নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমস্ত লেখালেখি অলস মস্তিষ্কের নিরলস পরিশ্রম।

লিখছি, দেখছি, ভাবছি আর অপরাহ্নের আলোয় হাঁটছি।\nঅথবা কখনো শহরের সন্ধায় ভিজছি। নিরলস হাঁটছি সাইকেডেলিক আলোয়।

ইমোশনাল কিলার

লিখছি, ভাবছি আর অপরাহ্নের আলোয় হাঁটছি ।

ইমোশনাল কিলার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওসি সালাউদ্দীন

০২ রা জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৫৬

ওসি সালাউদ্দীন একটি আলোচিত নাম।
কে এই ওসি সালাউদ্দীন? চিনেন নাকি এই ওসিকে?
মিডিয়াতে বেশ পরিচিত এই ব্যাক্তি।
শত অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়া বহুল আলোচি ওসি সালাউদ্দিন আহমেদ খান। একের পর এক অপকর্মে জড়িয়ে আলোচনায় এলেও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কখনো। ডিএমপির ৪৯ থানার মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ওসি হিসেবে ধরা হয় তাকে। এ কারণে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কুণ্ঠাবোধ করেন।
নামে বেনামে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক তিনি। ঢাকায় আছে কয়েকটি বাড়ী।
কয়দিন আগে ঝুট ব্যবসায়ী সুমন হত্যা মামলার জন্য বেশ আলোচিত ছিলেন তিনি। খুটির জোরে পেয়েছিলেন মামলা থেকে অব্যাহতি।
ধরে নিয়ে এসে সুমনকে পিটিয়ে মেরে ফেলেন তিনি।

হেন কোনো অপকর্ম নেই তিনি করেন নি।
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে ওসি সালাউদ্দিন ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করতেন তিনি। কেউ মাসোহারা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই তার ওপর পড়ত ওসির খড়গ দৃষ্টি। ধরে এনে নির্যাতন আর পেন্ডিং মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। বিরোধী দলের নেতাকর্মীরাও তাকে ভয় পায় যমের মতো। কোতোয়ালি থানায় ওসি সালাউদ্দিনের সঙ্গে কাজ করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাব-ইন্সপেক্টর জানান, থানার এসআইরা তার ভয়ে সব সময় তটস্থ থাকত। প্রতিদিন তার হাতে তুলে দিতে হতো টাকা।

গত বছর এক আইনজীবী তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন। এরপর থেকে বাদীকে তিনি মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশনা নিয়ে করেছিলেন কটূক্তি।

গত বছরের ১৭ই মার্চ মিরপুরে বাবলু নামে এক যুবকের পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেন তিনি। সেই যুবক এখন পঙ্গু।
একই বছর ১০ই এপ্রিল রাতে মিল্টন ও শিপন নামে দুই যুবককে ধরে নিষ্ঠুর নির্যাতন করেন তিনি। থানায় নেয়ার আধঘণ্টার মধ্যেই তাদের আবার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের হাতে-পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করা হয়। তারাও চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে।

মিরপুর ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ২২ জন শিক্ষককে একসঙ্গে গ্রেপ্তার করেছিলেন তিনি। বিদ্যালয়ের পরীক্ষা উপলক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক করছিলেন শিক্ষকরা। ওসি তাদের ধরে আনেন সরকারবিরোধী গোপন বৈঠকের অজুহাতে। পরে প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে বড় অঙ্গের চাঁদা আদায় করেন তিনি।
আযহারুল ইসলাম নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের মাস্টার্সের এক ছাত্রকে থানায় আটকে রেখে হাত-পা ভেঙে দেয়া ও নখ তুলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পরে ওই পরিবারের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করেছিলেন তিনি। সেই ছাত্র এখন পঙ্গু অবস্থায় দিন যাপন করছেন।
ওসি সালাহউদ্দিন খানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ আহরণের অভিযোগ রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে ২০১১ সালে দুদকের অনুসন্ধানে যেসব পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল, তাদের মধ্যে সালাউদ্দিন ছিলেন অন্যতম। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে সম্পদ বিবরণীর হিসাব জমা দেয়ার জন্য দুদক সালাউদ্দিন খানকে চিঠি দিয়ে ছিল। কিন্তু খোদ দুদক কার্যালয় থেকে তার নথি গায়েব হয়ে গেছে। সবার নথি থাকলেও ওসি সালাউদ্দিনের নথি হারিয়ে যাওয়া নিয়ে খোদ দুদকেই এ নিয়ে তোলপাড় হয়। এর আগে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক অভিযোগে বলা হয়, সালাউদ্দিন খানের শেয়ারবাজারে এক কোটিরও বেশি টাকা বিনিয়োগ ছাড়াও নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যা একজন পুলিশ কর্মকর্তার আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

তার অপকর্মের ফিরিস্তিটা বেশ লম্বাই। তবে সংক্ষেপে উল্লেখ করলে যা বলা যায়:

