নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেওয়ান তানভীর আহমেদ

দেওয়ান তানভীর আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাবধান!!! যেকোন সময়ে আমার মত আপনিও হয়ে যেতে পারেন একজন মাদক ব্যবসায়ী!!!!

০৩ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:২১

দিনটা ছিলো ২ জানুয়ারী, ২০১৬; শনিবার।
একটা সায়েন্স ফিকশন লেখা শুরু করেছিলাম গতবছর এপ্রিলে। লেখাটা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, এমন সময় আমার মনিটরের কিছু সমস্যা দেখা দিলো, যার কারণে আমার কাজ মাঝ রাস্তায় আটকে গেলো। পরে বুঝতে পারলাম কানেকশানের নাট দু’টো খুলে পড়ে গেছে, যার কারণে মনিটরে পাওয়ার আসছে না। সমস্যাটা ধরতে পারার পর উক্ত দিনটিতে মনিটরটা নিয়ে বের হয়েছিলাম মনিটরটা সারিয়ে নেবার জন্য। ভেবেছিলাম বাসার কাছাকাছি যেই দোকানটা আছে সেখান থেকেই রিপেয়ার করিয়ে নেয়া যাবে, বাসা থেকে মাত্র দশ মিনিটের হাটা পথ। তাই যে অবস্থায় ছিলাম সে অবস্থায়ই মনিটরটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বাসা থেকে, আমার পরনে ছিলো একটা ট্রাউজার আর ময়লা একটা টি-শার্ট।(মূলত আমাকে ড্রাগ সাপ্লাইয়ার হিসেবে চালিয়ে দেয়া আরও সহজ হয়ে গিয়েছিলো আমার এই বেশ ভূষার জন্যই) কিন্তু সেই দোকানে গিয়ে জানলাম সেখানে এটা ঠিক করা যাবে না, গুলিস্তান যেতে হবে। কী আর করা! ঐ অবস্থাতেই গুলিস্থানের দিকে রওনা হলাম। তখন বেলা বাজে ১২:৫১ টা।(হ্যা, রাতের অন্ধকারে নয়, প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার লোকের মাঝখানে ঘটেছে এই ঘটনা)
সুন্দরবন স্কয়্যারের একটা দোকান থেকে মনিটরটা ঠিক করালাম। সেখান থেকে যখন বের হলাম তখন বাজে ১:১৫ কিংবা ১:২০ টা। রিকশা ঠিক করছিলাম বাসায় যাওয়ার জন্য, হঠাৎ কে যেন পেছন থেকে আমার পকেটে একটা কিছু ঢুকিয়ে দিলো। আমি পকেটে হাত দিলাম জিনিসটা কী তা দেখার জন্য। একটা প্লাস্টিকের প্যাকেট ঠেকলো হাতে। পেছন থেকে সেই লোকটি(যে আমার পকেটে প্যাকেটটা ঢুকিয়ে দিয়েছে) আমার ঘাড়ে একটা ধাক্কা দিয়ে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, “অই! আমার লগে আয়!” আমি পেছন ফিরে তাকালাম লোকটার দিকে। লোকটার বয়স হবে ২৬-২৭ বছর, গায়ের রঙ কালো, গাল ভাঙা, চোখ ছোট ছোট, ঠোট কালো; পরনে ছিলো কালো রঙের একটা ময়লা টি-শার্ট, কালো প্যান্ট আর পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল। লোকটার মুখ থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছিলো। আমি বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কী ভাই? সমস্যা কী?” লোকটা চোখ গরম করে বলল, “অ্যাই ব্যাটা, আমি স্যারের লোক! স্যার তরে ফলো করসে। আমার লগে আয়, আমি তরে বাচায় দিতাসি।” আমি বললাম, “আপনার স্যার আমাকে ফলো করবে কেন? চলেন আপনার স্যারের সাথে কথা বলি।” লোকটা যেন আরো রেগে গেলো, ধমক দিয়ে বলল, “হারামজাদা তর এত্ত বড় সাহস তুই স্যারের লগে কথা কইতে চাস? ল আমার লগে!” লোকটা আমাকে কাছাকাছি দাড় করানো একটা পুলিশের ভ্যানের কাছে নিয়ে গেলো। ভ্যানের ভেতরে ড্রাইভারের পাশে বসা পুলিশের ইউনিফর্ম পড়া মাঝবয়সী লোকটি(সম্ভবত এস.