নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঝিলাম নদীর দেশ

আমি যত ভালোবাসি ততই উজ্জ্ল হয় সে তোমার নাম...

বুলবুল সরওয়ার

কবিতাই প্রিয়। কিন্তু গদ্যও যে তার আরশিনগর। তাই নারীর চেয়ে যতই প্রিয় বলি দেশকে; প্রকৃতি হেসে বলেঃ ও হলো কথার কথা। এভাবেই একদিন প্রেমে পড়লাম ঢাকার... স্বপ্নের মত সুন্দরী এক বারবনিতা। থাক এসব ব্যক্তিগত প্যাচাল। তার চেয়ে আসুন পাঠ হোক...

বুলবুল সরওয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবির কান্না তার নিয়তী ছাড়া আর কি? শুধু একটা ব্যাপারই সামান্য সান্তনা হয়ে থাকে যে দিল্লীর মহামহিম বাদশাহ আর বুজুর্গেরা বিস্মৃত হলেও বেঁচে থাকেন গালিব-মীর!

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩৬

মার্কেজকে যখন প্রথম পড়ি, ভ্যাবাচেকা খেয়ে গিয়েছিলাম জীবনের-মধ্যেই জীবনের উত্থান-পতন দেখে। এ-কী যাদু বাস্তবতা, সুররিয়ালিজম না-কি উত্তর আধুনিকতা? কোন বিশেষণেই ‘হান্ড্রেড ইয়ার্স অভ সলিচ্যুড’কে বাঁধতে পারিনি।

তখন অসহায়ের মত কবিতা লিখলাম---



চারিদিকে যুদ্ধ আর মৃত্যুধ্বনি! বিপন্ন মানুষ

কোথাও শান্তি নেই- স্বস্থি সুখ ভালবাসা প্রেম

কেউ দুঃখে, কেউ সুখে আচ্ছন্ন; এ পৃথিবী বেহুশ

পাখী ও ফুলের প্রীতি কিছু নেই। ‘তোমাকে দিলেম’-

বলে দেয়া যায় উপহার।

এমন কি হাসিটুকু

দিতে গেলে

চিন্তা করি কাজ

আছে কিনা ঠিকঠাক সবকিছু। যেহেতু সমাজ

যুদ্ধ চায়। রক্ত চায়।

প্রাণ আর প্রণতির সুখ

নেই তার প্রয়োজন; কবিতারও হয়েছে অসুখ।



ঘুম ভেঙে জেগে উঠি- অযথা সন্ত্রাস

ভীতা হরিণীর মত। ভয়ের কুয়াশা করে গ্রাস

গ্রাম গঞ্জ লোকালয় ব্যক্তিগত সীমানা আচার

নাম ধাম কুশলাদি...

কোন নীতি মানেনা সংসার।

ঘাস ফুল মেঠোপথ

অবারিত শৈশবের পৃথিবী চঞ্চল

আকাশের নীলাচলে যাতনার অজস্র ফসল

পৃথিবীতে ছেয়ে আছে। নেই প্রেম

স্নেহ প্রীতি নেই

ভালবাসা হারিয়েছে ভালো-বাসা পাবার আগেই।



‘সরে যাও সরে থাকো’ বলে করি পাখীদের তাড়া

অভিমানের নারী আর দূরে সরে যায় কবিতারা।




রোঝেনই, তখন প্রথম যৌবন। দেশজুড়ে স্বৈরাচার। মুক্তির অন্বেষা। কিন্তু পথ কৈ? অনুসন্ধান তাড়িয়ে বেড়ায় যৌবনকে। যৌবন একবার দ্রোহ, একবার মিলনের কাছে যেয়ে ক্লান্ত হয়। সেই ক্লান্তিকে ধুয়ে দেবার জন্যই দুর্যোগের আবাহন করি। কিন্তু যুদ্ধ-ই-তো জীবন নয়।

কি করি? কি করি??

ছুটলাম আল মাহমুদের কাছে। কিন্তু তিনি তখন আফগানিস্থানে!

