নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুদ্ধিবৃত্তিক বিবেচনা ও স্বৈরতান্ত্রিক কর্মকাঠামো

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৩১

বুদ্ধিবৃত্তিক বিবেচনা ও স্বৈরতান্ত্রিক কর্মকাঠামো
ফকির ইলিয়াস
============================================
লেখাটি এবারের নোবেল শান্তি পদক দিয়েই শুরু করি। মালালা নোবেল পেয়েছেন। ওর বয়স ১৭ বছর। মালালা পাকিস্তানের মেয়ে। এখন থাকেন বিলাতে। একটি প্রতিবাদই তাকে ‘হিরোইন’ বা ‘আইকন’ এ পরিণত করেছে। গেলো দুবছর থেকেই ওর নাম শোনা যাচ্ছিল নোবেল তালিকায়। হয়তো ওর বয়সের অপেক্ষায় ছিল নোবেল কমিটি। ১৮ পর্যন্ত অপেক্ষার তর তাদের সয়নি। তাই ১৭-তেই নোবেল দিয়ে দায়মুক্ত হয়েছে নোবেল কমিটি।
মালালা ইউসুফজাই তালেবানদের মুক্তাঞ্চল পাকিস্তানের সোয়াত জেলার মিঙ্গোরা শহরের মেয়ে। ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই জন্ম তার। বেশি কিছু জীবনে চাননি মালালা। শুধু চেয়েছিলেন একটু লেখাপড়া করতে। পৃথিবীকে জানতে। কিন্তু তালেবানদের ফতোয়া ছিল, মেয়েরা লেখাপড়া শিখতে পারবে না। জঙ্গিদের হুমকির মুখে যখন সোয়াত জেলার অনেক মেয়েই লেখাপড়া ছেড়ে দিচ্ছে, তখন রুখে দাঁড়িয়েছিলেন মালালা। বদলা নিতে ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর বিকেলে তার ওপর হামলা চালায় তালেবান জঙ্গিরা। একদম সামনে থেকে তিন-তিনটি গুলি চালানো হয়। গুরুতর জখম মালালা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে সুস্থ হন। এখন তিনি ব্রিটেনের বার্মিংহামের বাসিন্দা।
দুই হাজার নয় সালে গর্জে ওঠেন এগারো বছরের মালালা ইউসুফজাই। বিবিসিতে ছদ্মনামে তার লেখা প্রকাশিত হয়। ব্লগে উঠে আসে সোয়াত উপত্যকায় তালেবানের প্রভাব বিস্তারের খুঁটিনাটি। তালিবানি শাসনে তার জীবন। এই উপত্যকায় তার দৃষ্টিতে নারীশিক্ষার গুরুত্ব। তখন অশান্ত সোয়াতে একের পর এক স্কুল ধ্বংস করে ফেলছে তালেবান। আর তখনই উর্দু কবি, শিক্ষা আন্দোলনের কর্মী জিয়াউদ্দিন ইউসুফের মেয়ে বছর এগারোর মালালার লেখা আলোড়ন তৈরি করে। সোয়াতে পৌঁছায় পাকসেনা। শুরু হয় যুদ্ধ। সে সময়ই এগারো বছরের মালালার জীবন নিয়ে তথ্যচিত্র করেন সাংবাদিক অ্যাডাম বি এলিক। প্রকাশ্যে আসে মালালা।
খুব অল্পদিনেই বিখ্যাত হয়ে যাওয়া এই কিশোরী চলে যায় তালেবানের হিটলিস্টে। তার কণ্ঠরোধ করাই ছিল তালিবানদের উদ্দেশ্য। নয় অক্টোবর দুই হাজার বারো। স্কুল বাসে ওঠার সময় এক ব্যক্তি তার নাম জিজ্ঞাসা করে। মালালা নামটা শুনেই অত্যাধুনিক অস্ত্র থেকে তিন রাউন্ড গুলি করে ওই ব্যক্তি। এরপর জীবন-মৃত্যুর লড়াই। দীর্ঘদিন ইংল্যান্ডে চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ওঠেন মালালা। ততোদিনে গোটা বিশ্ব জেনে গিয়েছে মিঙ্গোরার এই লড়াকু মেয়েটির নাম। গোটা বিশ্ব দাঁড়িয়েছে তালেবান শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এই কিশোরীর পাশে। মালালার জীবন সামনে আসার পরই জাতিসংঘও সকলের জন্য শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যোগ নেয়। দুই হাজার পনেরোর মধ্যে বিশ্বের সকলকে স্কুলে পাঠাতে মালালার নামে প্রকল্প তৈরির সুপারিশ হয়। যার জেরে পাকিস্তানে শিক্ষার অধিকার আইন আসে। দুই হাজার তেরোর এপ্রিল মাসে মালালাকে বিশ্বের একশ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে টাইম ম্যাগাজিন। দুই হাজার তেরোর বারোই জুলাই তার জন্মদিনে জাতিসংঘে তিনি বিশ্বের সকলের জন্য শিক্ষার কথা বলেন। সেই দিনটিকে ‘মালালা ডে’ নামে স্মরণীয় করে