নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঝিলাম নদীর দেশ

আমি যত ভালোবাসি ততই উজ্জ্ল হয় সে তোমার নাম...

বুলবুল সরওয়ার

কবিতাই প্রিয়। কিন্তু গদ্যও যে তার আরশিনগর। তাই নারীর চেয়ে যতই প্রিয় বলি দেশকে; প্রকৃতি হেসে বলেঃ ও হলো কথার কথা। এভাবেই একদিন প্রেমে পড়লাম ঢাকার... স্বপ্নের মত সুন্দরী এক বারবনিতা। থাক এসব ব্যক্তিগত প্যাচাল। তার চেয়ে আসুন পাঠ হোক...

বুলবুল সরওয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

চার হাজার বছর আগে ধ্বংসপ্রাপ্ত ট্রয় কোথায় আছে, আদৌ আছে কিনা- সে সম্পর্কে আমার স্পষ্ট কোন ধারণা ছিল না। জানতাম, নগরীটি ধ্বংস হয়েছে হেলেন-উদ্ধার পর্বের পরপরই। এটুকু অন্তত নিশ্চিত ছিলাম যে, এটি হোমারের স্বপ্ন-কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। --শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করতে হল যে, ট্রয় নগরীটি আছে; আছে এই তুরস্কেই। ইস্তাম্বুল থেকে মাত্র ছ’ঘন্টা দূরে সেই হেলেনের শহর!

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:০৮

চার হাজার বছর আগে ধ্বংসপ্রাপ্ত ট্রয় কোথায় আছে, আদৌ আছে কিনা- সে সম্পর্কে আমার স্পষ্ট কোন ধারণা ছিল না। জানতাম, নগরীটি ধ্বংস হয়েছে হেলেন-উদ্ধার পর্বের পরপরই। এটুকু অন্তত নিশ্চিত ছিলাম যে, এটি হোমারের স্বপ্ন-কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু আনোয়ার আমাকে বাধ্য করল মত বদলাতে। তার জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতায় শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করতে হল যে, ট্রয় নগরীটি আছে; আছে এই তুরস্কেই। এবং ইস্তাম্বুল থেকে মাত্র ছ’ঘন্টা দূরে সেই হেলেনের শহর!

রাতে একেবারেই ঘুম হলো না। মার্মারা ও কৃঞ্চ সাগরের দ্বৈত আন্দোলনে শুধু হাউস বোট নয়, কাঁপতে লাগল আমার মোহমুগ্ধ চেতনা ও লোভাতুর হৃদয়।

রাতে এসে থেকেছি এজিয়ান-সী সংলগ্ন কানাক্কাল শহরে। সকালের প্যাকেজে আমাদের সাথে রয়েছে ন’জন শ্বেতাঙ্গ এবং দু’জন জাপানী। জাপানীরা ইতিহাস খুব বেশি জানে না, জানতে চায়ও না। তবু তাদের ভ্রমণ-স্পৃহা ঈর্ষনীয়। সারা পথ ওদের ক্যামেরা ক্লিক-ক্লিক করে আর মুখ ছড়ায় দুর্বোধ্য কিচিরমিচির! শুনতে শুনতে কখন যে ১০ মাইল রাস্তা পার হয়েছি, টেরই পাইনি।

ইয়া আফান্দেম, পারদন-পারদন। হস বুলদুক, বির তানে বিলেত লুৎফুন... দু:খিত মহোদয়রা, সবাইকে স্বাগতম; অনুগ্রহ পূর্বক টিকিট নিন।

