নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মুক্তি আমার আলোয় এই আকাশে আমার মুক্তি ধুলোয় ধুলোয় ঘাসে ঘাসে

বন্ধু শুভ

আনকোরা যত নন্ভায়োলেন্ট নন্-কো’র দলও নন্ খুশী। ‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি! গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কন্ফুসি! স্বরাজীরা ভাবে নারাজী,নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি! © কাজী নজরুল ইসলাম

বন্ধু শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ূন আহমেদের শক্তি ও ভঙ্গুরতা : আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১:৩১



হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্টিশীল শক্তিশালী লেখক। কিন্তু সবাই তাকে ধারণ করবে না— এই সত্যটা তো আমাদেরকে মেনে নিতেই হবে। লেখকরা সৃষ্টিশীল হোন বলে কারো সাথে যদিও কারোর তুুলনা করা উচিৎ না, তবুও, সামগ্রিক বিচারে বলা যায় হুমায়ূন আহমেদ রবি ঠাকুরের কাছে নস্যি। সেই রবি ঠাকুরের-ই সমালোচনার অন্ত নাই। তবে হুমায়ূনকে কেন পাঠক তার অভিব্যক্তি জানাবে না? বা জানালে কে দাঙ্গা শুরু হয়? লেখক হুমায়ূন আহমেদের সব বইকে কেউ দুর্বল বলে না, সম্ভবত। প্রথমদিকে লেখা তার বইগুলো দুর্বল ছিল এই কথাটা বুকে হাত দিয়ে বলার সাহস এই বঙ্গের কারোরই নাই। কিন্তু শেষের দিকে লেখা বইগুলো তো দুর্বল ছিল সেটা সত্য এবং সত্যিকার বোদ্ধা হয়ে থাকলে আমাদের তা মেনে নেয়া উচিৎ। এটা না করে যদি "স্পেডকে স্পেড বলা মানুষ"দের সমালোচনায় লিপ্ত হই তবে তো আমরা "ধর্মীয় গোঁড়ামিপূর্ণ" ব্যক্তির মতো আচরণ করলাম। তাই নয় কি?

দীর্ঘদিন থেকে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে একটা অভিযোগ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। সেটা হলো তিনি সস্তামানের বই লিখেছেন। অন্তত শেষের বইগুলো। কেউ কেউ তাকে অত্যন্ত বাজারি লেখক বলেছেন। কেউবা তার সব বইকেই ক্লাসিক বলে থাকেন। হুমায়ূন আহমেদের বিষয়ে এই "অতিকেন্দ্রীকতা" বা "সামগ্রিক পরিহার" আমাদেরকে সত্যিই ব্যথিত করে। পাঠকদের এমন প্রতিক্রিয়া দেখলে ডব্লিউ সাঈদের ওরিয়েন্টালিজম থিয়োরিটা বেশি বেশি মনে পড়তে থাকে। যাহোক, বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতায় আমি নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পারি।

এক, একজন পাঠক একটি বই পড়া সমাপ্ত করে যখন বলেন— বইটি দুর্বল হয়েছে, তখন তার এই বাক্য মেনে নেয়া উচিৎ। কেননা পাঠকের অভিমত তার নিজস্ব "পাঠ, চিন্তা ও অনুভূতির" বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং অন্যজনের "অতিপ্রেম" থেকে তার বিশ্লেষণ করা বোকামি ও পাঠক সত্ত্বার অস্তিত্বে আঘাত।

দুই, পাঠকের পাঠপ্রতিক্রিয়া অবশ্যই ইতিবাচাকভাবে গ্রহণ করা উচিৎ। যদি তা নেতিবাচক রিভিউ হয়, তবুও। এই নেতিবাচক রিভিউকে বিশ্লেষণ করে নতুন একটি মাত্রা আবিষ্কার করাই সত্যিকার পাঠকের কাজ। কিন্তু যখন একজন নির্দিষ্ট লেখকের ব্যাপারে কথা বললে, এমনকি সত্যিকার দুর্বল বইকে দুর্বল বললেও যারা সহ্য করতে পারেন না, তারা বর্তমান সময়ের রাজনীতির মতো "দলীয় অন্ধঅনুকরণ" করছেন। যা কাম্য নয়।

তিন, দেরিদার "বিনির্মাণ তত্ত্ব" যদি আমরা মনে রাখি তবে আমরা হয়তো এই ধরণের সমালোচনাকে গ্রহণ করতে পারতাম। সমালোচনার সাথে একমত না হলেও অন্তত বক্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতাম। লেখক শুধু গল্প-ই সৃষ্টি করেন না। তিনি পাঠকের ভাবনাকে নতুনভাবে সৃষ্টি করেন। এই সৃষ্টি করতে গিয়ে কখনো কখনো পাঠক লেখকের ইঙ্গিতকে ধরতে পারেন না অথবা এড়িয়ে যান। এই বিষয়টা অন্য পাঠকদের ইতিবাচক দিক থেকেই গ্রহণ করতে হবে।



