নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রি-পেইড অনুভুতির স্বাদ নিতে কেমন লাগে?

০৪ ঠা জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮

ভার্চুয়াল রিয়ালিটি নামক একটা বস্তুর নাম আমরা মাঝে মধ্যেই শুনি। আমি যেহেতু বিজ্ঞানের মানুষ নই তাই এটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে এই গল্প ফেঁদে বসব না। আমার মাথায় অনেকদিন ধরে একটা ক্রোধ কিলবিল করছিল। উগড়ে দেবার সময় পাচ্ছিলাম না। আবার যখন সময় পাই তখন ক্রোধের পোকাটা এমন ঘুম দেয় যে, বিষয়টা মনে থাকে না। আজ হঠাৎ কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে মনে পড়ে যাওয়ায় ভাবলাম এক্ষুনি লিখে ফেলব।

শুনেছি থাইল্যান্ডে নাকি প্রফেশনাল ছিচকাঁদুনে ভাড়া পাওয়া যায়। তারা দলবল নিয়ে এসে মৃতের জন্য কান্নাকাটি করে। বিনিময়ে মোটা অঙ্কের পয়সা নিয়ে যায়। মৃতের সন্তানেরা যদি মৃতের জন্য কান্নাকাটির সময় না পায় কিংবা কান্নাকাটির ঘটনাটাকে আরো নাটকীয় করতে চায় তাহলে এই ভাড়াটিয়া কাঁদুনেরা তাদের হয়ে কেঁদে দেয় ঘন্টাচুক্তি। আধুনিকতার চরম পরাকাষ্ঠা আরকি। ভাড়া করা কাঁদুনিদের আবার গ্রেডিং থাকে। কে কতটা দক্ষতা ও নাটকীয়ভাবে শোকের মাতম করতে পারে তার ওপরও তাদের পসার নির্ভর করে। বাবা-মা কিংবা নিকটজন মারা গেলে ছিঁদকাদুনে ভাড়ার লোক ঠিক কতটা শোকের সাথে কাঁদেন সেটাতো বলাই বাহুল্য। তবে স্বজন যারা এমন কাঁদুনে ভাড়া করেন তাদের জন্য বিষয়টা হল টাকার বিনিময়ে শোকের অনুভুতি কেনার নামান্তর। অর্থাৎ আমার কাঁদার টাইম নেই। তাই ১০০০ টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করলাম। তারা এসে আমাকে ১০০০ টাকার শোকমাতমের অনুভুতি সাপ্লাই করল। এরকম ভার্চয়াল অনুভুতি যদি ভবিষ্যতে ব্যপকহারে সমাজে আসে তবে কেমন হয়? সমাজে ও মানব সভ্যতার যে ভয়াবহ পরিবর্তন প্রতিদিন ঘটছে তাতে আজ থেকে ২৫ বছর পরে আমাদের জীবনযাপন ও সামাজিক রীতিনীতি কেমন হবে তার একটা ট্রায়াল দেখি তাহলে।

ধরে নিন ২৫ বছর পরে টেকনোলজিতে পৃথিবী এতটাই এ্যডভান্স হবে যে, প্রত্যেক মানুষ তার মাথার যে পাশে ব্রেন থাকে সেই পাশ দিয়ে খুলিতে সার্জারী করে ব্রেনের যে অংশে অনুভুতি ও চেতনা নামক অংশটি থাকে (যে অংশটিই মুলত মানুষকে মানুষ পরিচয় দেবার জন্য দায়ী) সেখানে রিক্সার চাকায় হাওয়া দেবার যেমন একটা ছোট বলটিউব ও নিপল থাকে সেরকম করে অনুভুতি পাম্প করার একটা টিউব লাগিয়ে নিল। অনেকটা প্রেট্রোল পাম্পে নজেল দিয়ে গাড়ির ফুয়েল ট্যাংকে প্রেট্রোল ঢালার মতো। অথবা এমনও হতে পারে ব্রেনের সাইড দিয়ে একটা সিলিকন চীপ থাকবে যেটা ব্লুটুথ বা ইনফ্রারেড কিংবা অন্যকোনো ম্যাগনেটিক সিগনালে কমান্ড নিতে বা পাঠাতে পারবে। সেটা হবে ব্রেনের ইনপুট পয়েন্ট। ওই চিপের কাছাকাছি দিয়ে সুয়াইপ কার্ড বা পেনড্রাইভ বা অন্য যেকোনো ডিভাইস দিয়ে ব্রেনে সরাসরি অনুভুতি ইনপুট করা হবে। মানুষের হাতে এখন টাকা তোলার বা পণ্য কেনার যে ক্রেডিট কার্ড থাকে সেরকম মানুষেরা বিভিন্ন অনুভুতি বিক্রেতার কাছ হতে প্রিপেইড অনুভুতি কার্ড কিনবেন বা ক্রেডিট কার্ড দিয়েও দোকান হতে অনুভুতি কেনা যাবে। এই এখন যেমন আমরা দোকানে গিয়ে এমবি কার্ড কিনি বা মোবাইলে ফ্লেক্সি কিনি। তো তখন মানুষ যেকোনো স্থান হতে তার কার্ড সোয়াইপ করে বা দোকানদারকে ১০০ টাকা দিলে দোকানদার বিকাশ করার মতো করে তাকে কাঙ্খিত অনুভুতি ডেলিভারী দেবে ফ্লেক্সি করে সরাসরি ব্রেনে। তো তখন আমাদের প্রাত্যহিক মানব জীবন ও সামাজিক কর্মকান্ড কেমন হবে? আসুন দেখি।

