![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি জগন্নাথ হল-এ উঠেছিলাম ২০০৩ সালে। দুই মাস থেকে কষ্টে কেনা মোবাইলটা খুইয়ে হল ছেড়েছিলাম। মোবাইলটা যে নিয়েছিল সে ছিল আমার ফ্লোর মেট। এরপর বছর খানেক মেসে থেকে আবার হল-এ উঠেছিলাম। প্রতিজ্ঞা ছিল- লেজুড় ধরে হল-এ থাকব না, যেহেতু প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষে বৈধভাবে সিট পাওয়া যায় না, তাই লেজুড় না ধরে উপায়ও ছিল না। তখন লেজুড় ছিল- ছাত্রদল। মাত্র বিশজন ছাত্র জিম্মি করে রেখেছিল জগন্নাথ হল-এর কয়েকহাজার ছাত্রকে। শেষ পর্যন্ত আমি মিছিলে যেতে অস্বীকৃতি জানানোই আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর একুশে হল-এ এক বন্ধুর কাছে গিয়ে উঠলাম। ছয়মাস পরে আবার হল-এ ফিরলাম। অক্টোবর ভবনের ৪৬৪ নম্বর রুমে উঠলাম। সেটিও ছিল লেজুড়, এটা ছিল ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ তখন মারাত্মক কোনঠাসা অবস্থায়। জগন্নাথ হল-এ তাদের দখলে ছিল মাত্র দুটো রুম। আমি যে রুমে উঠেছিলাম সেখানে কতজন ছিল তার কোনো হিসেব ছিল না। চিৎ হয়ে শোয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না, কাত হয়ে শোয়ার মত জায়গাটুকুও মাঝে মাঝে ফ্লোরে পাওয়া যেত না। অনেক রাত টিভি রুমে কাটিয়েছি। মাঝ রাতে ছারপোকার কামড়ে আর সদ্যাগত নেতার মোজার গন্ধে তড়বড়িয়ে উঠে পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে ঝিমুয়েছি অনেক রাত। উল্লেখ্য, তখন পাবলিক লাইব্রেরি সারারাত খোলা থাকত। অতিষ্ঠ হয়ে এরপর উঠলাম নান্টু দা’র রুমে। নান্টু দা ছাত্রফ্রন্ট করতেন। আমিও ছাত্রফ্রন্ট শুরু করলাম। তবে নান্টু দা ছিলেন অতিমাত্রায় জেন্টলম্যান। ওখানেই গোল বাধল। একদিন রুমে ঢুকে উনি দেখলেন সিগারেটের গন্ধ। বললেন- তুমি রুমে সিগারেট খেয়েছ? অবশেষে আবার হল ছাড়লাম। এভাবে চলেছে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত। তৃতীয় বর্ষে গিয়েও থিতু হতে পারিনি। চতুর্থ বর্ষে উঠেও আমার সিট নাই। অর্থাৎ এটা প্রমাণিত সত্য যে, লেজুড় না ধরে নির্বিঘ্নে হলে তাকা সম্ভব নয়।
শেষ পর্যন্ত অনার্স পরীক্ষা দিয়ে উত্তর ভবনে একটি রুমে উঠি। তখন আমি ‘আঠারো’ নামে একটি ছোট পত্রিকা চালাই। এর আগে এক বন্ধুর সাথে একুশে হল থেকে বের করতাম ‘নবীন পথিক’ নামে একটি ছোট পত্রিকা। এই কারণেই কারো তোয়াক্কা না করেও উত্তর ভবনের একটি রুমে উঠতে পেরেছিলাম। কিন্তু ছয় মাস না যেতেই ঝামেলাই পড়তে হল। হল ক্যান্টিনের খাবারের মান এবং সেখানে চাঁদাবাজির একটি সমীকরণ তৈরি করে ঐ ছোট পত্রিকাটিতে ছাপানোয় ক্যান্টিন মালিক এবং তথাকথিত ছাত্রলীগ খেপে যায়। তাদের কৈফিয়ত দিতে হয়, এবং এ জাতীয় ‘বানানো খবর’ আর ছাপব না মর্মে তাদের কাছে মুচলেকাও দিতে হয়।
এরপর কৈফিয়ত দিতে হয়েছিল ধর্মের ধ্বজাধারীদের, কারণ, দীর্ঘদিন নির্মাণাধীন অবস্থায় অবহেলায় পড়ে থাকা বুদ্ধ মূর্তি নিয়ে একটি লেখা ছাপানোটা ছিল আমার অপরাধ। সনাতনপন্থী কট্টররা ওটি করতে দিতে চায় না, কারণ, মূর্তিটা বিশাল। আসলে একটি হল হিসেবে মূর্তিটা বিশালও, কিন্তু একবার যখন শুরু করা হয়েছে শেষ করতে তো হবে। মূর্তিটার কাজ পরে অবশ্য শেষ হয়।
