![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
ভোটাধিকার ও জনকল্যাণের রাষ্ট্রনীতি
ফকির ইলিয়াস
=============================================
একটি রাষ্ট্রে ভোটের অধিকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। ভোট মানুষকে শক্তি দেয়। মানুষের মনে জানান দেয়- আমিও ক্ষমতার মালিক। কেউ চাইলে ভোট দিতে পারেন। না চাইলে নয়। এটাও তার অধিকার। উন্নত রাষ্ট্রে রাজনীতিকরা বড় বড় উন্মুক্ত মাঠে সভা-মিছিল-মিটিং করেন না। মূলত টিভি মিডিয়াই রাজনীতিকদের কথা বলার মূল প্লাটফর্ম। আর তা থেকেই মানুষজন সিদ্ধান্ত নেন তারা কাকে ভোট দেবেন। কেন দেবেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে যে বিষয়টি আমি লক্ষ করেছি- তা হলো কোনো মার্কিন নির্বাচনেই লোক সমাগম খুব একটা হয় না। কারণ ভোটের দিন মানুষের কাজকর্ম থাকে। ভোর ছটা থেকে রাত নটা পর্যন্ত ভোট সেন্টার খোলা থাকে। কোনো কোনো সেন্টারে কয়েকশ ভোটও পড়ে না। অথচ আমেরিকায় ‘বোর্ড অব ইলেকশন’ এর বাজেট বিলিয়নস অব ডলার। কেন এই ব্যবস্থা? এর মূল কারণ মানুষের আস্থা ধরে রাখা। নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার সমালোচনা করে ২০১২ সালে ঐ সময়ের রাশিয়ার নির্বাচন কমিশনের প্রধান ভøাদিমির ইয়েভগেনিয়েভিচ চারভ বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থা মোটেই গণতান্ত্রিক নয়। ব্রিটিশ দৈনিক দি গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছিল, রাষ্ট্রায়ত্ত পত্রিকা রোসিস্কায়া গাজেতায় চারভ ৩ হাজার ৬০০ শব্দের এক দীর্ঘ প্রবন্ধে এই সমালোচনা করেছিলেন। চারভ লিখেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি নয়, সর্বজনগ্রাহ্য নয়, সবার জন্য সমান নয় এবং ভোটদানের গোপনীয়তাও এতে রক্ষিত হয় না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার ক্ষেত্রে মার্কিন নাগরিকদের অধিকার নিয়ে আলোচনা সেখানে কল্পনার অতীত। পদার্থবিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষার্থী চারভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা অপ্রতুল। নির্বাচন সমন্বয়ের জন্য কোনো কেন্দ্রীয় সংস্থা নেই, ভোটারদের নিবন্ধন করার ব্যবস্থা নাজুক, ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের সঠিক পরিচয় জানার ব্যবস্থাও খুব দুর্বল, ভোটারদের ব্যক্তিগত তথ্য ঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয় না এবং ভোট গণনার পদ্ধতি ভ্রান্ত। চারভ আরো লিখেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পুরো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্বাচনী জটিলতা, বিকেন্দ্রীকরণ, রাজনৈতিকীকরণ, অস্বচ্ছতা ও নৈরাজ্যের কারণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এটি সবার জানা যে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন কোম্পানির প্রধানরা তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে বাধ্য করেন শ্রমিকদের। নিবন্ধের শেষে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় দুই দলের বাইরে বাকি যেসব দলের প্রার্থীরা প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন, তারা রাষ্ট্রীয় চাপের কাছে অসহায়।
আমার মনে হয়, তার কথাগুলো মিথ্যে নয়। কারণ মার্কিনি রাজনীতি মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন কর্পোরাল জায়েন্টরা। ওরাই প্রধান শক্তি মার্কিনি রাজনীতির। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির একটি ভৌতিক শক্তি হচ্ছে ইলেক্টরাল ভোট। এ বিষয়ে কিছু বলা দরকার।
ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ইলেক্টরাল কলেজ বা নির্বাচক সংস্থার ব্যবস্থা করা হয়। সে পদ্ধতি অনুযায়ী নির্বাচনে সর্বাধিক ভোট পাওয়া প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট এবং তার পরবর্তী ভোট পাওয়া প্রার্থীকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হতো। ১৮০০ সালের নির্বাচনে দুজন প্রার্থী সমানসংখ্যক ভোট লাভ করায় সংকট দেখা দেয়। ফলে ১৮০৪ সালে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের জন্য পৃথক নির্বাচক সংস্থার ব্যবস্থা করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২ নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় ইলেক্টরাল কলেজের মাধ্যমে। প্রত্যেক অঙ্গরাজ্য থেকে প্রতিনিধি সভা এবং সিনেটে মোট যে সংখ্যক সদস্য নির্বাচিত করা হয়, প্রত্যেক রাজ্য ইলেক্টরাল কলেজের জন্য সে সংখ্যক সদস্য নির্বাচিত হবে। ইলেক্টরাল কলেজের ভোটের সংখ্যা সর্বমোট ৫৩৮টি। কোনো প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়ী হতে হলে ৫৩৮টি ইলেক্টরাল ভোট থেকে কমপক্ষে ২৭০টি পেতে হবে।
উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের বেলায়ই এমনটি সম্ভব। বাংলাদেশের জন্য নয়। বাংলাদেশে ভোটাধিকার কিনে নেয়া যায়। মানুষকে বশ করা যায় টাকা দিয়ে। এই যে নৈতিক অপরাধ- তা রুখবে কে? প্রায় সকল দলই এই কর্মটি করে যাচ্ছে অনেক সময় ধরে।
একটি রাষ্ট্রে নীতি প্রণীত হওয়া দরকার জনকল্যাণে। আমেরিকায় এমন উদাহরণ আমরা বারবার দেখি। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা, গণতন্ত্রের আদর্শ কিংবা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত কি কোনো জোর-জবরদস্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করে? একটি ঘটনা মনে পড়ছে। যা উল্লেখ করতে চাই। ঘটনাটি মার্কিন রাজনীতিতে ব্যাপক মেরুকরণের সৃষ্টি করেছিল। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের প্রথম মেয়াদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী (সেক্রেটারি অফ স্টেট) মি. কলিন পাওয়েল প্রকাশ্যে ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বারাক ওবামাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। কলিন পাওয়েল ঝানু রিপাবলিকান।
তিনি মার্কিন জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। কলিন পাওয়েল বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্তিত্ব বাঁচাতে বারাক ওবামার বিকল্প কোনো নেতা এ মুহ‚র্তে নেই। কেউ কেউ বলছিলেন, কলিন পাওয়েল নিজে কৃষ্ণাঙ্গ বলেই বারাক ওবামাকে সমর্থন দিয়েছেন। এ অভিযোগ খণ্ডন করে কলিন পাওয়েল বলেছিলেন, এটা যারা বলছে তারা হীনমন্য। তিনি তার গণতান্ত্রিক চেতনা থেকে বিবেকপ্রসূত হয়েই বারাককে সমর্থন দিচ্ছেন। আর এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
বাংলাদেশে জনকল্যাণের রাষ্ট্রনীতি প্রতিষ্ঠা সহজ কাজ নয়। হোঁচট খেতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকেও। ১৯৭২ পরবর্তী সময়ের কথা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধান গুণ ছিল তিনি ছিলেন সৎ ও মহৎ রাজনীতিক। আমরা সে সময়ও দেখেছি তার চারপাশে বেশ কিছু চাটুকার অবস্থান নিয়েছিল। বেশ কিছু রাজাকার নিজের অতীত ঢেকে দেয়ার জন্য, বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য বিভিন্ন চ্যানেল ধরার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিল। তাদের প্রধান পরিচয় ছিল তারা সুবিধাবাদী। রাষ্ট্র, মানুষ ও মাটির স্বার্থ তাদের কাছে বড় ছিল না।
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বঙ্গবন্ধু যদি সেদিন কঠোরহস্তে সে সব চাটুকার সুবিধাবাদীদের দমন করতেন, তবে বাংলাদেশের ইতিহাস অন্যভাবে হয়তো লিখিত হতো। জাতির জনকের বিশাল মহানুভবতার সুযোগ নিয়ে এসব স্বার্থান্বেষী মহল পনেরো আগস্টের সেই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটাতে মোটেই কসুর করেনি। আর বিষধর সুবিধাবাদী চক্র যে এভাবেই ঘাপটি মেরে বসে থেকে সুবিধার জন্য সব নৃশংসতা ঘটাতে পারে সেটা তারই প্রমাণ। যে শোক বাংলার মাটি এখনো বইছে। বইছে ৩ নভেম্বরের জেলহত্যা শোক। এই তো সেই দেশ, যে দেশে বন্দুকের নল হরণ করেছিল ভোটাধিকার।
আমরা জানি, সুবিধাবাদীরা যে কোনো দেশের রাষ্ট্রনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতিকে ধ্বংস কিংবা পঙ্গু করে দিতে পারে। আর সে জন্যই এই চক্রের বিরুদ্ধে সদাসতর্ক থেকে দেশের রাজনীতিকে এগিয়ে নিতে হয়।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, একটি সুবিধাবাদী চক্র স্বদেশে এবং বিদেশে থেকে বর্তমান সরকারের নাম বিক্রি করে ফায়দা লুটতে তৎপর হচ্ছে। ‘আমি সরকারি দলের অমুক-তমুক’- এমন বক্তব্য কোনো সৃজনশীল রাজনৈতিক দলের পক্ষেই শোভনীয় নয়। এদের কঠোরহস্তে দমনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোতে মেধাবী মানুষের অংশগ্রহণই রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে পারে। এখানে দলীয় পরিচয় দিয়ে লুটপাট কোনোমতেই কাম্য নয়। মধ্যস্বত্বভোগীরা চর দখলের প্রতিযোগিতায় সব সময়ই এগিয়ে থাকে। এদের অশুভ তৎপরতা থামিয়ে দেয়া রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।
ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের স্বপ্ন এখনো অনেক দূরে। এই সময়ের মধ্যে দেশকে সৃজনশীলতার বীজতলায় পরিণত করতে হবে। এ জন্য উপড়ে ফেলতে হবে আগাছা। যারা ক্ষণিকের সুবিধা নিতে দলের আদর্শ, জাতির আকাক্সক্ষাকে ভূলুণ্ঠিত করতে চায় এরা মানুষের শত্রু। মানবতার শত্রু। এদের চরিত্রই হচ্ছে সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে টু-পাইস কামাই করা। আওয়ামী লীগ তথা বর্তমান সরকারকে এ বিষয়টি নজরে রাখা উচিত। মনে রাখতে হবে, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বেশিদিন থাকা যায় না। আর বাংলাদেশের মানুষ স্বেচ্ছাচারিতাকে পছন্দ করেন না কোনো মতেই।
----------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০১৪ প্রকাশিত
©somewhere in net ltd.