আমিও উড়ে যেতে যেতে গেয়ে উঠলাম---



সাড়ে তিন হাত হাড় কবরের ভুঁই

ফুল পাখী নদী নীড় দেবোনা কিছুই

দেবোনা যবের ছড়া।

ফসলের শতকরা

সবুজে শ্যামলে আঁকা থোকা থোকা জুঁই

নাও নদী ঢেউ জল দেবোনা কিছুই।



গজনী কাবুল হিরা খাইবার পাস্

দেবোনা পাহাড়ী গান লু-বহা বাতাস

যে ভাষায় কথা কই

ধার দিতে রাজী নই

চাঁদের সুষমা আর ফুলের সুবাস

দেবোনা গানের সুর, নিলীমা-আকাশ।



দেবোনা পালিয়ে যেতে কোনো হানাদার

রক্তের লোভে যারা আসে বার বার

বারুদের উপহার

যত চাই দেবো, আর

উজাড় দু’হাত ভরে শোধ দেবো ঋণ

যাবোনা সীমানা ছেড়ে ইঞ্চি জমিন।



খুন আর খুনীদের কালো ইতিহাস

দেবোনা দীর্ঘ হতে মায়ের নিশ্বাস

গৃহ গ্রাম নদী জল

উৎসব কোলাহল

আশিশু লালিত-ভূমি চকোরের গান

দেবোনা উদাস হাওয়া প্রেমের উঠান।



দেবোনা বাপের ভিটে হ্রদ টলোমল

পাহাড়ের চুড়া আর ঝর্ণার জল

যতদিন অধিকার

ফিরে পাবে নদী তার

দেবোনা কিছুই এর খোদার কসম

ততদিন অসুখের নেই উপশম।




কাটতে লাগলো দিন। মহানায়ক সাদ্দাম হোসেন হলেন খলনায়ক-- তারপর শহীদ (!)। ভাবতে লাগলাম, জীবন আসলে কী? রাজনীতির খেলাটা কারা খেলেন? তক্ষুণি চেপে আসতে লাগলেন এডোয়ার্ড সাঈদ, নগ্গুগী আর নাগিব মাহফুজ। গেলাম কায়রোতে। দেখলাম মৌ-লোভী আর নি:স্বার্থ মানুষের অনিশ্বেষ লড়াই।----



আঁখি কি কেবলি চোখ?

লোকে বলে তাই

বলে তা বলুক; যীশু খ্রীষ্টকে দাও

সে বলে, কামুক দৃষ্টিতে যদি চাও

তাই হবে সম্ভোগ। শাসনও চমৎকার

অঙ্গার হবে পুড়ে পুড়ে ফের প্রাণ পাবে অঙ্গার।

আঁখি কি কেবলি জল?

নারী তাই ভাবে

ভাবে সে ভাবুক; রাবেয়াকে আনো ডেকে

বলেনি সে, ব্যথা না ঝরে এখান থেকে

কান্নাই নিষ্ফল? যে জলে ফোটে না ফুল

বন্যার তোড়ে ভাঙ্গে তার সীমা ভাসে লোকালয়-কুল।



আঁখি কি কেবলি বান?

প্রেম বলে তাই

মিথ্যা সে কথা; ডাকো কবিদের ডাকে।

তার চোখে চোখে রাখো

জিজ্ঞাসা করো-

যে চোখের মহীয়ান

পানি দিয়ে ভেজা তায়েফের বালু- জানে তার সমাধান

কোন কথাকার? ভুলে যাও ভুলে যাও

নিজেই যে পথ হারিয়েছে কেন তার কাছে দিশা চাও!



হায় আঁখি হায় চোখ

তুমি সুখ নাকি শোক

কখনো ঝর্ণা, কখনো প্রপাত কখনোবা শবনম

বিন্দুর মাঝে সিন্ধু না তুমি হৃদয়ের দর্পণ।



জানলো না এই মন!




