নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঝিলাম নদীর দেশ

আমি যত ভালোবাসি ততই উজ্জ্ল হয় সে তোমার নাম...

বুলবুল সরওয়ার

কবিতাই প্রিয়। কিন্তু গদ্যও যে তার আরশিনগর। তাই নারীর চেয়ে যতই প্রিয় বলি দেশকে; প্রকৃতি হেসে বলেঃ ও হলো কথার কথা। এভাবেই একদিন প্রেমে পড়লাম ঢাকার... স্বপ্নের মত সুন্দরী এক বারবনিতা। থাক এসব ব্যক্তিগত প্যাচাল। তার চেয়ে আসুন পাঠ হোক...

বুলবুল সরওয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মন খারাপ খরগোশ মন খারাপ খরগোশ মন খারাপ খরগোশ মন খারাপ খরগোশ মন খারাপ খরগোশ

১৬ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৭:৩৮

মন খারাপ হয়েছে খরগোশের। হবে না কেন? সে তো আর বিড়ালের মত দুষ্টু না। কিন্তু বকাবকি খেতে হল তাকেই। বাড়ির গিন্নি মানুষ ভালো হলেও বাছ-বিচার করেন কম। টেবিলের গ্লাস ভাঙা দেখেই তার মাথায় রক্ত চড়ে গেল। টেবিলের কোনায় বসা খরগোশ তখনও পাতা কপির ডাঁটা চিবুচ্ছিল। শব্দ শুনে শুধু বিড়ালের লেজটা দেখতে পেল সে। আর কিছু দেখার আগেই গিন্নি-মা’র লাঠির বাড়ি এসে পড়ল মাথায়। কপির স্বাদ নেয়া তো দূরের কথা, জান বাঁচানোই দায় হল। সে-তো কবুতরের মত উড়তে পারে না। উপায়ন্তর না দেখে শেষে গিন্নি মা’র কোলেই ঝাপিয়ে পড়ল।

ততক্ষণে তার গাল কেটে ঠোঁটের কোনায় রক্ত জমেছে। তারই এক ফোঁটা হাতে পড়তে গিন্নি মা আবার বাড়ি মাথায় তুললÑ ওরে, কে কোথায় আছিস; ডাক্তার ডাক। আমার টুসি মনিকে কে কামড়েছে, দেখে যা। শয়তান পুষিটা আবার গেল কোথায়। এ বুঝি তারই কাজ!

সবাই ছুটে আসায় আগেই গিন্নি-মা’র গলার স্বর পাল্টে গেল। নিজের দোষ ঢাকতে তিনি একটু ছলনা করলেন।

সন্ধ্যার আগেই অবশ্য ব্যথা আর রাগ দূর হয়ে গেল খরগোশের। পুষির বাচ্চা এসে মাফ চেয়েছে তার কাছে। মাঝে মাঝে খরগোশ অবাক হয়ে ভাবে, ছোট্ট ঐ পুষির কী দুঃসাহস! সুযোগ পেলেই থাবা দেখিয়ে বলে: একটু বড় হই। মজা বুঝাবো তোমাদের।

খরগোশ আর কবুতর খুবই অবাক হয় তার কান্ড দেখে। নিজেরা বলাবলি কওে, পুষি কখনো ভালো হবে না। ওর বুকের মধ্যে আছে খুনের নেশা।

কবুতর দু:খ করে বলে, যদি তোমারও দুটো পাখা থাকত, বিড়ালটা এত জ্বালাতে পারত না।

না-না, আমার পাখার দরকার নেই। আমার তুলতুলে লোমই ভালো। তুমি যখন আকাশে ওড়ো- আমি ভয়ে কাঁপতে থাকি : এই বুঝি পড়ে যাও। কী ব্যথাই না পাবে তাহলে!

কবুতর হো: হো: করে হেসে ওঠে। মনে মনে খরগোশের জন্য একটু মায়াও হয় তার। বেচারা এত সরল আর নরম! ঠোঁট দিয়ে সে খরগোশের মাথাটা চুলকে দিয়ে বলে, তবু সাবধানে থেকো তুমি। পুষির বাচ্চাকে তো বিশ্বাস নেই-ই; গিন্নি মা’কেও নেই। রাগ যার যত বেশি, বুক তার তত কঠিন।

