নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ন্যুনতম মজুরী নিয়ে মায়াকান্না ও অর্ধসত্য কাহিনীর বেসাতি

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১২

বাংলাদেশে একটা পপুলার সস্তা মিথ্যা কথা খুব জনপ্রিয়ভাবে চালু আছে এবং সেটা নিয়ে খুব প্রচারনাও আছে। “বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরের ন্যুনতম মজুরী বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে অনেক কম”-এরকম একটি আপাতঃ সত্যি তথ্য নিয়ে প্রচুর জ্ঞানী ও অতিজ্ঞানী গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য চোখের পানি ফেলেন। দিস্তা দিস্তা কলাম লেখেন। এটাই বোধহয় এমন একটি মিথ্যা যেটা মানুষ ব্যপকভাবে পছন্দ করে- বলতে আর ভাবতে। কারন একটাই-গার্মেন্টস শিল্পের প্রতি জন্মগত প্রিজুডিস।
আমি কেন বলছি আপাতঃ সত্যি? আসুন দেখি। ১. আয় ও প্রকৃত আয় বলে অর্থনীতিতে দু’টো কনসেপ্ট আছে। আমাদের দেশে এক বোতল পানির দাম কত? ১৫ টাকা। জার্মানীতে সেটা ১০০ টাকা। মানে হল, দেশের মূল্যস্তর ও লিভিং কস্ট এর উপর নির্ভর করে প্রকৃত আয়। বাংলাদেশে তাই ১৫,০০০ টাকা আয় হলে যেই জীবন যাপন করা যায় সেটাই জার্মানীতে করতে হলে ১,৫০,০০০ টাকা লাগবে। তাই জার্মানীতে সবার বেতন বেশি-এটি শুধুই একটি আংশিক সত্যি। ২.মানুষের শুধুমাত্র ইনকামের উপর তার ক্রয়সামর্থ নির্ভর করে না। ওই দেশের মুদ্রার সাথে ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট, জিডিপি গ্রোথ, ইনফ্লেশন রেট, ফ্লো অব মানি, লিকুইড ফ্লো-অনেক কিছুই আধুনিক অর্থনীতিতে মানুষের সামর্থ্য নির্ণয়ে দরকার। ক্রয়সামর্থ ও ইনফ্লেশন রেট বিবেচনায় না নিয়ে শুধু মজুরীর হার নিয়ে কথা বলা কুমিরের কান্নার মতো। একটা উদাহরন বলি: জিম্বাবুয়েতে একজন মাটিকাটা শ্রমিকের বেতন ১০০ কোটি জিম্বাবি ডলার। তো, সে বেটা নিশ্চই অনেক সুখে থাকে! নাহ, তিনি ওই দেশে খুবই গরীব কারন ওখানকার সুপার ইনফ্লেশন রেট। বাংলাদেশে এটা মাত্র ৫ থেকে সাড়ে ৫% বিধায় এখানে ১০ কোটি নয়, ১০,০০০ দিয়েও ওর চেয়ে ভাল থাকা যায়। ৩.বাংলাদেশে গার্মেন্টস এত বিশাল কেন হয়েছে-তার পেছনে যতগুলি বিজনেস ফ্যাক্টর আমাদের তথাকথিত থিংকট্যাঙ্করা দেখাতে পেরেছেন তার সর্বপ্রধানটি হল সস্তা শ্রম। চায়না, ভিয়েতনাম, ফিলিপিনস, কম্বোডিয়া, বার্মা, ইন্দোনেশিয়া যাদের ন্যুনতম মজুরীর তুলনায় আমাদের মজুরী কম বলে এসব জ্ঞানপাপী থিঙ্কট্যাঙ্করা একতরফাভাবে প্রচার করে, সেসব দেশের সাথে আমাদের প্রতিযোগীতার প্রধানতম অস্ত্র সস্তা শ্রম। কারন অন্যান্য ফ্যাক্টরে আমরা অনেক পিছানো। এখন শুধুমাত্র মজুরী কম-এইজন্য যদি মজুরী তাদের সমান বা কাছাকাছি করতে হয়, তাহলে যে একমাত্র ফ্যাক্টরে আমরা প্রতিযোগীতায় টিকে আছি সেটাও তো তাদের সমান হয়ে যায়। তাহলে জায়ান্ট চীন বা কম্বোডিয়ার সাথে টিকব কী করে? আর শিল্পটাই যদি না থাকে, তাহলে আপনাদের এসব থিঙ্কট্যাঙ্ক, গবেষনা, শ্রমিকের বেঁচে থাকাইতো অসম্ভব। ৪.চায়না বা ভিয়েতনামের চেয়ে আমাদের ন্যুনতম মজুরী কম-তাই সেটা বাড়াতে হবে ব্যপক হারে-এই কুকথা যারা নির্দিধায় বলে বা বিশ্বাস করে তাদের জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, চায়না, ইন্ডিয়া বা ভিয়েতনামের জিডিপি কত আর বাংলাদেশের কত? যদি আমাদেরটা অনেক কম হয়ে থাকে তাহলে একই রকম শিল্পে আমাদের মজুরী তাদের সমান করার দাবীটাইতো অন্যায্য। ৫.যাদের সাথে মজুরী তুলনা করা হচ্ছে তাদের দেশে তৈরী হওয়া প্রোডাক্টের এফওবি, সিএম আর ভ্যালু এ্যডিশনের বিপরীতে আমাদের এখানকার গড় এফওবি, সিএম ও ভ্যালূ এ্যডিশন কত সেটা তুলনা করেন। ৬.থিঙ্কট্যাঙ্কদের ভন্ডামীর আরেকটা দিক বলি? এরা শুধু গার্মেন্টসের ন্যুনতম মজুরী নিয়ে কথা বলে। দেশে কি শুধু গার্মেন্টসই একমাত্র শিল্প্ বা শুধু এখানেই কি কম বেতন দেয়া হয়? বাকি শিল্পে কি কাড়ি কাড়ি টাকা দেয়া হয় শ্রমিককে? যদি তাই হয় তবে গার্মেন্টসের ৫০ লক্ষ শ্রমিকের বিপরীতে বাকি হাজারো শিল্পে মোট শ্রমিক কেন কম তার ব্যাখ্যা দিন। আর ওদের ন্যুনতম মজুরী কত? যে পত্রিকাওলারা এত মায়াকান্না করে তাদের ওয়েজবোর্ড আইন অনুযায়ী নিয়মিত দেয়তো?