কিন্তু এ-যে কেবল ভাবাবেগ! কেবল নস্টালজিয়া!! ফিরে আসলাম নিজের দেশে, বাংলাদেশে। কিন্তু দেখলাম, যারা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে হাতে-মুখে ঝাঁটা তুলেছিলেন, তাদেরও পতন হলো। বুঝলাম, আমি বড়জোর সাহিত্যের লোক, রাজনীতির নই। কারণ, আমার প্রশ্নের উত্তরে আমিই মুখ নীচু করে থাকি। কি প্রশ্ন? জটিল কিছু নয়, অতি সাধারণ---



ছেপাতুল্লার সেই মেয়েটি-

ছিপছিপে যার গায়ের গড়ন

সলাজ মুখের ডাগর চোখের অশ্রুজলে

ডুবলো কেন গাঙের জলে?



স্বার্থী সমাজ দেয়না জবাব

দেয়না গরীব ভুখা-ফাঁকার

শূন্য পেটের অন্ন যোগান

মাঘের শীতে এক থালা ভাত

গরম মরিচ নুনের সাথে

কাপড় দু’হাত।



অন্ন কেনার পণ্য কোথায়

কোথায় সবুজ জমির ফসল

কোথায় সোনার ধানের গোলা

মুগ সরিষা রাইয়ের বস্তা কোথায় গেলো?

কার সে বুকের পাটা এমন

দিন দুপুরে সবার বুকের উপর দিয়ে

পুকুর চুরি

বুকের রক্তে অংশীদারী দাবী করে

জোর জুলুমে?



সোনার আঁশের মুখ কেন আজ

এমন মলিন

তামার মতো!

অনাদরে বিলের পাড়ে

ঝিলের ধারে

যায় শুঁকিয়ে চিল শকুনের পয় মেঘে

তার- সোনার বরণ

করিম মিঞার বউয়ের মতো

ঘোমটা জুড়ে ঘরের বাইরে

যেতে বারণ;

খেতে বারণ নিজের হাতের

শাক সবজির পুষ্টিটুকুন!



স্বাধীন দেশের মমিন মিঞার

দুধের গাইটা

থানার সাহেব নিয়ে গেল

নিয়ে গেল চোখের সামনে

বেড়ে-ওঠা মেয়ে দুটোর আব্রু হায়া

পাক-বেনিয়ায় হার মানিয়ে।

স্বাধীন দেশের স্বরাজ কেন

মমিন মিঞার সুখের ঘরে

আগুন লাগায়?

দেয়না জবাব গদীধারী

ভোট নেয়া সব অঙ্গীকারী।



চলতে গেলেই নানান বারণ

নানান শাসন; পেষণ-শোষণ

জুজুর ভয়ের নানান ধরন

জেল জুলুমের হুমকি ধামকি

রাজ রাজাদের গড়া নিয়ম

ভাংতে গেলেই

কাঠ গড়াতে আসতে হবে

মিলবে নাকো বিচার আচার

বললে কথা ‘বেয়াদবী’

শাস্তি দেবেন দন্ডধারী।



বিশ পয়সার গোল টুপিটা

তেল চিটচিট বছর দশেক

হাত বদল আর হোলনা, ভাই

আমিনন্দি মনের ক্ষেদে পাথর ভাঙে;

আশি তালির জায়নামাষে

পা রেখে আর যায়না বসা

মাটির মানুষ মফিজুদ্দিন

মাথা ঠেকায় মাটির সাথে

কাস্তে চালায়

লাট-বা’দুরের ধানের শীষে।



অলি মিঞার সোনার ছেলে

চকচকে যার মুখের আদল

সলাজ মুখের স্বপ্ন ঘেরা

মরলো কেন রশি বেঁধে?

শোষক সমাজ দেয়না জবাব

দেয়না আমিন-মমিন মিঞার

শূন্য পেটের অন্ন যোগান

মফিজুদ্দির জায়নামায আর

পরের বুলি ধার করা সেই ফেব্রুয়ারীর

দুঃখ মোছার দেয়না ফাগুন

মায়ের ভাষায় কথা বলার

সেই অধিকার-

গরম মরিচ নুনের সাথে

কাপড় দু’হাত থাকার জায়গা

শীত কাটা রাত

শ্যামল প্রভাত

কিসের জন্য? কাদের জন্য?