খরগোশও মানে সে কথা। তবু গিন্নি মা’কে সে খুব ভালবাসে। মন ভালো থাকলে তার মত দয়ালু মানুষ কমই হয়। নিজের দুধের গ্লাশ থেকে অর্ধেক সামনে ঢেলে দিয়ে বলবেন: খা, বাবা। খেয়ে খেয়ে আরেকটু বড় হ। তোকে কোলে নিয়ে যেন বুকটা জুড়িয়ে যায় আমার। তাড়াতাড়ি বড় হ-তো, কুটকুটি বুড়ি।

এসব আদরে খরগোশ একেবারে গলে যায়। আর এতেই পুষির বাচ্চার যত হিংসে। সুযোগ পেলেই বলবে: দেখ্ খরগোশ, আমার গায়েও তোর মত পশম আছে। আমার লেজও তোর লেজের থেকে বেশি সুন্দর। তুই কানেও শুনিস না ভালোÑ তাও গিন্নি মা তোকেই কোলে নিয়ে ঘুরবে। আমি তা হতে দেব না। তোকে কিছু করতে না পারলে গিন্নি মা’রই পা কামড়ে দেব আমি। সত্যি সত্যিÑ!

জানালার উপর থেকে বাক-বাকুম কন্ঠে বলে কবুতর: সে আর বলতে। তুই যে কত শয়তান, তা আমরা সবাই জানি। গিন্নি মা’র পা কেন, হাতও কামড়াতে পারবি তুই।

তাই দেব। তাতে তোর কি?

না, আমার কিছু না। আমি অপেক্ষা করছি ডানা দিয়ে কবে তোর চোখে ঝাপটা দেব, যেন তুই কানা হয়ে যাস। তাতে যদি তোর শয়তানী বুদ্ধি থামে।

গর্র গর্র করে পুষির বাচ্চা সরে যায়। কারণ, গিন্নি মা আর কাজের মেয়েটা ঝাড়– নিয়ে ঘর পরিষ্কার করতে এসেছেন। কাল যে গ্লাশ ভেঙেছিল সে, তার দু’চারটে টুকরো সোফার নিচেও ঢুকে গেছে। তাই পরিষ্কার করবেন তারা। পুষির বাচ্চা সময় থাকতেই কেটে পড়তে চায়। কি জানি, গিন্নি মা যদি কোনভাবে তাকে ধরে ফেলেন, তাহলেই হয়েছে! এর আগে একবার কাজের মেয়েটাকে আঁচড়ে দিয়েছিল সে। তারপর যা ঘটল, মনে পড়লে সে ভয়ে কুঁকড়ে যায়। বিশাল এক ডাক্তার এসে বিরাট এক সুঁই ঢুকিয়ে দিল তার উরুতে। অমন কষ্ট বোধহয় কেউ মরলেও পায় না। থাক বাবা, তার চেয়ে সরে-সরে থাকি।

কবুতর মিষ্টি হেসে বলল খরগোশকে: দেখলে তো, বন্ধু। শয়তানটা আগেই কেটে পড়ল। তুমি যদি গিন্নি মা’কে বলে দাও, তাই ওর ভয়।

আমি কিভাবে বলব, বলো? আমার কথা কি তিনি বোঝেন? আর বুঝলেই বা কি হত? রাগ হলে তো তিনি পাগল হয়ে যান। তার অবস্থা হয় প্যাঁচার মত, চোখ পিট পিট করে ঠিকই, কিন্তু কিচ্ছুু দেখতে পায় না।

আর সূর্যি মামা কেঁদে মরেন।

হো: হো: করে হাসে দুই বন্ধু।

পরদিন সকালে ভাঙলো আরেকটি গ্লাশ। গিন্নি মা তখন বই পড়ছিলেন চোখে চশমা দিয়ে। তার চশমাটা খুবই সুন্দর। কিন্তু তার ভেতর দিয়ে তিনি কিছু দেখতে পান বলে মনে হয় না। তার কোলের মধ্যেই বসে ছিল খরগোশ। তাই তাকে দুষতে না পারলেও তিনি চিৎকার করে উঠলেন: কে? কে ভাঙলো গ্লাশটা? এই শিরি, তুই ভাঙলি?

কাজের মেয়েটা কেবল বাসনগুলো নিয়ে যাচ্ছিলো। ঝামটা মেরে বলল: আপনি কানা নাকি, মা? দেখছেন না আমার দ্’ুহাত থালা-বাসনে ভরা। আমি কি করে ভাঙবো?

তাহলে কে ভাঙলো?