নেমে দেখি, সামনেই রোড সাইন: হিসারলিক। ব্রাকেটে ‘ত্রয়া’ বা ঞৎড়ু। দু’পায়ে ভর করা আমার সুস্থ দেহও অতলান্ত বেদনায় কেঁপে উঠল। ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্টগুলোতে গেলেই আমার এই হয়। পানিপথ- পানিপথ! শুনে একবার গভীর রাতে রাস্তায় নেমে দিল্লীর বাস হারিয়েছিলাম। ফেরাউনের কফিন বক্সে সস্ত্রীক ঢুকে জরিমানা দিয়েছিলাম মিশরীয় একশো বিশ পাউন্ড; ভ্যাটিকানে মিকেল এঞ্জেলোর ছবির খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম বলে পুলিশ আমায় দু’ঘন্টা জেরা করেছিল; দার্জিলিঙের বিদ্রোহী-নেতা সুভাষ ঘিসিংয়ের সাথে দেখা করার চেষ্টা করায় জেলে থাকতে হয়েছিল ছত্রিশ ঘন্টা। এই অস্বাভাবিক চাঞ্চল্য আমি এড়াতে পারি না। এ আমার বোকামী না অসচেতনতা- তাও বুঝতে পারি না। এবারও পাশের মহিলার কাঁধ স্পর্শ করে বললাম, ‘হে অতীত তুমি গোপনে গোপনে, গান গেয়ে যাও ভুবনে ভুবনে-।’

মহিলাও সুরসিক। কোমল আলিঙ্গনে আমার হাতে চাপ দিয়ে বললেন, ‘ট্রান্সলেট ইট। আই ওয়ান্ট টু লিসেন বেঙ্গলী পোয়েমস্।

আনোয়ার হাসছে।

তার সঙ্গে আমি মিশরসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণকেন্দ্রগুলো ঘুরেছি। সে আমার সাথী হয়েছে গ্রীসে, রোমে এবং প্যালেস্টাইনের ঝঞ্চাক্ষুদ্ধ পথে আর বলা যাবে না এমন অনেক শীর্ষস্থানে। ইয়েমেনের এই তরুণ আমার জীবনের অনেক আবেগের কথা জানে। ইংরেজী অনুবাদ উচ্চারণ করতে করতে আমি পা বাড়ালাম ইতিহাসের কোহিনূর সুন্দরী-ট্রয়ের অতল গহ্বরে।

জায়গাটা ট্রয় নামে জগদ্বিখ্যাত হলেও এখনো এর স্থানীয় ডাকে ট্রুভা। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে এজিয়ান সী’র রানী-হিসেবে রাজত্ব করে অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ সালে নগরীটি পরিত্যক্ত হয়। কবি হোমারের ইলিয়াড এবং ওডিসি’তেই লুকিয়ে ছিল ট্রয় এবং জগদ্বিখ্যাত হেলেন-উপাখ্যান। সবার মত আমিও ভাবতাম: এ - শুধু হোমারের কবি-কল্পনা; ইদিপাসের মত নিমর্ম কিছু। যাই হোক, প্রাচীন ট্রুভার আশে পাশেই আরো জনপদ গড়ে ওঠে- যার উপর আধিপত্য বিস্তার করেছিল ইরাকী, গ্রীক, মেসিডোনীয় এবং রোমানরা। জেনারেল সুল্লা শেষবার একে পুননির্মান করার চেষ্টা করেন খ্রিস্টপূবৃ দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দে কিন্তু কনস্টাটিনোপলের উত্থানে ট্রয়ের গুরুত্ব পুরোপুরি হারিয়ে যায়। এর বাস্তব অস্তিত্বের কথাই মানুষ বিস্মৃত হয় প্রায় দু’হাজার বছর।

আমরা কাঠের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছি। ইয়াসমিনার ধারা বর্ণনা তার আধখোলা স্কার্টের চেয়েও মনোহর।...

