![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখছি, ভাবছি আর অপরাহ্নের আলোয় হাঁটছি ।
কাল রাত থেকে মানিব্যাগ এর স্বাস্থ্য খারাপ। খারাপ হওয়ার পেছনের কারণ হলো এক জোড়া জুতো।
আমাকে সব চেয়ে বেশী সম্ভবত যে জিনিসটি আকর্ষণ করে সেটি জুতো। কেডস এবং স্নীকার।
গত মাসে অ্যাপেক্স এর শো রুম থেকে জুতো কিনে বের হওয়ার পর পাশে নতুন একটা শো রুম খেয়াল করলাম, Zeil's নামে।
ঢুকে দেখি জুতোর অনেক সুন্দর কালেকশন আছে এদের।
আরেকটু আগে চোখে কেন পড়েনি ভেবে আফসোস লাগছিল।
আমি যে খুব দামী কেডস কিনি তা নয়। কিন্তু ছোট্ট অ্যামাউন্টটিও আমার জন্য অনেক বড় অ্যামাউন্ট।
মাত্র এক জোড়া কেনার পর আরেক জোড়া নেওয়ার সামর্থ আমার নেই।
এই মাসে কিছু টাকা জমিয়ে গেলাম Zeils এ। সাথে বন্ধু শওকত হাসানকে নিয়ে গেলাম।
গিয়ে তাদের সব প্রোডাক্টস এর উপর ২০% ছাড় চলছে।
গত মাসে নিতে না পারার আফসোসটা আনন্দে রুপ নিল।
যেই জোড়া পছন্দ করেছিলাম তার চেয়ে সুন্দর দেখে আরো দামী এক জোড়া পছন্দ করে নিয়ে চলে এলাম।
আসার পর থেকেই মানিব্যাগ এর স্বাস্থ্য খারাপ।
জুতোর সৌন্দর্য্য দিয়ে মন ভরলেও মানিব্যাগ তো আর ভরেনা, বরং খালি হয়।
আজ সকাল থেকে আমার শরীরের স্বাস্থ্যও দেখি খারাপ হয়ে গেল।
এই গরমে ঠান্ডা লেগে গেল।
হাল্কা ঠান্ডা লাগলে আমার ভাল লাগে। হাল্কা মাথা ব্যাথা, হাল্কা গলা ব্যাথা, একটু নাকি কন্ঠ, অনুভূতিটা তখন অন্যরকম লাগে।
কিন্তু বাড়লেই অবস্থা খারাপ।
যাই হোক, এবার মুল প্রসংগে আসি।
সন্ধ্যায় কম্পিউটার এর দোকানে গিয়েছিলাম। জামাল খান।
সাথে রেজা ভাইয়ার সাধের Sony Vaio ল্যাপটপ খানা।
বেচারা বার্ধক্যে জর্জরিত হয়ে ধুকে ধুকে চলছে কোনোরকম।
ক্ষমতা থাকলে ল্যাপটপটা নিজেই সুইসাইড করত।
রাত সাড়ে দশটায় শাকিলের ওখান থেকে বাসায় চলে যাওয়ার বের হলাম।
সাথে রেজা ভাইয়ার বৃদ্ধ সনি ভায়ো।
কয়দিন আগে চকবাজার থেকে জামাল খান আসার সময় এক বন্ধু নাসের ছিন্তাইকারীদের কবলে পড়েছিল।
ভাবলাম আজকে যদি আমাকে পায় তো রেজা ভাইয়ার ল্যাপটপটা গেছে।
(গেলেই বরং ভাল হয়। এক ল্যাপটপের উপর আর কত অত্যাচার চালানো যায়!)
রিকশায় উঠলাম।
গণি ব্যাকারীর পরে চট্টগ্রাম কলেজের আগআগে যে জায়গায় ছিন্তাই হয়েছিল, সেই জায়গায় দেখি অনেক গুলো পুলিশ।
মাঝে মধ্যেই আমার পুলিশ দেখলে শান্তি লাগে।
আজও লাগলো।
কিন্তু রিকশাওয়ালার জন্য একটু দুশ্চিন্তা হল।
বেচারারটা ব্যাটারির রিকশা।
এরা এখন রাস্তায় নিষিদ্ধ। ট্রাফিক পুলিশ পেলে সব নিয়েই ছেড়ে দেয়।
যা ভাবলাম তাই।
রিকশা ওয়ালাকে টর্চ জ্বালিয়ে ইশারাতে ডাকলো।
পাশে যেতেই একজন অফিসার বলল, চেক হবে।
আমাকে ল্যাপটপের ব্যাগ দেখিয়ে বলল, ব্যাগে কী?
-ল্যাপটপ।
:কোথা থেকে আসছেন?
-ল্যাপটপ সার্ভিসিং করাতে গিয়েছিলাম।
খোলে দেখলেন। আমাকে বলল নামেন।
নামলাম।
শুনেছি বাংলাদেশের পুলিশ ছিন্তাইকারীদের সুযোগ দেয়না। কাজটা নিজেরাই সেরে নেয়।
পকেটে সর্বসাকুলে ১৩৪৮ টাকা আছে।
এই প্রথম মানিব্যাগে টাকা কম থাকায় শান্তি লাগলো। যাক, নিয়ে নিলেও বেশী তো আর যাবে না।
কি করেন?