কোন আদালত মহামান্য?




তবু, চলি; হেমিংওয়ের ভাষায়, তবুও সূর্য ওঠে। কিন্তু আমার মনের চাঁদ কেবলই ডুবে যায়। হতাশা আক্রমন করে চেতনাকে। বিষন্নতা যা করে, ক্ষোভের জন্ম হলো আবারও কামনা করলাম, ঝড় আসুক বৃষ্টি আসুকঃ--



এখানে-

নামুক বৃষ্টি তীরের মত মুষলধারে বৃষ্টি নামুক

জং ধরা এই জীর্ণ শকট একটু সময় একটু থামুক।

তীক্ষ্ম হাতের তীরের মত আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নামুক।



আসুক প্রলয় পাগলা ঘোড়া, মাতাল ঝড়ের ঝাপটা আসুক

দালান কোঠার সাহেব-সুবা একটু জলে একটু ভাসুক।

কাল বৈশাখী ঝাপটা বুঝাক এই জীবনের দুঃখ-অসুখ।



তীব্র তোড়ের বন্যা এসে জীবন জমি যাক ভেসে যাক

বহুদিনের সঞ্চিত সব ময়লা কাদা সাফ হয়ে যাক

পাহাড় ভাঙা বন্যা দিয়ে আসল-নকল ফাঁক হয়ে যাক।



নগরীর-

বিঘত উপর একশ একটা তীব্র তেজের সূর্য জ্বলুক

দেশদ্রোহী মাথার ঘিলু মোমের মত ফুটুক গলুক

আইন না-মানা দালানগুলোর দারুণ খরায় ভিত্তি টলুক।



আজকে সুনীল আকাশ থেকে চঞ্চু বেয়ে পাথর নামুক

অহংকারীর আর্তনাদে দীন মজুরের কান্না থামুক

আবর্জনার এই নগরী ঝাপটা ঝোড়ো হাওয়ায় ভাঙুক।




কিন্তু আমাদের কোন কামনাই পূর্ণ হয় না। মনে হয় ফিরে যাই আবার সেই একুশ বৎসরে। কিন্তু চাইলেই কি আর মানুষ প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেতে পারে? আমিও ব্যর্থ হলাম। তলস্তয় হয়ে শেষ চিঠি লিখলাম নিজেকেই---



আমার এ পথ পথের মধ্যে হারিয়ে যাবে, নেই ঠিকানা।

স্বয়ম্বরা ভুল করেছি

বকুল ফুলের গন্ধে ভুলে ভুল করেছি

আজ মনে হয় সব ছলনা।

পথের পাখী পথেই চলে

দিন কাটে তার শস্য দানায়, রাত্রি ঘুমে

ঐ যে তিনি জগৎ যিনি লালন করেন

তিনিই জানেন

থামবে কোথায় ক্লান্ত ডানা।



ঘামের গন্ধ কামের গন্ধ

আলিঙ্গনের চাঁদনি মেঘে তৃপ্ত কি মন?

হায় কামিনী! তার ভেতরে হৃদয় আছে

আকাশলীনা, দেখলে তো না!



কিসের দুঃখ? অভাব তো নেই!

দুকুল ছাপা জলের ভেতর সাঁতার দিয়ে

ঝিনুক পেলাম হাজার হাজার

সব নারী কি ঋতুবতী? সব ঝিনু’কি মুক্ত-বোনা?