চার্লস ম্যাকলারেন নামের এক প্রতœতত্ত্ববিদ ১৮২২ সালে নতুন করে ট্রয় আবিষ্কার করেন। যদিও সবার ধারণা ছিল, ট্রয় এজিয়ান সাগরে তলিয়ে গেছে! জার্মান খননকারী হেনরীক স্কেলিমান জায়াটায় তিন বার ‘আক্রমন’ চালান। আক্রমন বলছি কারণ, স্কেলিমান আসলে কোন প্রতœতত্ত্ববিদ ছিলেন না। দক্ষিণ আফ্রিকার সোনা-উদ্ধার এবং ওয়েস্টার্ন লুঠতরাজের রুদ্ধশ্বাস-রোমাঞ্চকর কাহিনী পড়ে পড়ে জায়গাটার উপর তিনি এমন ভাবে ঝাপিয়ে পড়েন- যাকে ধর্ষণ বললে কম বলা হয়।

আমি আর আনোয়ার পরস্পরের মুখ চেয়ে মাথা নিচু করলাম।

১৮৭০ থেকে ১৮৯০-এর মধ্যেই তুরস্কের ওসমানী খিলাফত মর্যাদা হারাতে শুরু করে। সেই সময়ে স্কেলিম্যানের তস্করবৃত্তিতে বাধা দেবারও কেউ ছিল না। প্রথম দিকে জানেসারিরা এসেছিল বটে। কিন্তু পুরানো তরবারি, ছোরা আর খঞ্জর দেখে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেঃ ও-তো যে কোন কামারের দোকানেই পাওয়া যায়!

স্কেলিম্যান প্রথমে উদ্ধার করে অ্যাপোলোর স্বর্ণমূর্তি। এই অতি মূল্যবান প্রতœতাত্ত্বিক তৈজষ লুকাবার জন্য তিনি এটিকে মাটি-কাদা মেখে আবর্জনায় ফেলে রাখেন। এরপরে তিনি উদ্ধার করেন ট্রোজানদের ভাঙা সিংহাসন। এভাবে এগোতে এগোতে তার তস্কর বাহিনী রাজা প্রিয়ামের প্রাসাদ-তোড়ন পর্যন্ত পৌঁছে যায়। দুর্ভাগ্য তুর্কীদের! পাশারা এসব খবরই রাখেনি। সেই সুযোগে, বন্ধু বান্ধবদের মাধ্যমে প্রতিটি আবিষ্কার গিয়ে জমা হতে থাকে বার্লিনে; স্কেলিম্যানের নিজের বাড়িতে। তার লোভের কারণে, প্রতœ-বিজ্ঞানীরা দেখার আগেই মূল প্রাসাদ ভেঙ্গে পড়ে।... প্রকৃতি অবশ্য এর প্রতিশোধ নিয়েছে। গ্রীসের এক দ্বীপে স্কেলিম্যান মারা যান নিজেকে রাজা জিউসের পোষ্য-পুত্র ভাবতে ভাবতে। আর ওদিকে, বার্লিনে, তার বাড়ি থেকে সমুদয় নিদর্শন লুঠ করে ‘পুশকিন মিউজিয়াম’কে সমৃদ্ধ করে রাশান বাহিনী !

আবেগাক্রান্ত আনোয়ার তাকে সান্ত¡না দিতে সামনে এগিয়ে এলোঃ দেখ মাদমোয়াজেল, এ দু:খ তোমার একার নয়। রানী বিলকিসের রাজপ্রাসাদও ধুলিস্যাৎ হয়েছে রশিদ-বাহিনীর ঘোড়ার খুরে। কুইন-অভ-শেবা’র প্রাসাদে এখন তুমি গুটিকতক মাটির ঢিবি ছাড়া কিছুই দেখতে পাবে না। ইয়েমেনবাসীরা তার জন্য কাঁদতেও ভুলে গেছে!

তা ঠিক। বলল ইয়াসমীনা, আমাদের সবটা অবশ্য স্কেলিম্যান ধ্বংস করতে পারেনি। এই যে, এদিকে দেখ এম্ফিথিয়েটারের কিছুটা এখনো রয়েছে। মনে রেখ, এটি রোমের এম্ফিথিয়েটার থেকেও ১০০০ বছর আগের।

ফরাসী পর্যটিক শিলা বলল, এই ট্রয় কত নম্বর ট্রয়, মাদাম ইয়াসমিনা?