রাখে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেদিন মালালা বলেন, এই দিন শুধু তার নয়, সকল মহিলা, ছেলে এবং মেয়ে, যারা নিজেদের অধিকার নিয়ে আওয়াজ উঠিয়েছেন, এ দিন সকলের। নারীশিক্ষা আন্দোলন, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ তাকে এনে দিয়েছে দেশ-বিদেশের নানা পুরস্কার এবং সম্মান। এই কিশোর বয়সেই তিনি সাম্মানিক ডক্টোরেট পেয়েছেন হ্যালিফ্যাক্সের ইউনিভার্সিটি অফ কিংস কলেজ থেকে। প্রতি মুহূর্তেই বিশ্বের সকল মানুষের কাছে শিক্ষার বার্তা দিতে নিরলস কাঝ করে যাচ্ছেন সতের বছরের মালালা ইউসুফজাই। প্রতি মুহূর্তেই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বের মালালাদের গর্জে উঠতে ভরসা জোগান তিনি। প্রতি মুহূর্তেই নারীশিক্ষার প্রসারের জন্য সরব হন তিনি। সেই কাজের জন্য এবার সর্বোচ্চ সম্মান পেলেন মালালাÑ বলেছে নোবেল কমিটি। এই বিষয়ে আমার কিছু কথা আছে। মালালা যে কাজটি করেছেন- তা কি বিশ্বে আর কোনো বালক-বালিকারা করেনি কিংবা করছে না? হ্যাঁ- করছে। কিন্তু তারা মিডিয়ার পাদপ্রদীপে আসতে পারছে না। আসার সুযোগ নেই। অথবা আসতে দেয়া হচ্ছে না। এখানে মালালাকে একটি প্রতীক হিসেবেই ব্যবহার করেছে পশ্চিমা প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো।
পাকিস্তানে দানবতন্ত্র, নতুন কোনো বিষয় নয়। এই পাকিস্তানেই তাদের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল জিঘাংসা চরিতার্থে।
শক্তিশালী আত্মঘাতী বোমা হামলায় নৃশংসভাবে নিহত হয়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। এই চরম লজ্জাজনক ঘটনাটি জানান দিয়েছিল উপমহাদেশে একটি কালো দাঁতালো শক্তি কতো জঘন্যভাবে বেড়ে উঠছে। ঘটনার মাত্র আড়াই মাস আগে বেনজির দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে পাকিস্তানে ফিরেছিলেন। তার এই ফেরা নিয়ে নানা কথা হচ্ছিল। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার নাকি, স্বৈরশাসক পারভেজ মুশাররফের সঙ্গে আঁতাতÑ নিয়ে বিতর্ক ছিল। কিন্তু বেনজির খুব সুদৃঢ় কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি মৌলবাদ মুক্ত, স্বৈরশাসনমুক্ত পাকিস্তান চান। যে কোনো মূল্যে তিনি কাজ করে যাবেন সে লক্ষ্যে।
পাকিস্তানের ইতিহাসে বেনজির ভুট্টোর নামটি রাজনৈতিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। তার পিতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর ছায়ায় তার রাজনীতির যাত্রা শুরু হলেও ক্রমশ তিনি নিজের আসনটি সুপ্রতিষ্ঠিত করে নিতে পেরেছিলেন। মূলত একাত্তর সালের ষোলই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান বিজয় সাধিত হবার পর ‘পশ্চিম পাকিস্তানের’ শরীর থেকে পশ্চিম শব্দটি খসে পড়ে। একক পাকিস্তান রাষ্ট্রের পুনর্জন্ম হয়। যা ১৯৪৭ সালেই হতে পারতো। বাঙালিদের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম সে সময়ে হলেই তা হতো উত্তম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হয়নি। ফলে চব্বিশ বছর ‘হামভি মুসলিম, তুমভি মুসলিম’ এই বুলি আওড়িয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি উর্দু ভাষীরা বাঙালি জাতিকে শাসন এবং শোষণ দুটিই করে। জিন্নাহ-লিয়াকত আলীরা যে গণতন্ত্রী ছিলেন নাÑ তা সে সময়ের ইতিহাসই বলেছে। গণতন্ত্র মানলে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি জাতির শাসক, সংখ্যালঘিষ্ট উর্দু ভাষীরা হয় কি করে?
