![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
বঙ্গবন্ধুর তৃণমূল রাজনীতি ও বাংলাদেশের সমাজকল্যাণ
ফকির ইলিয়াস
_________________________________________________
সমাজকল্যাণমন্ত্রী সিলেটে এক সভায় বক্তৃতা দেয়ার সময় কী ভাষা উচ্চারণ করেছেন, তা সবাই শুনেছেন, দেখেছেন টিভির পর্দায়। প্রতিটি বিষয়ের একটি সীমা থাকে। ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেই যদি মন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখা যায়, তাহলে গালিগালাজই হবে বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান ভাষা। সমাজকল্যাণমন্ত্রী নিজেকে তৃণমূল নেতা দাবি করেছেন। তাকে সবিনয়ে একটি প্রশ্ন করতে চাই- তৃণমূল নেতার সংজ্ঞা কী? তিনি যে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ লালন করেন, সেই মহান নেতার তৃণমূল আদর্শ কেমন ছিল? এ বিষয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরতে চাই বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থ থেকে। যে বইটি এ প্রজন্মের প্রত্যেক দেশপ্রেমিক বাঙালির পড়া দরকার বলে মনে করি।
বঙ্গবন্ধু লিখেছেন-
১. ‘আমরা স্বাধীন হয়েছি ১৯৪৭ সালে আর চীন স্বাধীন হয়েছে ১৯৪৯ সালে। যে মনোভাব পাকিস্তানের জনগণের ছিল, পাকিস্তান পাওয়ার সাথে সাথে আজ যেন তা ঝিমিয়ে গেছে। সরকার তা ব্যবহার না করে তাকে চেপে মারার চেষ্টা করেছে। আর চীনের সরকার জনগণকে ব্যবহার করেছে তাদের দেশের উন্নয়নমূলক কাজে। তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য হল, তাদের জনগণ জানতে পারল ও অনুভব করতে পারল এই দেশ এবং এদেশের সম্পদ তাদের। আর আমাদের জনগণ বুঝতে আরম্ভ করল, জাতীয় সম্পদ বিশেষ গোষ্ঠীর আর তারা যেন কেউই নন। ফলে দেশের জনগণের মধ্যে ও রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। একটা মাত্র পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল- সাদা চামড়ার জায়গায় কালা চামড়ার আমদানি হয়েছে।’ [পৃষ্ঠা ২৩৪]
২. ‘আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হল আমরা মুসলমান, আরেকটা হল আমরা বাঙালি। পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে আছে ... ঈর্ষা, দ্বেষ সকল ভাষায়ই পাবেন, সকল জাতির মধ্যেই কিছু কিছু আছে, কিন্তু বাঙালিদের মধ্যে আছে পরশ্রীকাতরতা। ভাই ভাইয়ের উন্নতি দেখলে খুশি হয় না। এই জন্যই বাঙালি জাতির সকল রকম গুণ থাকা সত্ত্বেও অন্যের অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি। এমন উর্বর জমি দুনিয়ায় খুব অল্প দেশেই আছে, তবুও এরা গরিব। কারণ, যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজেকে এরা চেনে না, আর যতদিন চিনবে না এবং বুঝবে না, ততদিন এদের মুক্তি আসবে না।
‘অনেক সময় দেখা গেছে, একজন অশিক্ষিত লোক লম্বা কাপড়, সুন্দর চেহারা, ভালো দাড়ি, সামান্য আরবি, ফার্সি বলতে পারে, বাংলাদেশে এসে পীর হয়ে গেছে। বাঙালি হাজার হাজার টাকা তাকে দিয়েছে একটু দোয়া পাওয়ার লোভে। ভালো করে খবর নিয়ে দেখলে দেখা যাবে এ লোকটা কলকাতার কোনো ফলের দোকানের কর্মচারী অথবা ডাকাতি বা খুনের মামলার আসামি। অন্ধ কুসংস্কার ও অলৌকিক বিশ্বাসও বাঙালির দুঃখের আর একটা কারণ।’ [পৃষ্ঠা ৪৭ ]
৩. ‘আমি অনেকের মধ্যে একটা জিনিস দেখেছি- কোনো কাজ করতে গেলে শুধু চিন্তাই করে। চিন্তা করতে করতে অনেক সময় পার হয়ে যায়, কাজ আর হয়ে ওঠে না। অনেক সময় করব কী করব না, এইভাবে সময় নষ্ট করে এবং জীবনে কোনো কাজই করতে পারে না। আমি চিন্তাভাবনা করে যে কাজটা করব ঠিক করি, তা করেই ফেলি। যদি ভুল হয়, সংশোধন করে নেই। কারণ যারা কাজ করে তাদেরই ভুল হতে পারে, যারা কাজ করে না তাদের ভুলও হয় না।’ [পৃষ্ঠা ৮০ ]
৪. ‘‘আব্বা আমাকে এ সময় একটা কথা বলেছিলেন, ‘বাবা রাজনীতি কর আপত্তি করব না, পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম করছ এ তো সুখের কথা, তবে লেখাপড়া করতে ভুলিও না। লেখাপড়া না শিখলে মানুষ হতে পারবে না। আর একটা কথা মনে রেখ, sincerity of purpose and honesty of purpose থাকলে জীবনে পরাজিত হবা না। এ কথা কোনো দিন আমি ভুলি নাই।’’ [পৃষ্ঠা ২১ ]
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই শাণিত আঙুলটি একটি বাণী জানাতে চেয়েছিল গোটা বিশ্ববাসীকে। আর তা হচ্ছে, বাঙালি জাতি বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায়। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের সত্তা নিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির নাগরিক হতে চায় বাঙালিরা। ১৯৭৫ সালের পর থেকে বাংলাদেশ সেই চেতনা কতটা ধারণ করতে পেরেছে? কতটা পেরেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতারা?