আমরা এখন যেমন বাজারে গিয়ে মাছ কিনি এবং মাছ কেনার একটা সুখ হৃদয়ে (আসলে ব্রেনে) অনুভব করি তখন আর কাদা ভরা বাজারে কষ্ট করে যেতে হবে না। প্রিপেইড অনুভুতি কার্ড চার্জ করে বা অনলাইনে অর্ডার করলেই আপনার ব্রেইনের চিপে নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে মাছ কেনার অনুভুতি চার্জ করে দেয়া হবে। ব্যস, আপনি ঘরে বসে মাছ কেনার অনুভুতি পাবেন মুহুর্তে।

বিভিন্ন টেলিভিশানের চ্যাঙরা সাংবাদিকরা এখন যেমন বাজার দর নিয়ে চোখ বড় বড় করে রিপোর্ট করেন তারা তখন জনতার ক্ষোভ জানাবেন এভাবে, “ক্রেতারা অভিযোগ করছেন কৃত্রিমভাবে অনুভুতি কার্ডের সংকট তৈরী করা হচ্ছে”। কিংবা ”অনলাইন বাজার ছেয়ে গেছে অসংখ্য ভুয়া অনুভুতি কার্ডে, ইলিশের দাম নেয়া হলেও ক্রেতারা ব্রেনে ইনপুট দিয়ে পাচ্ছেন ফার্মের মুরগীর ফিলিংস’, ক্রেতাদের সতর্কতার সাথে অনুভুতি কিনতে বলেছে ভার্চুয়াল অনুভুতি মন্ত্রনালয়”।

টেলিভিশানে মেয়েদের চামড়া সাদা করে শ্বেতকুষ্ঠর মতো করার ক্রীম আর বিক্রির বিজ্ঞাপন দেবে না। তার বদলে বিজ্ঞাপন হবে, “এসে গেল একনম্বর ফেয়ারনেস অনুভুতি ক্রীম। এটা বাজারের সেরা ফেয়ারনেস অনুভুতি অফার। আপনাকে মাত্র ২ সেকেন্ড সময়ে পূর্নাঙ্গ সাদার হবার সুখানুভুতিতে ভরিয়ে দেবে। হ্যাক হবার ভয় নেই। একদম অরিজিনাল হল্যান্ডের সাদা চামড়ার অনুভুতি। যাস্ট একটি ক্লিক। আপনি বেডরুমে শুয়েই পেতে পারেন।

ব্যাংকে আর টাকা জমানোর দরকার হবে না। যাস্ট টাকা নিয়ে রিচার্জ পয়েন্টে যান। ব্যাস কতটাকার অনুভুতি চান দোকানদারকে বলুন। তিনি আপনাকে মুহূর্তে কোটি কোটি টাকার গর্বিত তৃপ্তির অনুভুতি ব্রেনের ফুটো দিয়ে পাম্প করে দেবে। আপনি তখন গর্ব করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেবেন-আজকেই ৩ কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্সের অনুভুতি কিনলাম।

