| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রামিজের ডিপফ্রিজ
এখানে পুরনো/নতুন ট্রলের সেরা কালেকশন পাবেন
হোস্টেল জীবন+ পি টি এস ডি পর্ব ১
প্রথমেই আমি নিজের মানসিক প্রকৃতি সম্পর্কে কিছুটা বলে নিই, তাহলে সেই কনটেক্সট-এ আমার ভাবনাগুলো আপনাদের কাছে ক্লিয়ার হবে। আমি মূলত চাপা স্বভাবের এবং কল্পনাপ্রবণ ভাবুক টাইপের ছেলে, যারা MBTI পছন্দ করে তাদের ভাষায় প্রায় আদর্শ INTP। কিছুটা মা-ঘেষা ছিলাম, বাবাকেও বেশ ভয় পেতাম।( কেন কে জানে? ছোটবেলায় বাবা আমার গায়ে হাত তুলেছে এমন ঘটনা মনে পড়ে না, বরং ছোটখাটো শাসন মা-ই করত); বন্ধুবান্ধবও বিশেষ ছিল না (সত্যিকথা বলতে কি, দুজন বাদে সেরকম বন্ধু এখনও আমার নেই)।
বুঝতেই পারছেন, এই টাইপের স্বভাব নিয়ে হস্টেলের মত পরিমণ্ডলে চলা মানে সমস্যা অবধারিত।
যাই হোক, অনেক গৌরচন্দ্রিকা হল; এবার আসল কথা্য় আসা যাক।
প্রথম দিনই আমাদের বলা হল সমস্ত জিনিসপত্র নিয়ে একটা মোটা ট্রাঙ্কসহ হস্টেলে চলে আসতে। হস্টেলের নাম ব্রহ্মানন্দ ধাম।একটা ঘর পেলাম, রুমমেট আরো ৮ জন। ঘরের মাপ মোটামুটি ১৫ ফুট বাই ১২ ফুট মত; বাইরের দিকে জানলার ফেসিং আমার বিছানা পড়ল।
বাবা মা সেই দিনই বাড়ি ফিরে গেলেন।
প্রথমেই খটকা লাগল নোটিশবোর্ড পড়ে, বাড়িতে যেমন ইচ্ছা টাইমে যেকোনো কাজ করা যায়, এখানে একদম ঘড়ি ধরে কাজ।
ভোর ৪:৩০-৫:০০- দাঁত মাজা,মুখ ধোওয়া, প্রাতঃকৃত্য ইত্যাদি।
ভোর ৫:০০-৫:৪৫ প্রার্থনা।
ভোর ৬:০০-৭:০০ খেলা/ নোংরা সাফাই/ড্রিল/টয়লেট সাফাই- সপ্তাহ ধরে কাজ ভাগ করা থাকত।
সকাল ৭:০০-৭:১৫ সকালের খাওয়া; পাউরুটি ও পাতলা জ্যাম।
সকাল ৭:১৫- ৯:০০ পড়া- ক্লাসঘরে বসে।
সকাল ৯:০০-১০:০০ স্নান।
সকাল ১০:০০- ১০:৩০ লাঞ্চ।
সকাল ১০:৩০- বিকেল ৪:০০ ক্লাস।
বিকেল ৪:০০- সন্ধ্যা ৬:০০ খেলা।
সন্ধ্যা ৬:১৫-৭:০০ প্রার্থনা।
সন্ধ্যা ৭:০০- ৯:০০ পড়া- আবার ক্লাসঘরে বসে।
রাত ৯:০০-৯:৩০ ডিনার।
রাত ৯:৩০-১০:৩০- ঘুমানোর আগে ধর্মোপদেশ ও রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ আলোচনা।
আপনারা ভাবছেন এ রুটিন তো খুব খারাপ নয়, আচ্ছা এবার আমাকে বলতে দিন-
১) ভোর ৪:৩০-৫:০০- দাঁত মাজা,মুখ ধোওয়া, প্রাতঃকৃত্য ইত্যাদি- প্রথম কথা হল যে পুরুলিয়া ভারতের সবচেয়ে চরমভাবাপন্ন জায়গাগুলির একটি; শীতকালে ৩-৪ ডিগ্রিতেও তাপমান নামে। এবং টয়লেটের সংখ্যা ১০জন পিছু একটি। কাজেই আপনার ভাগ্য ভাল থাকলে তবেই আধ ঘন্টার মধ্যে কাজগুলো নামাতে পারবেন। এই ভয়ে অনেকেই বাধ্য হয়ে আরো আগে ৪:০০ নাগাদ উঠত।কিন্তু স্লিপ ডেপ্রিভেশন যে কি মারাত্মক জিনিস সেটা আমি এরকম মাস খানেক করেই বুঝেছিলাম।
২)প্রার্থনা+ধর্মোপদেশ : রামকৃষ্ণ মিশন যাই দাবি করুক না কেন, এটি মূলত হিন্দু সংগঠন ও অবতারবাদে বিশ্বাসী। প্রার্থনাগুলিতেও রামকৃষ্ণকে ভগবানের আসনে বসিয়ে পুজো করা হয়। আমি নিশ্চয়ই ১১/১২ বছর বয়সে আলিম হয়ে যাইনি কিন্তু সবার সঙ্গে এই প্রার্থনায় অংশ নিতে আমার খুব একটা স্বস্তিবোধ হত না। রাতে যখন মহারাজরা রামকৃষ্ণকে নিয়ে আলোচনা করতেন তখন আমি এটুকু একমত হতাম যে তিনি একজন অসাধারণ মানুষ কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মানুষকে "ভগবানের অংশ " হিসেবে ঠিক মানতে পারছিলাম না। সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্র ছিল হিন্দু, কাজেই সাহস করে বলতেও পারতাম না। এমন নয় যে ধর্ম নিয়ে কোনভাবে অপমানিত হয়েছি কিন্তু আপনি যদি ইদুর হন আর আপনার সামনে একটা হাতি থাকে তবে সে হাতি যত দয়ালুই হোক না কেন আপনার ভয় লাগতে বাধ্য।