এটি ‘নয়’ নম্বর ট্রয়। প্রতœতাত্ত্বিকরা খুঁেজ পেয়েছেন আরো ৮টিকে। বিস্ময়ের ব্যাপার কি জানেন, ট্রয় বারবার ধ্বংস হয়েছে; আবার তার উপরেই গড়ে উঠেছে নুতন ট্রয়। যেন ইতিহাসকে কাপড়ের ভাজে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে একটির উপর আরেকটিকে উপুড় করে।

হেলেন কোন্ যুগের, ইয়াসমীনা? জানতে চাই আমি।

মধুর কটাক্ষ তার চোখে মুখে। যেন সে-চোখ দুঃখ করেই বলতে চায়: আমি থাকতেও হেলেনকে দরকার? ওহ্ হেলেন? হেলেন হচ্ছে নবম ট্রয়ের। স্পার্টান সম্রাট মেনেলাসের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত সেই- ট্রয়েই আমরা দাঁড়িয়ে আছি।’

কথা বলার ফাঁকে কর্তৃপক্ষ এসে গেল। আধা সামরিক জওয়ানরা সর্বত্র সজাগ ভঙ্গিতে দাঁড়ানো। আমি স্মৃতির জানালা খুলে দেখতে পেলাম আযাদ কাশ্মীরের এই প্রান্তে ভারতীয় পাহাড়-শীর্ষে দাঁড়ানো একই জওয়ানদের দৃশ্য। পার্থক্য এই যে, এখানকার সৈনিকরা রক্ষা করছে দেশের ইতিহাস, কৃষ্টি-কালচার ঐতিহ্য; আর আমাদের বন্ধুকগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে রক্তপাত, সাম্প্রদায়িক হানাহানি আর রাজনীতির নিষ্ঠুর পাশখেলায়। আমার প্রাণ কেঁদে উঠল মাটির জন্য: কবে আমার ভারতবর্ষ ফিলিস্তিনী-বর্বরতা থেকে মুক্ত হবে? কবে আমরা দলাদলি আর মতপার্থক্য ভুলে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারব: সারে জাঁহা সে আচ্ছা  হিন্দুস্তাঁয়ে হামারা...।

প্রফেসর সুলায়মান মুস্তাফা ট্রয়া-মিউজিয়ামের কিউরেটর-কাম-ডিরেক্টর। হাসিখুশি, প্রানোচ্চল মানুষ। টার্কিশ খিলাফত এবং এজিয়ান সি বিশেষজ্ঞ। তিনি আমাদেরকে বোঝালেন নৃতাত্ত্বিক নিদর্শনাদি- পানির কুয়া, প্রাসাদের সিঁড়ি, ঘরের খিলান এবং ইটের সুরকীর মধ্যে যৌক্তিকতা স্থাপন করে-করে তার উপস্থাপনার কায়দাটা যেমন উদ্ভুত, তেমনি বিস্ময়কর ইতহিাস-জ্ঞান। ভারী তথ্য থেকে শুধু এটুকু মনে গেঁথে নেয়া গেল যে- ট্রয় ছিল সুদৃঢ় প্রাচীর বেষ্টিত চমৎকার এক নগরী। ৭৫০ থেকে ২০০০ মিটার ছিল মূল নগরীর ব্যাসার্ধ। প্রাচীন কালে এ ধরনের শহরে শুধুমাত্র রাজা ও তার আমাত্যরাই বসবাস করতেন। নগরীর চারপাশে থাকত প্রজাবৃন্দ। সেটিকে পেরিমিটার ধরা হলে ট্রয় দারদানেলস্ (কানাক্কাল) থেকে দক্ষিণে প্রায় পনেরো মাইল বিস্তৃত। অর্থাৎ প্রাচীন রোম থেকে তার আয়তন ছিল দেড় গুণ বড়।

