![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখছি, ভাবছি আর অপরাহ্নের আলোয় হাঁটছি ।
মোরগ পোলাও এর গন্ধে ভোঁ ভোঁ করছে রফিক সাহেবদের বাড়ীর বাতাস।
মন মেজাজ ভাল থাকলেই তাঁর বাড়ীতে মোরগ পোলাও রান্না হয়।
রফিকউদ্দিন সাহেব পুলিশে চাকরী করেন, তার পদবী ওসি।
বাড়ীতে তার বড় মেয়ে সাবিহা আর ছোট ছেলে লিন্তু।
লিন্তু রেসলিং দেখছে, কার্টুনের পরই এটা তার প্রিয় টিভি প্রোগ্রাম।
সাবিহা বই পড়ছে। মাত্র ক্লাস নাইনে উঠেছে সাবিহা, এরমধ্যেই বিশাল বিশাল বই পড়ে শেষ করে ফেলেছে সে।
লিন্তু এখনো ক্লাস ওয়ানে পড়ে। যদিও এই বছর তার ক্লাস টুতে পড়ার কথা ছিল, কিন্তু ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট এর কারণে সেইবার সে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে পারেনি।
রফিক সাহেবকে মানুষ যমের মত ভয় পায়, আর তারই ছেলেকে কিনা কয়েকটা ছেলে রাস্তায় ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়!
লিন্তুর কপালের কোণায় একটা কাটা দাগ।
সেটা দেখলেই রফিক সাহেবের গা জ্বলে যায়। ইচ্ছে করে ঐ হারামজাদা গুলোকে এখনই মাথায় গুলি করে দেন।
লিন্তুকে প্রচণ্ড ভালবাসেন তিনি।
সেদিন যদি সেই ছেলেটা লিন্তুকে না বাঁচাতো!
ভাবতেই শিউরে উঠেন ওসি।
ঘটনা তিনি দেখেন নি, সাবিহার কাছ থেকেই শুনেছেন। আজকাল বখাটে গুলোর হাত থেকে বাচ্চা মেয়েদেরও রেহায় নেই।
কয়েকটা ছেলে সাবিহার পথ আটকেছিল।
লিন্তু বুঝতে পারছিল না এই বড় বড় ভাইয়া গুলো তার আপুর পথ আটকে দাঁড়িয়েছে কেন!
'আপু এরা তোমার সামনে দাঁড়িয়েছে কেন?'
খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসছে ছেলে গুলো।
'এরা ব্যাড গাই, লিন্তু।'
লিন্তু মাঝেমধ্যে সাবিহার সাথে বসে মুভি দেখে।
সে দেখেছে 'ব্যাড গাই'দেরকে হিরো রেসলিং স্টাইলে মারে।
লিন্তু সাথে সাথে জন সিনার মত করে মারতে গেল। জন সিনা লিন্তুর ফেভারিট।
তখনই ঘটলো বিপত্তিটা।
তাদের একজন লিন্তুকে ধাক্কা মারল রাস্তার দিকে।
লিন্তু অনেকটা উড়েই রাস্তার উপর চলে গেল।
একটা সিএনজির সামনেই পড়ে গেছিল প্রায়।
সাবিহা আঁতকে উঠে এক চিৎকার দিয়েছে। বিশাল চিৎকার।
দৃশ্যটা দেখেই ছেলে গুলো তৎক্ষণাৎ পালিয়ে গেল।
ঠিক সে সময় একটা ছেলে দৌড়ে এসে লিন্তুকে ধরে গড়ান দিল রাস্তার উপর।
এমন দৃশ্য মুভিতে দেখেছে সাবিহা, বাস্তবে আগে কখনো দেখেনি।
ছেলেটি লিন্তুকে সিএনজির সামনে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচালো ঠিকই, কিন্তু নিজের পায়ে আঘাত পেলে দারুণ ভাবে।
গালে, হাতেও চামড়া ছিলে গেছে তার।
লিন্তুর কপাল থেকেও রক্ত বেরোচ্ছিল।
রফিক সাহেবের সাথে ছেলেটির দেখা হয়নি।
জরুরী কাজ ছিল বলে পাশের একটা ফার্মেসী থেকে ফার্স্টএইড নিয়েই চলে গিয়েছিল সে।
ছেলেটিকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য অনেকভাবে খুঁজেছেন তিনি। পাননি।
মাঝেমধ্যে তার মনেহয় ছেলেটিকে পেলে পায়ে ধরে সালাম করবেন তিনি।