কোথায় পালাই কাকেই বা দেই

জীবন জোড়া খ্যাতি-সুনাম? তবুও যাবো

যেতেই হবে

নদীর মত সাগর পানে। গান শুনেছি

মুত্যু মানেই জীবন জানা।



পথ তো হারায় পথের মাঝেই

সেই তো পথের শেষ ঠিকানা।




বাঁক জীবনেকে বদলায়, নাকি জীবনই বাঁক তৈরী করে বুঝতে না-পেরেই শাহবাগ থেকে বইমেলা, ইডেন থেকে রমনা-পার্ক ঘুরি, আর ভাবি, আমার প্রিয়তম বইমেলার এবার কত ক্ষতি হলো? পত্রিকার বিগ্গাপন দেখে এটা আন্দাজ করা কঠিন যে একটি ব্যর্থ-বইমেলা কত লেখক-প্রকাশককে পথে বসিয়ে দেয়!.. আমরা আসলে খুবই অস্থির জাতি।



কবিতা আমাকে পাগল করে আবার----



একদিন যার হাতে বাঁধা ছিল সবল কুঠার

আঘাতে আঘাতে কেটে সরিয়েছে আগাছার ঝোপ

আজ তার সে-বাগানে সাপ আর শীতের প্রকোপ

চৌচির মাটি ফেটে জেগে ওঠে আগাছার ঝাড়;

শস্য আর ফসলের তেজ বীর্যবাহু অহংকার

যা ছিল সহায় তার-- সম্প্রতি হয়েছে বিলোপ

অসতর্ক মুহুর্তের অন্ধকারে; লালসার টোপ

ক্ষয় আর হতাশায় নিভে গেছে কুঠারের ধার।



অথচ শপথ ছিল ভ্রান্তির প্রতি পলে পলে

আমাদের হাত হবে সীসা ঢালা প্রাচীরের জোট

যা বলে বলুক লোকে। থামবে না ধানের শকট

স্বেদ আর শিশিরের স্নান সেরে ঘুমাবো সকলে।



জং ধরা কাঁচি আর হাতুড়ির সওদা করে আজ

প্রদাহের বিষে নীল আত্মঘাতি কৃষক সমাজ।




হায়-রে বাংলাদেশ, হায় আমার মাতৃভূমি!! আমি বিভ্রান্ত হই, ক্ষুব্দ হই, সম্মিলিত আওয়াজে মিশে যাই। আবার কাঁদিঃ প্রভূ, আমি এখন কোথায় যাবো?/ বহুকাল যাবৎ আমার কোন ঘর নেই/ আমাকে কে আশ্রয় দেবে?/প্রভু, আমার ভাষা দাও--



আমার ভেতরের সেই শিশু, যে খোমেনী থেকে গর্ভাচেভ পর্যন্ত মহা-মানুষদের দেখে-দেখে বিভ্রান্তিতে ডুবে আছে, আবারও নিজের জন্য গান গায়ঃ---



বিষাক্ত সাপের ফনা- লক্লকে জিভে ঝড়ে বিষ

চোখের দুকুলে আঁকা মরুভূমি

এখানে প্রহরী যারা সুযোগের অপেক্ষায় আছে

রাতের বাতাস আনে শংকার আভাষ

আঁচল না পেয়ে ছেলে খামচে আছে বোনের শরীর

কুপ পাখী প্যাঁচারাও বাসা ছেড়ে যায়নি শিকারে

ভয় কি পাবেনা শিশু?

ভয়ে কাল থেমে গেছে ঘড়ি;

দুয়ারে গোপনে এসে কেঁদে গেছে প্রেতের নিশ্বাস!



এখানে হাড়ের শব্দে হাহাকার

ভালোবাসা ভালো লাগা

নিষিদ্ধ এ রাতে সবকিছু

ভৌতিক প্রহর

ছেলেকে নিবিড় চেপে ঘুমিয়েছে ক্লান্ত জননী

সকালে জাহাজ এসে দিয়ে গেছে ছেঁড়া-খোঁড়া লাশ

এসেছে পড়শীরা

আত্মীয় স্বজন দূর দুরান্তের এসে

মুছেছে নয়ন....

ভয় কি পাবেনা শিশু?

ভয়ে কাল থেমে গেছে ঘড়ি;

দুয়ারে গোপনে এসে কেঁদে গেছে প্রেতের নিশ্বাস!



এখানে আকাশে কাক, বাতাসে শকুন

তার-নেভা গাঢ় রাত্রি

গেড়েছে বসতি

দুয়ারে বাঘের নখ সিংহের ভ্রুকুটি

কিসের দর্পন?

