নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাইফ ইজ, এ্যাজ ইউ সি ইট

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:৪২

আমার শৈশবে আমার স্বল্পশিক্ষিত তবে স্বশিক্ষিত মা আমাদের তার অনেক জ্ঞানগর্ভ কথার মধ্যে একটা কথা প্রায়ই বলতেন “নিয়ত গুনে বরকত”। নাবালক আমি সেকথার মানে বুঝতাম না। তবে বড় হয়ে যখন বুঝতে শিখলাম তখন এই কথাটিই আমার জীবন চলার দর্শন নিজের মতো খুঁজে নিতে সাহায্য করেছে অনেকখানি। তবে আমি আমার জীবনের গল্পের ঝাঁপি খুলে বসতে এ গল্পটি ফেঁদে বসিনি। স্বল্পশিক্ষা ও ক্ষুদ্র মধ্যবিত্ত জীবনে বেশকিছু সমাধান না হওয়া ধাঁধা এবং তার নিজস্ব ব্যাখ্যা মাথার মধ্যে ঘুরপাঁক খাচ্ছিল অনেকদিন ধরে। তাই আজ রাতে মনে হল লিখে ফেলি। আজ রাত দু’টোর সময় তাই এই লেখাটা লিখছি। তবে যারা খুব সিরিয়াস ধরনের লেখা বা ত্বত্ত্ব কথা ভাবছেন তারা হতাশ হবেন। আমি ভাই খুব ফিলসফিকাল ভাবনার মানুষ নই। (সতর্কতা। এই লেখাটি একজন ইনসোমনিয়ায় ভোগা কোষ্টকাঠিন্য রোগীর রাত জেগে লেখা অখাদ্য কুখাদ্য। এটাকে এত গুরুত্ব না দেয়াই ভাল।)

”এন্টারপ্রাইজ”-হ্যা এই নামটাই ব্যবহার করছি। আপনি যদি সাম্প্রতিককালে একটা ব্যাবসা ফেদে বসার ধান্দায় থাকেন তবে কথাগুলো আপনাকে বলছি। এন্টারপ্রাইজ, এর মালিক ও কর্মী সবার মধ্যেই এক ধরনের হতাশা কাজ করে-চাওয়া ও পাওয়ার ব্যাবধানের। মালিক চান বেশী বেশী লাভ। কর্মী চান বেশী বেশী প্রাপ্তি-আর্থিক কিংবা আত্মিক। কিন্তু এই চাওয়া পাওয়ার ভার্চুয়াল ব্যাবধানটা বর্তমান কর্পোরেট জগতে এতটাই বেশী যে বিরাট একটা অংশের মানুষের মধ্যে সুক্ষাতিসুক্ষ্ একটা মনোজাগতিক ভাঙনের স্পষ্ট সুর বাঁজতে দেখা যায়। একটি এন্টারপ্রাইজ সৃষ্টির পেছনের কাহিনী, তার সৃষ্টি, অগ্রযাত্রা চলমান রাখার জন্য যাত্রার শুরুতেই কিছু মৌলিক প্রশ্নের উত্তর যদি একজন উদ্যোক্তা জেনেবুঝে তবে তার প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন তবে সেটা তার ও তার কর্মীদের জন্য ইতিবাচক সুফল বয়ে আনতে সক্ষম। এতে তিনি ও তার কর্মীবাহিনীর মধ্যে শুরুতেই আপোষে একটা সীমারেখা টানা হয়ে যায় ইচ্ছা, সামর্থ ও প্রাপ্তির। আমি নিয়ত গুনে বরকত-কথাটা কেন বলেছিলাম আশা করি তার উত্তর লেখার মধ্যে পাবেন। আমি এই প্রশ্নগুলো ও তার সম্ভাব্য বিকল্পগুলো নিয়ে একটা এনালিসিস সারাক্ষন মনের মধ্যে ছক্কাগুটির মতো চালতে থাকি। আপনাদের জন্য সেই ভাবনাটাই শেয়ার করছি।

• আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হন (স্যরি, বাংলাদেশের মানুষ বোধহয় মালিক ভাবতে বা ডাকতে বেশী পছন্দ করেন) তবে আপনি আপনার কর্মীদের কী চোখে দেখেন? তারা সবাই আপনার দাসানুদাস? নাকি তারা আপনার উন্নয়ন বা মানি মেকিং এর পার্টনার? আপনি কী মনে করেন তারা আপনার প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম সহমালিক? আপনি কী চান তারাও আপনার কোম্পানিটিকে ওন করুন নাকি ভাববেন তারা শুধু টাকার প্রয়োজনে এখানে কাজ করুক? খেল খতম পয়সা হজম।
• আপনি নিজেকে কোন চেয়ারটায় বসাতে চান? টিপিক্যাল “মালিক” ”স্যার” নাকি সবার সহকর্মী এবং কর্মীদের কমান্ডার ইন চীফ? তবে ইতিহাস বলে সেনাপতি সবসময় সেনাদের মধ্যে থেকেই হওয়া ভাল-মানে সেনাপতি হোন। কোতোয়াল নয়।
• নিজেকে কোন ইমেজে দেখতে চান-মালিক? বিনিয়োগকারী? নাকি একজন উদ্যোক্তা? আপনি কি ফিউডাল বা সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ঝান্ডাধারী নাকি সাম্যবাদী? নিজেই জুতো সেলাই থেকে চন্ডিপাঠ সব করতে চান নাকি কর্মীদের স্বাধীনতা দিয়ে তাদের মতামতকে মূল্যায়ন করতে চান? তবে হ্যা দ্বিতীয়টা অ্যাপ্লাই করতে হলে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে, আপনি যে কর্মীদের হায়ার করেছেন তার ড্যাম স্মার্ট। তা না নিশ্চিত না করে যদি তাদের বুদ্ধিমতো ব্যবসা চালান তবে অচিরেই কাশিবাস নিশ্চিত।
• আপনার বিচারে আপনার প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে দামী সম্পত্তিটা কী? পুঁজি,প্রোপার্টি, টার্নওভার রেট? নাকি আপনার স্মার্ট একটা কর্মীবাহিনি? তাদের যেকোনো কিছু ভাবতে পারেন। তবে যেটাই ভাবেন সেটা পরিষ্কার করুন। তাতে অন্তত তারা নিজেদের পজিশানটা সম্পর্কে একটা পষ্ট ধারনা পাবে। ফলে অতি দুরাশায় গাছেও উঠবে না আবার অতি হতাশায় কৃমিনাশকও খাবে না। আমি যতটা জানি দুনিয়ার তাবৎ বিশাল প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বিতীয় অপশানটা চয়েস করেছে।
• আপনার মূল উদ্দেশ্যটা কী-টাকা বানানো? হ্যা, সেটা হতেই পারে এবং তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তা নাহলে বউয়ের গয়না বেঁচে নিশ্চই ব্যবসা ফেঁদে বসতেন না। তাই মানি, মানি এ্যান্ড মানি। টাকা ধর্ম, টাকাই স্বর্গ। আবার হ্যা, এমনটাও ভাবতে পারেন যে, না, আপনি সমাজ ও জাতির উন্নয়ন করতে এসেছেন। সেটা করতে গিয়ে ব্যবসা লাটে উঠুক, কিছু যায় আসে না। আতেল ভাবছেন আমায়? তেমনটা ভাবলে তৃতীয়টা ভাবুন। আপনি ব্যবসা দিয়েছেন কারন আপনি একটা অত্যন্ত লাভজনক প্রতিষ্ঠান চান যেটা নৈতিকতার সাথে পয়সা বানাবে আবার একই সাথে সবকুল রক্ষা করে সমাজের, মানুষের, দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে। আম ছালা দু’টো রক্ষা পাবে। আখেরে আপনি সমাজ সেবায় নোবেলও পেতে পারেন।
• আপনি কি একটি রক্ষণশীল নাকি প্রগতিশীল ও ডায়নামিক প্রতিষ্ঠান গড়তে চান? আপনি কি আপনার ব্যবসার দানবিক সম্প্রসারন চান যেখানে রিস্ক, চ্যালেঞ্জ, ভিশনারী পদক্ষেপ নিতে হবে? লাগলে ছক্কা না লাগলে মক্কা মানে প্যাভিলিয়ন। নাকি একটা অতি সতর্ক ইনিংস খেলবেন সিঙ্গল বা বড়জোর ডাবলস নিতে? তাতে কচ্ছপের মতো সাফল্য পেতে পারেন। স্লো বাট স্টেডি। তবে বাকিরা যদি আপনার নীতির উল্টোটা নেয় তবে আপনার খবর আছে। মনে রাখবেন সাফল্যের টিকিট সীমিত। সেখানে কোটা সংরক্ষিত নেই যে ১০০ বছর পরেও আপনি পাবেন।

