![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
৭১
বিষন্নতা মগ্ন উটকো তামাটে গন্ধরা
বৃষ্টিতে গা মেলে একা মনে
ছড়িয়ে যায় দীর্ঘশ্বাস,
ঝড়ে যাওয়া পাতার মত
সময়েরা ঝরে ঝরে
অবিশ্বাসের সাথেই জমায় সহবাস।
অগ্নাশয় বেয়ে হোঁচট খেতে খেতে
নেমে আসা গলন্ত কলজেটা
ধীরে-সুস্থে বেড়িয়ে যায় মলদ্বার দিয়ে,
হাতের তালুতে লুকিয়ে রাখা
টিস্যু পেপারে মোড়ানো চোখ দু'টো
জিন্সের চাপা-পকেটেই
চালান করে দেয়া হয়।
এরপর সব অন্ধ-গলিতেই
ঘুরে ফিরে ঠোকর খায়
প্রাত্যাহিক শৈশব আর ছুটির প্রহর;
অব্যক্ত কথার জালেরা
ক্রমে বিস্তীর্ণ হয়
একাকীত্বের সংজ্ঞা নতুন করে শেখাতে।
৭২
ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন কলরবে উদ্দীপ্ত ব্রেকিং নিউজের মত কাঁপে হেলা-ফেলায় সাজানো সজ্জা; জোরসে বলার ম্যাজিক মাখানো দাঁতে উন্মত্ত অশ্রুহীন বেদনার করাল হাসিতে ধাঁধানো চোথ, আয়নার আশ্রয় খুঁজে সস্তা স্বস্তিতে মুখ ডোবায়।
রেল লাইনের পাশে গজিয়ে ওঠা
ছিন্নমূল বাজারটা আজ
ত্রৈমাসিক উচ্ছেদের কবলে
উদোম হতে দেখে কি কারো
বস্ত্রহরণের দৃশ্য মনে পড়েছিল;
কেউ কি মনে মনে গেঁথে ছিল ছড়া-
'রেল পুলিশের উর্দি আজো খাকি
মাসোহারা রাখতে চায় না বাকী'
৭৩
জীবনের বিমর্ষতম এক দিনে
বিব্রতকর সব নিস্তেজ প্রলাপ,
কাক-ফাটা লীন রদ্দুরের বেশে
অসহায়ত্ব একা ঝিমায় চুপচাপ।
ভদ্রতাকে দুর্বলতা ভাবাই হয়ত
আজ হয়েছে আপামরের সংস্কৃতি
বোবা পিরিতের কত ধানে কত চাল
বোঝায় অবুঝ অপমানের ভীতি।
অথবা এমনই হয়ত হওয়ার ছিল
তটস্থ বয়ানে অসংলগ্নতার ঘোরে
ব্যাচেলর বোধেরা কখনো কখনো
হতে পারে দুপুরের মতই অবসন্ন;
আর লোভাতুর চাহনীরা একই সাথে
ঈর্ষা-কাতরতায়ও ক্রুদ্ধ হয় . . .
৭৫
নোনা ধরা অভিমানী প্রহর নৈঃসর্গ
খুব কাছাকাছি এনে দিয়ে পাপাত্মায়
জাগায় প্রতিশোধের উদ্ধত বারুদ,
যা আজও ভোগায় বিরহ কাতরতায়।
মন খারাপের বাড়াবাড়ি একাকীত্বে
মুঠোফোন নির্ভরতা ভুলতে ভাবায়,
এলোমেলো আমিটাকে আর ভাল্লাগেনা
তোর পরিপাটি রঙা পরিপক্কতার।
যন্ত্রণারা বরাবর একই রকম
বমি উগরায়ে পরাধীন প্রতিবন্ধী
সম বোধটাকে ভাবে ললাটের লিপি;
প্রসব বেদনাহীন মা হওয়া ভুল
না ঠিক তা নিশি জেগে ভাবতে বসেনি
হাড় জিরানো শূণ্য সিজারিয়ান শিশু।
৭৬
অকর্মণ্য পোকাদের সাথে বাড়ে
দুরন্ত অসুখবাহী পোকাদের দল,
অর্থহীনতায় মোহাবিষ্ট একঘেয়ে
অসহায়ত্ব বাড়ায় আশঙ্কময়তা;
আর ক্রমাগত শুকায় নদীর জল।
তবু স্বপ্ন ঢেকে রাখা সব ক্ষত-জ্বালা,
হাইব্রীড দুশ্চিন্তারা কান্তির গ্লাণিতে
ঘুম ঘোরে খুঁজেছিল বাঁচার সম্বল।
একদিন সব খেঁক-শিয়ালের যাদু
খেয়ে যায় কুকুর-শকুন ভরা রাত,
বুড়িগঙ্গায় চাঁদটা ভিজুক একাই
ছইয়ের তলে হতাশারা হোক কাবু;
বন-বিড়ালের ডাক নামাবে প্রভাত
কবে বা কে দিয়েছিলো এমন দোহাই..?