যে কলিরা অপেক্ষায় ছিল

ঝরে গেছে গতকালই

ঘরের চূড়ায়

জিঘাংসায় খামচে ধরা ভল্লুকের থাবা !

পাল না তুলেই

উল্টে গেছে জেলেদের ডিঙ্গির বহর

ভয় কি পাবেনা শিশু?

ভয়ে কাল থেমে গেছে ঘড়ি;

দুয়ারে গোপনে এসে কেঁদে গেছে প্রেতের নিশ্বাস!



এখানে পুরুষ পঙ্গু নারীদের লুণ্ঠিত শরম

প্রাঙ্গনে খড়গ খোলা বল্লমের সুচাগ্র ফলক

লেলিহান অগ্নিশিখা ছুঁই ছুঁই

নির্ঘুম রাত্রির শেষ প্রহরে জোনাকী মগ্ন

নিষিদ্ধ গন্ধমে; হায়

কবিও পেয়েছে ভয় ! যদিও বিপ্লব

ফরজ-পাঠ্যের নীচে লুকিয়েছে বাজেয়াপ্ত বই

জামার আস্তিনে রাখা লিফলেটে সবুজ পতাকা

ভদ্দর লোকের মত রাত চলে দিনের-ডাকাত

ভয় কি পাবেনা শিশু?

ভয়ে কাল থেমে গেছে ঘড়ি

দুয়ারে গোপনে এসে কেঁদে গেছে প্রেতের নিশ্বাস!



তবুও হে মানবাত্মা, অনিচ্ছুক, আগত সন্তান

হে আমার প্রেমের ফসল

তোমারও কাটবে দিন; মাংসল পেশীতে

শক্তির উদ্ভব হবে তীক্ষ্ম হবে মেধা বিবেচনা

কথা কবে নাক কান, চোখ হবে দুর্ধর্ষ চেঙ্গিস

হৃদয়ে জাগবে প্রেম! সেইদিন

যদি তুমি ইতিহাসে চোখ রাখো

যদি অনুভবে কারো ছবি ভেসে ওঠে অকস্মাৎ

আমাকে ভেবোনা ভীরু ;

নিয়তির অলংঘ্য নিয়মে

প্রত্যেক যুগেই আসে দাজ্জাল- সিন্দাবাদ নাবিকের কাছে

এক চোখে ঘৃণা তার বাকী চোখ অন্ধ অসহায়

প্রত্যাঘাত করে দেখো, তারও বুকে রক্ত তড়পায়!



ভয়ে থেমে যায় ঘড়ি! থামেনা সময়

হে আমার নিষ্পাপ শিশুরা--

তারে করো জয়;

নত হও, প্রেম-পিও

আর দেখ, আকাশ-আকাশ জোড়া প্রাণের বিজয়।




যদিও আমি কিছুই দেখি না। শুধু আমার রচনাগুলোর দহন, বইগুলোর না-বেরুনো আর বর্ধমান হাউসের প্রকান্ড কান্ড দেখে গুমরে কাঁদি---