এরপর আরো কয়েকটি লেখার সূত্র ধরে ওরা প্রমাণ করল- আমি জগন্নাথ হল-এর স্বার্থ বিরোধী এবং জামাত-বিএনপি’র চর। এভাবে আরো তিনমাস কেটে গেল।
এরমাঝে পত্রিকায় একটি চিঠি ছাপা হয়েছিল। শিরোণাম ছিল- জগন্নাথ হল কি ছাত্রলীগের ভাগাড়? এবার আর যাই কই? আমাকে মেরে ধরে টাকা পয়শা এবং ক্যামেরা সিনতাই করে নিয়ে রুম থেকে বের করে দেওয়া হল। সেদিন রুমে আমার দুইজন ছাত্র ছিল। তাদের গায়েও হাত তোলা হয়েছিল। ওদের গায়ে হাত তোলায় ওদের পিতা-মাতার কাছে আমি এখনো কোনো জবাব হাজির করেতে পারিনি।
জগন্নাথ হল কে কেন ছাত্রলীগের ভাগাড় বলা হয়েছিল, এবার সে আলোচনায় আসি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাগাতার সিনতাইয়ের ঘটনা এবং জগন্নাথ হল-এর ছাত্রদের সেখানে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় এ আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা বেড়েছে। একথা সবাই জানে যে, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলে জগন্নাথ হল-এ বহিরাগতদের আনাগোনা বাড়ে। অভ্যাগত অতিথী তো আছেই, সেইসাথে আশ্রয় পায় চোর বাটপাড় ধান্দাবাজেরা। কিন্তু সরাসরি সিনতাইকারেদের হল-এ জায়গা দিয়ে সিনতাই করা হয়, এ কথা নিশ্চিয়ই অনেকের অজানা ছিল। তবে এটি কিন্তু খুব নতুন কিছু নয়, জগন্নাথ হল কে ছাত্রলীগের ভাগাড় বলা হয়েছিল এমন কিছু ঘটনার কারণেই। আমার এক আত্মীয় মাঝে মাঝে আমার সাথে রুমে থাকত। ও তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে পড়ত। ওর ব্রেনে সমস্যা ছির, তবে যেহেতু ও গানবাজনা পারত, তাই সহজেই মানুষের মাঝে ভিড়ে যেত। আমার দুই পাশে ছিল দুটি কথিত পলিটিক্যাল রুম, আসলে জগন্নাথ হল-এর অধিকাংশ রুম এখনো অবৈধভাবে দখল করে আছে অনেকে। কমপক্ষে পঞ্চাশটা রুমে জগন্নাথ হল-এ ভাড়া দেওয়া আছে।
প্রতিদিন ও সন্ধ্যায় দলের সাথে বেরিয়ে যেত, আসত মধ্যরাতে। মাঝে মাঝে দেখতাম, ফাঁকে এসে কিছু রেখে যায়, বা কিছু একটা নিয়ে যায়। সন্দেহ হওয়ায় একদিন ধরে বসলাম, তখন ও ঘটনা খুলে বলে। ও একটি দলের সাথে সন্ধ্যার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যায়। সেখানে গিয়ে টার্গেট করা হয় জুটিদের। একটু অপ্রীতিকর অবস্থায় পেলে তো আর কথাই নেই। প্রথমে ভড়কে দেওয়ার জন্য ছেলেটিকে ঠাস ঠাস করে চড়া মারা হয়। মেয়েটিকেও স্পর্শ করতে ছাড়ে না কেউ কেউ। এরপর ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মোবাইল দুটি এবং টাকা পয়শা নিয়ে নেওয়া হয়। আমি জেনে যাওয়ায় আমার জন্য একটি মোবাইল পাঠিয়েছিল ওরা, মোবাইলটি আমি গ্রহণ না করাটাও পরবর্তীতে আমার উপর হামলা হওযার একটা কারণ ছিল। বিষয়টা আমি তৎকালীন প্রাধ্যক্ষ মহোদয় অজয় স্যারকে জানিয়ে ছিলাম, উনি আমাকে উল্টো ধমক দিয়েছিলেন। ধারণা করি- প্রাধ্যক্ষ স্যারও আমার উপর খুশি ছিলেন না, এবং ওনাকে নালিশের ব্যাপারটা উনি জিজ্ঞাসার ছলে কথিত ছাত্রলীগারদের জানিয়েছিলেন।
সিনতাইকারী ঐ দলটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল জনা চারেক। তারা বিভিন্ন হল-এর, তবে সবাই আশ্রয় নিত জগন্নাথ হল-এ। সাথে ছিল বহিরাগত কিছু ছাত্র এবং অছাত্র। প্রতিদিন তারা সোহরাওয়াদী উদ্যানে সিনতাই করত। এটা ২০০৯ সালের কথা, এরপরেও এই ধারা অব্যাহত আছে, এবং ওদের সাহস উত্তরোত্তর বেড়েছে, একদল চলে গিয়েছে, আরেক দল তৈরি হয়েছে।