আর যুক্তি দেব না। ভাই, এই সেক্টরটি নিখাঁদ নিজের চেষ্টায় বিগত তিন দশকে বাংলাদেশের প্রধান অর্থনীতি হয়েছে। ওইসব তথাকথিত থিঙ্কট্যাঙ্ক, মানবতা কর্মী, এনজিও, কল্যান ফেডারেশন, আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা, সস্তা চিন্তার গবেষক, ফ্রাস্টেটেড গার্মেন্টস কর্মী-এরা আপনাকে বিশ্লেষনধর্মী সত্যিটা দেয়না। দেয় প্রিজুডিসড তথ্য। নিজের সুবিধা ও ইচ্ছামতো। আমাকে মালিকদের দালাল ভাববেন না। আমাদের সেক্টরের অনেক সমস্যা আছে। অনেক বঞ্চনা আছে। মজুরী, পাওনা নিয়ে সত্যিই অনেক সমস্যা আছে। আমি শুধু বলছি, একপেশে তথ্য নিয়ে বিভ্রান্ত না হতে। সর্বোপরী আমাদের যেকোনো মূল্যে সেক্টরটাকে যেমন করেই হোক আগে বাঁচাতে হবে। সে বেঁচে থাকলে কমপ্লায়েন্স, ভাল মজুরী, উন্নত জীবন, দারুন পরিবেশ, ক্যারিয়ার, উন্নয়ন চিন্তা, এনজিও আন্দোলন, মানবতা চর্চা-সব হবে। সেক্টর যদি অবিমৃষ্যকারীতার কারণে মরে যায় তবে কাকে নিয়ে দেশ চালাবেন? তখন কমপ্লায়েন্স রক্ষা করে আমিসহ এই ৫০ লক্ষ শ্রমিকের রাস্তার মোড়ে খদ্দের ধরার ব্যবস্থা করতে পারবেন তো ভন্ড মানবতাবাদীরা?