কে আবার, আপনার পুষি-মনি। সাথে একটা মুরগীর ডানাও গেছে।

কী? কী বললি? মুরগীর ডানা? রান-টা তো রেখেছি তোতনের জন্য। স্কুল থেকে ফিরেই খাবে। আর হাড্ডিটা দেব ডগিটাকে।

থাক, আর দিতে হবে না। শিরিন গটগট করে হেঁটে গেল ভেতরে। যত দোষ শুধু আমার। সারাদিন খেঁটে মরি আমি, আর উনি আছেন ওনার কুত্তা-বেড়াল নিয়ে।

খরগোশ ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছেন গিন্নি মা’র দিকে। রাগে তার চোখ লাল হয়ে উঠছে। ভয় পেয়ে সে সরে যেতে চায়। কিন্তু গিন্নি মা’র হাত তাকে আঁকড়ে ধরেছে। হায়-হায়, তার বুঝি শ্বাসই আটকে যায়।

দেয়াল থেকে সবই দেখছিল কবুতর। খরগোশের করুণ দশা দেখে ঘরের মধ্যেই দুটো চক্কও দেয় সে।

গিন্নি মা ঘরের মধ্যে কবুতর ওড়া পছন্দ করেন না। ঝট করে নেমে টেবিল থেকে লাঠিটা তুলে মারার চেষ্টা করেন বাকুমকে।

কিন্তু কবুতরের সাথে তিনি কি করে পারবেন? যুদ্ধ-জাহাজের মত পলকা-ঘুরে পাশ কাটায় কবুতর। খরগোশও এক লাফে খাঁচায় ঢুকে পড়ে।

কই, পুষির বাচ্চা পুষি কই? কই গেল শয়তানটা? ওকে আজ মেরেই ফেলব আমি। গিন্নি মা ঘরময় লাঠি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন আর পুষির বাচ্চা টেবিল থেকে চেয়ার, চেয়ার থেকে খাটে লাফিয়ে বেড়ায়। একসময় লাঠির বাড়িতে গিন্নি-মা’র নিজের চশমা-ই ভেঙে খান-খান।

ও-মা, একি হলো আমার! গিন্নি-মা’র গগনবিদারী চিৎকারে সবাই এসে জড় হয় এ-ঘরে।

ততক্ষণে তোতনও স্কুল থেকে ফিরে এসেছে। এ বাড়ির সবচে’ লক্ষèী ছেলে সে। মায়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে সে, কেঁদো-না, মা। একটা চশমাই তো ভেঙেছে মাত্র। বাবা বানিয়ে আনবেন। এবার থামো তো তুমি।

না, থামব না। আগে তুই পুষির বাচ্চাটাকে ধরে আন। ওকে দু’ঘা না লাগালে আমার শান্তি হবে না।

কেন, কি করেছে পুষি-মনি?

সে আমি পওে বলছি; আগে তো ওকে দু’ঘা লাগাই।

তাই? আচ্ছা, দাঁড়াও। আনছি ওকে আমি।

পুষির বাচ্চার মালিক তোতনই। বাড়ির কারো বিড়াল পছন্দ না হলেও, তোতনের খুব পছন্দ। কই গেলি, পুষি? বেরিয়ে আয়Ñ। বলে সে সব ঘরে দৌড়ে এল।

পুষি লুকিয়ে ছিল এ-ঘরেরই খাটের নিচে; শেষ কোনায়। টর্চের আলো পড়তেই তার চোখ জ্বলে উঠল। আদুরে গলায় বলল তোতন, কি রে পাঁজি, আমাকেও ভয় দেখাস? আয় এদিকে, মা তোকে বকবেন, আর মারবেনও।

তোতনের কথার ভঙ্গিতে খরগোশ আর কবুতর ঠোঁট টিপে হাসে। এই না হলে মালিক! শয়তানটার ভাগ্য ভাল।

বিড়ালটাকে হাতে নিয়ে গিন্নি-মা’র সামনে যায় তোতন। এই যে মা, এনেছি বদমাশটাকে। কিন্তু আস্তে মারবে, মা। এখনও ছোট তো!

ছোট ছোট দুটো পিটুনি খাবার পর ছাড়া পায় পুষির বাচ্চা।

শুধু কবুতরই দেখতে পায়, দুটো বাড়িই তোতন নিজের হাতে নিয়ে বিড়ালটাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে!

খরগোশও ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বলল, হায় রে! এত ভাল মানুষের কী বদমাশ বন্ধু!

--০--

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.