আপনজন ছাড়া পৃথিবীর কোনো মানুষের জন্য তার মনে দয়া হয় না।
কিন্তু ছেলেটির প্রতি তার দয়া, শ্রদ্ধা পৃথিবীর অন্য সবার চাইতে বেশী।
ছেলের জন্য তিনি সব কিছু করতে পারেন, নিজের ছেলেকে যে বাঁচিয়েছে তার জন্য আরো বেশী কিছুও করতে পারেন।
লিন্তুকে নিয়ে কার্টুন দেখতে বসেছেন রফিক সাহেব।
চিপস খেতে খেতে কার্টুন দেখছেন।
সাবিহা আর তার মা মোরগ পোলাও রেডি করছে।
আজ রফিক সাহেবের মন খুব ভাল, তার প্রমোশন হওয়ার একটা সম্ভাবনা দেখে দিচ্ছে।
লিন্তু তার মুখে গোঁফ এঁকেছে, সে তার আব্বুকে দেখাতে এসেছে সেটা।
হিহি করে হাসছে।
দেখতে ভাল লাগছে রফিক সাহেবের।
শুধু ঐ কাটা দাগটা দেখলেই তার মাথায় রক্ত উঠে যায়। গুলি করে পুরা একটা ম্যাগাজিন শেষ করে ফেলতে ইচ্ছে করে।
আজ অবশ্য রাগ একটু কমিয়েছেন।
দুটো 'ক্রিমিনাল'কে মেরে দিয়েছেন তিনি।
যতই ভাল মানুষ হোক, পুলিশের গুলি খাওয়ার পর সে নিশ্চিত ক্রিমিনাল। এটাই এখানকার নিয়ম।
জঙ্গী বলবেন না সন্ত্রাসী বলবেন সে নির্দেশনা উপরের।
উপরের নির্দেশ ছিল আজকের মধ্যেই কয়েকজনকে গ্রেফতার এবং অন্তত একজনকে ক্রসফায়ার দেখাতে।
তিনি দুজনকে ক্রসফায়ারে ফেলে দিয়েছেন।
এদেশে এত এত মানুষ, কয়েকটাকে মেরে যদি প্রমোশন হয় তাহলে ব্যাপারটা মন্দ হয় না।
তার প্রমোশন এখন নিশ্চিত, ইচ্ছে মত গুলিও করেছেন।
এই বয়সী ছেলে দেখলে তার মাথায় এমনিতেও রক্ত উঠে যায়।
এরাই তার সাবিহাকে ডিস্টার্ব করেছিল, তার লিন্তুকে রাস্তায় ছুড়ে মেরেছিল।
মোরগ পোলাও খেতে খেতে টিভি দেখছেন।
তার স্ত্রী এই এলাকায় থাকতে চাচ্ছেন না, প্রমোশন হলে আরো ভাল একটা জায়গায় যাওয়া যাবে।
তার আজকের সাফল্যের খবর টিভিতে দেখাচ্ছে।
তিনি বেশ ভাল একটা সাক্ষাৎকারও দিয়ে এসেছেন।
সেটাও দেখাচ্ছে।
যাদেরকে মেরেছেন, তাদের ছবি দেখাচ্ছে টিভিতে।
নিজের কর্ম দেখে আনন্দ পান তিনি। একধরণের পৈশাচিক আনন্দ।
আনন্দে রফিকউদ্দিন সাহেব তৃপ্তির ঢেকুর তুললেন।
এই চ্যানেল অন্য খবরে চলে গেল।
সাবিহা চ্যানেল বদলাচ্ছে।
তিনি ভাবছেন আবার নিজের কাজে নেমে পড়বেন, ছেলেটাকে খুঁজে বের করবেন।
সাবিহা হঠাৎ টিভির স্ক্রীনের দিকে দেখিয়ে চিৎকার করে উঠল- আব্বু আব্বু, ঐযে ঐ ভাইয়াটা।
-কোন ভাইয়া?
'তোমার মনে নেই? এই ভাইয়াটা লিন্তুকে বাঁচিয়েছিল।'
তিনি আবার টিভির দিকে তাকালেন।
একটা ছেলের নাম- পরিচয়- ছবি দেখাচ্ছে একটি চ্যানেল।
'আব্বু এই ভাইয়াটাই সেদিন লিন্তুকে বাঁচিয়েছিল।'
হা করে টিভির দিকে তাকিয়ে আছেন ওসি রফিকউদ্দিন।
এই ছেলেটিকেই একটু আগে ক্রসফায়ারে মেরে দিয়ে এসেছেন তিনি।
(16/10/2017)
১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৯
ইমোশনাল কিলার বলেছেন: জেনে ভাল লাগলো, ভালবাসা নেবেন।
:-)
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:২৮
অনিক_আহমেদ বলেছেন: খুব চমৎকার গল্প। শুরু থেকেই মনে হয়েছে সব যেন একেবারে "খাপে খাপ", কোনো কৃত্রিমতা নেই। শেষটুকু সারপ্রাইজিং। সব মিলিয়ে ভালই লাগল।