![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
জাতিসত্তার চেতনা ও রাজনীতির ধর্মপক্ষ
ফকির ইলিয়াস
===========================================
একাত্তরের প্রধান যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম মারা গেছেন। তিনি দেহত্যাগ করেছেন ঢাকায়। তার জন্য মাতম হয়েছে পাকিস্তানে। সেখানে গায়েবানা জানাজা হয়েছে। খবরটি সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এ বিষয়ে বেশ কিছু আপত্তিকর কথা বলেছেন পাকিস্তানের কিছু রাজনীতিক। লাহোরে গোলাম আযমের গায়েবানা জানাজা পড়ান পাকিস্তান জামাতের আমির সিরাজুল হক। জানাজার সময় সিরাজুল হক বলেন, ‘অধ্যাপক গোলাম আযমের শাহাদাতে আমরা গর্ববোধ করি। ঢাকার কারাগারে নির্যাতনমূলক পরিবেশে গোলাম আযমের শাহাদাত বরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরাউন শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকারের স্থায়ী পতনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেছে।’
করাচিতে গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেন পাকিস্তান জামাতের সাবেক আমির সৈয়দ মোনাওয়ার হোসেন। পাকিস্তান জামাতের অফিসিয়াল ফেসবুক পাতায় এসব জানাজার ছবি তোলা হয়েছে। তাদের ফেসবুক পাতায় গোলাম আযম এবং যুদ্ধাপরাধে ফাঁসিতে ঝোলা আব্দুল কাদের মোল্লার পরিচিতিমূলক একাধিক পোস্টারও তোলা হয়, স্বাধীনতার আগে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা এবং পরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের ‘ষড়যন্ত্রের’ স্বীকৃতিও দেয়া হয়।
গোলাম আযমের পরিচিতি তুলে ধরে একটি পোস্টারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও গোলাম আযম পাকিস্তানের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করে গেছেন। পাকিস্তানের প্রতি ভালোবাসার কারণে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কারাভোগ করেছেন। এর কিছু উদাহরণ পড়া যাক-
১. গোলাম আযম ওআইসির বৈঠকে আলাদা দেশ (বাংলাদেশ) গঠনের বিরোধিতা করেন। ২. পাকিস্তানকে সমর্থনের কারণে সাত বছর নির্বাসনে কাটান তিনি। ৩. গোলাম আযম ’৭১ সালে ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। ৪. হাসিনা ওয়াজেদের সরকার তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়। ৫. ১৯৫৪ সালে জামাতে ইসলামীতে যোগ দেন গোলাম আযম। ৬. পূর্ব পাকিস্তান জামাতের সেক্রেটারি জেনারেল হন তিনি। ৭. ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান জামাতের আমির হন তিনি।
যুদ্ধাপরাধে ফাঁসিতে ঝুলে মৃত জামাত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা ও গোলাম আযম নিয়ে যৌথ একটি পোস্টারে বলা হয়েছে, অধ্যাপক গোলাম আযমের সঙ্গী ছিলেন পাকিস্তানের শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা। বলা হয়েছে- ‘তারা দেশের পূর্বাঞ্চলকে (পূর্ব পাকিস্তান) বিচ্ছিন্ন করার ভারতীয় ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছেন।’ ’৭১ সালের যুদ্ধে নিজ দেশ পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের ও পাকিস্তানি বাহিনীকে সমর্থন দেয়ার অপরাধে শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকার গত বছর ১২ ডিসেম্বর ৬৫ বছর বয়স্ক কাদের মোল্লাকে তাকে ফাঁসিতে ঝুলায়।’ পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী সাঈদ রফিকের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরে একটি পোস্টারে বলা হয়, ‘অধ্যাপক গোলাম আযমের অপরাধ ছিল পাকিস্তানের প্রতি ভালোবাসা।’