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৪

নূর আলম হিরণ বলেছেন: গার্মেন্টস শিল্পে মজুরী নিয়ে অসন্তোষ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এই শিল্পেই শ্রমিকরা ঝুকে বেশি কারন অদক্ষ শ্রমিকের জন্য গার্মেন্টস সেক্টরের দরজা সব সময় খোলা থাকে। কোয়ালিটিতে ও আমাদের পন্য এগিয়ে আছে তারপরেও সস্তা শ্রম ক্রেতাদের কাছে বিশাল একটা ফ্যাক্ট। কম্বোডিয়া কিংবা চিনের মজুরীর সাথে তুলনা একপ্রকার অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়। তবে হ্যাঁ মজুরী অসন্তোষ নিয়ে কাজ করার অনেক পয়েন্ট আছে। যুক্তি দিয়ে সেগুলো আলোচনা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। ঢালাওভাবে মালিকপক্ষের দোষ দিয়ে সমস্যা সমাধান হবে না।

২| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:০৬

আখেনাটেন বলেছেন: এই পূজিবাদী বিশ্বে সমালোচক আছে বলেই অতি মুনাফালোভীরা নিজেদেরকে কিছুটা হলেও সংযত রাখে। তারা সমালোচনা করে মালিকপক্ষকে লাগামছাড়া হতে দেন না। তা না হলে আবার জমিদারি প্রথা চালু হয়ে যেত।

আর সমালোচকদেরও হালুয়া-রুটির সংস্থান হয় এখান থেকে। তবে সেটা যেন শিল্পের ক্ষতির কোনো কারণ না হয় সে জন্য সরকার তো আছেই। নিজ স্বার্থেই সরকারকে দু-পক্ষকেই খুশি রাখতে হবে। একজন বিগড়ে গেলে দেশের ক্ষতি।

৩| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:১৫

গেম চেঞ্জার বলেছেন: অনেকটাই একমত! তবে গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন আসলেই অনেক কম। এটা তাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। সমাজের কাছে তাদের অবস্থান ঐভাবে সুসংহত না। সবমিলিয়ে আমাদের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় উপাদানের ভেতরের অবস্থা মোটেই ভাল নয়! :

৪| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৩

বেচারা বলেছেন: বুদ্ধিদীপ্ত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। হ্যা, সত্যিই এখানে প্রচুর বঞ্চনা ও সমস্যা আছে। সেগুলো দ্রুত সমাধানও দরকার। তবে অতটা বিশাল ক্যানভাসে লেখার তো ফুরসত পাইনি। শুধু কোনো একটা ঘটনার প্রেক্ষাপটে সমস্যার একটা ছোট অংশ নিয়ে আলোকপাত করেছি। আরেকটা কথা বলি। মজুরী নির্ধারিত হবে এখানকার সার্বিক অর্থনৈতিক সামর্থের বিচারে। কোনো দেশের সাথে তুলনা করে নয়।

৫| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:০০

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ব্যবসায়ীদের দোষ দিয়েও লাভ নেই। বেতন বাড়লে আবার খরচ বেড়ে যাবে। তখন বিদেশীদের কাছে অর্ডার হারাতে হবে। এটার সমাধান হলো কম উপার্জনের মানুষদের জন্য আলাদা বাসস্থানের ব্যবস্থা করা...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.