নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সফলতা কিংবা আপেক্ষিক সফলতার মরিচিকা: ছু মন্ত্রর ছু

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১:২৫

মফস্বল হতে রাজধানী শহর ঢাকাতে রুটী রুজীর মেহনতে আসা এক সাধারন আদমী আমি। আর দশজন সাধারন ছাত্রের মতোই সরকারী ইউনিভার্সিটির মাগনা হল, প্রায় বিনা পয়সার খাবার, নামমাত্র ফিস-এসব কিছুর বদৌলতে দুই দুইটা ভারি ডিগ্রী-স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে কী করে কী করে যেন একটা চাকরীও জুটিয়ে ফেলি। এরপর নানান প্রক্রিয়ায় এই চাকরী সেই চাকরী, ইতরামী, চোতরামী, নাদানি-নানা কায়দা করে ঢাকা শহরের এক বিশিষ্ট কেরানী আজকের এই আমি-সেদিনের সেই মফস্বল আদমী। সহকর্মীদের সাথে, হাতে গোনা দু’একজন সাবেক বন্ধু’র সাথে জীবনের সফলতা, ব্যর্থতা, ক্যারিয়ার, ভবিষ্যত, সোসাল স্ট্যাটাস-এসব নিয়ে কথা হয়। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে সেই স্কুল হতে আজকের ঢাকাইয়া কেরানীর জীবন-পুরোটার একটা টালি করতে বসলাম। সফলতা আর ব্যর্থতার খাতাটা ঝালাই করলাম। এই একটা লম্বা সময়ে যতজনের সাথে পড়েছি, যতজনের সাথে আলাপ-তাদের জাগতিক প্রাপ্তি, বাহ্যিক চাকচিক্য, স্ট্যাটাসের চিকনাই-কখনো কখনো ক্ষনিকের জন্য হলেও চিন্তাকে থমকে দাড়িয়ে ভাবতে বাধ্য করে-জীবনে কি সফল হলাম নাকি ব্যর্থ?

যদিও আমি বিশ্বাস করি সফলতা/ব্যর্থতা, সুখ/অসুখ, স্ট্যাটাস-এ সবকিছুই একটা আপেক্ষিকতার নাম। তবে হুরপরীর রাজ্যে বিচরন করতে গেলে স্বয়ং যুধিষ্ঠিরও হয়তো একটু ইর্ষান্বিত হতেন। চতুর্পার্শ্বের অসংখ্য সফল (!) পুরুষ, সফল নারীর নিত্যনতুন স্ট্যাটাস, প্রতিনিয়ত ফুলে ফেঁপে ওঠা সোস্যাল ক্লাস, বাড়বাড়ন্ত ক্যারিয়ার, বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, চেকইন-এতসব চাকচিক্য স্বয়ং সংসারবিরাগী বুদ্ধেরও মাথা ঘুরিয়ে দিত বলে আমার বিশ্বাস। আমিতো কোন ছার। আর এখনকার দিনে সোসাল মিডিয়া হতে পালিয়ে যাবার যেহেতু কোনো সুযোগ নেই, তাই প্রতিনিয়ত প্রচুর সফল ব্যক্তিত্বের নানা সফলতার রঙিন ঘুড়ির অবাধ প্রদর্শন চাই বা না চাই দেখতে হয় এবং নিজেকে কিঞ্চিত ক্লিষ্ট করতে হয়। সফল হবার মন্ত্রটা এত এক্সক্লুসিভ কেন সেটা কিছুতেই মাথায় আসে না।

ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়তাম তখন আমাদের শেখানো হত-লেখাপড়া করে যে, গাড়িঘোড়ায় চড়ে সে। জানিনা সেই যুগে এই কথার সত্যতা ঠিক ছিল কিনা তবে এই যুগে এই কথা বললে আমার মাথা ভেঙে ফেলবে পাবলিক। কারন এখন গাড়িঘোড়ায় চড়তে গেলে লেখাপড়া কোনো বিষয়ই না। সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আরেকটা দারুন জোকস নজরে পড়ে। কে প্রথম এটা বলেছিল জানি না তবে ওনাকে আমার শত কোটি প্রনাম। বাক্যটা হল কমবেশি এরকম: যারা ফার্স্টক্লাস পায় তারা সরকারী চাকরী নেয় আর কেরানীতে পরিনত হয়ে নিয়ন্ত্রিত বা পোষ মানা হয়। যারা সেকেন্ড ক্লাস পায় তারা পড়া শেষে ব্যবসায় নামে আর ফার্স্টক্লাস পাওয়া আমলাদের নিয়ন্ত্রণ করে। যারা থার্ড ক্লাস পায় তারা রাজনীতিতে নামে আর প্রথম দুইদলকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর যারা কোনো ক্লাসই না মানে ফেলটুস, তারা পড়া ছেড়ে মাস্তানী/মাফিয়াবাজিতে নামে আর ফার্স্ট টু লাষ্ট ক্লাস-সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই যখন অবস্থা, তখন ছেলেবেলার মীথ আর আজকের বাস্তবতার মধ্য একটা প্রবল দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
আমরা যখন স্কুলে পড়ি তখন ক্লাসে ফার্স্ট হওয়াটা একটা বিরাট বিষয় ছিল। আমাদের মন মগজে পাখি পড়ার মতো ঢুকিয়ে দেয়া হত-ফার্স্ট হতেই হবে, স্টার পেতেই হবে, বোর্ড স্ট্যান্ড না করলে সে কোনো ছাত্রই না। আমরাও বুঝি না বুঝি, সম্ভব বা অসম্ভব যাই হোক-যেকোনো মূল্যে ক্লাসে ফার্স্ট হবার পেছনে জানপড়ান লাগিয়ে দিতাম। আমার এখনো মনে পড়ে-নোট, গাইড বা একটা সাজেশান পেপার সহপাঠিদের হতে লুকিয়ে রাখার কি প্রানান্তকর হাস্যকর চেষ্টা করতাম সেই সময়। এমনকি আমি এই হাস্যকর কাজটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েও সেখানে দেখেছি। বন্ধুতে বন্ধুতে এনিয়ে মন কষাকষি হত আকছার। একটা ভাল রেফারেন্স বই বা জার্নাল কিংবা কোয়ালিটি রাইট আপ পেলে সেটা সযত্নে লুকিয়ে রাখত ভাল ছাত্ররা। পাছে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বিরা সেটা পেয়ে তাকে ছাড়িয়ে যায়। কারনটা সেই আদীম চিন্তা-ক্লাসে ফার্স্ট হতেই হবে। ফার্স্ট না হতে পারলে ভবিষ্যত ধু ধু মরুভুমি।

