নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সম্পর্কে: https://t.ly/atJCp এছাড়া, বইটই-এ: https://boitoi.com.bd/author/2548/&

দারাশিকো

লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি

দারাশিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

শব-ই-বরাতের হালুয়া রুটি জর্দা সেমাই

০৭ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:০০



এই সময়ে বাংলাদেশে শব-ই-বরাত মানে হলো শব-ই-বরাত পন্থী আর পরিপন্থীদের মধ্যে জায়েজ-নাজায়েজের বিতর্ক। শব-ই-বরাত বলে কিছু আছে কি-না, রাসূল (স) এর সময়ে পালন করা হতো কি-না,পক্ষের লোকজন যে সকল সূত্র বা হাদীস উপস্থাপন করেন সেগুলো ঠিক কি-না এই নিয়া বিতর্ক যেমন আছে, তেমনি মধ্য শা'বানের রাত্রি হিসেবে ইবাদত বন্দেগী করা গেলেও হালুয়া রুটি জর্দা পায়েস খাওয়া জায়েজ হবে কি-না সেই নিয়াও বিতর্ক আছে। এই বিতর্কের মধ্য দিয়া পন্থী ও পরিপন্থী গোষ্ঠির লোকজন ব্যাপক সওয়াব কামাই করে নেয়। কিন্তু এই দুই পন্থী ছাড়াও আরেকপন্থী আছে, তারা হলো মধ্যপন্থী।

এই দলে আছে আমার মতো লোকজন - এরা জায়েজ-নাজায়েজ নিয়া চিন্তা করে না বরং শব-ই-বরাতের ছুটি কি বারে পড়ল তাই নিয়া চিন্তা করে, কোথাও হালুয়া-জর্দা-পায়েস লেখা দেখলেই এদের জিহবায় পানি চলে আসে, খাওয়া সঠিক না বেঠিক - সেটা ভাবার সুযোগটাই পায় না। শব-ই-বরাত পালন করা না করা নিয়ে বাকী দুই পন্থী লোকজন যতটা না কষ্টে পায়, তার চেয়ে বেশি কষ্টে যন্ত্রণায় অনিশ্চয়তায় ভুগে এই মতো মধ্যপন্থী জনগণ। একে তো পন্থীদের স্ট্যাটাস-ছবি-ভিডিওতে দেখতে থাকে সেমাই জর্দা আর হালুয়া, অন্যদিকে পরিপন্থীদের প্রচার এস্টাবলিশড হয়ে গেলে ভবিষ্যতের রুটি হালুয়ার কি হবে ভেবে বিড়বিড় করে বলতে থাকে লা হাওলা.. লা হাওলা।

জোহরের সময় হুজুর শব-ই-বরাতের রাত্রের ইবাদত বন্দেগীর ফজিলত নিয়ে আলোচনা করলেও হালুয়া-জর্দা খাওয়া নিয়ে কিছু বলে নাই। প্রথমে একটু দুঃখ লাগলেও পরে বুঝলাম - হুজুর তো খাইতে নিষেধও করে নাই। অফিস থেকে বের হয়েই দেখি বিশালাকৃতির সব রুটি বিক্রি হচ্ছে, বেকারির দোকানে ভীড়। ঠেলেঠুলে দেখলাম - নতুন কিছু আসলো কি-না। এই বেকারির লোকজন সম্ভবত বলেন বিএনপিপন্থী, নাহয় চামচামির অভ্যাস নাই। কারণ তারা কুমির, মাছ, কুলা, পাখি ইত্যাদি ডিজাইনের রুটি বানালেও পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল কিংবা রূপপুরের আদলে কোন রুটি বানায় নাই। পত্রিকায় দেখলাম - আজকে নাকি তর্জনী ব্রাউজার উদ্বোধন করা হইছে, আমি বেকারির মালিক হইলে আজকে আমি তর্জনীর মতো রুটি বানায়ে পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠাইতাম।

ফেরার জন্য গাড়িতে উঠে দেখি - সহযাত্রীর হাতে লাল ব্যাগ। সেই ব্যাগের মধ্যে লাল বাটি আর লাল বাটির স্বচ্ছ ঢাকনা দিয়ে লাল লাল জর্দা উঁকি দিচ্ছে। আরেকজনের ঘরে চোখ দেয়া অন্যায়, কিন্তু মন পড়ে থাকলে কি হবে জানা নাই, তাই চোখ সরালেও মনটাকে আর সরানোর চেষ্টা করিনি। কি দরকার শুধু শুধু মনটাকে কষ্ট দেয়ার। মন ভাঙ্গা আর মসজিদ ভাঙ্গা তো সমান, তাই না

ঘরে ঢুকেই মনটা জুড়িয়ে গেল। বিবি প্রাচীনপন্থী, বোধহয় শব-ই-বরাত পন্থী-পরিপন্থীদের ক্যাচালে এখনও ঢুকেনি, তাই খেটেখুটে সুজির হালুয়া বানিয়েছে। বললাম - ঘটনা কি? বলল, কুমীর রুটি কিনতে চেয়েছিল, দাম শুনে মনে হয়েছে - কুমীরটা কামড়ে দিয়েছে। মনের দুঃখে হালুয়া বানিয়ে ফেলেছে। বললাম, কুমীর থেকে ছাড়া পাইছো? বলল, কুমীরটা ছাড়ছিল না, তাই বাধ্য হয়ে মোরব্বা রুটি ওভেনে ঢুকিয়ে দিয়েছে। ওভেনের গরমে কিনা জানিনা, কুমীরটা আর দেখা যাচ্ছে না।

ফ্রেশ হয়ে দেখি মোরব্বা রুটি তৈরি। গরম গরম রুটিতে কামড় দিলাম, রুটির শরীর ভেদ করে দাঁতগুলো যখন মোরব্বার পিঠে বসে পড়ল, জিহবাটা তখন মোরব্বার স্বাদ নেয়ার জন্য লকলক করছে। কুমীরের মত টান দিয়ে মোরব্বাসহ রুটিটা ছিড়ে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি - বিশাল একটা হলদে লাড্ডু আকাশে ঝুলে রয়েছে।

এত চমৎকার লাড্ডু আকৃতির চাঁদ দেখে আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম - আজকে রাতে ইবাদত বন্দেগী করতেই হবে। না চাইতেই আকাশের ঐ লাড্ডুর কারিগর মোরব্বা রুটি আর হালুয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে, চাইলে না জানি কত কি দিবেন!