৭৭
ভাঙা আয়নার মত যত
আনমনা ডানপিটে ক্ষত
আজ লাভ-ক্ষতি হিসেবের
ভুল গোনা শুন্যেরই মত
নিথর-নিশ্চলতা উদার
গাম্ভীর্যে বিলায় দীর্ঘশ্বাস
ঐ আস্থিত নক্ষত্রগুলোর
কাঁচা আলে পা না দেয়া মন
সূর্য পান করা মাঝ রাতে
দশরথ ছোটা আলিঙ্গনে
ফের ফিরে চায় আধখুনে
সেই দাবানল সহবাস
৭৮
দীর্ঘশ্বাসের সে মিনারেল ওয়াটারে
আজও শ্যাওলারই বাড়ন্ত উচ্ছাস,
কারফিউ নামায় স্বপ্ন-আকাশ জুরে
তানপুরায় বাজায় অন্ধ অবিশ্বাস।
ঘুমের হাঁপড়ে ভেঙে-চুরে হাই তোলা
সংসদীয় ক্ষুধায় জ্বলা চোখের আলো
আজই দিক-বিদ্বিক ছায়ায় ছড়িয়ে
অযাচিত শোকেও সুখ খোঁজাই ভালো।
শ্রেণী বৈষম্যে হাহাকারময় ধোঁয়ায়
ধূসরিত অবুঝতারা এসে সবেগে
চপোটাঘাত করেই ব্যাঙ্গ করেছিল
সে বোকা বিশ্বাসকে, আর টাল-মাটাল
সম্পর্কের পোতাশ্রয়; আশ্রয়ের খোঁজে
তখন হয়ত হন্য হয়ে উঠেছিল।
৭৯
শহুরে ভাবনাদের ভীড়েও ভোরের স্বপ্ন খোঁজা আধ বোঝা লাল চোখে সকাল-দুপুর খেকো গোধূলীর ছায়ায়, পাছার চাপে থেতলে যাওয়া ঘুম; আশ্রয়ের টানা-পোড়েনে ভোগা মন নিয়ে দৌড়ে বেড়ায় অনুসন্ধিঞ্চু দৃষ্টি। এরপর থার্ড ওয়ার্ল্ড-ইজমীয় আন্তর্জাতিকতা বোধ বধির হয় নৃসংশতার বিস্ময়ে।
আবারও মরুভূমি ভেজে মানবীয় খুনে। সোয়াত উপত্যকায় বাড়ে বিধবার ভীড়।
তবু চালক বিহীন সয়ংক্রিয় বিমানের নিয়ন্ত্রক সেজে বোমারু ঈশ্বর ব্যস্ত নিধনে; আর তার শিকার হালালে ব্যস্ত গৃহপালিত ইসলামী মৌলবাদ। এরপর ভরা সমাবেশে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু কোলে ঢলে পরে একজন বেনজীর। আর সব অস্বাভাবিকতাই নৈমিত্তিক স্বাভাবিকতা হয়ে বাড়ে।
৮০
“হলদে ল্যাম্পলাইট, নিভে যারে, তুই নিভে যা
হা হা করে শিক্ষিত জোৎস্না তেড়ে আসুক”
-মুয়ীয মাহফুজ
সুনশান নিস্তব্ধতা দেখি নাই কত কাল; বাস-ট্রাক, ট্রলি-ট্যাক্সি বা রিক্সা-সাইকেল প্রজাতির বাল-ছাল অবিরত খান খান করে ভাঙে নীরবতা। নগরকে নাকি নিরবতায় ডুবতে নেই; অখন্ড ট্রেনটি বিরামহীন গতিতে ছুটতে থাকুক- দিন থেকে রাত বা বছর থেকে শতাব্দী পেরিয়ে কালান্তরের দিকে।