এভাবে স্বৈর মানসিকতার ছায়াদানব হয়েই বেড়ে উঠেছিল পাকিস্তান। ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খাঁ, কিংবা জে. ইয়াহিয়া খাঁরা জনগণের টুঁটি চেপে ধরতেই ক্ষমতা গ্রহণের নামে মার্শাল ল’ জারি করেন। এমন কি তারা বাঙালি জাতিকে মাতৃভাষা বাংলা পরিত্যাগ করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের বল প্রয়োগ করার ধৃষ্টতা দেখান। এরপরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির অভ্যুদয় ছিল এ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ঘটনা। কিন্তু তারপরও কি পাকিস্তানে গণতন্ত্র চর্চা হয়েছে? না হয়নি। বেলুচ, সিন্ধি, পাঞ্জাবি, পাঠান প্রভৃতি গোত্র-সম্প্রদায়ের নানা কূটকৌশলের কাছে পাকিস্তানিরা নিজেদের কাছেই প্রতারিত হতে শুরু করে বিভিন্নভাবে। শাসক জুলফিকার আলী ভুট্টোর গদি কেঁপে ওঠে বিভিন্ন কারণে। কারণ তার গণতন্ত্র চর্চা স্বচ্ছ ছিল না। কিন্তু তা যাই হোক না কেন আবার সামরিক শাসক জে. জিয়াউল হকের ক্ষমতা গ্রহণ প্রমাণ করেছিল, পাকিস্তানিরা গণতন্ত্রের চেয়ে গাদ্দারি মার্কা একনায়কতন্ত্রই বেশি পছন্দ করে। বিভিন্ন টালবাহানা করে প্রায় জোর করেই ভুট্টোর ফাঁসির হুকুম দেয় সামরিক জান্তারা। যে জুলফিকার আলী ভুট্টো জনরায় না মেনে দুই পাকিস্তানের শাসক হতে চেয়েছিলেন, তাকে বিদায় নিতে হয় অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে। জেনারেল জিয়াউল হক বিভিন্ন ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে শাসন চালাতে থাকেন। এরপর মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় জিয়াউল হক নিহত হলে দেশের রাজনৈতিক প্রবাহ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়। একটি কথা লক্ষণীয় পাকিস্তানে মৌলবাদী জঙ্গিরা কিন্তু মূলত সংঘটিত হতে শুরু করে জেনারেল জিয়াউল হকের সময়েই। কারণ এ রকম একটি মোল্লাবাদীতন্ত্রের খুব প্রয়োজন ছিল জিয়াউল হকের।
এরপরে পাকিস্তান শাসন করেন বেনজির ভুট্টো। কিন্তু জঙ্গিবাদের বিষক্রিয়া তিনি থামাতে পারেনি। তাছাড়া তার নিজ স্বামী আসিফ জারদারিসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সিংহভাগের দুর্নীতি ছিল সীমাহীন। ফলে তিনি টিকে থাকতে পারেননি। ক্ষমতায় আসেন নওয়াজ শরিফ। কিন্তু জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাষ্ট্রীয়ভাবে দেউলিয়া করে তুলে তার সরকারকেও। বিশেষভাবে সীমান্তবর্তী দেশ আফগানিস্তান থেকে আল-কায়েদাপন্থী জঙ্গিবাদের দাপট কাঁপিয়ে তুলে পাকিস্তানের গুহা, মরু, পর্বত। কারো কারো মতে পাক গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআই খুব কৌশলে নিজেদের রাষ্ট্রটিকে আংশিক অকার্যকর করে তোলে। সে সুযোগ নিয়ে খুব পরিকল্পিতভাবে নওয়াজ শরিফকে হটিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নেন জেনারেল পারভেজ মুশাররফ। সবচেয়ে মারাত্মক কথা হচ্ছে, জে. মুশাররফ ও জেনারেল জিয়াউল হকের কায়দায় পাকিস্তানে জঙ্গিবাদী নেটওয়ার্ককে ম“ দিয়েছেন, নিজে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। আজকের পাকিস্তানবাসী সেই কুফল ভোগ করছে।
মালালা সেই পাকিস্তানেরই মেয়ে। আজকের আফগানিস্তানে যা ঘটছেÑ তা কি উঠে আসছে মিডিয়ায়? না, আসছে না।