ঢাকায় গোলাম আযমের যে জানাজা হয়েছে, তাতে অনেক লোক সমাগম হয়েছে। প্রশ্ন আসছে- এতো লোকই যদি মৌলবাদী-রাজাকার সমর্থক হয়, তাহলে ওরা কি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নেবে? স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস তা প্রমাণ করে না। বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক। কিন্তু তারা সা¤প্রদায়িক নন। আর নন বলেই এ দেশে জঙ্গিবাদী- মৌলবাদী শক্তি কখনই জনসমর্থন পায়নি- পাবেও না। গোলাম আযম যে রাজনীতি করতেন তা ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী রাজনীতি। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের বহু বিতর্কিত ধর্মীয় নেতা আবুল আ’লা মওদুদীর অনুসারী। কে ছিলেন এই মওদুদী। তার জীবনের শেষ বছরগুলোর একটি তালিকা এখানে পড়া যেতে পারে। বছরওয়ারি কর্মকাণ্ড ও ঘটনাপ্রবাহ এরকম-
১৯৫৩- ‘কাদিয়ানী সমস্যা’ নামে একটি বই লিখে কাদিয়ানী বা আহমদিয়া সম্প্রদায়কে অমুসলিম প্রমাণ করেন মওদুদী। ফলে ইতিহাসখ্যাত বড় রকমের কাদিয়ানী বিরোধী হাঙ্গামার সৃষ্টি হয়। এ সময় অনেকগুলো সংগঠন একযোগে কাদিয়ানীদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তারা সর্বদলীয় কনভেনশনে ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন কমিটি’ গঠন করে। জামাত এই কমিটির বিরোধিতা করে অহিংস আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়। কিন্তু তথাপি মার্চ মাসের শুরুতে আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে এবং পুলিশের গুলিতে কিছু লোক নিহত হয়। পরে একটি সামরিক আদালত আবুল আ’লাকে এই গোলযোগের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়, (যদিও কাদিয়ানী সমস্যা নামক বইটি বাজেয়াপ্ত করা হয়নি)। অবশ্য সেই মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়নি।
১৯৫৩- মৃত্যুদণ্ডাদেশ পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়, কিন্তু পরে তাও প্রত্যাহার করা হয়। ১৯৫৮- সামরিক শাসক ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান ‘জামাতে ইসলামী’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৯৬৪- আবারো তাকে কারাবন্দী করা হয়। ১৯৬৪- কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৭১- পাকিস্তান থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হবে কিনা এ প্রশ্নে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার পূর্ব পাকিস্তান জামাতের ওপর ন্যস্ত করেন। ১৯৭২- তাফহিমুল কুরআন নামক তাফসির গ্রন্থটির রচনা সম্পন্ন করেন। ১৯৭২- জামাতে ইসলামীর আমির পদ থেকে ইস্তফা দেন। ১৯৭৮- তার রচিত শেষ বই ‘সিরাতে সারওয়ারে আলম’ প্রকাশিত হয়। এটি হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর জীবনী গ্রন্থ। ১৯৭৯- চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। ১৯৭৯- যুক্তরাষ্ট্রে তার মৃত্যু হয়। ১৯৭৯- লাহোরের ইছরায় তাকে সমাধিস্থ করা হয়। তার জানাজায় ইমামতি করেন শায়খ ইউসুফ আল ক্বারাদাওয়ি।
মওদুদী মতবাদটি উপমহাদেশের হাক্কানি আলেমরা বারবারই খারিজ করেছেন। কি বলেছিলেন এই মওদুদী? তার কিছু উক্তি পাঠ করা দরকার। আবুল আ’লা মওদুদী (১৯০৩-১৯৭৯) পাকিস্তান ভিত্তিক দল জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা যা বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই তাদের ধর্ম ব্যবসা খুলে বসেছে। প্রথমদিকে মওদুদী পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করলেও ১৯৪০-এর দশকে এসে নিজের ভোল পাল্টান এবং তখন থেকেই তিনি পাকিস্তানে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হন। তিনি ইসলামকে একটি জীবন ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে প্রচার করতে শুরু করেন। ইসলামের মৌলিক নীতি ও ভিত্তিসমূহ, যেমন: তাওহিদ, এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, সালাত, সাওম, জাকাত, হজ ইত্যাদিকে উপেক্ষা করে মওদুদী শাসন ব্যবস্থার ওপর বেশি জোর দেন। রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব আকাক্সক্ষার ব্যাপারে তার মতামত: ‘তাই কর্তৃত্বের আকাক্সক্ষা ছাড়া কোনো দর্শনে আস্থাজ্ঞাপন করার কোনো অর্থ নেই, এবং কোনটি আইন সম্মত বা কোনটি নিষিদ্ধ অথবা নির্দেশিত আইন, কোনোটিরই কোনো মানে নেই।’ – তাজদিদ উদ দ্বীন, পৃষ্ঠা ৩২-৩৩
অথচ হযরত মুহম্মদ (সাঃ) পরিষ্কারভাবে কর্তৃত্বের লালসাকে পুরোপুরি নিষেধ করে দিয়েছেন; ওনার মতে কর্তৃত্ব ও শাসন করার লোভ মানুষকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। তিনি বলেন: ‘নেতৃত্বের আকাক্সক্ষা করো না। কেননা তোমরা যদি নেতৃত্বের আকাক্সক্ষা করে তা পাও তবে সে দায়িত্ব তোমাদের একাই পালন করতে হবে। কিন্তু আকাক্সক্ষা না করেই যদি তোমরা নেতৃত্ব পাও তবে তোমরা সাহায্য পাবে (আল্লাহর কাছ থেকে)।’ – মুসলিম, ৪৬৯২
এখানে মওদুদীর কিছু ইসলাম বিকৃতির নমুনা তুলে ধরা প্রয়োজন। এখানে পবিত্র কুরআন, হাদিস এবং মওদুদীর বিভিন্ন লেখা ও ভাষণ থেকে উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়েছে। তিনি লিখেছেন- ‘শাসন ও কর্তৃত্ব করার নামই হচ্ছে ধর্ম, শাসন ব্যবস্থার আইন হলো শরিয়া এবং উপাসনা হচ্ছে শাসন ব্যবস্থার ঐতিহ্যকে অনুসরণ করা’- খুতবা, পৃষ্ঠা ২১৭।
‘লোকে সাধারণত বলে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ: এক আল্লাহর ওপর বিশ্বাস, নামাজ, জাকাত, রোজা এবং হজ। এবং এগুলোই ইসলাম এই ভুল ধারণার মধ্যে তারা অনেকদিন ধরে আছে। আসলে এটা একটা বড় বিভ্রান্তি যা মুসলমানদের পথ এবং কর্মকে ধ্বংস করেছে।’ (কাউসার, ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫১- মওদুদীর ভাষণ থেকে উদ্ধৃত) অথচ সহিহ বুখারি এবং মুসলিম শরিফে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ইসলামের মূল স্তম্ভ পাঁচটি: ১. শাহাদাহ ২. সালাত ৩. বাধ্যতামূলক জাকাত প্রদান ৪. সাওম এবং ৫. হজ।
শুধু তাই নয়, মওদুদী হাদিস শরিফের ও সমালোচনা করতে ছাড়েনি। মওদুদী এ সম্পর্কে বলেছে: ‘কোনো সত্যবাদী মানুষই এই দাবি করতে পারবে না যে ৬ – ৭ হাজার হাদিসের (সহিহ বুখারি শরিফ) সবগুলোই পুরোপুরি ঠিক।’ (১৯৫৫ সালের ১৫ মে বরকত হলে মওদুদীর দেয়া ভাষণ থেকে; যা পরে আল-ইতেশাম পত্রিকায় ২৭ মে ১৯৫৫ এবং ৩ জুন ১৯৫৫ তারিখে প্রকাশিত হয়।) শুধু এই নয়, হযরত মুহম্মদ (সাঃ) চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী বিয়ে (মুতাহ) হারাম ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মওদুদী হাস্যকর উদাহরণ টেনে তা হালাল করতে চেয়েছেন:
‘ধরেন সমুদ্রের মাঝে একটি নৌকা ডুবে গেলো। একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বেঁচে গিয়ে এক নির্জন দ্বীপে গিয়ে ওঠে। এ অবস্থায় তাদের একসঙ্গে থাকতেই হবে। কিন্তু ইসলামি আইন মতে তারা নিকাহ করতে পারবে না। তাই তাদের কাছে যে একমাত্র রাস্তাটা খোলা আছে তা হলো নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে অস্থায়ী বিয়ে করা ততোদিনের জন্য যতোদিন না তারা লোকালয়ে পৌঁছাতে পারে বা লোকরা তাদের খুঁজে পায়। অস্থায়ী বিয়ে (মুতাহ) এ ক্ষেত্রে বা এর মত পরিস্থিতিতে জায়েজ।’ -তারজুমামুল কুরআন, ১৯৫৫, পৃষ্ঠা: ৩৭৯