চার, এই আলোচনায় ভলতেয়ার খুবই প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেছিলেন "আমি তোমার মতের সাথে একমত নাও হতে পারি, তবে তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে পারি"। বর্তমান পাঠকদের মধ্যে এই বিষয়টির অভাব বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। সম্ভবত এখন কেউ আর ভলতেয়ার পড়ে না, তাই।

পাঁচ, প্রত্যেক পাঠকের খুব পছন্দের কিছুুু লেখক থাকে আবার একইসাথে "তেমন ভালো লাগে না" টাইপেরও কিছু লেখক থাকে। এই যে পাঠকের ভালো না লাগার মতো লেখক আছে, তার অর্থ তো এই না যে "তারা খুব নিচু মানের লেখক"। আসলে ভালো লাগা কিংবা না লাগা তো "পাঠককের বিদ্যা-বুুদ্ধি, অনুধাবন ক্ষমতা, চিন্তার পরিধি, জ্ঞানের প্রসারতা ও পরিবেশ" এর উপর নির্ভর করে। সুতরাং একজন পাঠক যখন কোন নির্দিষ্ট লেখকের সমালোচনা করে বা তাকে দুর্বল সাহিত্যিক বলে, তখন তো আমাদের বুঝা উচিৎ যে "এটা পাঠকের চিন্তার বা উপলব্ধির শেষ স্তর, এবং একজন পাঠক এই বললো মানেই লেখক ভঙ্গুর হয়ে গেল না"।

ছয়, প্রত্যেকের যেহেতু খুবই পছন্দের ও কম-পছন্দের লেখক আছে এবং তারপরও অন্যের পছন্দ ও কম-পছন্দের বিষয়টা আমরা নিতে পারি না, সেহেতু ধরেই নিতে হবে এটা আমাদের সংকীর্ণতা। আমরা হয়তো অনেক বই গিলছি, কিন্তু হজম কিছু হচ্ছে না। যদিওবা কিছুু হচ্ছে তবে তা উপলব্ধির পক্ষে যথেষ্টসংখ্যক নয়। এটা বুঝা যায় তখন, যখন একটা নেতিবাচক সমালোচনাপূর্ণ বক্তব্য দেখার/শোনার পর আমরা পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গির বিচার না করেই "দুুর্বল বললো কেন" মনোভব প্রকাশ করি।

একজন পাঠক যেমন তার মেধা-মগজ দিয়ে পাঠ ও উপলব্ধি করেন, বুঝা উচিৎ, ঠিক তেমনি একজন লেখকও তার মেধা-মগজ দিয়েই লিখে থাকেন। সুতরাং লেখকের কাছে তার সব লেখাই প্রাসঙ্গিক এবং উন্নত। তবে সাহিত্যিক বিচারে একটি লেখার "ভাব ও ভঙ্গি" ভিন্ন হতে পারে। এই ভিন্ন মানে উন্নত বা অনুন্নত নয়। ভিন্ন মানে ভিন্ন। ডিফারেন্ট। কোন একজন লেখকের একটি বইয়ের বিকল্প অন্য আরেকটি বই হতে পারে না। যদি হয় তবে তা ইতিহাসের বই, সৃষ্টিশীল সাহিত্য নয়। সুতরাং কোন গল্পের/উপন্যাসের "ভাব" উন্নত হোক বা অনুন্নত হোক, "প্রকাশের ভঙ্গি" ভঙ্গুর হোক বা শক্তিশালী হোক, সেই গল্প/উপন্যাস সত্যসত্যই অনন্য। ইউনিক। যেমন হয়ে থাকে প্রতিটি মানুষের জীবন- স্বাধীন, স্বকীয়, স্বতন্ত্র ও বিকল্পহীন—, শেণি, পেশা, গাত্রবর্ণ ও দেশ ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৩:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: হূমায়ূন আহমেদ একজ গ্রেট সাহিত্যিক।
তার তুলনা হয় না। তিনি সেরাদের সেরা।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৭

বন্ধু শুভ বলেছেন: জ্বি নিশ্চয়ই। তবে আমার মতে তা কারোরই হয় না।

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫৫

কল্পদ্রুম বলেছেন: পছন্দের লেখককে নিয়ে আলোচনা পড়তে ভালো লাগে।আরো এক দুই পর্বে বিস্তারিত লিখবেন?