এ দেশের দুর্ভাগ্য, রাষ্ট্রের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন একজন অযোগ্য ব্যক্তি। এ ধরনের ব্যক্তিরা সমাজকল্যাণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নিজেদের দল ও নেতাকর্মীদের মাঝে বিলি-বণ্টন করেন, যা অর্থনীতিবিদরা অতীতে প্রমাণসহ বলেছেন, লিখেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার কি তা দেখেনি? খুবই বেদনার কথা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমাজ, অর্থনৈতিক সমাজ আজ কলুষিত। রাজনীতিকরা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত।
তারপরও এগোচ্ছে এদেশের মানুষ। সামাজিক উন্নয়নে অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা সোস্যাল প্রোগ্রেস ইমপারেটিভের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনের র্যাংকিং অনুযায়ী ১৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৯তম। বাংলাদেশ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের সামনে রয়েছে শুধু শ্রীলংকা। বিগত এক বছরে দেশগুলোর সামগ্রিক চিত্র বিবেচনা করে এই মূল্যায়ন রিপোর্টটি করা হয়েছে।
রিপোর্টটি সব দেশের সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরকারের ভূমিকার ওপর নির্ভর করে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া জিডিপির মানদণ্ডে শক্তিশালী ও দুর্বল দিকগুলোও সেখানে তুলে ধরা হয়েছে।
রিপোর্টে বাংলাদেশের কিছু দুর্বল দিক স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে ধর্মীয় স্বাধীনতার ঘাটতি, গণমাধ্যমকে চাপে রাখা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। ধর্মীয় স্বাধীনতার বিবেচনায় বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
ইনডেক্স অনুযায়ী বাংলাদেশ কিছু সামাজিক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে শিশুমৃত্যুর হার রোধ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছেলেমেয়ের সমান অংশগ্রহণ, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন, জন্মহার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। এমনকি স্যানিটেশন ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। আধুনিক দাস ব্যবস্থা, বাল্যবিবাহ ও মানব পাচারের মতো বিষয়গুলো হল ভারতের সামাজিক দুর্বলতা, যেগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে।
সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়েও ভালো অবস্থানে রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় মেয়েদের প্রতি বৈষম্য হল পাকিস্তানের অন্যতম সামাজিক দুর্বলতা। একইভাবে পর্যটননির্ভর দেশ নেপালের তুলনায় জিডিপি, বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী নেপালের নারীরা বাংলাদেশের নারীদের তুলনায় বেশি ভোগান্তির শিকার হন। তবে শিক্ষার দিক থেকে নেপালের তুলনায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়।
আবারও বলি, দেশের সমাজকল্যাণমন্ত্রী যদি শেখ মুজিবের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি পড়তেন, তাহলে হয়তো তিনি এমন ভাষা ব্যবহার করতে পারতেন না।
এমন একজন মন্ত্রী যদি বাংলাদেশের সমাজকল্যাণের কাণ্ডারি হন, তাহলে আমাদের শংকিত না হয়ে উপায় নেই!
---------------------------------------------------
দৈনিক যুগান্তর ॥ ঢাকা ॥ প্রকাশ : ১৪ আগস্ট, ২০১৪ বৃহস্পতিবার
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:০৬
খাটাস বলেছেন: সুন্দর তথ্যপূর্ণ আর্টিকেল টি শেয়ারের জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা জানবেন ইলিয়াস ভাই।