পয়লা বৈশাখ করতে মন চায় অথচ কড়া রোদ, ধুলা, ভীড়। চিন্তা নেই। ক্রেডিট কার্ডে অনলাইনে নববর্ষের বান্ডেল অফারে বাল্ক নববর্ষ অনুভুতি কিনুন পুরো পরিবারের জন্য। ব্যাস ঘরে এসি ছেড়ে হালকা শীতল হাওয়ায় সবাই মিলে নববর্ষ, মঙ্গল শোভাযাত্রা, রমনার বটমুল-এসবের কম্বো অনুভুতি ব্রেনে সোয়াইপ করে সবাই নববর্ষ অনুভুতি উপভোগ করুন যতক্ষণ চান।

গার্লফ্রেন্ড নেই বা ছিল কিন্তু ব্রেক আপ হয়েছে? নো চিন্তা। বাজারে এসেছে একনম্বর ডেটিং অনুভুতি পিল। এইচ আইভি ভাইরাস মুক্ত। একদম ভার্জিন পার্টনারের সাথে ডেট করার অনুভুতি দেবার গ্যারান্টি। হোম ডেলিভারীও দেয়া হবে। অর্ডার করুন। মুহুর্তে ডেলিভারীম্যান এসে আপনাকে ৫০০ টাকার ডেটিং কার্ড ডেলিভারী দিয়ে যাবে। কার্ডটি ঘষুন। গোপন কোড নাম্বার ব্রেনের চিপে ইনসার্ট করুন। তারপর ২ মিনিট অপেক্ষা করুন। দেখবেন পরবর্তী ২ ঘন্টা আপনি ফিল করবেন স্বর্গীয় রোমান্টিসিজম। কার্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও চিন্তা নেই। সাথে সাথে আবার ক্রেডিট কার্ডে রিচার্জ করতে পারবেন। চাইলে বন্ধুদেরও বিভিন্ন উৎসবে উপলক্ষে অনুভুতি গিফট করতে পারবেন।

ক্ষুধা লাগলে মানুষ তখন কষ্ট করে রান্না বা খাওয়ার ঝামেলায় যাবে না। মাথার টিউবের ছিপি খুলে ৮০ টাকার লাঞ্চ প্যাকেজের অনুভুতি ঢেলে দেবেন। মুহুর্তে ক্ষুধা উধাও। আপনি অনুভব করবেন আপনি রাজ্জাকের বিরিয়ানি খাচ্ছেন। সাথে শাহি বোরহানি। তবে হ্যা, অ্যসিডিটি হলে আবার আলাদা করে এন্টাসিড বড়ির অনুভুতি কিনতে হবে। তবে কোনো কোনো খাদ্য অনুভুতি বিক্রেতা তার বিক্রি বাড়াতে এটা ফাও দেবেন।

বাসাবাড়িতে তখন আর ফেরিওলারা কলা, মুলা, কচু, আলু ভ্যানে করে ফেরী করবে না। তারা তখন নানান রকম তরকারী বা খাদ্যদ্রব্যের অনুভুতিতে ঠাসা নানান রকম অনুভুতি চিপ বা কার্ড বা ফিলিংস বড়ি (মায়াবড়ি নয়) নিয়ে আসবে। খালাম্মারা তিনতলার উপর হতে তাদের টাকা ছুড়ে মারার বদলে তার ব্রেনের পাম্প টিউবের পাইপ ছেড়ে দেবেন কিংবা ব্রেনের অনুভুতি চিপের পিন নম্বর বলবেন। ফেরীওয়ালা সেই নাম্বারে নানান আনাজ তরকারীর ফিলিংস রিচার্জ করে দেবে। কোনো কোনো পাড়ায় বখাটেরা সেই গোপন পিন হ্যাক করতে ফেরীওলাদের ঘুষ দেবে। দরজীর কাছে তখন নায়িকাদের ব্লাউজের মাপ নয়, থাকবে তাদের ফিলিংস টিউবের সাইজ। বায়োমেট্রিক সার্ভার হতে তখন কেউ আর ফিঙারপ্রিন্ট হ্যাক হবে না। হ্যাক হবে অনুভুতি পিন।

বন্ধু-বান্ধব কেউ মরলে আর আপনাকে কষ্ট করে গরমের মধ্যে তার বাসায় দৌড়াতে হবে না। হাতে থাকা মোবাইলটা দিয়ে অনলাইন অ্যাকাউন্ট হতে পেমেন্ট দিয়ে অফিসেই ঘন্টাখানিক শোকের অনুভুতি রিচার্জ করে নিন। ব্যাস এরপর নিশ্চিন্তে অফিস করুন। আর দাফন কাফন? ওটারও কোনো ভার্চুয়াল অনুভুতি নিশ্চই বের হয়ে যাবে শিঘ্রই।

