসতে পারতাম না। স্বামী সাহেব অগ্নিমুর্তি ধারন করে সরলকে নিয়ে পড়লেন। “আপনার এত সাহস? পরের বউয়ের গায়ে হাত? তোমারে কে কইছে আমার বউরে হাসপাতাল নিতে? মেয়ে মানুষ দেখলে আর হুশ থাকে না তাই না?” ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। দর্শকরাও কম যায় না। “শালা লুচ্চা..........টেংরী ভাইঙা দেওয়া দরকার” ইত্যাদি। আমি সেদিন বেকুব হইলাম।

বেকুব কাহিনী দুই:
ঢাকার রাস্তা। ব্যস্ত দুপুর। জ্যাম, ধুলা, চিল্লাচিল্লি, ট্রাফিক, রোদ-সবমিলে অস্থির সময়। জনৈক মহিলা বাসের জন্য ঘন্টাখানিক দাড়িয়ে আছেন। দু’একটা যা আসে তাও মানুষে ঠাসা। অনেকক্ষণ পর একটা বাস আসল। তিনি দৌড়ে গেলেন। তার প্রতিযোগী আরো পঞ্চাশজন। ছোট্ট দরজা দিয়ে বাসে উঠতে যুদ্ধ শুরু হল সবার মধ্যে। চাপাচাপিতে ভদ্রমহিলা হঠাৎ পা ফসকে পড়ে যাচ্ছিলেন। আল্লাহর দুনিয়াতে কখনো পরোপকারীর অভাব হয়না। মাত্র শহরে আসা একজন ছিলেন সেই ভীড়ে। তিনি হাত বাড়িয়ে মহিলা ধরে ফেললেন। টেনে তাকে বাসে তুললেন। তার দিকে তাকিয়ে একটা বোকা বোকা অমায়িক হাসি দিলেন সরল পরোপকারী। ভাবলেন তাকে ফোন নাম্বার না হলেও লম্বা একটা হাসি তো ফেরত দেবেনই মহিলা। কিন্তু ওই যে? দুনিয়াটা গোল। মহিলা আমাদের পরোপকারীকে লাগালেন এক রাম ধমক। “মাত্র আসছ শহরে? জানো না জানো না একজন ভদ্রমহিলাকে কিভাবে সম্মান করতে হয়? চান্স পাইলেই গায়ে হাত দেয়ার তাল তাই না? বাড়িতে মা-বোন নাই?” ইত্যাদি ইত্যাদি। বেচারা আবার বেকুব।

বেকুব কাহিনী তিন:
আমার পরিচীত এক রিক্সাওয়ালা। থাকেন কল্যানপুর। সকালবেলা রিক্সা নিয়ে বের হয়েছেন। ভাগ্য ভাল অল্পসময়ের মধ্যেই খ্যাপ পেয়ে গেলেন তাও আবার এক সুদর্শনা। দামী থ্রি পিসে তাকে লাগছে দারুন। সুনয়না রিক্সায় করে যাবেন ধানমন্ডি লেক। ভাড়া ঠিক করে রিক্সায় চেপে বসেন তিনি। “আপা ওড়না সাবধানে রাখবেন” রিক্সাওয়ালা তাকে সতর্ক করে। “আপনার এতদিকে নজর কেন? রিক্সা চালান। আমাকে উপদেশ দিতে হবে না।” রিক্সা যখন শ্যামলী ক্রস করছে হঠাৎ পথচারীদের আহা উহু চিৎকার এই গেল গেল, ধর ধর, আহারে, ইস-ইত্যাদি। কি হল? সুনয়নার ওড়না চাকায় পেচিযে তিনি ধরনীর বুকে পপাত ধরনী তল। নিজে ওঠার ক্ষমতা নে্ই। সবাই ধরাধরি করে তাকে তোলে। রিক্সাওলা তার দামী ওড়না টানাটানি করে কোনোমতে চাকা হতে ছাড়াতে পাড়লেও কিঞ্চিত ছিড়ে যায়। ব্যাস আর যায় কোথায়? ওড়নার শোকে সুনয়নার সেকি গোস্যা। “ইস দিলাতো শেষ করে? তোমারে কে কইছে ওড়না ছাড়াইতে? আমি পারতাম না? মাতবরী করলা কেন? ছোটলোকে কি করে বুঝবে এইটার দাম” ইত্যাদি ইত্যাদি। সেইদিনও বেচারা বেকুব হয়।