নয়টি ট্রয়ের ধ্বংস কাহিনীও অদ্ভুত। ১ম ও ২য় ট্রয় পুড়েছে আগুনে। ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম ট্রয় মিশে গেছে মহাকালের ধুলিকনায়- যার কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। ৬ষ্ঠ ট্রয় ভুমিকম্পে তলিয়েছে। ৭ম ট্রয়- স্বর্নযুগের স্মারক হিসেবে এশিয়া মাইনরের সবচেয়ে খ্যাতিমান সমুদ্র বন্দরে পরিণত হয়েছিল। পরের ট্রয় আবারও ইতিহাসের গর্ভে হারিয়ে গেছে। নবম ট্রয়কে কীর্তিমান করেছে হেলেন- যদিও সে নিজে ট্রোজাল ছিল না, ছিল স্পার্টান। এবং সেই ট্রয়ও ভস্মিভূত হয়েছে আগুনে! মেনেলাসের ক্রোধের হুতাশন!

হেলেন সম্পর্কেও অজানা অনেক তথ্য দিলেন প্রফেসর। সত্যিকার হেলেন কতটা সুন্দরী ছিল, সে-তথ্য জানা যায় না। সে-কি প্যারিসের প্রেমে পড়েছিল, না কি প্যারিস তাকে লুঠ করে এনেছিল তাও রহস্যাবৃত। তার বিয়ে হয়েছিল কমপক্ষে ৩ বার: রাজা মেনেলাস, প্যারিস এবং প্যারিসের ছোট ভাই ডাইফোবাসের সাথে। মেনেলাসকে হেলেন একটি কন্যা উপহার দেয়- নাম হারমিয়ন। ট্রয় যুদ্ধ শেষ হবার আগেই প্যারিস নিহত হয় এবং তার দু’ভাই হেলেনাস ও ডাইফোবাস ভাতৃবধূঁকে পাবার জন্য দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবর্তীন হয়। হেলেনাসকে পরাজিত করে ও নিহত হেলেনকে লাভ করে ডাইফোবাস। যুদ্ধ-শেষে মেনেলাসের হাতে নিহত হয় ডাইফোবাস। হেলেনকেও মারতে উদ্যত হয়েছিলেন মেনেলাস। কিন্তু তখনো হেলেনের রূপ ছিল এমন যাদুকরী যে মেনেলাসের ক্রোধ পানি হয়ে যায়। শেষ জীবন হেলেনকে নিয়ে মেনেলাস মিশরে কাটান। ঐতিহাসিকের মতে, তাদের মুত্যু হয় গ্রীসের থেরাপিয়নে।আমাদের আবেগকে তুঙ্গে তোলার জন্যই যেন ফরাসী সুন্দরী জ্যাকুলিন জানতে চাইল: ‘প্রফেসর, হেলেনের সাথে কত পুরুষের সম্পর্ক ছিল?

প্রফেসর হেসে বললেন, আধুনিক বিজ্ঞানীরাই যখন রমনীর মন মাপতে পারে না, আধা-পূরাণ নিয়ে টানাটানি করে লাভ কি, মাদমোয়াজেল? আর আপনাদের ধর্মই তো আমাদের বিদ্ধ করা; হৃদয়মনকে উন্মাতাল করে বিশ্বযুদ্ধ লাগিয়ে দেয়া। তারপরও জানতে চাইছেন বলে বলি: বিয়ের পূর্বেই থেসিয়াস তাকে ধর্ষন করে- যে কারণে পিতা জিউস কিশোরী বয়স পেরুতে না-পেরুতেই হেলেনকে রাজা মেনেলাসের হাতে তুলে দেন। এরপর প্যারিস তাকে অপহরণ করে এবং ট্রয় যুদ্ধকালীন সময়ে প্যারিসের আগের পক্ষের ছেলে করিথাসের সাথেও তার প্রণয় গড়ে ওঠে। ফলশ্রুতিতে করিথাসকে হত্যা করে প্যারিস। যারা বিশ্বাস করে যে হেলেন আসলে দেবী, তাদের ধারণা, স্বর্গে একিলিসের সাথে হেলেনের মিলন হয়েছে।