শিক্ষিত এ মহানগরী হয়ত নিরবতার ক্ষুধায় জ্বলছে, নাগরিক কোনো কবিরই মতো। নিজেকে কবি ভাবি বলেই আমিও এই ক্ষুধায় জ্বলি, আর বিচ্ছিন্নতায় বলি হয় অভূক্ত অনাহারী মন।
নাগরিকদের চন্দ্রগ্রস্থ হতে নেই। জোৎস্না স্নানে ভেজার অধিকার হরনকারী ল্যাম্পলাইটগুলোই ঢের প্রিয় তাদের কাছে। শিক্ষিত জোৎস্নাও তাই দূরেই থাকে নিস্প্রভ হয়ে।
আহা, আলো দূষণে দুষ্ট এ নগরী, না জানি কত দিন প্রান ভরে চান্দ্র সুধা পান করেনি। মরুকান্ত প্রতিটি রাতে অজস্র বিদ্যুতীয় আলোর বোঝায় তেষ্টা বাড়ে। এই কংক্রিট আর যন্ত্রের ভারে বুড়ো উপত্যকার মতো আস্ফালনে কাঁপে মন। হয়ত এক অলিখিত সমন জারি করেছে সভ্যতার অসভ্যতা। দৃষ্টি বন্দী; তাই শহুরে কবিরও জোৎস্না দেখতে মানা।
৮১
হিংস্র অনুভূতির
শুভ্রতা মাখা বোধ
একাকীত্বে স্থবির
রঙিন সব ক্রোধ
স্বপ্নে ভিজিয়েই
সাজাই কাশবন
দেয়াল ডিঙিয়েই
হতাশ পরিবহন
দাঁত মাজা আঙুলে
দৌড়ায় হাত মোজা
নিবির আত্মরতির
সময় ভুল গোণা
অন্ধ ক্ষুধার গলি
নির্লিপ্ততায় জারজ
কাঁমড়ে লাভ-ক্ষতি
কার কত বোঝা সহজ
৮২
জল কেঁটে দুর্নিবার স্রোতে
ভেসে ভেসে কবে কার
কোন ঝড় যাত্রা
ডানা ঝাপটায়
জাতিস্মরের জবানে তা
খেয়াল করেনি অতৃপ্তি;
তবু জোড় বাঁধা তুষ্টি
বেজোড়া সংকোচে বিলীন।
৮৪
স্বপ্নের সাথে দুশ্চিন্তার সঙ্গমে
বেড়ে ওঠা সে নিরুত্তাপ রাতেরা,
শুধুই কি ভেবে ভেবে শোকেরও
আগুন জ্বেলে করে যাবে অপেক্ষা..?
জেনে যাবে কে বাতাসেরও আগে
সাপের হাইয়ের গন্ধে মাতাল
ঘাস কতটা অসাড়তায় ডোবে;
শুনবে কি কেউ সেই ফিঁস-ফাঁস..?
তবু মাত্রাজ্ঞানহীন সময়েরা
অযথাই এলোমেলো শব্দেরই
খাল কেটে জোড়াতালি দিয়ে গড়ে
তর্কেরও সেতু; আর ঘুরে ফিরে
চিন্তার ফাঁদে আটকায় শরীরি
পার্থিবতারও আড়ালে লুকাণো
অসহ্য অসুখ; আর মৃত্যুকামী
ইচ্ছেরাই ক্রমাগত উদ্বেলিত...