বেকুব কাহিনী চার:
ভাবছেন আমি নারী বিদ্বেষী পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিনিধি? না পাগলা। তা ভাবলে আপনিও বেকুব হবেন। এই দেখেন, পুরুষদের নিয়ে এইবার একটা কাহিনী বলব তবে এটা ধার করা। আমি আমার মতো করে বলছি। পাড়ার মোড়ে একটা বাড়িতে আগুন লাগছে। মানুষজন দৌড়াদৌড়ি। ফায়ার সার্ভিস এসে পড়েছে। তাদের সাইরেনের বিকট শব্দে মানুষজন সচকিত। তারা ভীড় করা লোকজনকে সরিয়ে দিচ্ছে ঘটনাস্থল থেকে। আমাদের চিরাচরিত একজন পরোপকারী ঘটনাস্থলে এসে পড়লেন। তার ঔচিত্যবোধ, মানবিকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। তিনি আলি আলি বলে আগুনের মধ্যে ঢুকে পড়লেন। তারপর একে একে ৪ জনকে আগুন হতে বের করে আনলেন মহাবিক্রমের সাথে। মানুষতো তার বিরত্বে সাধু সাধু করতে লাগল। ঘটনাস্থলে ছিল ফায়ার সার্ভিসের লোকদের বস। তিনি কিন্তু খুশি হননি। তিনি আমাদের পরোপকারীকে মহাক্রোধে কাছে ডাকলেন। আমাদের পরোপকারী ভাবলেন হয়তো এবার তাকে তিনি পুরষ্কার দেবেন বা এরকম কিছু। কিন্তু তার বদলে বস ভদ্রলোক বেচারাকে এক রাম থাপ্পর লাগালেন। কি ব্যপার? আসলে ঘটনা হল পরোপকারী অতি উৎসাহে আগুনের মধ্যে ঢুকে ফায়ারসার্ভিসের কর্মী যারা ঘরে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার করছিল তাদেরকে ধরে ধরে বাইরে নিয়ে এসেছে। পাঠক এবার কে বেকুব হবে?

বেকুব কাহিনী পাঁচ:
এক চোর গেছে চুরি করতে। এক বেটার মাটির ঘরে সিঁদি কেটে ঢুকে পড়ল মাঝ রাতে। ঘর মালিকের গলার কাছে ছুড়ি ধরে একে একে ঘটি, বাটি, মালশা, বিছনা পত্তর, টাকা-পয়সা, হাড়ি-পাতিল, কাপড়, গামছা সব গাট্টি বেধে এরপর শোয়ার চৌকিখানায় যখন হাত দিল তখন ঘরওলা মৃদু আপত্তি করল। “এই হারামজাদা চুপ” এক রামধমকে কাজ হয়ে যায়। অতৎপর চোর বাবাজি মালামালসমেত তার নিজগৃহে এল। সবকিছু ঘরে রেখে সে পুকুরে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে চুরি করা গামছায় মুখ মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকল। হঠাৎ তার চোখ গেল চৌকির উপর যেখানা মাত্রই তিনি বাগিয়ে এনেছেন। সেখানে আর একজন বসে আছেন। ভাল করে নজর করে দেখলেন এতো সেই বেটা যার ঘরে মাত্র চুরি সেরে এসেছেন। “এই তুই এখানে কেন? কি মতলব তোর” চোর শুধায় গৃহকর্তাকে। “ভাই,আপনেতো সবই লইয়াইছেন মায় ঘুমানের চকিটাও। তাই আমি ভাবলাম, আমি আর আমার ঘরে থাকুম কেন? আর থাইকা করুমই বা কি? তাই আমার সবই যেহেতু এইহানে তাই আমিও চইলা আইলাম।” এইবার বেকুব আমাদের চোর বেচারা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আমরা আমজনতাই বা কম বেকুব বনছি বলুন!!!

রাজনীতির ঘরে বেকুব! বিশ্বাসের ঘরে বেকুব! সেবায়, চাকুরীতে, প্রশাসনে, বিনোদনে, খাদ্য গ্রহনে মায় ভালবাসায় পর্যন্ত নিত্য বেকুবির ফাদে হাসফাস!!!

আপনার বেকবু কাহিনী আমাদের দৈন্যতাকেই ফুটিয়ে তুলেছে- যে দৈন্যতা আমাদের আষ্টে পৃষ্টে পিছু টানছে!!!!!

+++

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৯

বেচারা বলেছেন: পাড়া মহল্লায়, গলিতে অলিতে, পার্কে সিনেমায় বেকুবেরা পিছু ছাড়ে না। এক মিষ্টির দোকানে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভ্যাট চালান চাইছিলাম। দোকানদারও বেকুব। আমার দিকে তাকিয়ে এমন একটা হাসি দিল যাতে আমিও বেকুব।

২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৩

গোধুলী রঙ বলেছেন: এই সব কারনে, উপকারগ্রহীতার উপকারটা নেগেটিভলি নেওয়া, কিছু ক্ষেত্রে পাব্লিকের গন ধোলাই এবং কিছু ক্ষেত্রে অতি আবশ্যক পুলিশের হয়রানি, বাঙালীর পরপোকারের মানসিকতা প্রায় শুন্যের কোটায় নেমে গেছে। এখন কেউ মাথা ফেটে রাস্তায় পড়ে থাকলেও ধরে হাসপাতালে নেয় না, সবাই চারপাশে গোল হয়ে দেখে আর মোবাইলে ফডু তোলে। এটা আমাদের ভালো জাতী হিসেবে এবং অবশ্যই মানুষ হিসেবে গন্য হওয়া থেকে পিছিয়ে দিচ্ছে।

ধন্যবাদ আমাদের জাতীয় অধঃপতনের একটা দিক সুন্দর ভাবে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার জন্য। কিন্তু কিই বা আর করতাম।

৩| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৬

বেচারা বলেছেন: মাফ করবেন এত এত নেগেটিভ পোষ্টের জন্য। কিন্তু আসলেই কী করি বলুন? জানি এই দেশ ধান্দাবাজে ভরে গেছে। তাই বলে একজন যদি স্রোতের বিপরীতে চলেন তাকেও এখন বেকুবের মতো ধোলাই করা হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.