একিলিস? মানে প্যারিসের ভাই? ট্রোজান মহাবীর আমি স্তম্ভিত কণ্ঠে জানতে চাই।

জ্বি-হা।

তার মানে...।

হ্যা-হ্যাঁ, সুন্দরীদের মনের মানে অনেক; রূপের মানে মনোবিকার। বলেই প্রফেসর উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠলেন। আর এই এজিয়ন সী’র লবণেই আছে হাত-ধরাধরির অসংখ্য কাহিনী। ঝিনুকের যেমন মুক্তা, ভূমধ্য সাগরের তেমনি প্রণয়!

আমরা মোহিত, বিস্মিত, আপ্লুত।

জাপানী পর্যটকদের মধ্যে একজন নিচু হয়ে একমুঠি মাটি নিয়ে বলল, শ্যাল আই মেক অ্যানাদার পোর্ট্রেট অভ হার?

য়াসমীনা আঁৎকে উঠে বলল, নো, মাই ফ্রেন্ড, নো। আমরা বিশ্বাস করি, ট্রয় থেকে কেউ কিছু নিতে চাইলেই যুদ্ধ অনিবার্য- সে মাটি হোক কিংবা মানবী! আমরা চাই, পৃথিবী আপাতত শান্ত থাকুক। দয়া করে গাল্লিপলির আতার্তুককে জাগিয়ে দিও না। আনজাক ও তুর্কী বীররা শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে; ঘুমাক। একিলিস আর আগামেনন যদি মৃত্যুর ও পাে শান্তিতে থাকতে পারে থাকুক না কেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বীর-বিক্রম মোস্তফা কামাল দার্দানেল্সে ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়-নিউজিল্যান্ডার (আনজাক) বাহিনীর বিপুল আক্রমনকে। সে ইতিহাস পশ্চিমা শক্তির কাছে কান্নার হলেও তুরস্কের সবচেয়ে বড় গৌরব। ইয়াসমীনার স্বাজাত্যবোধকে সম্মান জানিয়ে জাপানী পর্যটিক মুঠি ঝেড়ে ফেলল।

ইয়াসমীনা তার হাতে কফি ধরিয়ে দিয়ে বলল, সরি, মাই ফ্রেন্ড। ফর দ্য শেক অভ হেলেন, আই অফার ইউ অনলি ডিংক্সস উইদ থ্যাংকস।

আমরা ‘থ্যাংকিউ’ বলে পা বাড়ালাম গাল্লিপলির দিকে। যদিও জানি, পৃথিবীর বহু যাত্রাই পরিভ্রমণ নয়; আবার অনেক গমনই অগস্ত যাত্রা! (চলবে??)

----------------------ঐতিহাসিক তথ্য--------------------

হেলেন সমগ্র

একটি সোনালী আপেলের গায়ে লেখা ছিল ‘সেরা সুন্দরীর জন্য’। সেই নিয়ে তিন রূপসী আফ্রোদিতি, হেরা ও অ্যাথেনার মধ্যে ঝগড়া বিচার গেল রাজা জিউসের কাছে। তিন নারীই জিউসের ঘনিষ্ঠ। বুদ্ধিমান জিউস ব্যাপারটা গড়িয়ে দিলেন রাজপুত্র প্যারিসের উপর।