সেপ্টেম্বর ২০১০, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক অভিযোগে বলা হয়, সালাউদ্দিন খানের শেয়ারবাজারে এক কোটিরও বেশি টাকা বিনিয়োগ ছাড়াও নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

ফেব্রুয়ারি ২০১১, অবৈধ অর্থ আয়ের তদন্ত নথি দুদক থেকে গায়েব। অথচ দোষী সাব্যস্ত করে চিঠি দিয়েছিল দুদক।
২৯ মে ২০১২, আদালত চত্বরে এক তরুণীর শ্লীলতাহানি। এবং সাংবাদিক-আইনজীবীদের বেধড়ক পেটানো। দিনভর কোতোয়ালী থানায় আটকে রাখেন তরুণীকে।

ইসলামপুরে দেশীয় নিম্ন মানের কাপড়ে অবৈধভাবে বিদেশি সিল লাগানের কারখানার মালিক বাবুল ওরফে জাপানি বাবুলের কাছ থেকে প্রতি মাসে দুই লাখ ঘুষ নিতেন।

আগস্ট ২০১২, তার নির্দেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র আযহারুল ইসলামকে থানায় নিয়ে হাত পা ভেঙে নখ তুলে উপড়ে ফেলে পুলিশ। পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি।

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, ছেলে শিক্ষানবিশ আইনজীবী আসিফ মোহাম্মদ জুনায়েদকে মিরপুর থানা অন্যায়ভাবে আটক করলে থানায় যান বাবা অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম। ওসি দুইজনকেই গ্রেপ্তার করেন।

১৭ মার্চ ২০১৩, বাবলু নামের এক যুবকের পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেন।

১০ এপ্রিল ২০১৩, রাতে কাজীপাড়া থেকে মিল্টন ও শিপন নামে দুই যুবদল কর্মীকে গ্রেপ্তার থানায় নেয়ার আধাঘণ্টা পর হাতে পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাদের পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

২১ অক্টোবর ২০১৩, মিরপুর ন্যাশনাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২২ জন শিক্ষককে একসঙ্গে গ্রেপ্তার। মামালার ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নেন।

২৫ অক্টোবর ২০১৩, ব্যাংক কর্মকর্তা এবং মনিপুর স্কুলের শিক্ষককে পেট্রোলবোমা মারার মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারের নামে হয়রানি।

২৬ ডিসেম্বর ২০১৩, ওসি সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ মিরপুরের যুবদল নেতা মামুন ও তার ভাইয়ের বাসা লণ্ডভণ্ড করা হয়। আটক করেন মামুনের ভাইয়ের স্ত্রী ও কলেজপড়ুয়া মেয়েসহ কয়েক জনকে। মামুনের প্যারালাইজড ভাইকে লাথি মেরে শিশুপুত্রসহ ঘরে আটকে রাখেন।

২ মে ২০১৪, ব্যবসায়ী শীষ মনোয়ারকে থানায় ডেকে নিয়ে এসে অকথ্য নির্যাতনের পর অপহরণ মামলা দেন।

১২ জুলাই ২০১৪, প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা করে চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ঝুট ব্যবসায়ী সুজনকে ধানমণ্ডির শংকরের বাসা থেকে আটক করে মিরপুর থানায় বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা।

২ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ঢাকা বারের সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াহিদকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি।

৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫, মেডিকেল কলেজের ছাত্র আব্দুল্লাহ হোসাইনকে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ধরে নিয়ে আসে। খোঁজ নিতে থানায় গেলে ভাই হাসানকেও গ্রেপ্তার করে। তাদের দুইজনকে নিয়ে বাসায় অস্ত্র উদ্ধারে গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেন এবং তাদের অসুস্থ বাবা এনায়েত উল্লাহকে থানায় ধরে নিয়ে যান।

প্রসঙ্গত, ওসি সালাউদ্দিনের বাড়ি গোপালগঞ্জে। ১৯৯০ সালে এসআই হিসেবে পুলিশে যোগ দেন। ২০০৬ সালে পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০০৭ সালে হাজারীবাগ থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন। এক-এগারো সরকারের সময় তাকে বদলি করা হয়েছিল রাজশাহী রেঞ্জে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই বদলি হয়ে আসেন ঢাকার উপকণ্ঠ কেরানীগঞ্জে। ২০০৯ সালের ২৯ মার্চ কোতোয়ালী থানায় যোগ দেন। ২০১২ সালের ১১ আগস্ট বদলি হোন মিরপুর থানায়। চাকরি জীবনে একাধিকবার সাসপেন্ড হয়েছেন ওসি সালাউদ্দীন।

এত দ্রুত মারা যেতে হবে জানলে নিশ্চয় এত অপকর্ম করতেন না তিনি।

সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সকলের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:২২

আলাউদ্দিন আল আদনান বলেছেন: যাক অনেক তথ্য অজানা ছিল, জানতে পারলাম

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.