![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
তার আগে চাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার
ফকির ইলিয়াস
--------------------------------------------
বাংলাদেশ সরকারের একজন অপসারিত মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী দেশে ফিরেছেন। তিনি বাংলাদেশের জন্মসূত্রে নাগরিক। তিনি তার নিজ দেশে ফিরতেই পারেন। আমার মনে হয়, তিনি খারাপ করেননি দেশে ফিরে। তবে এ কথা ঠিক তিনি বেশ ভেবে-চিন্তেই দেশে এসেছেন। আর এসেছেন নিশ্চয়ই সরকারপক্ষের সবুজ সংকেত পেয়ে। এসেই তিনি আইনের হাতে নিজেকে সোপর্দ করেছেন। তাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছে। এখন তার বিচার চলবে। মাননীয় আদালত বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বিচার করবেন এবং রায় দেবেন- সেটাই মানুষের প্রত্যাশা।
আমরা জানি, লতিফ সিদ্দিকী ঝানু রাজনীতিবিদ। জেল-জুলুম অনেক সহ্য করেছেন জীবনে। কিন্তু শেষ বয়সে এসে যে গর্হিত কাজটি করেছেন- তাহলো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে তিনি কথা বলেছেন। এমন কথাবার্তা- গোত্রগত, ধর্মগত সংঘাত ছড়ায়। যা মানবতাবাদকে হত্যা করে। লতিফ সিদ্দিকী একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রবক্তা দাবি করেন নিজেকে। আর এই দাবিদার হয়ে তিনি ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য দিতে পারেন না। সমস্যাটা সেখানেই হয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তা জেনেই তিনি দেশে ফিরেছেন। তিনি তা আইনিভাবেই মোকাবেলা করবেন। সেটাও ধরে নেয়া যায়।
বলা দরকার তিনি এখনো একজন বহাল সাংসদ। এ দিকে জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার শিরীন শারমিন বলেছেন, সংসদ চত্বরের বাইরে থেকে কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন নেই। তার বক্তব্য এরকম- ‘সংসদ চত্বর থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে স্পিকারের অনুমতির বিষয়ে কার্যপ্রণালী বিধিতে সুস্পষ্ট বিধি রয়েছে। তবে সংসদ চলার সময় কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে আইনের বিধান রয়েছে, সেটি একজন সংসদ সদস্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।’
বাংলাদেশের সংবিধান যা বলছে তা সবারই জানা দরকার। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে বলা আছে, ‘স্পিকারের অনুমতি ব্যতিরেকে সংসদের সীমার মধ্যে কাহাকেও গ্রেপ্তার করা হইবে না।’ সংসদ সীমার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সংসদ-কক্ষ, লবি, গ্যালারি এবং সাময়িকভাবে স্পিকার কর্তৃক নির্ধারিত স্থানসমূহ।
কার্যপ্রণালীতে আরো বলা হয়েছে, ‘কোনো সদস্য ফৌজদারি অভিযোগে বা অপরাধে গ্রেপ্তার হইলে কিংবা কোনো আদালত কর্তৃক কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইলে বা কোনো নির্বাহী আদেশক্রমে আটক হইলে ক্ষেত্রমত গ্রেপ্তারকারী বা দণ্ডদানকারী বা আটককারী কর্তৃপক্ষ বা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ তৃতীয় তফসিলে প্রদত্ত যথাযথ ফরমে অনুরূপ গ্রেপ্তার, দণ্ডাজ্ঞা বা আটকের কারণ বর্ণনাপূর্বক অবিলম্বে অনুরূপ ঘটনা স্পিকারকে জানাইবেন।’
লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের পর সেই ধূম্রজাল কেটে গেছে। বিচারের প্রক্রিয়ায় কি আছে সংবিধানে- তা একটু পড়া যাক। আমরা পত্রপত্রিকায় পড়েছি, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ও ২৯৮ ধারায় ডজনখানেক মামলায় লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, যার মধ্যে সাতটি মামলা ঢাকার আদালতের। দুটি ধারাই জামিনযোগ্য। দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) ধারায় অন্যের ধর্ম বিশ্বাসের অবমাননা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে বিদ্বেষমূলক কোনো কাজ করলে দুই বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে। আর দণ্ডবিধির ২৯৮ ধারায় বলা হয়েছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে বিদ্বেষমূলক শব্দ উচ্চারণ করলে এক বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কী করে- তা দেখার বিষয়। তবে যে বিষয়টি না বললেই নয়, তাহলো এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশে একটি গোলযোগ বাধাবার চেষ্টা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে মারাত্মক কথা হচ্ছে, এই ঘুরপাক ঘিরে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত মৌলবাদী-জঙ্গি সংগঠনগুলো মরিয়া হয়ে উঠতে পারে। এরা দেশে চরম গোলযোগ বাধাবার চেষ্টা করতে পারে। এসব কথা সরকারের যে বিবেচনায় নেই, তা আমি বলছি না। তবে তা মোকাবেলায় সরকার কতটা প্রস্তুত এবং সে সঙ্গে সরকারের অভ্যন্তরের নীতিনির্ধারকরা পা পিছলে পড়বেন কিনা- সে প্রশ্নটি