আই.) একবার আমার দিকে আর একবার সেই লোকটির দিকে তাকালো। লোকটি পুলিশকে বলল, “স্যার, এইডারে ধইরা আনসি।” পুলিশ তখন লোকটিকে বলল, “আমার কাছে আনছো ক্যান? তোমরা নিজেদের মধ্যে মিটায়ে নেও!” তারপর গলা নামিয়ে লোকটিকে বলল, “বেশি সময় নেওয়া যাবে না কিন্তু। বিশ মিনিটের মধ্যে সব রেডী করে আমাকে জানাবা।” লোকটি তখন পুলিশকে সালাম দিয়ে আমাকে বলল, “অই! ল আমার লগে!” আমি পুলিশের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম, কিন্তু ততক্ষণে পুলিশ ভ্যান ছেড়ে দিয়েছে। লোকটি আমার গালে একটা চড় কষিয়ে দিয়ে বলল, “খাড়ায়া রইছস ক্যা শুয়োরের বাচচা?!” বুঝতে পারলাম এই লোকটি পুলিশের ইনফর্মার। এও বুঝতে পারলাম যে এখন আমার কিছুই করার নেই, কিছু করতে গেলেই বিপদ। কারণ প্যাকেট তখন আমার পকেটে, কোনো প্রমাণও নেই যে এই প্যাকেট আমার পকেটে অন্য কেউ ঢুকিয়ে দিয়েছে। এখন লোকটি যদি আমাকে ফাসিয়ে দেয়, তাহলে আমার কিছুই করার থাকবে না। অতএব লোকটি যা বলে তা মেনে নেয়াই এখন সবচাইতে বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আমি লোকটার সঙ্গে সঙ্গে হাটতে শুরু করলাম। সে এক হাত আমার কাধের ওপর রেখে আমাকে নিয়ে রাস্তা পাড় হয়ে ঢাকা ট্রেড সেন্টারের দিকে হাটা ধরল। হাটতে হাটতে লোকটি আমাকে মুখ খারাপ করে বিশ্রী ভাষায় গালি দিচ্ছিলো। সে বলল, “ভাবছস তরে আমি চিনি নাই? তরে আমি ঠিকই চিনসি! হালার পো হালা তুই আমারে চোখ রাঙাইছোস? মাহতাব চাচারে চিনোস না?? আমি হের ভাতিজা লাগি শুয়োরের বাচচা!” সে একই কথা বারবার বলতে লাগলো, সে নাকি আমাকে চেনে, দেখা মাত্রই নাকি আমাকে চিনে ফেলেছে। আবার বলল, “চুরি করতি হেইডাই তো ভালা ছিলো, আবার বাবা সাপ্লাইয়ের কাম শুরু করলি ক্যা?” আমি অবাক হয়ে গেলাম লোকটার কথা শুনে। তার কথার মাথামুণ্ডু আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। সে আমাকে নিয়ে ঢাকা ট্রেড সেন্টারের ভেতরে ঢুকলো, তারপর একটা দোকানের সামনে দাড়ালো। একটা শপিং ব্যাগ নিলো দোকান থেকে, শপিং ব্যাগের দামও দিলো না। আমার দিকে ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে আমার বগলদাবা করে ধরে রাখা মনিটরটি দেখিয়ে বলল, “ঐডা ভর ব্যাগের মইধ্যে।” আমি ব্যাগটা তার কাছ থেকে নিয়ে ব্যাগের ভেতর মনিটরটা ভরলাম। দোকানদার লোকটাকে বলল, “কীরে মোহাম্মদ আলি, এই মালডা কইত্থিকা আনলি?” বুঝতে পারলাম যেই লোকটা আমাকে নিয়ে এসেছে তার নাম মোহাম্মদ আলি। মোহাম্মদ আলি সেই দোকানদারের কথার উত্তর না দিয়ে আমাকে নিয়ে মার্কেটের ভেতরের দিকে হাটা ধরল। একবার ভাবলাম, সুযোগ বুঝে মোহাম্মদ আলির পেছন থেকে কেটে পড়ব কিনা! পরমুহুর্তেই লক্ষ্য