তিন সুন্দরীই প্যারিসকে পটাবার চেষ্টা করল। জিউস-পতœী হেরা বলল, আমি তোমাকে দেব পুরো এশিয়া এবং তার বিপুল সম্পদ; জ্ঞানের দেবী অ্যাথেনা তাকে সকল যুদ্ধ-জয়ের নিশ্চয়তাসহ শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীর মুকুট সাধল; প্রেমের দেবী আফ্রোদিতির প্রতিশ্র“তি অতি ক্ষুদ্র সুন্দরী শ্রেষ্ঠা হেলেনকে দেব তোমায়। ট্রয়ের পুত্র প্যারিস তৃতীয় সুন্দরীর প্রস্তাবে মাথা নোয়াল।

পুরস্কার আনার জন্য স্পার্টায় গেল সে। স্পার্টান রাজা মেনেলাস গেছেন যুদ্ধে। আফ্রোদিতির চালে রাজা রাণী হেলেন প্রেমে জড়াল অতিথীর। সুযোগমত হেলেনকে নিয়ে পাল তুলল প্যারিসের জাহাজ। ক্রুদ্ধ মেনেলাস পাগল-প্রায়। স্পার্টার বিজ্ঞ-সংসদ সিদ্ধান্ত দিল যুদ্ধের; শিক্ষা দিতে হবে ট্রোজানদের। ১২২৭ রণতরী এবং বিপুল অস্ত্রের সেনাপতিত্ব পেল রাজভ্রাতা (বীরশ্রেষ্ঠ) আগামেনন।

কিন্তু দশ বছরের যুদ্ধেও নত হল না ট্রয়। শেষপর্যন্ত অদ্ভুত এক কাঠের ঘোড়া ‘উপহার’ রেখে পিছু হটল স্পার্টানরা। শত্র“র পলায়নে উল্লসিত ট্রয়বাসী সেই ঘোড়া নগরীর অভ্যন্তরে টেনে নিয়ে গেল। গভীর রাতে ঘোড়া থেকে নেমে এল লুকানো সৈন্য। খুলে দিল নগর তোড়ণ। ততক্ষণে ফিরে এসেছে স্পার্টান বাহিনীর হাজার রণতরীর।

...পরের কাহিনী সবাই জানেন। প্রতিশোধের আগুনে ছাই হল ট্রয়; কাব্যের চিরায়ত বিষয় হল হেলেন।

-------------------------------------------------

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +১৩/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২০

হুমায়ূন লিটন বলেছেন: অনেক তথ্যনির্ভর। আমার অনেক কাজে লাগবে। ধন্যবাদ।

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২৭

এক্সপেরিয়া বলেছেন: সুন্দর হইছে ।

৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:০১

খেয়া ঘাট বলেছেন: দারুন লাগলো।

৪| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪১

টাইম নাই রাস্তা বেশি বলেছেন: প্যারিসের ভাই একিলিস না , হেক্টর । একিলিস গ্রীক বীর । একটু সংশোধন করে নিলে ভালো হয়।

লেখা চমৎকার হইসে । ;)

৫| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:০২

আহমেদ সাব্বির পল্লব বলেছেন: টাইম নাই রাস্তা বেশি: ;)

লেখক: লেখা ভাল হয়েছে.....

৬| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১৫

*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: গল্পের ছলে ভ্রমণ ও ইতিহাসের সাথে পারিপার্শিক অনেক কিছুর মিশেলে অসাধারণ বর্ণনার এক সত্যিকার লেখনি। মুগ্ধ হয়ে পড়ে গেলাম।

৭| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:১২

এডওয়ার্ড মায়া বলেছেন: ++W+

৮| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫১

খিয়ারি বলেছেন: খুব ভালো লেগেছে। ব্লগে আপনার লেখা পেয়ে আরো ভালো লাগছে। জানিয়ে রাখি আপনার অনূদিত কুয়োভাদিস বা বারাব্বাস আমার প্রিয় বই গুলোর তালিকায় আজীবন থাকবে।

৯| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:০১

মুনসী১৬১২ বলেছেন: অসাধারণ

১০| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:১১

নগরের ধনেষ বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। ++++

১১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৩১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আপনি ঘুরলেন কখন!

