নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সম্পর্কে: https://t.ly/atJCp এছাড়া, বইটই-এ: https://boitoi.com.bd/author/2548/&

দারাশিকো

লেখালিখির প্রতি ভালোবাসা থেকে লিখি

দারাশিকো › বিস্তারিত পোস্টঃ

কর্পোরেটের মুঠোয় বন্দী ভবিষ্যৎ?

২৫ শে মে, ২০২৩ রাত ১০:১৭


ডেইলি স্টার পত্রিকায় গুটিকয়েক বড় কোম্পানীর সিন্ডিকেটের কারণে প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাধীন মুরগি খামারিরা বাধ্য হয়ে সেই কোম্পানীগুলোর চুক্তিভিত্তিক খামারিতে পরিণত হচ্ছেন তার একটা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ হলো এমন পদ্ধতি যেখানে কোম্পানীগুলো খামারিকে বাচ্চা, খাবার ইত্যাদি বিনামূল্যে সরবরাহ করবে এবং খামারি প্রতি কেজিতে নির্ধারিত লাভে কোম্পানীর কাছেই বিক্রয় করবে। বাজারে কি দামে বিক্রি হবে সেটা ঠিক করবে কোম্পানীগুলো, বিক্রয়ের দায়িত্বও তাদের।

কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এ না গিয়ে আপনি যদি স্বাধীনভাবে মুরগির বাচ্চা-খাবার ইত্যাদি কিনে মুরগি পালন করেন তাহলে লোকসানে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন কারণ সব কিছুই বাড়তি দামে কিনতে হবে বলে আপনার প্রতি কেজি উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে অনেক। বড় আকারের খামারের মালিক হলে হয়তো লোকসান কাটিয়ে উঠা যাবে কিন্তু লাভের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক হবার সম্ভাবনা কম। সেই বিবেচনায় খামারির কাছে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং লাভজনক না হলেও নিরাপদ।

কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর ধারণা নতুন নয়। নিত্য খাদ্যপণ্য নয় এমন অনেক শিল্পে আগে থেকেই এই পদ্ধতি প্রচলিত ছিল। এর প্রভাব অনেকক্ষেত্রে ইতিবাচক কারণ এর মাধ্যমে উৎপাদন ব্যয় কমে। তাছাড়া এমন পণ্যের নিয়মিত ভোক্তা না হওয়ায় খদ্দেরের গায়ে প্রভাব পড়ে না বললেই চলে।

খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও অনেক স্থানে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং প্রচলিত আছে। বাংলাদেশে পোল্ট্রি সহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য উৎপাদনে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর গবেষণা চলছে বেশ অনেকদিন ধরে। পোল্ট্রি খাত ছাড়াও আরও কিছু খাদ্যপণ্যে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং চলছে কিন্তু সেগুলো আকারে এখনও ছোট।

প্রশ্ন হলো – কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এ সমস্যাটা কোথায়? খালি চোখে সমস্যা নাই। কিন্তু আপনাকে প্রতিদিন কিনতে হয় এমন পণ্যের ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন শিল্প ভয়ংকর, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে আইন ক্ষমতাবানদের হাতের মুঠোয় থাকে। ‘সিন্ডিকেট’ যেখানে অনিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা, যেখানে প্রান্তিক ক্রেতার স্বার্থ রক্ষার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না এবং যেখানে সবাই ‘শক্তের ভক্ত কিন্তু নরমের যম’, সেখানে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এর উপকারভোগীর চেয়ে ক্ষতিগ্রস্থের সংখ্যা অনেক বেশি হবে।

পোলট্রি ব্যবসায়ীরা যে কাজ শুরু করে দিয়েছে সেই একই পথে আরও ব্যবসায়ীরা হাঁটবে – এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকেন। নিয়মিত পত্রিকা পড়লে জেনে থাকবেন – বাংলাদেশের বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপগুলো ইতোমধ্যেই চাল উৎপাদনের জন্য হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে, চালের বাজারের প্রভাবক হয়ে উঠছে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। নওগাঁ-দিনাজপুরের মতো জায়গাগুলোতে বিশাল বিশাল মিল স্থাপন করতেছে তারা। এই মিলগুলোর উৎপাদন সক্ষমতাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর জন্য তারাও কৃষকের সাথে চুক্তিতে যাবে। ধানচাষীরাও বাধ্য হবে – কারণ গত কয়েক দশকে কৃষি ব্যবস্থায় এমন পরিবর্তন ঘটে গেছে যে বীজ ধান থেকে শুরু করে সব উপকরণের জন্য তৃতীয় পক্ষের উপরই নির্ভর করতে হয়।