৮৫
ঘর পোড়া স্বপ্নে
অতীতের ভুল
আগামীতে মগ্ন
ছোট্ট নাক ফুল
এলো ললাটেতে
আনমনা চুল
একা থাকা দিনে
জন্মায় জারুল
মেঘ জ্বলা ক্ষোভ
জমে থোকা থোকা
এলোমেলো মনে
কাঁদা ছোঁয়া বর্ষা
সবিনয়ে ঋণ
বাড়ে প্রতিক্ষণ
বোবা মুঠোফোনে
বন্দী স্থবিরতা
৮৬
সত্যিই একটু ভেবে দেখো- কারা যাচ্ছে। বরাবর কি ওদের দলেই ছিলাম না..? তবে কি একদিন সব আত্মদ্বন্দ্ব আমাকেও নিয়ে দাঁড় করাবে একই কাতারে। আমাদের শেষটা কি তবে এভাবেই হয়..? এটাই কি তবে বুঝে নিতে হবে..?
অথচ বাঁচতেই চেয়েছিলাম, চেয়েছিলো ওরাও। যদিও বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতা কারো পিছু ছাড়েনি; আর কোনো মৃত্যুই ঠেকাতে পারেনি বেওয়ারিশ জন্ম। এখনো নিয়ম করে এই মাটিতেই তারা বেড়ে ওঠে।
সেই সব সন্ধ্যা আর রাতগুলোকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলে আর কোনো হিসেবই হিসেবী থাকতে চায়না। তবু অতিরিক্ত ভালও যে ভাল নয় তা কখনো অজানা ছিল না।
৮৭
হয়তবা আর
কিছুই করতে
পারবো না;
এর চেয়ে
বেশী কিছু
করার ক্ষমতা
পূর্ব পুরুষের
কাছ থেকে
পাওয়া হয়নি।
এর চেয়ে
বেশী কিছু
করতে পারলে
কি যে হবে
তা’ও আন্দাজ
করার ক্ষমতাহীন
সময় বড্ড
অসময়ে আজ
ভাবুক সাজায়।
অক্ষমতার সংজ্ঞা
রোদের তেজেই
ভিজিয়েছে মন,
আর কে যে
কাকে কখন
করে নিমন্ত্রণ
তা কে জানে..
নিমতলীর বৃষ্টিতে
ধোয়া পোড়া
লাশের গন্ধ;
গলা বেঁধে দাঁড়ানো
সারি সারি
ভষ্মীভূত ইমারত;
হটাৎ কারো
স্বজন-হারা
আর্তনাদ;
শূণ্য দৃষ্টিধারী অজস্র
কান্না-কান্ত চোখ;
আর বোবা
হয়ে যাওয়া
সেনা-পুলিশের
গম্ভীর টহল;
দেখে-শুনে অন্ধ
আর বধির হতে
ইচ্ছা হলে; কিইবা
কার বলার রবে..
৮৮
বিতৃঞ্চা, বিতৃঞ্চা, বিতৃঞ্চা এবং বিতৃঞ্চা; এই একটি শব্দেই ভরে যাচ্ছে তামাম সাদাটে কাগজ; আর নীল কাগজে লেখা হচ্ছে হতাশা, হতাশা আর নিরবিচ্ছিন্ন হতাশা; এরপর লাল কাগজগুলো আজ আবারো হলদে হয়। তুমি, আমি আর তোমার-আমার অভিন্ন অভিমানে পুড়ে যাচ্ছে ভাদ্রীয় শুক্লপক্ষ; তবু হারতে রাজি নয় কেউ, কিংবা হারাতে। স্বপ্ন, চরিত্র, ঘুম আর বর্ণচোরা সব শব্দেরা অপরিণত বাক্যের ভীড় ঠেলে হঠাৎ থেমে গিয়েছে নিদারুন কোলাহলে...