৩)ক্লাসঘরে বসে পড়া- আগেই বলেছি আমি ইন্ট্রোভার্ট, তাই আমার এক ক্লাসঘরে অন্য ৩০ জনের সঙ্গে স্টাডি সেশনে বসে পড়তে ভাল লাগত না। মনে হত যেন আমি একঘর লোকের সামনে কাপড় চেঞ্জ করছি। আজও ফাকা ঘর না পেলে পড়াশুনা করতে ইচ্ছে করে না।
৪) বদ্ধভাব: আগেই বলেছি যে বাইরে কোথাও যাওয়া পারমিটেড ছিল না, স্কুলের দরজা ছিল বাইরের দুনিয়াকে আটকে রাখার জন্য। আমার মন হাপিয়ে উঠত। জানলা দিয়ে রেললাইন দেখা যেত, মনে হত ওই রেললাইনের যাত্রীরা মুক্ত, আমি বন্দী।
এবং ৫)ঘুমের অভাব: এটা সবচেয়ে মারাত্মক, রুটিনে দেখবেন দিনে ৩ ঘন্টার কাছাকাছি খেলা/ড্রিলের সময় আছে (স্কিপ করলে শাস্তি অনিবার্য)।
এতক্ষণ খেলার পর আমরা ঘুমাতে পেতাম হার্ডলি ৬ ঘন্টা। স্বাভাবিকভাবেই আমি সন্ধ্যাবেলা স্টাডি রুমে ঘুমিয়ে পড়তাম, তখন পাওনা ছিল সাজা।
(কেউ কেউ অবশ্য ভাল ছিলেন)।
যাই হোক, এ তো গেল পরিবেশগত অশান্তি, পরের পর্বে বলব পিয়ার প্রেসারের কথা।
২|
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:২৫
চ।ন্দু বলেছেন: হুম, বলে যান, শুনছি, মন্দ না।
৩|
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:০৯
মোঃ নুর রায়হান বলেছেন: এ আবার কোন কলিকাল?
ভাইজান, আপনি তো রবিঠাকুরের যুগে আছেন দেখছি।
:-&
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:১২
রামিজের ডিপফ্রিজ বলেছেন: না ভাই, এটা ২০০৪-০৫ র সময়কার
৪|
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৩৪
বটবৃক্ষ~ বলেছেন: আপনার ডিপফ্রিজে কি কি আছে??
বাংলাদেশী মানুষ ভারতে থাকেন, নাকি ভারতিয়??
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৪৭
রামিজের ডিপফ্রিজ বলেছেন: নাহ, ভারতী্য়
৫|
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:০২
আদিম পুরুষ বলেছেন: হিন্দু মিশনের চাইতে খ্রিস্টান মিশনারী বোর্ডিং স্কুল গুলো ভালো। ইন্ডিয়ান নর্থ বেঙ্গলে এধরণের অনেক স্কুল আছে। পড়াশুনা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ সবকিছুই মান সম্পন্ন।
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:২৪
রামিজের ডিপফ্রিজ বলেছেন: আসলে সমস্যাটা আরো গভীরে নিহিত; সোনার খাঁচাও খাঁচা। আর যদি আপনি একদিনের জন্য ওখান থেকে ঘুরে আসেন তাহলে মুগ্ধই হবেন। কিন্তু বাড়ির সংস্পর্শ ছাড়া (এবং ফোন/মোবাইল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, নিউজপেপার প্রায়দিনই পাওয়া যায় না, টিভি নেই এমনকি ৫০ ডিগ্রী তাপমানে ঘরে পাখা নেই) হাপিয়ে উঠতাম।
৬|
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২৫
ঝটিকা বলেছেন: আপনার বাড়ি কি ভারতে?