যে জানে সে জানেইতো, যে জানেনা, সেও জেনে যাক

কোন ধর্মে বৈধ নয় জোর করে বিবির তালাক।

ধর্ম হোক, বর্ণ হোক-- দাও তার যা কিছুই নাম

মাটির উচ্ছেদ হলো ফসলের মরণ সমান।

না মিটিয়ে ভেদজ্ঞান, গোষ্ঠী আর শ্রেণীর চালাকী

যতই আগাছা তোল, সর্বশেষ ভাগ্যে জোটে ফাঁকি।

যত রক্ত ইতিহাসে, যত অশ্রু যুদ্ধ-ভেদাভেদ---

পেছনে একই গাঁথা-- মাটি থেকে মানুষ উচ্ছেদ।

আমি তার পক্ষে নই, যত যুক্তি ‘বিপক্ষ’ শোনাক

কোনক্রমে বৈধ নয় মাটি থেকে মানুষের ফাঁক।

নিয়তির কাছে তাই নত আমি ক্ষুদ্র মিনতিতে-

আমার শরীর যেন শয্যা পায় এ-বঙ্গভূমিতে।




প্রিয় পাঠক, আপনারা কি আমার এ কান্নার-ভাষা বুঝতে পারেন? না পারলে ক্ষমা চাই। আমি নিজেও অনেক সময় বুঝিনা নিজের উচ্চারণ। মরহুমা মা বলতেন, এ-তোদের জাতি-দোষ! আমি আমার নিজের মায়ের সে উপমাও বুঝতে পারিনি। তাই ক্ষমা চোই আর অবাক-শিশুর সরলতায় আওড়াই---



থামেনি পথের দাবী নেভেনি আগুন

আজো পথে-পথে ঝড়ে জনতার খুন

সেই কালো রক্তে

যারা বসে তখ্তে

আজো তারা সমাজের শৃগাল-শকূন

আজো তার কালো হাতে মানুষের খুন।



বিন্দু সারেনি রোগ কমেনি শোষণ

কেঁদে ফেরে পথে পথে আজো জনগণ

সেই ছবি সেই গান

আজো শুনি অম্লান

আজো সেই ছেঁড়া থলি, আজো অনশন

করেনি কোথাও কেউ পরিবর্তন।



বড় কথা বলে যারা করেছে লড়াই

তারাও বুজেছে মিছে-কথার বড়াই

রাজা এলো রাজা গেলো

ইতিহাস পাল্টালো

আগে যারা উপবাসী-- এখনো তারাই

থাকে উপবাসে, শুনি এখনো বড়াই।



এইভাবে সরলতা আর কতকাল

কবে হবে আমাদের সোনালী সকাল

কবে চাঁদ উঠবে

কবে ফুল ফুটবে

কবে কোন্ রাজটিকা জুড়াবে কপাল

সেই দিকে চেয়ে থাকা আর কতকাল?




রবীন্দ্রনাথ কি আমার এ-গরর কথাকে সরল ভাষায এ-ভাবে বুঝিয়েছিলেন--

নিজের দুটি চরণ ঢাকো তবে

ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে!!



কিন্তু আমার মন মানে না। নজরুল বলেছিলেন, সকাল বেলা আমীর যিনি, ফকীর সন্ধ্যাবেলা। কিন্তু আমার এ-দেশ তো সে-দেশ নয়। এতো উল্টো রাজার দেশ-- সকাল বেলা ফকীর যিনি, আমীর সন্ধ্যাবেলা! কোথায় যেন এইডেসের একটি দেশপ্রেমিক-বিজ্ঞাপন পড়ে অনেক হেসেছিলাম-- “যারা সেনাবাহিনীকে বাহুল্য মনে করে/ তারা দুর্বল করতে চায় প্রতিরোধ-ক্ষমতা/ বিজ্ঞানীরা এরই নাম দিয়েছেন এইড্স !/ সাবধান-সাবধান/ বাঁচতে হলে জানতে হবে।” ডাক্তার বি, চৌধুরী আর ড, কামাল আমাদের কি জানালেন?



আমার বইগুলো তো আমি লিখি-মাত্র, আসলে তো সেগুলো আপনাদের বই! হুমায়ূন আহমদ যদি শুধু গুলতেকিন বা তার দ্বিতীয় স্ত্রী’র হতেন, আমরা তার জন্য কাঁদলাম কেন? কেন তবে আমি একা কষ্ট পাবো? নিতান্ত বাধ্য হয়ে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিপ্লবী-কবির জন্য লেখা এলিজিটাই শোনাই আপনাদেরকে---



আপনার জেলখানার পৃথিবী

দশবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে

আমার জেলখানায় সে নিজ অক্ষেই স্থির।

যে সূর্যসন্তানেরা ধানী জমিতে

টেনে এনেছে সূর্য

তারা আজ মেজর জলিলের মত বিস্মৃত

আর ষড়যন্ত্রকারী উকিলেরা

তারিখ-তারিখ বলে টেনে ধরেছে পৃথিবীর ঘূর্ণন।



প্রিয় নাজিম হিকমত,

মুক্তি মেলেনি বলে মাতৃভূমিতে না ফিরে

যে-দেশে দেহ রাখলেন

পরিহাস: সে দেশের রাষ্ট্রপতিই বিনা ওয়ারেন্টে

মার্কিন নাগরিক!