বাবা-মাকে দেখতে মনে চায় অথচ বৃদ্ধাশ্রমের গরম ঘিঞ্জি পরিবেশে গেলে আপনার বিরক্ত লাগে। চিন্তা কী? অনুভুতি ট্যাবলেট আছে না? টুক করে একটু শিশি থেকে বের করে খেয়ে নিন না? আপনাকে বাবা-মার আদর মাখা অনুভুতিতে বুঁদ রাখবে পরবর্তী একঘন্টা। ক্যারিয়ারও ঠিক থাকল, আপনার ঝামেলাও কমল। সন্তান হিসেবে দায়ীত্বও সারলেন। সত্যিই তো। বাপ-মা বৃদ্ধ হলে মাঝে মধ্যে তাদের জন্য একটু মন খারাপ করা ব্যতীত আপনার আর কিই বা করা উচিৎ?

এরকম হাজার হাজার লাখ লাখ অনুভুতি কেনা-বেচার জন্য তখন গড়ে উঠবে অনলাইন অনুভুতি শপ, অনুভুতি উন্নয়ন কেন্দ্র, অনুভুতি পর্যবেক্ষন সেন্টার, অনুভুতি কার্ড বিক্রেতা হকার। টকশোতে তখন অনুভুতির নানান শেপ, ধরন নিয়ে টকাটকি হবে। যেসব অনুভুতি বিক্রি কম যেমন দেশপ্রেম কিংবা সততার অনুভুতি সেগুলোর জন্য ঘনঘন ডিসকাউন্ট অফার বা একটা কিনলে একটা ফ্রি অফার দেয়া হবে। খুব দুষ্প্রাপ্য হবে কিছু অনুভুতির সাপ্লাই। কর্তব্যবোধ, স্বাধীন চিন্তা, প্রগতীশীল চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ভালবাসা এগুলো খুব এক্সক্লুসিভ কিছু ডিলার বিক্রি করবেন।

তবে হ্যা, তখনো কয়েকটা সত্যিকার রিয়েলিটি রয়ে যাবে। সেগুলোকে তখন লোকে এড়িয়ে চলবে আজকেও যেমন চলে। সেগুলো হল মরে যাবার অনুভুতি, দায়ীত্ব পালনের তৃপ্তির অনুভুতি, প্রতিবাদের আগুনের অনুভুতি। এগুলোও বিক্রি হবে ঠিকই কিন্তু সেটার কাষ্টমার পাওয়া যাবে না। তবে মৃত্যুর দুত এসে সারাজীবন আপনি যে অনুভুতিটা কখনো কেনেননি সেটা আপনাকে বিনামুল্যে অনুভব করিয়ে দেবেন। সেটা হল মরে যাবার অনুভুতি। এত এত ভার্চুয়াল অনুভুতির ভীড়ে এটা তখনো রিয়েল অনুভুতি হয়ে বেঁচে থাকবে দোর্দন্ড প্রতাপে। আপনি চান বা না চান-জীবনে শেষ একবার হলেও এই অনুভুতি আপনাকে বিনামুল্যে গিলতে হবেই।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫২

তানভীরএফওয়ান বলেছেন: বাপ-মা বৃদ্ধ হলে মাঝে মধ্যে তাদের জন্য একটু মন খারাপ করা ব্যতীত আর কিই বা করা উচিৎ? :(( :((

২| ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৮

বেচারা বলেছেন: তাই না তানভীর ভাই?

৩| ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:০৭

বৈশাখের আমরণ নিদাঘ বলেছেন: পড়তে পড়তে আমার আক্কেল এখন পৃথিবী পার হয়ে প্রক্সিমা সেঞ্চুরাইয়ের পথে!

কল্পনার অনেককিছুই বাস্তব হয়ে যাচ্ছে। স্বাদ চাইলে এখন একটা ভিআর হেডসেট কিনে ফেলেন ভাই। গেমস খেলেন আর মুভি দেখেন, একেবারে বাস্তব অনুভূতি। চাইলে সানি আপা টাইপের কাউকেও থ্রিডিতে দেখতে পারেন। এই কারণেই বেশি বিক্রি হচ্ছে। দামও কিন্তু তেমন বেশি না।

আমি বললাম কেবল গেম খেলি মাঝে মাঝে। =p~

৪| ১৩ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:২১

বিজন রয় বলেছেন: ভাল ।

৫| ১৮ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৯:০২

শায়মা বলেছেন:
এমনই হতে যাচ্ছে অনেকটাই হয়ে গেছে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.