![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সরাসরি কথাটি বলতে পছন্দ করি । অনেক সময় ঠিক বলি, আবার অনেক সময় ভুল বলি । তবু বলি, চুপ থাকি না
আমার খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে । সে এই লেখাটি আমাকে ইনবক্সে পাঠিয়েছে । সে নিজে এই লেখাটি পোস্ট করতে ভয় পাচ্ছে, কারণ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের মতই । মানে কিছু মুখ ফুটে বললেই সর্বনাশ । তাই তাকে সাহায্য করার জন্যই লেখাটি হুবহু এখানে প্রকাশ করলাম । তবে এই লেখাটিই শেষ নয় । খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্কিত এমন খবর আরও আসছে পরবর্তীতে ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা বিভাগের একটি ঐতিহ্যবাহী উচ্চ শিক্ষার আদর্শ প্রতিষ্ঠান । ১৯৮৯ সালে ভিত্তি প্রস্তর আবিস্কার করা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯১ সালে । ঐ সময় ফরেষ্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি, আর্কিটেকচার, রুরাল অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিশারিজ - এই পাঁচটি ডিসিপ্লিন নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয় ঐ সময়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই শিক্ষাপীঠের । পরবর্তীতে অবশ্য ফিশারিজ ডিসিপ্লিন পরিণত হয় ফিশারিজ ও মেরিন রিসোর্স টেকনোলোজিতে । এরপর ধীরে ধীরে ডিসিপ্লিনের সংখ্যা বাড়তে থাকে । বর্তমানে পাঁচটি স্কুল (ইউনিট) ও একটি ইন্সটিটিউটের আন্ডারে মোট ২৪ টি ডিসিপ্লিন রয়েছে এখানে । আরও কয়েকটি ডিসিপ্লিন খোলার অপেক্ষায় । সব মিলিয়ে বর্তমান ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪৫০০ জন । আবাসিক হল মাত্র ৩ টি । এর মধ্যে ছেলেদের মাত্র ২ টি এবং মেয়েদের মাত্র ১ টি । সর্বোপরি ছোট্ট পরিসরে গঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি নিঃসন্দেহে দেশের সায়িত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট ক্যাম্পাসের অধিকারী ।
এই বিশ্ববিদ্যালয়টির পড়াশুনার মান সন্তুষ্টিজনক । তিনটি একাডেমিক ভবনে চলে শিক্ষা কার্যক্রম । একটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ভবন, একটি ব্যাংক ভবন, একটি সেন্ট্রাল লাইব্রেরী ভবন ও শিক্ষক--কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি চলছে প্রায় ২৫ বছর ধরে । প্রশাসনিক এসব ভবন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের যথেষ্ঠ চিন্তা থাকলেও ছাত্র-ছাত্রীদের থাকা নিয়ে তেমন চিন্তা দেখা যায় না বিশ্ববিদ্যালয় সেই কতৃপক্ষের । এই জন্য একটি মাত্র আবাসিক হলে নতুন ভর্তি হওয়া মেয়েদের একসাথে গাদাগাদি করে রাখা হয় গণরুমের কথা বলে । আর ছেলেদের তো ছিটই হয় দ্বিতীয় বর্ষের শেষে গিয়ে অথবা তৃতীয় বর্ষের প্রথমে গিয়ে । অনেক ডিসিপ্লিনেই দেখা যায়, চতুর্থ বর্ষের ছাত্রও ছিট পায়নি । একটি ছেলেদের হল প্রায় কমপ্লিট করা হলেও অজানা কারনবশত ছিট বুরাদ্দ করা হচ্ছে না । এর দরুন, ছাত্র-ছাত্রীদের দুর্ভোগ কেবলই বাড়ছে ।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল রাজনীতিহিন পরিস্থিতি । অর্থাৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চিরাচরিত রাজনৈতিক মিটিং-মিছিল কিংবা অন্যান্য কোন কার্যক্রম পরিলক্ষিত হয় না । কিন্তু সমস্যা বাধে গত চার-পাঁচ বছর আগে থেকে । বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ জমা বরাদ্দ সংক্রান্ত মামলায় ফেঁসে যান ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলোজি ডিসিপ্লিন থেকে হওয়া সাবেক উপাচার্য । এর ফলস্বরূপ তাকে তার পদ বাধ্য হয়ে অবসরের কয়েকদিন আগেই ছাড়তে হয় । নতুন উপাচার্যের দায়িত্ব নেয় তৎকালীন উপ-উপাচার্য । যিনি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ তথা একটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস করে, পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাস করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পান । তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ঊর্ধ্বতন লোকই জানে, এটা বর্তমান সরকারের আমলেই সম্ভব হয়েছে । অর্থাৎ তিনি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাতেই এই পদটি অর্জন করেছেন ।