অন্যান্য রম্য পোস্ট

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:৪৫

কামাল১৮ বলেছেন: আল্লাহর কাছে যারা কিছুই চায় না তারা বেশী পায়।আটশো কোটির লোকের মাঝে প্রায় সাতশ কোটি কিছুই চায় না তারা তো কম পায় না।মানুষের এই কুসংস্কার কবে ভাঙবে।নতুন কিছু খাওয়া দাওয়া হয় এটা ভালো।

০৭ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:২৭

দারাশিকো বলেছেন: এইটা সঠিক বলেছেন। এই যে দুনিয়ার সাতশ কোটি লোকের খবর আপনার কাছে আছে এই যোগ্যতা কি আপনি কখনও চাইছিলেন? কিন্তু আল্লায় না চাইতেও দিছে। ;)

২| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১২:২৫

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

খাবার-দাবারে পন্থী নেই।

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:১১

দারাশিকো বলেছেন: আছে ভাই। একটু বয়স্কদের মধ্যে বহুপন্থী পাবেন।

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৩:৫০

কামাল১৮ বলেছেন: এটা আল্লাহ দেয় নাই, আমি অর্জন করেছি।

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১০:২০

দারাশিকো বলেছেন: ঠিক। এমনটা যে বলতে পারতেছেন, সেইটাও আল্লাহর রহমত। শুকরিয়া।

৪| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ ভোর ৪:৪৭

তানভীর রাতুল বলেছেন: বাংলাদেশে ওয়াহাবী এবং তাদের পূর্বজপন্থী সালাফিদের ঠ্যালায় এই বিতরণপ্রথা প্রায় গায়েব। গতবছর ভাবলাম, করবো উদ্যানে। মেলা করলে ম্যালা টাকাও হবে।
নামেই যার শ্লোগান
'এক ছিল বঙ্গবন্ধুর খোয়াব
সর্বধর্মীয় হালুয়া-রুটি উৎসব'

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:৩৩

দারাশিকো বলেছেন: হে হে। আয়োজন করতে পারলে সেটা যে বাঙ্গালীর সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হইতো - তা নিঃসন্দেহ।

৫| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৮:৩৯

অনামিকাসুলতানা বলেছেন: ইস্ লামে খাওয়া টাক, খাওয়ার বানান্‌ সবাইকে বিত্ রণ করা, গ রীব দের খাবার বিত রণ সব ই ইবাদত।

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:৩৫

দারাশিকো বলেছেন: ধন্যবাদ অনামিকা সুলতানা।

৬| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:০৯

নাহল তরকারি বলেছেন: সুন্দর।

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:১৪

দারাশিকো বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার নিকের মর্ম কি?

৭| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:৪০

ফুয়াদের বাপ বলেছেন: প্রশ্ন যখন খাওয়া-দাওয়া তখন কোন পন্থী নাই। আলু দিয়ে ঝুল ওয়ালা গরুর মাংস সাথে চালের গুড়ির রুটি - আহাহা! কী সুখ খাওয়ায়!

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:১৪

দারাশিকো বলেছেন: থাক থাক। আর বইলেন না প্লিজ।

৮| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:০৩

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আমার মা এগুলোর বিপরীত পন্থি হলেও ঠিক বাসায় এসব খাবার চলে আসতো আমরা খেতাম। আতশবাজি বিষয়টি বিলুপ্তির পথে।

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:০৪

দারাশিকো বলেছেন: এখন সারা বছরে নানা উৎসবে যত আতশবাজি ফোটে, তাতে দুই একটায় বাদ পড়লে সমস্যা হবে না। হালুয়া রুটি এখনও খাচ্ছি, সহজে বিলুপ্তি হবে বলে মনে হয় না।

৯| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:৪০

অদ্ভুত অবাক বলেছেন: শব-ই-বরত পন্থি আর পরিপন্থি দুই দলেরই উচিত বিষয়টি সহজ ও সুন্দর রাখা। ছোট বেলায় রাত জেগে যেমন ইবাদত চলতো তেমনি খাবারের বিষয়টিও ছিল অসামান্য। প্রতিবেশীর বাসায় খাবার দেয়া আবার প্রতিবেশীর বাসা থেকে খাবারও আসতো। আমি তাতে ক্ষতির কিছু দেখিন। বরং তাতে প্রতিবেশীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকতো। অনেক বৈরি সম্পর্কের সহজ সমাধান ছিল এই শব-ই-বরত।

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:০৬

দারাশিকো বলেছেন: বর্তমান এই সময়ে পাড়া-প্রতিবেশি কারা সেটাই তো জানা হয় না, সুসম্পর্ক তো মেলা দূর। এই এক দুইটা উৎসবের উছিলায় যদি সম্পর্ক স্থাপন হয় তো মন্দ না।

১০| ০৮ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:১৪

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। আমার অবস্থাও আপনার মতো। +++

০৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:০৭

দারাশিকো বলেছেন: বোকা মানুষ যা বলতে চায় সেটা শুনে ভালো লেগেছে। আন্তরিক ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.