যদি বাংলাদেশে হয়ে থাকে পুরুলিয়ায় পড়তে যাওয়ার কি যুক্তি বুঝলাম না। এর থেকে বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজগুলো কম কিসে?তবে আমার ব্যাক্তিগত অভিমত, স্কুল লেভেলে মা-বাবা ছেড়ে বাচ্চাকে বোর্ডিং/হোস্টেলে রেখে পড়ানোর আমি একদম ঘোর বিরোধী। এতে বাচ্চারা মানুষিক ভাবে কঠোর হয়ে যায়।যাই হোক, যা হবার তো হয়েই গেছে। আপনার অভিজ্ঞতা গুলো শেয়ার করতে থাকুন, পড়তে ভালোই লাগছে।
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩০
রামিজের ডিপফ্রিজ বলেছেন: আমি ভারতীয়, তবে কয়েকজন বাংলাদেশীও পড়ত। খুবই চৌকস ছেলে ছিল, ডিটেলস পরের পোস্টে বলব।
আর আপনি আমার মনের কথাটাই বললেন। আমার মূল সমস্যাটা হল যে ভারতে মোটামুটি সবাই একমত যে ঐ স্কুলের মত ভাল স্কুল আর হয় না, তাই আমার সঙ্গে সহানুভূতিশীল কাউকে পাইনা। অনেকেই আবার দেখি ভেতরে ভেতরে আমার মতই ভাবনা কিন্তু বাইরে নিজের হস্টেল জীবন সম্পর্কে গর্বিত ভাব দেখায়।
৭|
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৩
মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: ভাই কিছু মনে করবেন না!! আমি খাওয়া দাওয়া করতে বেশি পছন্দ করি তাই বলছি, আপনারা ১০.৩০ লাঞ্চ করতেন আর ডিনার ০৯.০০। মাঝখানে এতক্ষণ কিভাবে থাকতেন ভাই ??
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩৪
রামিজের ডিপফ্রিজ বলেছেন: আপনার মত আমিও। ৭ কেজি ওজন কমিয়েছিলাম এক বছরে, যখন মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় গ্রোথ স্পার্ট আসে।
তবে সুদে আসলে ঐ ব্যাপারটা এখন মিটিয়ে নিয়েছি; ২০০৫ র ৩৫ কেজি ওজনের আমি এখন ১০৩ কেজির। ঈদের সময় সাবধানে চলতে হয় যাতে কেউ কুরবানির জীব ভেবে ধরে না নিয়ে যা্য।
৮|
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০১
নিশ্চুপ শরিফ বলেছেন: ঐ মিয়া ১০৩ কেজি? এত বিশাল । আমি মাত্র ৭৫ কেজি তাতেই মটকু মটকু এই কথা শুনতে হয়। যারা হিন্দু নয় তাদেরও কি প্রার্থনা তে অংশ নিতে হত। এমনত যা যে তারা জানে না আপনি হিন্দু নন।
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:১৬
রামিজের ডিপফ্রিজ বলেছেন: প্রার্থনাটা ঠিক সনাতন হিন্দু ছিল না, শ্রীরামকৃষ্ণ ইসলাম সম্মত উপায়েও অনেক দিন সাধনা করেছিলেন। তবে তিনি নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণও ছিলেন।
আর রামকৃষ্ণ মিশন প্রকাশ্যে কখনোই স্বীকার করে না যে তারা হিন্দু সংগঠন।
১০৩ কেজি হবার আরেকটা কারণও আছে- আমার হাইট ৬ ফুট ১।
৯|
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:০৩
নিশ্চুপ শরিফ বলেছেন: ১০৩ কেজি হবার আরেকটা কারণও আছে- আমার হাইট ৬ ফুট ১
একটা ফটো আপলোড মারেন। আপনারে দেখতে তো দানবের মত লাগবে তাইলে
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৩
রামিজের ডিপফ্রিজ বলেছেন: হুম, না, বাড়িতে আমি মোটেই দানব নই; আমার ছোট ভাই এবছর মে মাসে ১৬ বছরে পড়বে, ও এখনই আমার চেয়ে অন্তত এক ইঞ্চি লম্বা। জেনেটিক মনে হয়।
ফটো আপলোড ? দাড়ান, ৮ মার্চ একটা ইন্টারভিউ আছে, তারপর করব।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:০৩
শূন্য পথিক বলেছেন: ভালো লাগা +++