এই পোস্টের বিষয় বিবেচনায় বলি, যে দাঙ্গার কথা বলছেন সেটা তো পাঠকরাই করেন।পাঠকরা দাঙ্গা কেন করেন এই প্রশ্ন তোলার চেয়ে আমি ব্যাপারটাকে খুবই পজিটিভলি নেই। যে দেশে মানুষ বই-ই পড়ে না। সে দেশের মানুষ একজন লেখককে ভালোবেসে দাঙ্গা করছেন। এর চেয়ে আনন্দের কি হতে পারে! রাজনৈতিক দাঙ্গার দরকার নেই। তবে বই এবং লেখক নিয়ে দাঙ্গার দরকার আছে এই দেশে। যতক্ষণ পেট্রোল বোমা ব্যবহার না করে শব্দ বোমা ব্যবহার করছে ততক্ষণ অসুবিধা নাই।

হুমায়ুন আহমেদের অনেক বই দুর্বল সাহিত্য হতে পারে (আমি সাহিত্য বিশারদ না হলেও আমার বিবেচনাতেও এগুলো দুর্বল)। কেউ কেবল দুর্বল বললে, পাঁড় হুমায়ুন ভক্তেরও (ধরুন আমি) আপত্তির কোন কারণ নেই৷কিন্তু হুমায়ুনের সমালোচনা করতে গিয়ে এমন কিছু লেখা হয় বা বলা হয় যেটা আসলে আপত্তিকর। যেমন, সম্প্রতি একজনের লেখাতে হুমায়ুনকে মৌলবাদী ব্যাখ্যা করার চেষ্টা চোখে পড়লো।

হুমায়ুনের সাহিত্যকে 'বাজারি' সাহিত্য আখ্যা দিয়ে তার সামগ্রিক সাহিত্যকে উপেক্ষা করতে গিয়ে অনেক সাহিত্যের পন্ডিতরাও 'বাংলাদেশি' সাহিত্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশকে যে হারিয়ে ফেলেন সেটা অনেকে বুঝেন না। বর্তমানে ঢাবির একজন শিক্ষকের পাবলিক বক্তব্য থেকে জানলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের সাহিত্যে মধ্যবিত্তের অবস্থান নিয়ে দুজন শিক্ষক গবেষণা পত্র লিখেছেন। সেখানে হুমায়ুনের নামের কোন অস্তিত্ব নেই৷এটা কি কোন কাজের কাজ হলো? ওনাদের গবেষণা কি সম্পূর্ণ হলো?

আপনার বক্তব্য অনুযায়ী 'অতিকেন্দ্রিকতা' বা 'সামগ্রিক পরিহার' দুটাই ব্যথিত করার মতো বিষয়। তবে নির্দিষ্ট কোন বই নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে অবান্তর বিষয় আনাও ঠিক না। তাহলে দাঙ্গা লাগবেই। বিশেষত হুমায়ুন, ছফা, আখতারুজ্জামান, আজাদ এই ধরণের লেখকদের ক্ষেত্রে। যাদের বই অনেক মানুষ পড়েছেন। অন্যের মতামতকেও গ্রহণ করা যাবে যদি সেটা গ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়। যেমন আপনি করেছেন।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৮

বন্ধু শুভ বলেছেন: আপনার আগ্রহ ভালো লেগেছে। হয়তো ভবিষ্যৎকালে এটা নিয়ে লিখতে অনুপ্রেরিত করবেও, তবে লিখবোই যে এমনটা শপথ করে বলতে পারছি না।

আপনার বিশার মন্তব্যের জবাব দিতে পারলে আমার খুবই ভালো লাগতো তবে আমার বিদ্যার স্বল্পতা হেতু আমি এই রিস্কটা নিলাম না। কিন্তু এটুকু আমাকে বলতেই হচ্ছে যে, এই দাঙ্গা লাগার ব্যাপারটা আমি মানছি না। এমন যদি হতো যে একজন চারটে যুক্তি দিলো আরেকজন জ্ঞানসমৃদ্ধ আটটে যুক্তি দিলো টাইপ দাঙ্গা তবে আমার বলার কিছু ছিলো না। কিন্তু ঘটনা হচ্ছে দাঙ্গার ধরণটা এমন যে "হুমায়ূন আহমেদের এই বইটা দুর্বল বললেন কেন সুতরাং আপনি কমজাত ছোটলোক ইত্যাদি..." তবে তো আর সমর্থন করা যায় না। যায় কি?

৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:০২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: হুমায়ুন আহমেদ ওনার একটা সাক্ষাতকারে বলেছেন যে তার লেখা পঁচিশ বছর বয়স পর্যন্ত বয়সের পাঠকদের জন্য অধিক উপযোগী।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৯

বন্ধু শুভ বলেছেন: অথচ আমরা বাড়াবাড়ি করে ফেলি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.