করলাম, আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক লোকের সাথে মোহাম্মদ আলি ইশারায় কথা বলছে। শুধু তাই না, অনেক দোকানদারের সাথেও সে কথা বলছে। তারমানে পুরো ঢাকা ট্রেড সেন্টারের ভেতরে মোহাম্মদ আলির লোকজনের ছড়াছড়ি! এদের মাঝখান থেকে দৌড়ে পালানো সম্ভব না। আর মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা সাধারণ লোকজনের কাছ থেকেও সাহায্যের আশা করাটা বোকামী। কারণ মোহাম্মদ আলি বা তার লোকজন যখন আমার পকেট থেকে ড্রাগসের প্যাকেটটা বের করবে, তখন পাবলিক উলটে আমাকেই মারতে আসবে ড্রাগ সাপ্লাইয়ার ভেবে। আমি পকেটে হাত দিয়ে ফোনটা বের করলাম, তারপর আমার এক বন্ধুর নাম্বারে কল দিয়ে ফোনটা পকেটে রেখে দিলাম। সে যদি বুদ্ধি করে লাইন না কেটে সব কথাবার্তা শুনে যেতে থাকে, তাহলে আর কিছু না হোক অন্তত এটা বুঝতে পারবে যে আমি কোন একটা ঝামেলার মধ্যে আছি। তখন সে তার জায়গা থেকে একটা না একটা ব্যবস্থা নেবেই। মোহাম্মদ আলি তখন একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দোকানদারের কানে কানে কিছু বলল, দোকানদার কোন কথা না বলে হাত তুলে সামনের দিকে দেখালো। মোহাম্মদ আলি আবার হাটা ধরল, তার সঙ্গে আমিও। সে আবার আমাকে বলল, “ডরাইস না, আমি তরে বাচায় দিতাসি। স্যার তরে ফলো করসিলো। এহন আমি যা কই হেই মতন চললে বাইচা যাবি, বুঝছস?” আমি মাথা নাড়লাম। একটা দোকানের সামনে গিয়ে মোহাম্মদ আলি দোকানদারকে বলল, “ভাই কি আছে নি?” দোকানদার মোহাম্মদ আলিকে বসতে বলে দোকান থেকে বেরিয়ে গেলো। মোহাম্মদ আলি আমাকে বলল, “ তর বাসায় ফোন দে।” আমি পকেট থেকে ফোনটা বের করলাম। ভেবেছিলাম যাকে কল করেছিলাম সে হয়ত এখনো লাইনে আছে। কিন্তু দেখলাম সে লাইন কেটে দিয়ে একটা মেসেজ পাঠিয়েছে। তখন দুপুর বাজে ১:৪০টা। আমি তখন আমার বোনকে কল করলাম। মোহাম্মদ আলি আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে নিজের কানে লাগিয়ে বলল, “হ্যালো! হ শোন, এইডা তর কী লাগে? কী কইলি, ভাই লাগে?? অয় আকাম কইরা ধরা পড়সে! ট্যানশন নিস না, আমি অরে বাচায়ে দিমু।” এরপর আরও কিছু বলল, কিন্তু আমার কানে আর কোনো কথা ঢুকলো না, ঢুকলেও মনে নেই। কারণ ততক্ষণে আমার মাথা বনবন করা শুরু হয়ে গেছে, চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা দেখছিলাম। বুঝতে পারছিলাম যে আমি খুব ভালোভাবে ফেসে গেছি। কিছুক্ষণ বাদেই দোকানদার ফিরে এলো, ফিরে এসে বলল, “ভাই আসতেসে, আপনে অরে নিয়া যান।”(ঐ দোকানের নামটা আমার মনে আছে-"তামান্না ক্লথ সেন্টার" বা "তামান্না ক্লথ স্টোর"; নামের সাথে যে "তামান্না" ছিলো, এটা স্পষ্ট মনে আছে)