এর মধ্যে অন্যতম আরেকটি সমস্যা তৈরি হয় আবার অন্য ভাবে । বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমদিত যতগুলো সংগঠন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে সেগুলো বেশ সক্রিয় এবং ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার পাশাপাশি অন্যান্য সহ-একাডেমিক কার্যক্রমে বেশ সহায়ক । কিন্তু সম্পূর্ণই ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে একটি সংগঠনের অনুমতি দেয়া হয় চেতনা'৭১ নাম করে । এই সংগঠনটির উদ্দেশ্য নাচ-গান-অভিনয়-বিতর্ক ইত্যাদি কিছুই ছিল না । এই সংগঠনের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক পথ চলা । একপক্ষের সম্মানিত শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ এই সংগঠনের মাধ্যমে রাজনীতি করতে ইচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে শুরু করে এই সংগঠনের কার্যক্রম । এর ফলস্বরূপ সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি প্রতিষ্ঠানে শুরু হয় রাজনৈতিক ব্যানার টাঙ্গানো, কথায় কথায় সরকারের গুণগান গেয়ে উপাচার্য, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক ও কিছু শিক্ষকের কথা বলা, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন-মৃত্যুদিন পালন (যা আগে কোনদিন হয়নি), বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন (এইটা সম্পূর্ণই পরিস্কার) ইত্যাদি ।
অথচ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা কোন ন্যায্য বিষয় নিয়ে কথা বললেই তাদেরকে দুর্ভোগের শিকার হতে হয় নানা ভাবে । ছোট-খাট বিষয় নিয়ে নিজেরা মত দিলেও সমস্যা । যেমনঃ কয়েকদিন আগে এক ডিসিপ্লিনের ছাত্র-ছাত্রীরা ফেসবুকে তাদের নিজস্ব একটি সেক্রেট গ্রুপে একজন স্যারের বিতর্কিত ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করে । এই খবর কোন এক বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে ঐ স্যারের কাছে পৌঁছায় । এরপর তিনি আরও কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে এক হ্যাকারের সহায়তায় ঐ ফেসবুক গ্রুপটি হ্যাক করেন । পরবর্তীতে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে এক টার্ম বা ৬ মাস ও আর্থিক জরিমানা করা হয়, মানহানির কারণে । এই হল তাদের নিচু মানসিকতার চিত্র । এরকম উদাহারণ আরও হাজারটা আছে ।
ক্যাম্পাসে শিক্ষকরা পুরোপুরি স্বৈরাচারী মনোভাব প্রদর্শন করে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি । জুনিয়র কাউকে কিছু বললেই সাসপেন্ড, স্যারদেরকে ন্যায্য কিছু বললেই সার্টিফিকেট আটকে দেওয়ার হুমকি বা সাসপেন্ড, তাছাড়া পরীক্ষায় ইচ্ছে করে কম নম্বর দেওয়ার প্রবণতাও এই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকদের মাঝেই বিদ্যমান ।
প্রাক্তন কিছু শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের সময়ও জালিয়াতি চলে । উপরের মহলে যোগাযোগ থাকলে যে কোন রেজাল্টধারী ব্যক্তিই এখানে শিক্ষক হতে পারে । এর জন্য অবশ্য মোটা অংকের টাকার লেনদেনের খবরও পাওয়া যায় । এই কারণেই যোগ্য শিক্ষকের বর্তমানে খুব অভাব এখানে ।
পরিশেষে এতটুকুই বলতে হয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আজ পুরোপুরি অসহায় এই শিক্ষকদের কাছে । শিক্ষকরা ঠিকি নিজেরা পুরোদমে রাজনীতি করে গেলেও ছাত্র-ছাত্রীরা এক জায়গায় অনেকে একসাথে বসলেও তাদেরকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হয় । তাই সবার কাছে এই প্রশ্ন করতে বাধ্য হচ্ছি, আসলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব হচ্ছেটা কি ?
(আরও ঘটনা নিয়ে আসছি আস্তে আস্তে)
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৪০
স্বপ্ন পথিক বলেছেন: শিক্ষকদের হাতে অপব্যবহার করার মত ক্ষমতা থাকলে তা সংবরণ করতে কষ্ট হয় বৈকি। রেখেছে বাঙালী করে মানুষ করেনি -_-