![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সব সময় দ্বিতীয়বার ভরতি পরীক্ষার সুযোগ থাকার পক্ষে ছিলাম। এতে অন্তত ছেলে মেয়েদের কিছু পড়াশুনা হত। অনেক ছেলে-মেয়ে এক বছর যাবত পাগলের মত পড়াশুনা করত, পড়াশুনাটা বোঝার চেষ্টা করত। স্কুল কলেজের পড়াশুনার যে করুণ দশা, ও দিয়ে কিছুই করা যায় না। ভরতি পরীক্ষার চাপে ছেলে মেয়েদের কিছু পড়াশুনা অবশ্যই হত।
এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে। খ ইউনিটে (মানবিক) পাশ করেছে মাত্র ১৪%। ভয়ঙ্কর রেজাল্ট! খ ইউনিটের প্রশ্নটি আমি দেখেছি। পাশ করা যাবে না এমন কোনো প্রশ্ন ওটি নয়। অথচ পাশ করেছে মাত্র ১৪%। দেশের মানবিক বিভাগের সেরা ছাত্র-ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভতি পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে যারা পরীক্ষা দেওয়ার যোগ্যতাই অর্জন করেনি, তাদের অবস্থা কি?
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে এবারের ভতি পরীক্ষার এই রেজাল্টের মধ্য দিয়ে। শুধু খ ইউনিট নয়, গ ইউনিট (বাণিজ্য) এবং চ ইউনিটেরও (চারুকলা) একই অবস্থা। ১৩৫ আসনের বিপরীতে চ ইউনিটে পাশ করেছে মাত্র ১৪৯ জন। অনুমান করে বলা যায় ক ইউনিটের (বিজ্ঞান) অবস্থা হবে আরো ভয়াবহ।
ছাত্রাবস্থায় আমি প্রচুর টিউশনি করেছি। দেখেছি, আমাদের পিতা-মাতারা অন্ধের মত সন্তানদের নিয়ে ছুটোছুটি করে, কিন্তু আসল জায়গায় ফাঁক থেকে যায়। শুধু মুখস্থ করার দিকে মনোযোগ, পরীক্ষায় কি আসবে সেদিকে ঝোঁক, ফলে বেসিক পড়াশুনাটাই তাদের হয় না। বাংলা, অংক, ইংরেজি -এই তিনটি বিষয় স্কুল লেভেলেই দক্ষতা চলে আসার কথা, অথচ পড়াশুনায় শেষ হয়ে যায়, কিন্তু বেসিক অংক, ইংরেজি, বাংলা শেখা হয় না। অনার্স মাস্টার্স পাশ করার পরও এগুলো শিখতে কোচিং এ দৌঁড়ানো লজ্জাজনক। তাই বলে বর্তমান বাস্তবতায় এক ফুতকারে কোচিং উড়িয়ে দেওয়ারও সুযোগ নেই। কিছু কোচিং সেন্টারে যে মানের শিক্ষকরা পড়ায় সেই মানের শিক্ষক এদেশের স্কুল কলেজে নেই। জীবিকার তাগিদে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক সেরা ছাত্র কোচিং সেন্টারে পড়ায়, বিশেষ করে ভর্তি কোচিং-এ। পাশ করার পরে এদের বেশিরভাগ শিক্ষকতা পেশায় যায় না। কিছুদিন কোচিং-এ পড়িয়েছে বলেই ছেলে-মেয়েরা তাদের কাছে কিছুদিন পড়ার সুযোগ পেয়েছে। বুয়েটের কোন শিক্ষার্থী স্বাভাবিকভাবেই স্কুল/কলেজের শিক্ষক হবে না, কিন্তু ছাত্রাবস্থায় এদের অনেকেই কোচিং সেন্টারে পড়ায়। তাই ঢালাউভাবে কোচিং সেন্টারের বিরোধিতা করার সুযোগ নেই। আমি নিজেও ভরতি কোচিং করিয়েছি। পড়াতে গিয়ে বুঝেছি কলেজ পাশ করার পরও আমাদের তেমন কিছুই শেখা হয় না। কোচিং সেন্টার শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়ঙ্কর এক গলদ নিঃসন্দেহে, কিন্তু কোচিং-এর সুযোগ তৈরি হয়েছে স্কুল কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণেই। মেরুদণ্ড বাঁকা হলে হাতে লাঠি লাগে। পিঠ সোজা করতে না পারলে লাঠিটাই সম্বল হয়ে দাঁড়ায়। আমাদেরও হয়েছে সেই দশা, সবাই ধরেই নিয়েছে স্কুল-কলেজে কোনো পড়াশুনা হবে না। কি ভয়ঙ্কর কথা! দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মূলধারা থেকে কিছুই পাওয়া যাবে না! তাহলে? তাহলে এমনই হওয়ার কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভরতি পরীক্ষা আন্তর্জাতিক মানের কোনো পরীক্ষা নয় বলেই আমার সব সময় মনে হয়। বিশেষ করে খ ইউনিট এবং গ ইউনিটের ভরিতি পরীক্ষায় মারাত্মক গলদ রয়েছে। গণিত, এনালিটিক্যাল এবিলিটি এবং মানসিক দক্ষতার প্রশ্ন ব্যতীত একজন শিক্ষার্থীরা মেধা যাচাই সম্ভব নয়। শুধু বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান দিয়ে মুখস্থ বিদ্যা ছাড়া তেমন কিছু যাচাই করা সম্ভব নয়। বারো বছর মুখস্থের উপর থেকেও যখন সেই বিদ্যাটা আমরা অর্জন করতে পারি না, তখন বুঝতে হবে কলসির দুধ ঘটে ঢালা ছাড়া এই শিক্ষা ব্যবস্থা আসলে কিছুই আমাদের শেখাচ্ছে না।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:০৪
প্রামানিক বলেছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভরতি পরীক্ষা আন্তর্জাতিক মানের কোনো পরীক্ষা নয় বলেই আমার সব সময় মনে হয়। বিশেষ করে খ ইউনিট এবং গ ইউনিটের ভরিতি পরীক্ষায় মারাত্মক গলদ রয়েছে। গণিত, এনালিটিক্যাল এবিলিটি এবং মানসিক দক্ষতার প্রশ্ন ব্যতীত একজন শিক্ষার্থীরা মেধা যাচাই সম্ভব নয়। শুধু বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান দিয়ে মুখস্থ বিদ্যা ছাড়া তেমন কিছু যাচাই করা সম্ভব নয়। বারো বছর মুখস্থের উপর থেকেও যখন সেই বিদ্যাটা আমরা অর্জন করতে পারি না, তখন বুঝতে হবে কলসির দুধ ঘটে ঢালা ছাড়া এই শিক্ষ ব্যবস্থা আসলে কিছুই আমাদের শেখাচ্ছে না।
কথা খারাপ বলেন নাই।