বিশ্বাসে বেড়ে ওঠা সন্দেহের বীজ ফুটে ডানা মেলা যত অনাকাঙ্খিত ক্ষত বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক আশঙ্কা আর কালী-ঝুলি মাখা মামারা পাট ভাঙা শার্টের কলারে জমায় না পাওয়ার দাগ; এবং এসবের সাক্ষী বা শ্রোতা থাকেনা কেউ।
সব মানে সব, স্বপ্ন-আশা বা তাদের সংমিশ্রনে গড়ে ওঠা দুর্নিবার কামণার স্রোতে কে কবে কোথা যায় বা যাবে ভেসে তার পূর্বাভাস কে দেবে? আর কেউ প্রেম চায়না; কেইবা চাইতে জানে..? বিভ্রম কাটলেও আর কেউ না আসুক ফিরে। কীর্তনখোলা, বুড়িগঙ্গার আর সোমেশ্বরীর সঙ্গমে জন্মাবে না কোন শোক; বা নির্লিপ্ত শব্দহীনতায় শাপলা ফোটা ভোর হবে আরো বিভ্রান্ত ; এরপর সাদা, লাল এবং হলদে-সবুজ কাগজে থাকবে শুধু ধুসর-কালো ছোপ।
৮৯
লৌকিক আঁধারে অন্তর্মুখী
কোন যে সত্ত্বার উপস্থিতি
টের পেয়ে ঘাবড়ে ওঠে
একাকী থাকার সে বাসনা;
আজও বোঝা হয়নি তা।
এ কারণেই হয়ত আজও
পদ্য চাষ ভালো লাগে,
বর্ণচোরা শব্দ-বাক্যেও
কত কি যে বলা থাকে;
কত ভাবনা ভাঙে নয়া
আড়মোড়া ; আর শব্দরা
হয় মেঘসিক্ত বিস্ময়।
৯০
হয়ত বৃষ্টির শব্দের লোভেই সেদিন গন্তব্য করেছি প্রখর শীতল
ধূসরতায় জড় দৃষ্টি অমসৃন খোঁজে আজ রাত ভেজা কোলাহল;
সোডিয়ামের আভা পুড়িয়েছে জল
যা জমাট জোৎস্না লুটতো একাকী
আবার সেদিন সেই অবিকল মায়ের চাদর খুঁজতে ছুটেছি...
ছুটতে ছুটতে ভেবেছি- ডেলোসের ডায়োনিস আশ্রমের বেদীতে প্রতিস্থাপিত সে মানব-লিঙ্গের আশ্রয়েই হয়ত আজও পূজনীয় মানবতা; নাকি অন্য কোন যাদু-টোনা এ শক্তির আধাঁর..? ভাবনার দোলাচলে আরো কত কিছু পিছু পিছু এসে কড়া নাড়ে। যেমন- ‘নারী স্বাধীনতা’ কাকে বলে..? বুঝিনি তাও আফ্রোদিতির মত। অবশ্য সে গ্রীক দেবী আর তার বোধ শতভাগ নিশ্চয়তা বা সত্যতার মোড়কে এখানে পৌঁছেনি। তবে আরো জানা গেছে কবি হোসিয়েড-হোমারেরা শুধু এড়োসের স্তুতি গেয়ে বহুগামীতাকে নিরঙ্কুশ সৌন্দর্যের মহিমায় সাজিয়েই ক্ষান্ত ছিলেন না; সিম্পোজিয়ামেও তাদের সঙ্গী হত বুনো-সক্রিয়তা। অথচ এখানে কবির বিষন্ন ধোয়াটে বন্যতার ব্যাকুলতা আকাশ কাঁপিয়ে বাতাস ছাপিয়ে চিৎকার করে ডেকে ওঠা তক্ষকের সুরে কেঁদে যায় এবং নির্মিতব্য বোধেরাও কাঁপে চুপচাপ।
এরপর সেই পুরানো ভাবনা ফিরে ফিরে এলে মাঝরাতে
জড়িয়ে কাঁদার আঠালো ছায়া আর মায়া আধ-বোঝা চোখে;
বিষন্ন-প্লাবন প্রিয় এ্যাষ্ট্রের ফ্রেমে বন্দী
বিগত রাতের এ্যালকোহলিক প্রহর
আর ললাট সীমার রক্তবাহী শিরাগুলো
সে রাতের জেরেই দপদপিয়ে অস্থির
চৈতন্যের মানচিত্র জুড়ে তাই দুপুরই ভোর।
৯১
