নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হব সকাল বেলার পাখি

দিব্যেন্দু দ্বীপ

সংশয়ে সংকল্প সদা টলে

দিব্যেন্দু দ্বীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

“পৃথিবীতে হয় আমি একা, অথবা আমি নেই”

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:০৪

প্রাকটিক্যাল লাইফে আমরা একে অপরকে কী করি- অনুরোধ করি, ভদ্র হই, আপ্যায়ন করি, সমজে চলি। কিন্তু লেখালেখি খুব মারাত্মক বিষয়। এখানে (লেখায়) অুনরোধের কোনো জায়গা নেই, সমজে চলার বালাই নেই। লেখক (লেখায়) কখনো অনুরোধ করে না, লেখক কমান্ড করে, লেখক পরামর্শ দেয়। লেখক কাউকে সমজে চলে না, ক্ষুরধার সমালোচনা করে। যে সমাজ লেখককে আদেশ করার, উপদেশ দেওয়ার এবং সমালোচনা করার সুযোগ দেয় না, সে সমাজে কোনো সৃজণশীলতা নেই। তাই বলে এটাও একজন লেখকের প্রত্যাশা হতে পারে না- তাকে সবাই কোলে তুলে নাচবে। তাহলেও সৃষ্টি হবে না।
এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে, পরিচিত মহলে একজন লেখক খুব পছন্দের মানুষ হবে। কোনো সমাজেই সম্ভবত তা নয়। তবে উন্নত সমাজ ব্যবস্থা সচেতনভাবে লেখকদের জন্য সম্মানজনক একটা ব্যবস্থা রাখে। তবে অবশ্যই পরিচিত মহল এবং বন্ধু মহল একজন লেখকের প্লাটফর্ম নয, অডিয়েন্সও নয়। একজন লেখকের অডিয়েন্স হচ্ছে কালের এবং কালান্তরের অপরিচিত মানুষ। একজন লেখকের প্লাটফর্ম হচ্ছে একাকীত্ব। ভয়ঙ্কর একাকীত্বের সাথে বসবাস করার ক্ষমতা একজন লেখকের থাকতে হয়।
আর্থার সি ক্লার্ক চমৎকার বলেছেন- পৃথিবীতে হয় আমি একা, অথবা আমি নেই। এটাই বাস্তবতা। যেটা একজন লেখক সবসময় মেনে নিতে প্রস্তুত। কিন্তু একাকীত্ব কতটা যন্ত্রণাদায়ক তাও বলেছেন কেউ কেউ। চার্লটি ব্রন্টি তাঁর কালজয়ী উপন্যাস জেনে আয়ার-এ বলেছেন, আমি অবিবিাহীত এটা কোনো সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে আমি একা। একাকীত্ব মেনে নিতে যে শক্তি প্রয়োজন হয়, এতটা শক্তি পৃথিবীতে আর কোনো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন হয় না।
একটা প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, অনেক লেখক ছদ্মনামে কেন লেখে? ওটা তো আসলে পরিচিত মহলে ছদ্মবেশে উপস্থাপিত হওয়ারই চেষ্টা। আসলেই তাই। এটা বন্ধুমহল এবং পরিচিত মহলকে ‘ধোকা’ দিতে চাওয়া। শেষ পর্যন্ত কেউ একা হতে পারে না, এবং একা হতে চায় না, এবং প্রকৃতপক্ষে মানুষ যে পরিচিত মহলেই প্রথমত মর্যাদা পেতে চায়, খ্যাতি চায়, এটা তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। শুধু বার্তা পৌঁছে দেওয়াটাই যদি উদ্দেশ্য হত, সেটি যে কারো কাছে পৌঁছে দিলেই হয়।
এটা যে শুধু খ্যাতি বা মর্যাদার বিষয়, তাও নয়। অনেকে লেখক রয়েছেন, যারা খুব সচেতনভাবে খ্যাতির মোহ এড়িয়ে চলতে পারে, কিন্তু মানুষের মোহ তাকে ভোগাবেই। হৃদয়ে হৃদয় মেলাতে সে চাইবেই। যতই একা হোক না কেন সবসময় সে খুঁজে ফেরে। লেখক সব সময় একাকীত্বের মাঝেও খুঁজে ফেরে অনাগত ভবিষ্যতের বহুত্ব, এবং বর্তমানকে ঠেলে ধাক্কিয়ে সে নিয়ে যেতে চায় সেই ভবিষ্যতের দিকে। একজন লেখকের ভেতরে সারাক্ষণ যুদ্ধ চলে, যুদ্ধ চলে নিজের সাথে এবং সমষ্টির সাথে, যুদ্ধ চলে বর্তমানের সাথে । একজন লেখক এই যুদ্ধে তখনই যেতে, যখন সে একা হওয়ার শক্তি অর্জন করতে পারে, যখন সকল অস্ত্র ফেলে সে ভারমুক্ত হতে পারে। এ যুদ্ধে সঙ্গী লাগে না, ভাব (চিন্তা) এবং ভাষা (প্রকাশ) ছাড়া এ যুদ্ধে আর কোনো অস্ত্র লাগে না

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.