তারপর মার্কেটের আরও ভেতরের দিকে গিয়ে একটা সরু গলি দিয়ে ঢুকলো মোহাম্মদ আলি, তার পেছন পেছন আমিও ঢুকলাম। যেখানে ঢুকলাম সেটা ছিলো বিশাল এক কাপড়ের গোডাউন। সেখানে অনেক লোক কাজ করছে, তারা কেউ কেউ কাজের ফাকে ঘাড় ঘুরিয়ে আমাকে এক নজর দেখে নিচ্ছে। কয়েকজন আবার এগিয়ে এসে মোহাম্মদ আলির সাথে কুশল বিনিময় করল। মোহাম্মদ আলি আমাকে এক পাশে একটা সিড়ির নিচে নিয়ে গিয়ে বলল, “তর হাতের এইডা এইহানে রাখ। দেহিস ময়লা লাগে না যানি!” আমি মনিটরটা রাখলাম। তারপর মোহাম্মদ আলি জিজ্ঞেস করল, “সত্যি কইরা ক, তর লগে কয় টেকা আছে?” মনিটর ঠিক করার পর আমার পকেটে তখন মাত্র বিশ-ত্রিশ টাকার মত বেচেছিলো। আমি বললাম, আমার পকেটে কোনো টাকা নাই। মোহাম্মদ আলি তখন আমাকে কষে একটা চড় মারল, আমি মাটিতে পড়ে গেলাম। তারপর সে মাটি থেকে একটা লম্বা কাপড়ের টুকরো উঠিয়ে সেটা দিয়ে আমার গলায় শক্ত করে ফাস লাগালো। যন্ত্রণায় আমি চিৎকার করতে গিয়েও করতে পারলাম না। কারণ এত জোড়ে ফাস লাগিয়েছিলো যে আমার গলা বন্ধ হয়ে আসছিলো, তাই চিৎকার করার চেষ্টা সত্ত্বেও গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বেরোচ্ছিলো না। আমি হাত পা ছুড়তে লাগলাম, আমার লাত্থি লেগে মনিটরটা মাটিতে পড়ে গেলো। এতে মোহাম্মদ আলি আরও রেগে গিয়ে আমাকে আবার চড় মারল। তারপর আমার গলার ফাস খুলে দিয়ে বলল, “দুই ঘণ্টা সমায়, এর মইধ্যে যদি পাঁচ লাখ টাকা আইনা দিতে পারস তাইলে ছাইড়া দিমু!” আমার কথা বলতে কষ্ট হচ্চিলো, তবুও বললাম, “এত টাকা কই পাব?” মোহাম্মদ আলি তখন আমার পেটে জোরে একটা লাথি মেরে বলল, “হারামজাদা তুই টেকা কইত্তন আনবি হেইডা আমি জানি?” প্রচণ্ড ব্যাথায় আমার চোখে পানি চলে এলো। মোহাম্মদ আলি কতগুলো কাপড় এনে আমার দু’হাত পিছমোড়া করে বেধে ফেললো, আমার পা দুটোও শক্ত করে বাধলো। এরপর আমার মুখে এক দলা কাপড় গুজে দিয়ে মুখটাও বেধে দিলো। তারপর আবার আমার গলায় ফাস লাগালো, এবারে আরো জোরে। আরেকটু জোরে ফাস লাগালে বোধহয় মারাই যেতাম। মোহাম্মদ আলি দাঁত মুখ খিচিয়ে বলল, “কোনো চালাকি করবি না! এইহানে সবাই আমাগো লোক, বুঝছস?!” তখন মোহাম্মদ আলির পেছনে কালো মতন একজন বয়স্ক লোককে দেখা গেলো। আমার যতদূর মনে পড়ে তার নাকের নিচে হালকা গোফ আছে, তার ঠোট দেখে মনে হচ্ছিলো তার মাঝে মাঝে পান খাওয়ার অভ্যাস আচে; আর সে মোটামুটি স্বাস্থ্যবান। সে সম্ভবত সেখানকার ম্যানেজার। সে বলল, “কীরে! এইডা আবার কেডা?” মোহাম্মদ আলি বলল, “মামা, এইডারে দেইখা রাইখেন। এইডারে অন্য জায়গায় দেওনের কন্ট্রাক্ট আছে। আমি এইডি রাইখা আহি। আর এর মইধ্যে যদি ভাই আইয়া পড়ে তাইলে ভাইয়ের হাতে ছাইড়া দিয়েন, ভাই ব্যবস্থা করব নে।” কথাগুলো বলে মোহাম্মদ আলি মাটি থেকে মনিটরের ব্যাগটা তুললো, তারপর সেই লোকটির সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেলো। আমার শরীরে তখন এক ফোটাও শক্তি নেই, আর যন্ত্রণায় গোঙানোরও উপায় নেই, কারণ আমার গলায় ফাস লাগানো। ম্যানেজার গোছের লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে কিছু কথা বলে সিড়ি দিয়ে ওপরে উঠে গেলো। তার কথাগুলা আবছা আবছা যতটুকু মনে আছে তা হল, “হায়রে চোররে, পড়লি আইয়া বড় চোরের হাতে!”