যুদ্ধবন্দী মহিলাদের ব্যাপারে মওদুদীর মতামত দেখুন: ‘এমনকি বর্তমান যুগেও যুদ্ধবন্দী মহিলাদের সৈনিকদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া উচিত এবং সৈন্যদের তাদের (মহিলাদের) ভোগ করার অনুমতি দেয়া উচিত।’ অথচ পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়া আছে। আল্লাহ বলেন: ‘অবশেষে যখন তাদেরকে (কাফিরদের) পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদের শক্ত করে বেঁধে ফেলো। অতঃপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ করো, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও (এবং মুক্তি দাও)।’ – সুরা মুহাম্মদ, আয়াত ৪
বাল্যবিবাহ নিয়ে মওদুদী বলেছেন: ‘নাবালিকা মেয়েদের (বয়োপ্রাপ্তির আগে) বিয়ে করা যায়। স্বামীরাও তাদের সঙ্গে সহবাস করতে পারে।’ -তাহফিমুল কুরআন, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৫৭১
বিভিন্ন নবী-রাসুলদের নিয়ে মওদুদীর সমালোচনার বিস্তর উদাহরণ আছে। যেমন নিচের মন্তব্যে তিনি হযরত ইউসুফ (আঃ) কে মানুষ হত্যাকারী জঘন্য মুসোলিনির সঙ্গে তুলনা করেছেন- ‘কিছু মানুষ যে ধারণা পোষণ করে যে তিনি [হযরত ইউসুফ (আঃ)] মিসরের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব চেয়েছিলেন শুধু সেখানকার অর্থমন্ত্রী হওয়ার জন্য তা আদপে ঠিক নয়; প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন স্বৈরশাসক হতে চেয়েছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত ইউসুফ (আঃ) যে পদ পান তা বর্তমানকালের ইতালির মুসোলিনির অবস্থার সমতুল্য।’ – তাহফিমাত, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১২২, ৫ম সংস্করণ
মওদুদী হযরত সুলাইমান (আঃ) এর ১০০ স্ত্রী থাকার ব্যাপারে মন্তব্য করেছে: ‘হয় আবু হুরাইরা (রাঃ) নবীর কথা শুনতে ভুল করেছেন অথবা তিনি পুরো ব্যাখ্যা শোনেননি।’ -রাসাইল-ও-মাসাইল, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা: ২৭
এখন ভাবা দরকার, কিভাবে- কোন সভ্য ও বিবেকবান মানুষ এই লোকের মতবাদে বিশ্বাস করতে পারে এবং একে ইসলাম বলে দাবি করতে পারে? এখানে অনেক উদ্ধৃতি ইংরেজি থেকে অনূদিত করা হয়েছে। এমন উদাহরণ আরো অনেক পাওয়া যাবে। গোলাম আযম সেই লোকের প্রধান খলিফা ছিলেন। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিষয়গুলো অনুধাবন করা দরকার।
জানাজায় লোকসংখ্যার অনেক কারণই থাকতে পারে। বাংলাদেশের অনেক মানুষই মনে করেন- মৃত ব্যক্তির আর সমালোচনার দরকার নেই। লোকটি যেহেতু মুসলমান, তাই তার জানাজা পড়ায় যাওয়া দরকার। ইত্যাদি ইত্যাদি। গোলাম আযম বাঙালি জাতিসত্তার বিরুদ্ধে ছিলেন আমৃত্যু। তিনি নিমকহারাম না হলে এই মাটি ত্যাগ করে গেলেই পারতেন। যেমন গিয়েছিলেন তার আরেক অনুসারী মাহমুদ আলী। এই বাংলাদেশের জল-অন্ন খেয়েছেন তিনি। তারপরও তিনি বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারেননি। এই দেশ যে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছিল- তাদের উত্তরসূরিরা গোলাম আযমকে ক্ষমা করেনি- করবেও না। এর প্রমাণ শেষ মুহ‚র্ত পর্যন্ত আমরা দেখেছি। গোলাম আযম বলেছেন, ভাষা আন্দোলন করা তার জন্য ভুল ছিল। তারপরও তাকে ‘ভাষাসৈনিক’ বলবে বাংলার মানুষ?
ইতিহাস জেগে ওঠে। ইতিহাস ভরাট নদীর বুকেও তার শির দেখায় মাঝে মাঝে। তাই দুঃখ করার কিছু নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হয়েছে। রায় হয়েছে। সাজা হয়েছে। হচ্ছে। এটাই আজ ইতিহাস। প্রজন্ম এর সাক্ষী থাকবে অনেক কাল।
------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১ নভেম্বর ২০১৪ প্রকাশিত
২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩২
সরদার হারুন বলেছেন: এক কথা কত আর শোনা যায়।
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:৫২
সরদার হারুন বলেছেন: এক কথা কত আন শোনা যায় ।