নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেওয়ান তানভীর আহমেদ

দেওয়ান তানভীর আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাকিস্তানের বর্বরতা, এবং ভূলুণ্ঠিত মানবতা...

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৭

কিছুদিন আগে অনলাইন এক্টিভিস্ট মহাজাগতিক মনের একটা ফেসবুক পোস্ট থেকে আমার পরিচয় হয় এক বেলুচিস্তানী যুবক ইব্রাহীম বালোচের সাথে। মহাজাগতিক মনের পোস্ট পড়ে সেই বেলুচিস্তানী যুবকের সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেলাম, আর বিস্তারিত জানলাম তার সাথে কথা বলে। ইব্রাহীম বালোচ শুধু নিজের সম্পর্কেই বলে নি, বলেছে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কেও।
বেলুচিস্তান- পাকিস্তানের একটি প্রভিন্স, যা পাকিস্তানের চার প্রভিন্সের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সমগ্র পাকিস্তানের প্রায় ৪৪% জুড়ে আছে। জাতিগতভাবে বালোচরা ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক, এবং কিছুটা বামঘেষা। তাদের রাজনৈতিক আদর্শ হচ্ছে চে গুয়েভারা। আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও তারা পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে থাকে। অর্থাৎ তারা পাকিস্তানীদের ঠিক বিপরীত। বাংলাদেশীদের সাথে তাদের অনেক দিক থেকেই বেশ মিল লক্ষ করা যায়, তবে সবচাইতে বড় মিল হচ্ছে- বাংলাদেশের মত তারাও আজ পাকিস্তানীদের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার।
পাকিস্তান তার জন্মলগ্ন থেকেই লিপ্ত নানান রকম মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে। ১৯৪৮ সালের ২৭ মার্চ থেকেই বেলুচিস্তানে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সামরিক আগ্রাসন ও জবরদখল শুরু হয়। তারা বালুচ জাতির মেরুদণ্ড পুরোপুরি ভেঙে দেয়ার উদ্দেশ্যে চালায় গণহত্যা। পাকিস্তানীদের এই বেআইনী দখলদারি এবং নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রথম দিন থেকেই বালুচ জাতির লড়াই শুরু হয়। আর তাদের এই বিদ্রোহকে বিদেশী অর্থপুষ্ট বিদ্রোহ বলে চালিয়ে দিয়ে নিজেদের দখলদারি এবং গণহত্যাকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করে পাকিস্তানীরা- ঠিক যেভাবে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে ভারতীয় দালালদের ষড়যন্ত্র বলে প্রচার করেছিল। বালুচ জাতির ওপর পাকিস্তানীদের এই নৃশংসতা আজও চলছে। দীর্ঘ সত্তর বছরে বালুচদের ওপর পাকি হায়েনাদের নির্যাতন কোনো অংশে তো কমেই নি, বরন্ঞ্চ বেড়েই চলেছে। বালুচদের সম্পূর্ণরূপে মেরুদণ্ডহীন করে রাখার জন্য পাকিস্তান সরকার বেলুচিস্তানের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েই ক্ষান্ত হয় নি তারা, বালুচ শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, গায়ক, সাংবাদিক এবং বুদ্ধিজীবীদের এক এক করে খুজে বের করে হত্যা করছে। প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার বালুচ জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ , কর্মী , এক্টিভিস্টকে অপহরণ করা হচ্ছে, টর্চার সেলে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হচ্ছে, আর তারপর তাদের প্রাণহীন ক্ষত বিক্ষত দেহগুলোকে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হচ্ছে। গত কয়েক মাসে পাক সেনাদের হাতে শতাধিক বালুচ যুবক প্রাণ হারিয়েছে, এবং তাদের মৃতদেহ পাওয়া গেছে বুলেটে ঝাঁঝরা এবং এসিডে ঝলসানো অবস্থায়! ১৬৮ জন নারী শিশুসহ প্রায় ৮ হাজার বেলুস্তানী পাকিস্তানী সেনাবাহিনী, এফসি, আইএসআই কর্তৃক অপহৃত হয়েছে বিগত কয়েক মাসে, আর এখন এক এক করে তাদের ক্ষত বিক্ষত বিকৃত মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় জায়গায়। পাকিস্তানীদের নির্যাতন নিপীড়ণের শিকার বালুচদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তান সরকার প্রতি বছর বাইরের দেশ থেকে প্রচুর অস্ত্র শস্ত্র আমদানী করে তালেবানদের(যা কিনা তাদেরই তৈরিকৃত সংস্থা) দমন করার নাম করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ব্যবহার করা হয় বেলুচিস্তানের গণহত্যায়। শুধু তাই নয়, ভূমিকম্প বা প্রাকৃতিক দূর্যোগ পরবর্তী উদ্ধারকার্যের জন্য ইরান থেকে যে উদ্ধারকারী হেলিকপ্টার পাকিস্তানে পাঠানো হয়, তা দিয়ে ক’দিন পর পরই বেলুচিস্তানে চালানো হয় বিমান হামলা! সেই বিমান হামলায় পুড়ে ছারখার হয় লক্ষ লক্ষ ঘরবাড়ি, লক্ষ লক্ষ মানুষ!! Genocide by Pakistan লিখে গুগলে সার্চ করলে যেমন পাকিস্তানীদের একাত্তরের বর্বরতার চিত্র পাওয়া যাবে, ঠিক তেমনি পাওয়া যাবে সাম্প্রতিককালের বেলুচিস্তানে সংঘটিত গণহত্যার চিত্রও। মানুষরূপী পাকিস্তানী পশুরা একাত্তরে আমাদের সাথে যা করেছিল, আজ সেই একই নৃশংসতার শিকার হচ্ছে বেলুচিস্তানীরাও।
আজ আমেরিকার প্রেসিডেন্টের গায়ে একটা মশা বসলেও সেটা বিশ্বমিডিয়ায় ব্রেকিং নিউজ হয়ে যায়! অথচ একটা জাতি দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে গণহত্যার শিকার হয়ে আসছে, এই খবর কী করে বিশ্বমিডিয়ার নজর এড়িয়ে যাচ্ছে?! তবে কারো আশায় বসে নেই মুক্তিকামী বালুচরা, তারা নিজেদের মত করে তাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের এই স্বাধীনতা সংগ্রামের রোল মডেল হিসেবে তারা বেছে নিয়েছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে।
বালুচরা আমাদের পিতার হত্যাকারীদেরই হত্যাযজ্ঞের শিকার। আমি একজন বাংলাদেশী, তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে তথা তাদের মুক্তিযুদ্ধে সর্বাগ্র সমর্থন দিলাম।
জয় বাংলা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.