আমি হাত পা বাধা অবস্থায় সিড়ির নিচে পড়ে রইলাম। ওদের মতলব আমি ততক্ষণে কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছিলাম। আমার মনিটর আর মোবাইল ফোন হাতানো ওদের আসল উদ্দেশ্য না। ওরা আমাকে ড্রাগ সাপ্লাইয়ার সাজাতে চাচ্ছে। আমাকে ড্রাগ সাপ্লাইয়ার সাজিয়ে অন্য কোনো ড্রাগ সাপ্লাইয়ারের জায়গায় আমাকে জেলে পাঠাবে। সেই আসল ড্রাগ সাপ্লাইয়ার এবং সে যাদের হয়ে কাজ করে তারা পাড় পেয়ে যাবে। আর তাদের জায়গায় আমি জেল খাটব, পুলিশ আমাকে জেরা করবে, মারধর করবে আমার পেট থেকে কথা বার করার জন্য। টিভি নিউজ, খবরের কাগজ সব জায়গায় আসবে একজন মাদক ব্যবসায়ীর ধরা পড়ার খবর। আর সেই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করার জন্যে পুলিশও ব্যাপক বাহবা পাবে। হয়তবা কয়েকদিন পর আমাকে ছেড়েও দেওয়া হবে। কিন্তু ততদিনে আমার জীবন বরবাদ হয়ে যাবে। আমার ইউনিভার্সিটি থেকে ছাত্রত্ব চলে যাবে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া লাটে উঠবে, ছোটবেলা থেকে দেখে আসা আমার বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন জলে যাবে; এমনকি দু’বেলা খেয়ে পড়ে বাঁচার জন্যে একটা চাকরিও জুটবে না। পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবদের সামনেও মুখ দেখাতে পারব না! তখন আমার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হবে অন্ধকার জগৎ, যাকে আমরা এক কথায় “আন্ডারওয়ার্ল্ড” বলে জানি। হয়ত বেঁচে থাকার জন্যে আমাকেও বেছে নিতে হবে ঐ মোহাম্মদ আলির রাস্তা। অপরাধ জগতে যোগ হবে আরো একজন মোহাম্মদ আলি। এরকম পরিস্থিতিতেও আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো আমার অসমাপ্ত সায়েন্স ফিকশনটার কথা! অপরাধ জগতে বসে আমি কি আর লেখালেখি চালিয়ে যেতে পারব?! তখন কে পড়বে একটা ক্রিমিনালের লেখা সায়েন্স ফিকশন??? আমার মা হাইপ্রেশারের রোগী, আমার ড্রাগস সহ ধরা পড়ার খবর শুনে তার কী অবস্থা হবে সে কথা ভেবেও আমার বুক কেপে ওঠে!
আমি বুঝতে পারলাম, এখান থেকে যদি পালাতে না পারি তাহলে আমার সামনে দু’টো রাস্তা খোলা আছে। প্রথমত, অপরাধ জগতের রাস্তা। আর দ্বিতীয়ত মৃত্যু। এখান থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়লে হয়ত মরতে হবে, কিন্তু ওদের এখানে পড়ে থেকে ওদের কথামত কাজ না করলেও মরতে হবে। অপরাধ জগতে অপরাধী হয়ে বেচে থাকার চাইতে মৃত্যুও অনেক ভালো। তাই পালানোর একটা চেষ্টা আমাকে করতেই হবে।
আমি শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে উঠে বসলাম, তারপর পিছমোড়া করে বাধা হাতদু’টো দুই পায়ের ফাক দিয়ে বের করে এনে মুখ থেকে কাপড় সরালাম। দাঁত দিয়ে হাতের গিঁট ছাড়িয়ে তারপরে পায়ের বাঁধন খুললাম। এরপর উঠে দাঁড়িয়ে শরীরে যতটুকু শক্তি অবশিষ্ট ছিলো তাই দিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম। ওপর থেকে কে যেন হাক দিলো, “শালারে ধর!” দুইজন লোক আমার দিকে দৌড়ে আসছিলো সম্ভবত আমাকে ধরতেই। তাদের একজনের তলপেটে আমি জোরে একটা লাত্থি কষালাম, সে গিয়ে অন্যজনের ওপর পড়ল। এরপর আমি সবকিছু ভুলে শুধু দৌড়াতে লাগলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে কখন যে সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে অনেকটা পথ চলে এসেছি তা আমি নিজেও জানি না।
