![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চ্যানেল আইতে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপের ১২৬তম পর্বটি দেখছিলাম। এবারের পর্বে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, বিএনপি নেতা অবসরপ্রাপ্ত লে: জেনারেল মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এম এম আকাশ এবং বেসরকারী সংগঠন ‘আর্টিকেল নাইনটিন’ এর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক তাহমিনা রহমান। বিষয় ছিল- ক্রসফায়ার এবং অন্যান্য কয়েকটি প্রসঙ্গ।
এই আলোচনাগুলো খুব একটা ফলপ্রসু হয় না বলে আমার মনে হয়, কারণ, প্যানেলিস্টরা সব কুল রক্ষা করে কথা বলায় সঞ্চালক শেষ পর্যন্ত দর্শকদের কোন উপসংহারে পৌঁছে দিতে পারেন না। তবে বিষয়টি নিয়ে একটা গুঞ্জন তৈরি হয়, পাশাপাশি একটা ভাবার্থও থাকে, সন্দেহ হয়- গুঢ় অর্থটি আসলে সাধারণ মানুষের বোঝার সাধ্য আছে কিনা।
যাইহোক, অনুষ্ঠানের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করা আমার মত আমজনতার কাজ নয়, সেটি করতে চাচ্ছিও না। অনুষ্ঠানটি দেখতে দেখতে কিছু প্রশ্ন আমার মাথায় এসেছে, মূলত প্রশ্নগুলো করতে চাচ্ছি।
তার আগে একটি কষ্টের কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন। ক্রসফায়ার নিয়ে আলোচনাটা আমি মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম, কারণ, বিভিন্ন মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে আমি ক্রসফায়ারের বিপক্ষে লিখে আসছি, যদিও আমার ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কথা আমি জানি। তারপরেও ছোট একটি পুস্তিকা বের করলেও পিছনে স্লোগান আকারে ক্রসফায়ারের বিপক্ষে কিছু লিখে দিই। আজকে কষ্ট পাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে- ক্রসফায়ারের আলোচনাটি শেষপর্যন্ত হাস্যরসে রূপ নেয়, যেটি আমার কাছে খুব উদ্বেগজনক মনে হয়েছে। মনে হয়েছে, মঞ্চে উপবিষ্ট কারোরই মাথায় নেই যে, তারা হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলছে, তারা কথা বলছে এমন একটি ব্যবস্থা নিয়ে যে ব্যবস্থার উপর ভর করে হত্যা করা হয়েছে নারায়গঞ্জে সাত জন নিরাপরাধ মানুষকে, হয়ত অন্যান্য ক্ষেত্রে আরো অনেককে।
হেসে হেসে ক্রসফায়ার নিয়ে প্যানেলিস্টরা কথা বলায় আমি ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত হয়েছি, এবং একই সাথে শঙ্কিত হয়েছি, কারণ, প্যানেলে যারা ছিলেন সবাই তারা উৎকর্ষিত মানুষ বলেই বিশ্বাস করতে চাই। আমরা সবাই জানি এই ‘বন্দুক যুদ্ধ’ মানে কী, কিন্তু মন্ত্রী মহোদয় সেখানেও সাফাই গাইলেন। বন্দুক যুদ্ধে শুধু ধৃত আসামী মারা যায়, কিন্তু পুলিশের গুলিতে কথিত আক্রমণকারীরা কখনো কেউ মারা যায় না! যায় কী? তাহলে এটি বন্দুক যুদ্ধ হয় কীভাবে? কার সাথে কার যুদ্ধ হয়? তাছাড়া একজন আসামীকে যখন পুলিশ ধরে তখন তার নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব তো তাদেরই। তাই বন্ধুক যুদ্ধ বলুক আর যাই বলুক এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের দায় তো সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর উপরেই বর্তায়। যদিও আমরা সবাই বুঝি- এগুলো আসলে বন্দুক যুদ্ধ নয়। প্রশ্ন থেকে যায়- বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নির্দেশটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ঠিক কোন পর্যায় থেকে আসে? কোনো ঘটনার প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে যখন কাউকে ‘ক্রসফায়ার’ দিয়ে হত্যা করা হয়, তখন প্রশ্নটি আরো প্রবল হয়- এত দ্রুত একজন মানুষেকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত কীভাবে কে নিল?