-স্টুডেন্ট।
বাড়ী কোথায়?
-মহেশখালী।
মহেশখালী কোথায়?
-কক্সবাজারে।
আপনি মহেশখালীর মানুষ, কক্সবাজারে কি করতে গেছেন?
-মহেশখালীটা তো কক্সবাজারেই।
হঠাৎ বলল, জুতো গুলোর দাম কত?
আমি একটু অবাক হলাম।
পুলিশ জুতোর দাম জেনে কি করবে!
গ্যাংস্টার কেডস দেখে আমাকে কি গ্যাংস্টার ভাবছে? না জুতো গুলোয় নিয়ে নেবে?
জুতো জোড়ার জন্য টেনশন লাগছে।
আবার বলল, এগুলোর দাম কত?
-জ্বী, ২৯৯০ টাকা।
: বাটা?
-জ্বী না। Zeils.
:ফিক্সড প্রাইজের?
-হ্যাঁ অফিসার। ফিক্সড প্রাইজ। (২০% ডিসকাউন্ট ছিল। বলিনি। :p )
ব্যাসিক্যালি আপনি কী করেন?
-আমার খুব বলতে ইচ্ছে হল, ব্যাসিক্যালী আমি নেট ব্রাউজিং করি আর ঘুরাঘুরি করি।
কিন্তু ঝামেলায় গেলাম না। বেশীরভাগ পুলিশের সেন্স অব হিউমার শুন্যের পর্যায়ে।
সেক্ষেত্রে ঝামেলা বাড়বে।
এদিকে জ্বর আর মাথা ব্যাথা বাড়ছে, এর মধ্যে নতুন ঝামেলায় যেতে ইচ্ছে করছেনা।
ব্যাগে একজোড়া স্পন্সের স্যান্ডেল ছিল। বলল এগুলা কী?
আমি অবাক হলাম। পুলিশ কি স্যান্ডেল চেনেনা? বুট পরতে পরতে স্যান্ডেলকে কি ভুলেই গেল!
আবার বলল এগুলো কী?
-স্যান্ডেল। আজ কিনেছি।
:কত দিয়ে কিনেছেন?
আমি ভাবছি সত্যি দাম বললে বিশ্বাস করবে তো? ওগুলো মাত্র ৫০ টাকা দিয়ে কেনা। ফিক্সড প্রাইজ। স্যান্ডেল গুলোর বিক্রেতার ভাষায় 'একদর'।
আমি একটু মিথ্যে করে বিশ্বাস যোগ্য করে বললাম ৯০ টাকা।
আমার পকেটে হাত দিয়ে বলল, এটা কী?
আমি বললাম ওয়ালেট।
মনে মনে ভাবছি, ওয়ালেট বললাম চিনবে তো?
দেখি বুঝছে। বের টের করতে বলেনি।
সাথে নকিয়া ফোনটা ছিল। স্মার্টফোনটা বাসায় রেখে গেছিলাম।
নাহয় হয়তো এতগুলো মোবাইল কেন বলে আরো প্রশ্ন করত।
মোবাইলের দাম জিজ্ঞেস করে বসলে নতুনের দাম বলব না সেকেন্ড হ্যান্ড হিসেবে দাম বলব সেটা নিয়ে সমস্যায় পড়ে যেতাম।
দেখা যেত আমার আবার উল্টো আমার জিজ্ঞেস করতে হত "মার্কেট প্রাইজ না বিক্রয় ডট কম প্রাইজ?"
তারপর আরেক পকেটে হাত দিয়ে বলল, এগুলো কি?
বের করে দেখালাম। বাসার রুমের চাবি।
পকেটে অ্যান্টাসিড প্লাস ছিল। ঠান্ডা লেগে গলা ব্যাথা করছিল, আর আমি গ্যাস্ট্রিক ভেবে আন্টাসিড নিয়ে নিয়েছিলাম।
বলল এগুলা কী?
- অ্যান্টাসিড প্লাস।
পুলিশদের মনেহয় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নেই। এরা সম্ভবত গ্যাস্ট্রিকের সাথে পরিচিত না।
:বাসা কোথায় আপনার?
-অক্সিজেন।
:এখন কি বহদ্দারহাট যাবেন?
-না। দুই নাম্বার গেইট হয়ে যাব।
অত:পর উনি থ্যাংকস দিলেন।
আমিও ওনাকে বললাম থ্যাঙ্কিউ অফিসার।
ওনি ভাল মানুষ ছিলেন।
ব্যাবহারও ভাল ছিল।
আমার বলতে ইচ্ছে হল, আপনারা আছেন বলেই আমরা এখনো দেশটাতে তাও একটু ভাল আছি।
কিন্তু বলা হলোনা।
উনি যদি আবার এটাকে জোকস ভেবে বসেন।
২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৩৭
ইমোশনাল কিলার বলেছেন: হা হা হা। সঠিক পরামর্শ দিছেন ভাই। মেজবান খাওয়ানো ওয়াজিব হইয়া গেছে।
আমি আইসা ভাবতেছিলাম, বাংলাদেশের পুলিশ এত ভালা হয় ক্যামনে!
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: জানে বাইচা গেছেন!
পুলীশের হাত থেকে সব মাল সমেত ফেরার ছদকা হিসাবে একটা মেজবানী খাওয়াইয়েন গরীবদের!