গতকালকে খবরে দেখলাম- বান্ধবীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়ে এক নাটকর্মীর কাছ থেকে তার এটিএম কার্ড নিয়ে বুথ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে জগন্নাথ হল-এর কয়েকজন সিনতাইকার। এবং চোরের দশদিন, গেরস্থের একদিন তত্ত্বে তারা ধরা পড়েছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবী করি, সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিৎ জগন্নাথ হল প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে বলা, শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলা এবং কোনো কোনো শিক্ষকের অবৈধ স্বার্থ এইসব ছাত্রদের সাথে একাকার হওয়াতেই ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ হল-এর ভাবমূর্তি আজ মারাত্মক সংকটের মুখে। শুধু কি সিনতাই, হল-এ ধরে এনে মুক্তিপণ আদায়ের মত ঘটনাও আছে। জগন্নাথ হল-এর একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমি ভীষণ লজ্জিত, দুঃখীত।
** বুদ্ধ মূর্তির দ্বিতীয় ছবিটা (উদ্ভোধনের পরের ছবি) নেট থেকে সংগৃহীত।
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৯
দিব্যেন্দু দ্বীপ বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৪
সুমন কর বলেছেন: এ ব্যাপারগুলো আসলেই কষ্টকর।
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪০
দিব্যেন্দু দ্বীপ বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৬
মোগল সম্রাট বলেছেন: ছাত্র জীবন কি শুধু আ্ওয়ামিলীগের আমলে পার করছেন ? বিএনপির আমল পান নাই? যদি শুধু আওমিলীগের আমলই পান তাইলে কিছু বলার নাই। আর বিএনপির আমল যদি পাইয়া থাকেন তাইলে তাদের আমলনামার কিছু উদ্বৃত করলেন না কেন?
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৯
দিব্যেন্দু দ্বীপ বলেছেন: একটার সাথে আরেকটা মিশায়ইয়া খিচুড়ি পাকানোর কোনো মানে হয় না। তাদের কথাও এসেছে।
৪| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৯
আমি আবুলের বাপ বলেছেন: @মোগল, ছাত্রদল আর ছাত্রলীগ দুইটাই প্রায় এক।তবে এখন ছাত্রলীগ যা করছে,সব রেকর্ড ফেল।
৫| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৫৬
কালীদাস বলেছেন: আপনি বাংলাদেশে আছেন, হলে থাকবেন আবার পলিটিকস করবেন না উল্টা ঐপার্টিরে খোচাইবেন...এরচেয়ে ভাল পরিণতি কখনই হওয়ার কথা না। সমাজ বদলাইতে চান? বাংলাদেশে সেইটা একা পারবেননা, সিসটেম আপনেরে সিসটেম করবেই।
০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:০২
দিব্যেন্দু দ্বীপ বলেছেন: পলিট্রিক্স করা বলতে আপনি কি বুঝাচ্ছেন? আপনি কি পলিট্রিক্স করেন? ওরা তো আপনাকে নেবে না, চাঁদাবাজি মাস্তানি না করতে পারলে বা ব্যবসা করে (এদেশে লুটপাট) টাকা করতে না পারলে তো আপনি এখানে পলিট্রিক্স করতে পারবেন না।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৫
আজমান আন্দালিব বলেছেন: সিনতাই না ছিনতাই। যাই হোক লেখাটি সবাইকে সচেতন করুক।