তো চেষ্টার ত্রুটি আমরা কেউ করিনি ক্লাসে ফার্স্ট হতে। সবোচ্চ ভাল রেজাল্ট করতে, সবাইকে চমকে দেয়া পজিশন নিশ্চিত করতে। আবার এর মাঝেই কেউ কেউ ছিল স্বেচ্ছা বৈরাগী। ওদের দেখে মনে হত শুধু ভাল রেজাল্ট করা ব্যতিত আর সব কাজেই ওদের অসীম আগ্রহ। গার্লস স্কুলের সামনে দাড়ানো হতে মাঝে মধ্যে একটু আধটু বিড়ির টান-সবই চলত। আমরা ওদের বলতাম দুষ্টু ছেলে। বাবা-মায়েরা ওদের সঙ্গ হতে দুরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করতেন। ওদের সাথে মিশলে জীবন ঝড়ঝড়া। তবে রুঢ় বাস্তবতা হল, সেইসব দুষ্টু ছেলেদের একটা বড় অংশকেই দেখেছি পরের জীবনে উপরে উঠে আসতে। সমাজের কাঙ্খিত যত স্ট্যাটাস, নর্মস, স্বীকৃতি-তার প্রায় সবটাতেই রেকর্ড মার্কস পেয়ে পাশ করতে। আমার মনে পড়ে, আমার কলোনীতে আমার সহপাঠি ও প্রতিযোগী একটা ছেলে থাকত (নামটা বলতে চাই না)। কোনো এক পরীক্ষায় ও আমার চেয়ে ভাল করে। মা আমাকে অপমানের চুড়ান্ত করে বললেন-”ওই ছেলেটার পা ধোয়া পানি খেতে পারিস না?” তবে ভুল বুঝবেন না। আমি তখনকার (কিংবা এখনকার) বাবা-মায়েদের নিন্দা করতে বসিনি। আমি সবকিছুকে আপেক্ষিক ও সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে পছন্দ করি। তারা সেটাই করেছেন যেটা তখনকার সার্বিক প্রেক্ষাপটে সমাজের রীতি ছিল। আমাদের বাবা-মায়েরাতো আর আইনস্টাইন বা নিউটনের বাবা-মা হতে পারতেন না। সেই ছাত্র বয়সে মনে হত ক্লাসে ফার্স্ট হতে পারাটাই সফলতার নিদর্শন। সেকেন্ড হওয়াটাই ব্যর্থতা। ইউনিভার্সিটিতে প্রথম দিন হতে সবার চেষ্টা থাকে সবচেয়ে সুন্দরী ব্যাচমেটকে জিএফ হিসেবে দখল নেয়া। যে যতটা চোস্ত ততটাই তার জিএফ ভাগ্য। তখন মনে হত, জিএফ বাগাতে যে যতটা কার্যকর সে ততটাই সফল। যাদের জিএফ নেই, থাকলেও তেমন মার্কা নেই, তারা ব্যর্থ।

ফার্স্ট, সেকেন্ড হবার চুড়ান্ত ঐকান্তিকতার গলি/চোরাগলি পাড় হয়ে ইউনিভার্সিটি শেষ করলাম। হাঁচড়ে পাঁচড়ে একটা চাকরীও বাগিয়ে নিলাম। মনে হল সফল হলাম। আমাদের সহপাঠিরাও যে যার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল। কেউ চাকরী, কেউ ব্যবসা, কেউ ধান্দা, কেউ রাজনীতি, কেউ শশুরের আদরের মনি! যারা ”বিসিএস ক্যাডার” হল তারা ভাবল চাঁদ হাতে পাওয়া গেল। যারা পেল না, তারা ভাগ্যকে মেনে নিল আর ঢুকল নানান প্রাইভেট জবে-উচ্চ মাহিনায়। ভাবল, যাক বেতনে পুষিয়ে যাবে-আমিও সফল। ওদিকে বিসিএস ক্যাডারের মন খারাপ-সিল-সিগনেচার ছাড়া আর কী পেলাম জীবনে। হালে এসে আবার সরকার বাবাজি দিল সরকারী কামলাদের মজুরী আকাশ ছোঁয়া করে। বিসিএসদের পোয়া বারো আর প্রাইভেটারদের মাথায় হাত। কালে কালে বহু বছর পার হল। মধ্যবয়সে এসে পড়ল জীবন। মাঝে মধ্যে ন্যাংটো কালের জীবন হতে এই মধ্য বয়সের জীবনের ট্যালি করতে বসি। জীবন সফল নাকি বিফল? একটা খুব আশ্চর্য বিষয় কী জানেন? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এযাবৎ শিখে আসা মীথের কোনো তালগোল পাই না। ওইযে বলেছিলাম না, “যারা কোনো ক্লাসই না মানে ফেলটুস, তারা পড়া ছেড়ে মাস্তানী/মাফিয়াবাজিতে নামে আর ফার্স্ট টু লাষ্ট ক্লাস-সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করে”-জগতে এর ভুড়ি ভুড়ি উদাহরন। বাস্তব অভিজ্ঞতায় যতটা দেখেছি, মধ্যম বা পরের সারিতে যারা ছিল একাডেমিতে, তুলনামুলক তারাই এখন এগিয়ে আছে সোস্যাল স্ট্যাটাসে কিংবা আপেক্ষিক স্ট্যাটাসে। তথাকথিত ভাল ছাত্ররা মোটামুটি কেরানী কিংবা কর্পোরেট দাস হয়ে একটা টাইপড নাগরিক জীবন ধুঁকে ধুঁকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের মিডিয়াম বা থার্ড ক্লাস সহপাঠিরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্ট্যাটাসের ছক্কা মারছে। নিত্যনতুন গাড়ি, বারিধারার ফ্ল্যাট, পূর্বাচলের প্লট, সুইস ব্যাংকে ব্যালেন্স, সেলফী কুইন শশুর-কন্যা (মানে বউ), কিউটের ডিব্বা দু”খানা মানব ছানা, চেকইন, ট্রাভেল, ট্যুর, সোস্যাল মিডিয়া, স্ট্যাটাস আপডেট, ক্রীকেট মাঠের দর্শক, তৃপ্ত আয়েশি সামাজিক সুখের ঢেকুর-অনেকটাই দিয়েছে জীবন তাদের। এখন মনে হয়, ওরাই সফল।