প্রিয়তম তুর্কী আমার,

সূর্য না-ঘোরায় আজও আমার রাত্রি

চিরস্থির। আর এই দীর্ঘ যাম আমি আপনার কাব্যপাঠেই

কাটিয়ে দেই। নাহয় নামাজ ভেবে কেউ কেউ

নাকই সিঁটকালো;

কিন্তু মুক্তির হে মুক্তবিহঙ্গ

জীবনে এবং মৃত্যুতেও যে উদ্বাস্তু থাকে

তার ডানা মেলার আকাশ কোথায়?



বলুন, কোন্ মানচিত্রটি আপনার?





এই অতি-উঁচু মাপের দেশপ্রেমিকের প্রায সারা জীবন কোন দেশের নাগরিকত্ব ছিল না। যে-রাশিয়ার জন্য লিখে হারিয়েছিলেন স্বদেশের নাগরিকত্ব, জেলে কাটিয়েছিলেন যৌবনের সতেরো বছর, সেই রাশিয়া তার কবরের মাটি দিলেও পাসপোর্ট দিতে রাজী হয়নি প্রায় সারাটা জীবন। আমাদের নজরুলের অবস্থাও কি এরচেয়ে খুব আলাদা?



সুতরাং কবির কান্না তার নিয়তী ছাড়াআর কি? শুধু একটা ব্যাপারই সামান্য সান্তনা হয়ে থাকে যে দিল্লীর মহামহিম বাদশাহ আর বুজুর্গেরা বিস্মৃত হলেও-- বেঁচে থাকেন গালিব-মীর! ইবতেদায়ে ইশকে সেঁ বেহ্তা হ্যয় কেয়া/ আগে আগে দেখিয়ে- হোতা হ্যয় কেয়া।।



সবে তো প্রেমের শুরু, এখনই কাঁদছ?

দেখো ক্রমে ক্রমে আরো কত কি ঘটে!



শেষে আমি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ি। নিদ্রার মাঝেও আমার মাঝে ঘুরে বেড়ায় কবিতা-কল্পনালতাঃ-



ভুলকে ভাবি না পাপেরই প্রকারভেদ

মনকে বলি না দেহের গোপন টান

তবু ভুলে-ভরা শরীরী গোপন কোনে

পাপের সাথেই যুদ্ধ এবং গান।



রুমী’র বাঁশিতে বাজে না পল্লীগীতি

তবু রুমীতেই চিত্ত নৃত্যরত

লালনের সুরে মজলাম যেই, হায়

রুমীর সঙ্গে তুমি’র বিভেদ কত !



যদিও মুসার বাণীতে শান্তিকথা

ডলারেও লেখা : ঈশ্বরে অবনতি

জিহাদের নামে লাদেন বানান যারা

বাগদাদে আজ কি তাদের দুর্গতি !



যুদ্ধের অতি সরল নাটক, এই-

ক্রুর বংকিম রাজনীতিকের ক্রীড়া

মৃত্যু বেড়ায় কত গালভরা গানে

প্রাণ খুলে হাসে বিতাড়িত ইহুদীরা !





সকালে, প্রতি সকালে সেই একই আমি নিজের ব্যর্থতা ডিঙ্গিয়ে জেগে উঠি, প্রিয় কবিতার মৃত্যুর জন্য পুনরায় বিষন্ন হতে!!

================================>>>

বইমেলা থেকে ফিরে। ২১-২-২০১৩।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:২৩

*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: অনেকগুলো কবিতা। প্রথম দু'টি পড়ে প্রিয়তে রাখলাম। সময় নিয়ে ধীরে অন্যগুলোও পড়তে হবে।

শুভ কামনা

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:১৬

মুনসী১৬১২ বলেছেন: ক্যা বাত হায়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.