আমিইতো ভ্রমন করে এলাম। আমার দেখা গুলোই আপনি এত সুন্দর করে লিখলেন কিভাবে ;)


দারুন.....
++++

১২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১৩

সাকিব বাপি বলেছেন: অসাধারণ হয়েছে। ++++++++

১৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২১

মাহবু১৫৪ বলেছেন: অসাধারণ বললেও কম বলা হবে

++++++


অনেক অনেক ভাল লাগা

১৪| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫০

মৃন্ময় বলেছেন: এবার আমায় যেতে হবে.............খুব ভালো লাগলো,লেখককে ধন্যবাদ

১৫| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:১৯

মায়াবী রূপকথা বলেছেন: অসাধারন পোস্ট। ধন্যবাদ। :)

১৬| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫৫

বুলবুল সরওয়ার বলেছেন: ভারী কষ্ট হয়, কারণ, কম্পিউটারে লিখতে পারি না। বহু কষ্টে ২/১টা লেখা দেই, কিন্ত, বানান ভুল আর ভাঙ্গা-ভাব থেকে যায়। তাও আপনারা এত মুগ্ধ হয়ে পড়লেন-- আমি অভিভূত!! পারলৈ হৃদয়-টাই দিয়ে দিতাম; আপপতত ধন্যবাদ থাকল। দোয়া করবেন, ঐতিহ্যের জন্য বিশাল এক অনুবাদ করতে যেয়ে (ড্রাগন সীড/পার্ল এস বাক) ঘুম কামাই। আরো লেখা দেব কি??

১৭| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:১৪

খিয়ারি বলেছেন: লেখা পেতে চাই। আরো আরো অনেক।

১৮| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০৩

নীলপথিক বলেছেন: বুলবুল ভাই, আপনার লেখা পুরোটা পড়িনি। না পড়েই মন্তব্য করতে হলো। মেলা জায়গায় ঘুরেছেন বোঝা যায়। সুতরাং, পেট ভরা হিংসে রইলো আপনার বরাদ্দে। আমিও ঘুরতে ভালোবাসি, আল্লাহর মেহেরবানীতে টুকটাক কয়েক জায়গায় ঘুরেছিও। আপনার সিরিজটা অনুসরণে রাখলাম। পরে পড়বো। ভালো লাগলো বলেই একটা কথা না বলে পারছি না, সবার মন্তব্যের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলে মনে হয় ভালো হত। মানুষ পছন্দ করে এটা (কম্পিউটারে লিখতে কষ্ট হয় হেতু একটা জেনারেল রিপ্লাই কপি করে রাখতে পারেন, সবাইকে ওটাই রিপ্লাই করবেন)

১৯| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৫

বুলবুল সরওয়ার বলেছেন: আপনার জন্যই শিখলাম।
ধন্যবাদ।

২০| ২৩ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:০৬

গগণজয় বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। +++
কিনতু কোনো ছবি নেই কেন ?

২১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১১

মুদ্রা সংগ্রাহক বলেছেন:
বেশ দীর্ঘ লেখা। ভাল লাগলো ।


প্যালেস্টাইন ক্যামনে গেলেন? জেরুজালেম যাওয়ার ইচ্ছে আছে, কিন্তু বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে তো ইসরায়েলী বর্ডার ক্রস করতে পারব না। বিকল্প কোন বুদ্ধি থাকলে জানান তো।

২২| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৬

জিনিয়াস০০০ বলেছেন: সবটা পড়তে পারলাম না, তবে বর্ণণা সুন্দর হয়েছে।

২৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১১:২৫

অতঃপর জাহিদ বলেছেন: প্রিয় তালিকায় যুক্ত করে রাখলাম!

২৪| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৫১

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: তথ্যবহুল।

২৫| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৫

আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন: অাপনার লেখায় জাদু অাছে.....

২৬| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৪

কসমিক- ট্রাভেলার বলেছেন:





+++++++++++++++++


আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.