নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ

Limon Ahamed

Blogger-Content Writer-Digital Marketer

Limon Ahamed › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতার 50 বছরে আমাদের অর্জন এবং সামনের পথ চলা

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১২


বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি হাটি হাটি পা পা করে 50 বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। একেবারে শূন্য থেকে শুরু করা চরম দারিদ্র্য পীড়িত একটি রাষ্ট্রের বিজয় দিবসে অর্জনের কথা শোনাবো।

বাংলাদেশের ভূখণ্ডের আয়তন নিয়ে অনেকেই হীনমন্যতায় ভুগে থাকেন। তাদের জন্য একটি মজার তথ্য দিচ্ছি, ইসরাইল আয়তনের দিক থেকে ভুটানের চেয়েও ছোট। অন্যদিকে, বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আয়তনে বড়।

যুদ্ধ পরবর্তী কালীন সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল সে গল্প প্রায় আমরা সকলেই জানি। তবে আপনারা কি জানেন সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থান সম্পর্কে যখন তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি বলেন, বাংলাদেশ হলো ফিনিক্স পাখির মত, পুড়ে যাওয়া ছাই থেকে উঠে দাঁড়াতে জানে।

আদিকাল থেকে বাংলার (বাংলাদেশের) একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। গোলাভরা ধান পুকুর ভরা মাছ এসব প্রবাদ বাক্য একসময় সত্যি ছিল। আপনি জেনে হয়তো অবাক হবেন, অবিভক্ত বাংলার জিডিপি ছিলো সারা পৃথিবীর জিডিপির মোট 7 শতাংশ। ইউরোপ থেকে এদেশে মানুষ আসতো কাজের সন্ধানে।

আশির দশকে ব্যক্তিপর্যায়ে কিছু মানুষ বাসাবাড়িতে পরিবারের সদস্য নিয়ে ক্ষুদ্র পরিসরে গার্মেন্টস গড়ে তুলেছিল। ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে করে তুলেছে কাপড় রপ্তানিতে পৃথিবীতে দ্বিতীয় ( ৬.৮%)। ওষুধ রপ্তানি তে বাংলাদেশ এক বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়েছে। বাংলাদেশ এখন অর্গানিক ওষুধ উৎপাদনে পৃথিবীতে দ্বিতীয়, এবং নিজেদের চাহিদার 98% দেশে উৎপাদিত হয়।

আরো বেশকিছু উদীয়মান শিল্প যেমন জাহাজ নির্মাণ, প্রযুক্তিগত সেবা বিক্রয় সহ মানবসম্পদ রপ্তানির বিপুল পরিমাণ সম্ভাবনা রয়েছে।

আমাদের যত অর্জন, তার পেছনে বড় একটি ভূমিকা রয়েছে আমাদের প্রবাসী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। এবছর প্রবাসী-আয় নতুন রেকর্ড হয়েছে। করোনায় বিপর্যস্ত টালমাটাল সময়ে বাংলাদেশের দেশের সর্বোচ্চ রেমিটেন্স 20 বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে এসেছে।

সামাজিক উন্নয়ন এবং সামগ্রিক সূচকের উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশীয় এনজিওগুলোর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ব্র্যাক এখন পৃথিবীর এক নম্বর বেসরকারি এনজিও। তাদের কার্যক্রম রয়েছে বাংলাদেশ সহ আরো 10 থেকে 15 টি দেশ। দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে বাংলাদেশের আলোকবর্তিকা হয় তারা কাজ করছে।

যদিও বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, তবু বাংলাদেশ সব সময় শান্তির দূত হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয়। যেকোনো মানবিক বিপর্যয় কিংবা সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সামরিক বাহিনী পাঠানোর দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।

বাংলাদেশকে নিয়ে আশাবাদী হবার মত অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তার মধ্যে আমার মতে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ধর্মীয় উগ্রবাদ কঠোর হস্তে দমন এবং সরকারের বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা। দেশে 100 বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল' তৈরীর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এর মধ্যে শুধু মিরসরাই ইকোনমিক জোন এর প্রত্যক্ষভাবে ১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

বেশ অনেকগুলো বড় উন্নয়ন প্রজেক্ট চলমান রয়েছে। এগুলো সম্পন্ন হলে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশের সকল জনগণ। সাম্প্রতিক সময়ে, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর সবগুলো স্প্যান বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি নিজেদের সক্ষমতা জানান দেয়ার অনন্য একটি নজির। ধারণা করা হচ্ছে, এই একটি সেতু বদলে দিতে পারে সমস্ত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা এবং সেইসাথে দেশের অর্থনীতিতে যোগ করবে এক থেকে দুই পার্সেন্ট অতিরিক্ত জিডিপি।

নারীর ক্ষমতায়ন এবং লিঙ্গ সমতা অর্জনে গত দশকে বাংলাদেশের প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয় ছিল। লিঙ্গ সমতা অর্জনে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম, এবং পৃথিবীর শীর্ষ 50 টি দেশের মধ্যে একটি। যেটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশের জন্য অনন্য অর্জন।

ভারত তাদের ছবি কিংবা ডকুমেন্টারিতে বুঝানোর চেষ্টা করে তারা তাদের প্রতিবেশীদের থেকে অনেক বেশি আধুনিক। তবে বাস্তবতা হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ হারের দিক থেকে ভারত কিংবা পাকিস্তান আমাদের ধারেপাশে ও নেই। উল্টো, গত দশকে ভারতের কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ কমে ২৮% থেকে ২০% হয়েছে। যেটি এখন বাংলাদেশে ৩৬%।

পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই, বাংলাদেশের হয়তো উন্নয়নের আরো প্রয়াস করার কথা ছিল। তবে যা কিছু অর্জন স্বাধীনতার 50 বছরে, তাকে আপনি কোনোভাবেই অবজ্ঞা করতে পারবেন না।
অন্যদিকে, এটাই হয়তো উপযুক্ত সময় যখন থেকে আমাদের উন্নয়নগুলো ভারত কিংবা পাকিস্তানের সাথে তুলনা করবো না। কারন দুর্বল প্রতিপক্ষের সাথে তুলনা করলে হয়তো তৃপ্তি পাওয়া যায়, কিন্তু দিনশেষে প্রাপ্তির খাতাতে তেমন কিছু যোগ হয় না।

আমার চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে সফলতম দেশ হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। আয়তন, সম্পদের স্বল্পতা কিংবা নানারকম বহিরাগত সামরিক এবং সামাজিক ঝুঁকি নিয়েও কিভাবে উন্নতির শিখরে আরোহণ করা যায় দক্ষিণ কোরিয়া তার অন্যতম উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বাংলাদেশের উন্নয়ন যদি কোন দেশকে মাথা রেখে করা হয়, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়ায হবে বাংলাদেশের রোল মডেল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.