পাকিস্তান আমলে বাইশ পরিবার খুব বিখ্যাত ছিল। তারা ছিল ধনী ব্যবসায়ী গ্রুপ যারা পাকিস্তানের ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করতো। এদের মধ্যে দুটি পরিবার পূর্ব পাকিস্তানে সুপরিচিত – এ কে খান গ্রুপ এবং ইস্পাহানী গ্রুপ। আমার আশংকা – স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করবে পঞ্চাশ-ষাট বা একশটি গ্রুপ অব কোম্পানীজ। সারাদিনের খাদ্যতালিকায় দেশের বড় বড় গ্রুপগুলোর অবস্থান কোথায় সেটা একটু ভাবলেই স্পষ্ট বুঝতে পারবেন। আশংকা সত্যি কিনা সেটা হয়তো আর দশ বছরের মধ্যেই টের পাওয়া যাবে।

আমাদের ভবিষ্যৎ গুটিকয়েক পরিবারের মুষ্টিতে আবদ্ধ হবার পেছনে প্রধান কারণ দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ। দেশে প্রধান বিরোধী দল বলে কিছু নেই, যা আছে তারা কোনঠাসা। সরকারি দল একাধিক মেয়াদে ক্ষমতায় উপবিষ্ট থাকায় গণতন্ত্রকে বইয়ের পাতায় ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। কে না জানে – রাজনীতি আর ব্যবসা হাত ধরাধরি করে চলে।

বড় গ্রুপগুলোকে আরও বড় করে তুলছে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা। দুর্নীতিগ্রস্থ ব্যাংকগুলো ব্যক্তিস্বার্থে ব্যাংকিং নীতি ও প্রচলিত বিধি উপেক্ষা করে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঋণ সুবিধা দেয়, অথচ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের গলা টিপে ধরে। এমনকি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদেরকে উদ্দেশ্য করে দেয়া বিভিন্ন আর্থিক সুবিধাও বড় সকল প্রতিষ্ঠানগুলো আইন ও নীতিমালার নানা রকম ফাঁকফোকর দুর্বলতা ইত্যাদিকে কাজে লাগিয়ে ভোগ করে। তেলা মাথায় তেল দেয়ার এই প্রথা চলতে থাকলে ভোক্তাদের ভবিষ্যতকে তারা হাতের মুঠোয় বন্দী করবে – এ আর অসম্ভব কি?

আমাদের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত সংকটময়। এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার কোন রাস্তা আমি দেখি না।

ব্যক্তিগত ব্লগ

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০২৩ রাত ১০:২৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: পোলট্রি ব্যবসা বিদেশী কোম্পানিগুলি নিয়ে নিচ্ছে। প্রান্তিক খামারি অসহায় হয়ে পড়ছে কর্পোরেট ফার্মগুলির কাছে। কন্ট্রাক্ট ভারমিংয়ের উদ্যোক্তা ভারতের সুগুনা কোম্পানি। সিপি এই দেশে ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছে, ঘুষ দিয়ে অনেকে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে।

২৬ শে মে, ২০২৩ সকাল ১০:২৬

দারাশিকো বলেছেন: উদ্যোক্তা যেই হোক - বর্তমানে পোল্ট্রি খাতে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং এ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য। আর ট্যাক্স ফাঁকি দেয় না কে?

২| ২৬ শে মে, ২০২৩ রাত ১:৩৮

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


বিপ্লব দরকার মনে হচ্ছে।

২৬ শে মে, ২০২৩ সকাল ১০:২৭

দারাশিকো বলেছেন: বিপ্লব কিনা জানি না, তবে জনগণের ইউনাইটেড হওয়া জরুরী।

৩| ২৬ শে মে, ২০২৩ সকাল ১০:৪৫

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ট্যাক্স অনেকেই ফাঁকি দেয়। কিন্তু বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলি সাধারণত নগ্নভাবে ট্যাক্স ফাঁকি দেয় না বা ভয় পায়। সিপি থাইল্যান্ডের একটা বড় কোম্পানি যারা বাংলাদেশের পোলট্রি খাতেও জোরালো ভুমিকা রাখছে। কোন বিদেশী কোম্পানিকে এভাবে দেদারসে ঘুষ দিয়ে ট্যাক্স ফাঁকি দিতে দেখি নাই। বাংলাদেশে এসে এরা বাংলাদেশের পরিবেশ বুঝে ফেলেছে এবং দুর্নীতি করে যাচ্ছে। থাইল্যান্ডেও দুর্নীতির সমস্যা আছে ফলে এই কাজে তারা সিদ্ধহস্ত।

আর কন্ট্রাক্ট ফারমিং সম্পর্কে বাংলাদেশীরা ভারতের সুগুনা কোম্পানি থেকে জেনেছে এবং এটার অপব্যবহার করছে। ২০১৭ সালের দিকেই আমার কাছে মনে হয়েছিল এই দেশের প্রান্তিক খামারিরা কর্পোরেটের জালে ধরা পড়তে যাচ্ছে।

২৭ শে মে, ২০২৩ সকাল ৯:২২

দারাশিকো বলেছেন: সিপির ট্যাক্স ফাঁকি নিয়ে কোন তথ্য প্রমাণ এনবিআর এর কাছে পাঠানো যায় না? সেরকম কিছু আপনার জানা আছে?