প্রসঙ্গক্রমে একটা ঘটনার কথা স্মরণ করতে চাই। ২০১১ সালের ২২ জুলাই আন্দ্রে ব্রেইভিক নামক এক যু্বক নরওয়েতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বোমা ফাঁটিয়ে এবং উটোয়া দ্বীপের এক সমাবেশে গুলি করে ৭৭ জনকে হত্যা করে, আহত করে দুই শতাধিক লোককে। খবরে দেখছিলাম, ব্রেইভিকের বিচার হয়েছে, এবং তার ২১ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। উল্লেখ্য, নরওয়েতে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড নেই। এই ব্রেইভিককে নিয়ে তখন অনেক প্রশ্ন তার আইনজীবীরা তুলেছিল- ব্রেইভিক মানসিকভাবে অসুস্থ কিনা, হত্যার উদ্দেশ্য নৃশংসতা, নাকি রাজনৈতিক ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন তখন উঠেছিল। অর্থাৎ একজন মানুষ যখন কোনো অপরাধ করে, তখন কীভাবে কোন অবস্থায় সে অপরাধটি করে, বিচারের সময় সেটি বিবেচনায় নিতে হয়। এইজন্যই তো বিচার ব্যবস্থা, নাহলে এত এত ব্যবস্থার প্রয়োজন কী?
এরপর মন্ত্রী বললেন, সংখ্যাগরিষ্ট জনগণ ক্রসফায়ার সমর্থন করে। অর্থাৎ, প্রকারন্তারে উনি বুঝাতে চাইলেন, বেশি সংখ্যক জনগণ ক্রসফায়ার পছন্দ করে, এজন্য তা ঠিক আছে! এটিই সর্বাধিক উদ্বেগের জায়গা। মন্ত্রী এক্ষেত্রে প্রথম আলো পত্রিকার একটি জরিপের দোহাই দিয়েছেন।
উপরিউক্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মন্ত্রী মহোদয়কে প্রশ্ন করতে চাই-
কয়েকটি গবেষণায় আমি দেখেছি- বেশিরভাগ পুরুষ ‘সুযোগ’ পেলে (কার ক্ষেত্রে সুযোগটি কেমন হতে হবে, তা নিয়ে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে) ধর্ষণ করবে। [যেহেতু এই গবেষণাগুলো আমি অনলাইনে দেখেছি, তাই রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করছি না।]
যেহেতু বেশিরভাগ পুরুষ সুযোগ পেলে ধর্ষণ করবে, তাহলে কি একজন পুরুষ হিসেবে মন্ত্রী মহোদয় আপনি বলবেন, ধর্ষণ ঠিক আছে? যদি তা না বলেন, তাহলে একজন মানুষ হিসেবে আপনি কেন সংখ্যাগরিষ্ঠের দোহাই দিয়ে বলছেন ‘ক্রসফায়ার’ ঠিক আছে?
বেশিরভাগ মানুষ (স্থানে উপস্থিত) পছন্দ করে বলেই গণপিটুনিতে কেউ মারা যায়। তাহলে আপনি কি বলবেন- গণপিটুনি দিয়ে কাউকে মেরে ফেলা ঠিক আছে?
সবচে’ রূঢ় প্রশ্নটা এবার করতে চাই। এদেশের বেশিরভাগ মা্নুষের মতামতের প্রতি যেহেতু আপনার এতটা আস্থা, তাহলে এটা কেন যাচাই করছেন না যে, বেশিরভাগ মানুষ আপনাদের এই মুহূর্তে ক্ষমতায় চায় কিনা?
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে আপনার পুনরায় ক্ষমতায় এসেছেন, সেখানে কিন্তু বেশিরভাগ জনগণ মত প্রকাশ করতে পারেনি।
জনাব মন্ত্রী, এমন গুঞ্জন কিন্তু চারপাশে আছে যে, এখন নির্বাচন হলে বেশিরভাগ জনগণ আপনাদের ক্ষমতায় দেখতে চাইবে না। গুঞ্জনকে মিথ্যা প্রমাণ করতে আপনারা কেন চাইছেন না? ধরে নিচ্ছি- পাঁচ বছর পরে জনগণের মতামত সঠিকভাবে আপনার নিবেন, অপেক্ষায় রইলাম।
©somewhere in net ltd.