খবর বেরিয়েছে, মার্কিন মল্লুকের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ের জায়গা করে নিয়েছে মালালা। মালালা ইউসুফজাইয়ের লেখা বই ‘আই অ্যাম মালালা’ এবার পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ‘আই অ্যাম মালালা’- বইয়ের প্রতি ছত্রে উঠে এসেছে পাকিস্তানের তালেবান অধ্যুষিত এলাকার মেয়েদের দুর্দশার কথা। এবার সেই অভিজ্ঞতার কথা জানতে পারবে মার্কিন মল্লুকের শিক্ষার্থীরা। তবে, আই অ্যাম মালালার পুরোটাই পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। বইটির প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে বসবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। বইটির কোন অংশ কতোটা ও কিভাবে পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নিয়ে আলোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যক্রমের পর হাইস্কুলের পাঠ্যক্রমেও অন্তর্ভুক্ত হবে আই অ্যাম মালালা। শুধু নারীশিক্ষা নয়, মুসলিম দুনিয়ায় মেয়েদের অবস্থা জানার ক্ষেত্রেও মালালা অভিজ্ঞতার দলিল কাজে লাগবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক মহল। আমি বলি- এগুলো সবই হলো বাজারি জঙ্গিবাদ দমনের লোক দেখানো প্রচেষ্টা।
আমেরিকা চাইলে শিশু উন্নয়ন, নারী উন্নয়ন, যুব উন্নয়ন, শিক্ষা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে অনেক কিছুই করতে পারে। তারা তা না করে এক একটি ছোট্ট ঘটনাকে বড় ক্যানভাসে দেখাচ্ছে কেন? এর প্রকৃত মতলব কি? আর নোবেল কমিটিই এই মার্কিনি ফরমান তামিল করছে কেন? বুদ্ধিবৃত্তিক বিবেচনা বিষয়টি যেন বিশ্ব থেকে বিদায় নিতে চলেছে। ধ্যানী কর্মের কোনো মূল্যায়ন নেই। সব কিছুই যেন শর্টকাট। সবাই খ্যাতি চায়। আর খ্যাতি বিক্রেতারা লুফে নিচ্ছে তাদের মনের মতো খদ্দের। সর্বত্র এখন স্বৈরতান্ত্রিক কর্মকাঠামো- ছকের খেলা। আরো একটি অতি সাম্প্রতিক ঘটনা দিয়ে লেখাটির যবনিকা টানতে চাই। একজন শিক্ষক পিয়াস করিম মারা গেছেন। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে নিজের ছায়া বিক্রি করতেন। ছায়া বিক্রেতা কেন বলছি তা বুঝিয়ে বলি।
তিনি দেশের সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতেন বিভিন্ন টকশোতে- তাতে আমার কোনো আপত্তি ছিল না। আপত্তি ছিল, তিনি মিথ্যার বেসাতি দিয়ে ‘ইতিহাস’ শোনাতেন। তিনি কি কি বলেছেন- তা টিভির আর্কাইভগুলোতে সংরক্ষিত আছে। জানেন বাংলাদেশ ও বাইরে থাকা লাখ লাখ মানুষ। সেই পিয়াস করিম মারা যাবার পর তার মরদেহ শহীদ মিনারে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। আবার তা প্রতিহত করার ডাকও দেয়া হয়েছে। প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তার পরিবার তা করতে চেয়েছে।
অবস্থা যদি এমনই হয়Ñ আমি বলবো তাহলে তো বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষের মরদেহই তাদের স্বজনরা শহীদ মিনারে নিতে চাইবে। প্রশ্ন করি- কে এই পিয়াস করিম? কি করেছেন তিনি? আমেরিকা থেকে লেখাপড়া করে গেছেন। থেকেছেন বুর্জোয়া বেশে। আর কথা বলেছেন কখনো বামপন্থী কখনো ডান মৌলবাদীর মুখোশে। শিক্ষক আর টকশোর কথক ছাড়া আর কি পরিচয় ছিল তার? চাপিয়ে দেয়া মানসিকতা মানুষ গ্রহণ করে না। যেমনটি মালালার ব্যাপারে করেনি- তেমনটি পিয়াসের ব্যাপারেও।
শেষ প্রশ্নটি করতে চাই এই বলে- পিয়াস করিম মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কৌশলে কথা বলে, শহীদ স্মৃতির বিরোধিতা করে, রাজাকার-আলবদর-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করেও যদি শহীদ মিনারে যাবার ধৃষ্টতা দেখাতে পারেন, তাহলে একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল অনুঘটক গোলাম আযম মারা গেলে তাকেও ‘ভাষাসৈনিক’ হিসেবে শহীদ মিনারে নেয়ার চেষ্টাও কেউ কেউ করবে। এটাও মেনে নেবে বাংলাদেশ? বিবেক জেগে ওঠার সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী দানবশক্তিকে রুখতে মানবের তুমুল ঐক্য চাই আজ।
-------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥: ১৮/অক্টোবর/২০১৪ শনিবার প্রকাশিত