সফলতার মিটার বয়সে বয়সে বারবার বদলেছে। কখনো সেটার নিয়ামক ছিল ভাল রেজাল্ট, কখনো ভাল জিএফ, কখনো বা বিসিএস, কখনো প্লট, কখনো ফ্ল্যাট, কখনো আবার অন্যকিছু। সফল হলাম কি ব্যর্থ হলাম সেটার বিচার করে শেষ করতে পারি না। ঠিক করেছি না বেঠিক, ঠিক রাস্তায় হেঁটেছি নাকি ভুল, ভবিষ্যত আলোকিত নাকি ঝরঝরা-সেটা একটা বিরাট প্রশ্ন।

একটা বিষয় আমার ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস হয়-আমাদের প্রত্যেককে শিক্ষাজীবনের শুরু হতে একটা ভুল মীথ নিয়ে বড় করা হয়। সফল হবার মীথ। প্রতিযোগীতায় ফার্স্ট হবার মীথ। পয়েন্ট অর্জনের মীথ। মা-বাবা, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক, পাড়াপ্রতিবেশি-সবাই অষ্টপ্রহর কানের কাছে চিৎকার করে বলত-ফার্স্ট হও, সফল হও। কিন্তু আমাদের কেউ স্বার্থক হতে শিখাতো না। জীবনকে অর্থবহ হবার উপদেশ কেউ দিত না। মানুষের মতো মানুষ হও-এই দোয়া অবশ্য মাঝে মধ্যে মুরব্বীদের কদমবুসী করতে গেলে শুনতে হত তবে সেই ”মানুষের মতো মানুষ”টা যে ঠিক কী-সেটা কেউ শেখাতো না। তার অবশ্যম্ভাবি পরিণতিতে জীবনের সব শিক্ষা-অশিক্ষায়, লক্ষ্য ও অলক্ষ্য সবকিছুতে তালগোল পাকিয়ে আজ আমরা এক অদ্ভুৎ জীবনবোধের সামনে দাড়িয়ে।