ঐ ঘটনার পর দুই-তিনদিন আমি ঠিকমত কথা বলতে পারি নি গলায় প্রচণ্ড ব্যাথার কারণে। কিছু খেতেও পারতাম না। ফাস লাগানোর কারণে গলা ফুলে উঠেছিলো। প্রচণ্ড মাথাব্যাথায়ও ভুগতে হয়েছে অনেকদিন, গলায় খুব শক্ত করে ফাঁস লাগানোর কারণে মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছিলো। আর ভয়ানক মানসিক চাপ তো ছিলোই। রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি, কিছুতেই ঘুম আসত না। এখনও প্রায়ই রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি, নিজেকে দেখি একজন কুখ্যাত অপরাধী হিসেবে। দুঃস্বপ্নে দেখি, আমি একটা নিরীহ মানুষকে সেই একই জায়গায় একই ভাবে অত্যাচার করছি, ঠিক যেরকমটা মোহাম্মদ আলি আমার সাথে করেছিলো। নিজের চেহারা দেখে আমি তখন নিজেই ভয় পেয়ে যাই!
পরিশিষ্টঃ
সেই ঘটনার পর ভেবেছিলাম থানায় একটা জিডি করব। কিন্তু পরে ভাবলাম, কার কাছে করব এই জিডি?? যে আমাকে অপহরণ করেছিলো, সে তো স্বয়ং পুলিশের জন্যই কাজ করে; পুলিশের ইনফর্মার সে! আর এই সবকিছুর পেছনে যেই অপরাধ চক্রটির হাত রয়েছে তাদের লোকজন তো সব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে, প্রশাসনের মধ্যে তো বটেই! ঢাকা ট্রেড সেন্টারের মত একটা মার্কেট ভর্তি তাদের নিজেদের লোকজন, পুরো একটা মার্কেট তাদের নিয়ন্ত্রণে; প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত কোনো হর্তাকর্তার সাথে যথেষ্ট দহরম মহরম না থাকলে এতটা প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব না।
একবার ভেবেছিলাম ঘটনাটা মাথা থেকে তাড়িয়েই দেব। কিন্তু নিজের সাথে ঘটে যাওয়া এরকম একটা ঘটনা, যে ঘটনায় আর একটু হলে আমার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যেত, সেটা মাথা থেকে তাড়াই কেমন করে?? আমি লেখালেখি করি, তাই অন্তত আমার লেখার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করাটা আমার কর্তব্য। তাই শত দ্বিধা-দ্বন্দ সত্বেও আজ লিখে ফেললাম। আমি চাই না আর কেউ আমার মত এরকম পরিস্থিতিতে পড়ুক। আমি নাহয় ফিরে আসতে পেরেছি, কিন্তু যেই মানুষটা ওখান থেকে ফিরে আসতে পারল না তার কী হবে? হয়ত সে তার সুস্থ স্বাভাবিক জীবন চিরতরে হারিয়ে হয়ে উঠবে নতুন এক মোহাম্মদ আলি!!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০১

খোলা মনের কথা বলেছেন: বিষয়টি খুব খারাপ লাগলো। যাদের উপর নিরাপত্তা আশা করি তারা আজ বড় সন্ত্রাস। কি হবে এমন প্রশাসন দিয়ে। মাঝে মাঝে চিন্তা করি কোথায় আছি আমরা??? কোন উত্তর পাওয়া যায় না শুধু হতাশা নিয়ে তাকিয়ে থাকি কবে যে আমি হব একজন ভুক্তভোগী

২| ১৮ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:০৮

এম আর তালুকদার বলেছেন: ভাই আমিও একজন ভুক্তভুগি। আমার যে ক্ষতি হয়েছে তা অপুরনীয়।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২১

দেওয়ান তানভীর আহমেদ বলেছেন: আপনার ঘটনাটি শেয়ার করবেন কি? কী হয়েছিলো আপনার সাথে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.