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪

শামীম সুজায়েত বলেছেন: একসময় কিছু লোক কাউকে কাউকে 'মুরতাদ' ঘোষণা করতো। তারা ছিল দাড়ি-টুপিধারী। মোল্লাদের এমন ফতোয়ায় দেশে-বিদেশে নিন্দার ঝড় বয়ে যেতে। আমরা যারা বাংলাদেশে বসবাস করি, তারা কোন ভাবেই ওই ফতোয়াবাজদের পছন্দ করতাম না। এখনও করেন না অধিকাংশ মানুষ।

কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী' কিছু লোক কাউকে কাউকে 'রাজাকার', 'রাজাকারের সহযোগী', 'স্বাধীনতাবিরোধী' প্রভৃতি অভিধায় চিহ্নিত করছে। নব্য মোল্লাদের এসব ফতোয়ার আওতায় পড়ছেন মার্কসবাদী, জাতীয়তাবাদী, মানবতাবাদী সবাই।

দেখা যাচ্ছে, মোল্লাদের হাত থেকে নিস্তার নেই কোনো জমানায়। এই মোল্লারা আমাদের অহংকারের ৭১ কে বিক্রি করছে হাটে-মাঠে-ঘাটে-ব্লগে-ফেসবুকে-টক শো তে, ব্যানার হাতে গুটি কয়েক লোক রাস্তার মোড়ে।

এদের ব্যবসায়ীক দৌরাত্ন দেখে দাড়ি টুপি ওয়ালা ওইসব ফতোয়াবাজদের চেহারা মনে পড়ে যাই।

আপনার লেখা পড়ার পর আমার মনে হলো মানুষের জন্মের উপর কারোর হাত নেই। আমি যদি দূর্ভাগ্যক্রমে কোন রাজাকারের ঘরে জন্ম নিয়ে ফেলি, আমাকে সেই রাজাকার মানুষটিকে বাপ ডাকতে হবে। আর তাই আমি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হয়েও রাজাকারের ছেলে বলে শহীদ বেদিতে ঠাই পাবোনা।

এ যুক্তি আমি মেনে নিলাম।

এখন প্রশ্ন হলো,জেনে বুঝে যে মানুষ চিন্হিত রাজাকার পরিবারের সাথে আত্নীয়তা করেন, সেই জীবন্ত মানুষ কি শহীদ বেদিতে গিয়ে ফুল দেয়ার অধিকার রাখেন?

বাস্তবতা হলো আজ আপনি আপনার সন্তানকে যা শেখাচ্ছি, আগামীতে আপনার ওপর সেটির প্রয়োগ ঘটাবে আপনারই সন্তান। আমরা আমাদের সন্তানকে শেখাচ্ছি কিভাবে সম্মানিত মানুষকে অপমান অপদস্ত করতে হয়, আমরা শেখাচ্ছি মৃত মানুষের লাশ নিয়ে কিভাবে নোংড়ামি করা যায়।

ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.