সুগুনা কোম্পানী সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত বলবেন প্লিজ?

৪| ২৬ শে মে, ২০২৩ সকাল ১১:৩৬

শেরজা তপন বলেছেন: পনয়ের মুল্য নির্ধারনের ক্ষমতা সাদারন মানুষের হাতে থাকলেও সমস্যা কর্পোরেটের হাতে থাওলেও সমস্যা।
এই দেশের কোন গতি নাই।
ক্ষমতায় যারা আছেন তাদের সদিচ্ছা ও সঠিক মনিটরিং না থাকলে এই অবস্থা দিন দিন শোচনীয় হবে। সব কুক্ষিগত করে ফেলবে কিছু কর্পোরেট হারামী।
বাজারে যতই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক ওদের নিজেদের মধ্যে ঠিকই সিন্ডিকেট আছে। কারোই দেশ ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধ নেই- এই ব্যাবসার অগ্রনী পথিক প্রান, কাজী, মেঘনা, এসি আই, সিটি, পারটেক্স, বসুন্ধরা ইত্যাদি । ভবিষ্যতে এদের হাতেই মানুষের জীবন-মরন নির্ধারিত হবে। এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নিতে গেলে যে কোন সরকারকে বেকায়দায় ফেলাতে এরা দেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করবে। লাখ লাখ মানুষ মরলেও এদের কোন বিকার বোধ হবে না।
কে টানবে এদের লাগাম- হয়তো কেউ নেই।
ভাল লিখেছেন।

২৭ শে মে, ২০২৩ সকাল ৯:২৫

দারাশিকো বলেছেন: ধন্যবাদ শেরজা ভাই। আপনি যে নামগুলো বললেন এরাই ভবিষ্যত নিয়ন্ত্রণ করবে। আসলে পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ঠিক করার দরকার নাই। চাষী যদি ন্যায্য দাম পায় তাহলেই তো চলে। অথচ, মাঝের মধ্যসত্ত্বভোগীরা কেবল পুজিঁর ক্ষমতার জোরে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করে নিচ্ছে, চুষে খাচ্ছে জনগণকে। সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ থাকলে এটা সম্ভব হতো না - দুঃখের বিষয় হলো - আমরা সারাজীবন স্বপ্ন দেখি সরকারি চাকরী করার, কারণ তাহলে বিনা দ্বিধায় দুর্নীতি করে যেতে পারবো, বাধা দেয়ার কেউ থাকবে না :(

৫| ২৬ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: দেশ যোগ ও দক্ষ লোক পরিচালনা করলে এরকমটা হতো না।

২৭ শে মে, ২০২৩ সকাল ৯:২৫

দারাশিকো বলেছেন: জ্বি।

৬| ২৭ শে মে, ২০২৩ সকাল ১১:৫০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: সিপি সম্পর্কে আমি জেনেছি নিজস্ব চেনা জানার সুত্রে। কিন্তু দালিলিক প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ করলে সেটা টিকবে না। এই ভিতরের খবরগুলি গোপনীয়। কেউ আমাকে দিতে চাবে না কারণ তার চাকরীর ভয় আছে। তবে ঐ প্রতিষ্ঠানে যারা চাকরী করেছে তাদের কাছ থেকে জেনেছি।

সুগুনা ফুড ভারতের সবচেয়ে বড় এনিমাল ফিড এবং ফারমিং প্রতিষ্ঠান। এদের বাৎসরিক বিক্রয় ২০১৭ সালেই ৮০০০ কোটি টাকার মত ছিল। বিশ্বের প্রথম ১০ টা এনিমাল ফারমিং প্রতিষ্ঠানের এটা অন্যতম। তামিলনাড়ুতে এদের হেড অফিস। বাংলাদেশে ব্যবসা করছে ২০০৯/২০১০ থেকে। তবে বাংলাদেশে ব্যবসা বেশী বাড়ায় নাই। ভারতের বাইরে এদের ব্যবসা আছে কয়েকটা দেশে। এরা ভারতে সফলভাবে কন্ট্রাক্ট ফারমিং করে। এই আইডিয়াটা এদের মাথাতেই প্রথম আসে বলে আমি জানি। বাংলাদেশে সম্ভবত এখন এরাও কন্ট্রাক্ট ফারমিং করছে। তবে ২০১২ সালের দিকে শুরু করতে গিয়েও পিছু হটে কিছু সমস্যার কারণে। এদের মূল মালিক দুই ভাই। এরা খুবই দক্ষ এই ব্যবসায় এবং প্রচণ্ড পরিশ্রমী। বাংলাদেশে ঢাকার উত্তরাতে এদের হেড অফিস।

২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ৮:০৬

দারাশিকো বলেছেন: আগ্রহ জাগায়ে দিলেন। একটু ঘাঁটাঘাটি করে দেখি সুগুনা সম্পর্ক। থ্যাংকিউ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.