আয়নার মাঝে নিজেরই প্রতিবিম্ব ক্রমাগত
ঘোলা করে বিলম্বিত ভাবনার জট; আর-
বন্ধুরা বরাবরই অনিচ্ছাকৃত ভুলের মাশুলে
শত্রু সেজে বুকে-পিঠে ছুরি মেরে ভাবে-
‘খুব বেশী অমানবিকতা শেখায়নি কেউ’।
আত্মপক্ষ সমর্থনে হাজির এ যুক্তিরা আদতে
কতটা অযৌক্তিক বা সংলগ্নতার তা বিচার্য
কোন শাস্ত্রের ব্যাকরন কিংবা সমীকরনে?-
সেই উত্তরটা বার বার খুঁজে পাইনি আজও;
তাই ভাবি- ‘মানুষের চেয়ে বিড়ালই ভালো’।
৯২
নিরবিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্নতায় গা এলিয়ে যে বোধেরা নিয়তই পরস্পর বিরোধীতা সৃস্টি করে, দ্বন্দের কম্বল জড়ায় মৃত্যু ভাবনায় উদাস উপত্যকার মত; তাদের দু’হাতে শিকল জড়ানো ভোরে, কাক-শালিকের ঘুম ভাঙানিয়া কলরবে- অক্ষমতার ক্ষমতা মেপেই হিসেবী হয়ে উঠেছিলো অপ্রাপ্তির মাছরাঙা ক্ষত। বিগত শীতের পদ্যময় রাতগুলো- আগামীর শব্দ গুনে, বর্ষার ধৈর্য্যের পরীক্ষক বেশী পৌষ আকাশের যত কথা আছে তা’ই বুঝে নিতে চেয়েছিলো; আর জানতে চেয়েছিলো সে ভোরের কুয়াশা কতটা বোধদয়ে সক্ষম হয়েছিলো- যদিও সে বন্দীই ছিল; তবুও যদি কেউ হঠাৎই এসে এলোমেলো করে চুদে যায় তারে...
৯৩
তোকে যে চোখ তুলে
দেখাও হয়নি সে কথা
মনে পড়ে আক্ষেপও
হয়নি কোনো।
"আদৌ দেখবার ছিলো কি কিছু"
নাকি সহাবস্থানের
যে অনুভুতিগুলো
চুপচাপ বসে লুটে
নিয়েছি; তাই
নেয়ার ছিলো।
"এ নিরবতাও কি বুঝিয়েছে কিছু"
১০১
সবটুকু ফুরানোর বা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও যে তারা পরস্পর পরস্পরকে আঁকড়ে ধরে থাকে, তা’ও কি নিতান্তই স্বার্থপরতার বশে নয়? কারণ ইতিমধ্যেই তারা জেনে গেছে উভয়ই উভয়ের নিরাপদতম আশ্রয়। আর মনে মনে দুজনেই দুজনকে বার বার বলে গেছে, ‘আমায় কে আর তোর চেয়ে ভালো বুঝতে পেরেছে?’ যদিও কিছ্ইু বলা হয়নি সামনা সামনি, কিছু বলা হবেও না। কারণ কিছুই ধ্রুব বা চূড়ান্ত নয়, যাবতীয় জ্ঞানই ধারনা মাত্র। স্থিরতা বলেও কিছু নেই। ও মূলত অস্থিরাবস্থারই বিপরীতাবস্থার অস্বচ্ছ ধারণা। শুধু অস্বচ্ছ অস্থিরতাই সদা বিদ্যমান সত্য এবং স্থির ও অবিনশ্বর। তাই বিশ্বস্ত প্রনয় অনাস্থায় গলে গেলে, শূণ্য শূণ্য লাগা স্থবিরতায় আহত হওয়ার কিছু নেই ভেবে ঘোলা ঘোলা বোধ তাড়ানোর কোনো তাগিদ থাকে না। মাঝে মাঝে নিজেকে নিজের কাছেই অস্বাভাবিক লাগলে কতটা অসহায়ত্ব একাগ্র চিত্তে বেড়ে ওঠে, তার খবরই বা কে রেখেছে?
শিরোনাম : দ্বান্দিক ভাবনা বিষয়ক আজাইরা প্যাঁচাল
রচনাকাল : ২০০৯ থেকে ২০১২।
বি. দ্রষ্টব্য : বেশ কিছু লেখা গুম হয়ে গেছে।
©somewhere in net ltd.