আমার একজন প্রাইমারীর সহপাঠির সাথে দীর্ঘ ২০ বছর পর একবার হঠাৎ দেখা হয়েছিল। নিজ এলাকাতে ও পান, সুপারী বিক্রি করে সংসার চালায়। আমার প্রাণের সহপাঠির অবস্থা দেখে খুশি হব নাকি পীড়িত হব-সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই দেখি বন্ধু আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই নিজেই হেসে হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে “বিদ্যুৎ না?” (আমার নিক নেম)। কথা হল অনেকক্ষণ ওর সাথে। জীবন নিয়ে তার কত আনন্দ স্মৃতি, কত প্রাপ্তির সুখ। স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবাকে নিয়ে তার দারুন মফস্বলের সংসার। বিন্দুমাত্র ক্ষেদ নেই জীবন নিয়ে। অথচ বিপরীতে শহুরে কর্পোরেট আমাদের নিত্য কত হতাশা? পজিশনটা আরেকটু বড় কেন হল না? উত্তরার ফ্ল্যাটটা না হয়ে বনানীরটা কেন পেলাম না? ট্যাক্স কাটার পর এত সামান্য ব্যালেন্স কেন ব্যাংকে? ছেলেটাকে ইংলিশ মিডিয়ামে দিতে পারি নি। পারলেও আবার একদম টপ স্কুলটাতে দিতে পারিনি-আফসোস। ইত্যাদি কত কী? আমার পান বিক্রেতা বন্ধু তার কাজ ও সময় নিয়ে অত্যন্ত সুখী এবং তার মনের মতো সফল। সোস্যাল স্ট্যাটাসের ঘাটতি, তার বন্ধুদের সামাজিক উচ্চপদ-কোনোকিছুই তার সফলতার ঢেকুর তোলায় বাধা হয়নি।

ছোটবেলার স্কুল ফ্রেন্ড, কলেজ মেট, ইউনিভার্সিটি ব্যাচমেট, হলমেট-সবাই নিজের নিজের মতো করে সমাজে জায়গা করে নিয়েছে। কেউ ক্যাডার, কেউ আর্মস ক্যাডার, কেউ ব্যবসা, কেউ তামাশা। আমার মেটদের অধিকাংশই ইর্ষা করার মতো সামাজিক পজিশনে চলে গেছে। কি ধনে কি মানে! সবকিছুতেই। আর অধিকাংশই মফস্বল হতে এই যাদুর শহরে এসে একলা একার চেষ্টায়। আর তার পাশেই আছি আমরা-একদা সফল অধুনা নিষ্ফল (বা মাকাল ফল)। কায়ক্লেশে জীবন চালাই, পরের মানিব্যাগ মোটা করতে দিনরাত মুখে রক্ত তুলে খাটি, সামান্য প্রশংসা করলে বিগলিত হই। শেষ বয়সে ধুকে ধুকে ছেলেমেয়ের ভরসায় চলতে প্রস্তুত হচ্ছি। সফলতার পাঠ গেলাতে গিয়ে আমাদের বড় করা হয়েছে চাকরী করার মধ্য দিয়ে কেরানী হয়ে পরনির্ভর একটা জীবন চালিয়ে নেবার মতো সফল হবার মন্ত্রে। স্বনির্ভর একজন কর্মী, একজন জীবনযোদ্ধা হবার শিক্ষা আমাদের স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি কোনোকালে দেয়নি। সর্বত্রই একটা মন্ত্র মাথায় ঢোকানো হয়েছে-যোগ্য চাকরীজীবি হবার মন্ত্র। হয়েওছি তাই। আর যারা তখন দুষ্টু ছেলে হয়ে ওই মন্ত্রে মন দেয়নি তারাই বরং আজকে তুলনামুলক সফল এবং স্বনির্ভর।

সফলতা আর ব্যর্থতা খুব আপেক্ষিক একটি বিষয় বলে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস। আমার কাছে যা সফল সেটা অন্যের কাছে ব্যর্থতার নিয়ামক। আজ যে সফল কাল তার সেই অর্জনই ব্যর্থতা মনে হতে পারে। এক বয়সে যেটা উচিত আরেক বয়সে সেটাই অনুচিত মনে হতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, সফলতা নয়-স্বার্থকতার পিছনে জীবন ঘোড়া ছোটানোটাই হয়তো কাজের কাজ হবে। যা আমি হতে চেয়েছি তা না হতে পারলে আমি ব্যর্থ-এই ভুল বিশ্বাস অনেকেরই আছে। যা হওয়া উচিৎ ছিল-সেটা হতে পেরেছি কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.