• সততা ভার্সেস দূর্নীতি-কী চোখে আপনি এ দু’য়ের সীমারেখা টানবেন? আপনার ৩টি অপশান আছে-এক-আপনি দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করলেন। এর বিরুদ্ধে আপনি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরন করতে পারেন। দুই-আপনি আপনার ব্যবসার একটা কাঙ্খিত প্রোফিট মার্জিন নির্ধারন করলেন এবং ঘোষনা দিলেন যে, সেটা নিশ্চিত হলেই আপনি খুশি। ব্যাস, বাকিটা যে যেভাবে পারে নিজের মতো গাঁই দুইয়ে বাড়িতে নিয়ে যাক, নিজের ভাগ্য গড়ে নিক। অবশ্যই আপনার অংশ ঠিক রেখে। তিন-না, আপনি এর কোনোটায় সন্তুষ্ট নন। তাই আপনি পুরো কোম্পানীতে এমন এক কেচকী সিস্টেম বানালেন যে পুরো সিস্টেমটা একটা ফিল্টারে পরিনত হল। দুর্নীতি হতে পারলেও তা সিস্টেমে ইদুর ধরার মতো ধরা পড়ার ব্যবস্থাও আছে। তাই চোরেরা চুরির আগে দশবার ভাবে। তাতে দুর্নীতে একটা অপটিমাম লেভেলে থাকবে। এমনটাও আপনি ভাবতে পারেন।
• আপনার প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা বা এথিকসের ভিত্তি কী? সেটা কি ব্যক্তির পজিশান নির্ভর নাকি সত্য নির্ভর? “মাইট ইজ রাইট” নাকি “সত্য চিরজীবি হোক”-কোনটা আপনার কর্মীদের বিশ্বাস করাতে চাইবেন? কেষ্টবেটা এক কাপ চা বেশী খেলেও কল্লা কাটা পড়বে বাট কর্তারা পুকুরটা বাসায় নিয়ে গেলেও আপনি চোখে টিনের চশমা দিয়ে রাখবেন। নিজেই ভেবে নির্ধারন করুন কোনটা করতে চান। আপনার প্রতিষ্ঠান এটা। সবকিছুই করার স্বাধীনতা আপনার আছে। তবে যাই করতে চান, দয়া করে তা আগেই নির্ধারন ও জানান দিন। তাহলে বাদবাকি লোকেরা অন্তত বেকুবের মতো কি করতে হবে ভেবে ভেবে খাবি খাবে না।
• আপনি কি এমন একটা প্রতিষ্ঠানের মালিক হতে চান যেখানে কাজ-লক্ষ্য অর্জন-কোয়ালিটিই প্রায়োরিটাইজড? কর্মীরা কখন আসেন কখন যান আপনি তা নিয়ে মাথার চুল পাঁকান না। (যাহ! এমন আবার হয় নাকি? জ্বি হয়। গুগলের অফিস সিস্টেমে ঢু মারুন)। আপনি বলতে পারেন ওসব গুগলে হয়, বাংলাদেশে নয়। ওকে, তাহলে গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশে হয়না। আপনাকে বিড়ি কোম্পানি নিয়েই তুষ্ট থাকতে হবে। নাকি আপনি ঘড়ি বাবুর ভক্ত। কর্মীরা ঘড়ি মেনে অফিসে ঢুকবে, ঘন্টা বাজলে বাড়ি রওনা হবে? মাঝের সময়ে কিছু করুক বা না করুক ধরে নেয়া হবে তিনি কাজ করেছেন যেহেতু ৮-১০ ঘন্টা চেয়ারেই ছিলেন। অফিসে থাকা মানেই কাজ।
• কর্মীদের নিজস্ব আইডিয়ার ব্যবহারকে প্রোমোট করতে চান নাকি আপনার ফতোয়া জারি করে সবকিছু চালাতে চান? নাকি কর্মীদের মুক্ত বিহঙ্গ করে দিতে চান যাতে কিছুতেই খাঁচায় না আসে?

এই মৌলিক প্রশ্নগুলোর উত্তর রেডি করে এবং তা আপনার সহযোগী ও সহকর্মীদের কর্ণকুহরে স্পষ্টভাবে প্রবেশ করিয়ে যদি আপনি বিজনেসটা শুরু করেন তবে তা আপনার ব্লাড প্রেশারকেও ভাল রেখে ব্যবসা করতে দেবে আর কর্মীদের কলিজাটাকেও প্রতিদিন হিংসা, ইর্ষা, ক্ষোভ, হতাশা, ক্রোধে পুড়ে কয়লা হওয়া থেকে রক্ষা করবে। কেউই কাল্পনিক মাকাল ফলের স্বপ্ন কিংবা লৌহ গুর্জের গুতার আতঙ্কে ভুগবে না। তবে যেটা ভাববেন জেনে রাখবেন ফলাফল তেমনটিই হবে। আমি কোনো পাকনা বুদ্ধি দিচ্ছি না। কতগুলো অলটারনেটিভ বললাম। আপনার পয়সা। আপনি আপনার মনমতো ভেবে নিন। তবে হ্যা, যেকোনো জিনিসের পজিটিভ ও নেগেটিভ-বোথ টাইপ ইমপ্যাক্ট থাকে। পজিটিভ রেজাল্ট পেয়ে যেমন আকর্ণ বিস্তৃত হাসি দেবেন তেমনি তার সাথে নেগেটিভ ইমপ্যাক্টটা হজম করার ইচ্ছেটুকুও জমিয়ে রাখবেন। সবই আপনার নিজ ভাবনার ওপর নির্ভর করে। Life is as you see it। কারন ওইযে বলেছিলাম-নিয়ত গুনে বরকত।

(পুনশ্চ: এই লেখাটি একজন ইনসোমনিয়ায় ভোগা কোষ্টকাঠিন্য রোগীর রাত জেগে লেখা অখাদ্য কুখাদ্য। এটাকে এত গুরুত্ব না দেয়াই ভাল।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৪

জনম দাসী বলেছেন: গুরুত্ব দিতে নিষেধ করেছেন তাই দিলাম না...তবে রোগ থেকে মুক্তি পান...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.