আসছে খুব সঙ্গত কারণেই। তার কারণ সরকারের সামনে এখন অনেকগুলো কাঁটা। বিশেষ করে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, এর কিছু কর্মী যেভাবে দখলদারীর ভূমিকা নিয়েছে, তা দেশবাসীকে জিম্মিদশায় ঠেলে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, কারো মুখের দিকে না তাকিয়ে শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ নেয়ার কথা। সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে ভিডিও কনফারেন্সে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার সাজ্জাদুল হাসান ও পুলিশ কমিশনার মো. কামরুল আহসানের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বোধহয় এক সমস্যা দেখা দিয়েছে, এ সম্পর্কে পুলিশ কমিশনারের কাছ থেকে জানতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘এখানে একটা নির্দেশ আমি দিতে চাই, যারাই এ ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস করবে, যে দলের হোক, কে কোন দলের সেটা দেখার কথা না, যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করবে সঙ্গে সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে একশন নিতে হবে।’ এরপর সিলেটের পুলিশ কমিশনার প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘গত ২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। মারামারিতে একজন ছেলে নিহত হয়। ঘটনার সময় নিয়ন্ত্রণ করেছি। তা না হলে হয়তো আরো ক্ষয়ক্ষতি হতে পারত।’ তিনি জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে; বিশেষ অভিযানে ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। সিলেটের পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, ‘এই অভিযান অব্যাহত আছে। আশা করছি যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারব।’ সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ কমিশনারকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো দিকে না তাকিয়ে, কারো মুখের দিকে না তাকিয়ে যথাযথভাবে ব্যবস্থা নেবেন এটাই আমরা চাই।’ সিলেটের সঙ্গে আরেকদিন ভিডিও কনফারেন্স করবেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি চলমান থাকবে, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব।’ প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকুক, সুখে থাকুক, উন্নত জীবন পাক- এটাই আমরা চাই।’ কিন্তু এটাই কি শেষ কথা? নির্দেশ জারি হলেই তা কি পালিত হচ্ছে? না হচ্ছে না। আর হচ্ছে না বলেই দেশে লাশ পড়ছে। মওকা পাচ্ছে, সরকারবিরোধী মহল। দুঃখের কথা আমাদের রাজনীতিকরা বিশ্বরাজনীতির সৃজনশীলতা দেখেন না। একটি সা¤প্রতিক খবর সবার নজরে পড়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী চাক হেগেল পদত্যাগ করেছেন। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উত্থান প্রতিরোধ ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। প্রায় দুই বছর তিনি এই পদের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিও প্যানেট্টার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র ইসলামিক স্টেটের উত্থান প্রতিরোধ বিষয় নয়, রিপাবলিকান অধ্যুষিত কংগ্রেসও চাইছে না আর তাকে। দীর্ঘদিন ধরে হেগেলের সঙ্গে কংগ্রেসের ঠাণ্ডা লড়াই চলছিল। স¤প্রতি হয়ে যাওয়া মার্কিন কংগ্রেসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে উভয় হাউসে রিপাবলিকানদের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় ডেমোক্র্যাটরা। আসছে জানুয়ারি ২০১৫ থেকে শুরু হতে যাওয়া কংগ্রেসের পরবর্তী অধিবেশনে প্রতিক‚ল পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কা থেকেই চাক হেগেল পদত্যাগ করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ওবামা চাক হেগেলের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। গেল ২৪ নভেম্বর ২০১৪ সোমবার দিনের শেষে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে চাক হেগেলের পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তবে সিনেটে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর নাম ঘোষণার আগ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবেন চাক হেগেল, জানিয়েছেন ওবামা প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। চাক হেগেলের স্থলাভিষিক্ত হতে সাবেক উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইকেল ফ্লোরনয় এবং সাবেক সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যাশটন কার্টারের নাম শোনা যাচ্ছে। ব্যর্থ হলে যে সরে যেতে হয়, এটা তারই একটি ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেটা নেই। আর নেই বলেই রাষ্ট্র আজ জিম্মিকাল অতিক্রম করছে। এসব দখলদারদের থামাতে হলে সরকারকে কঠোর হতে হবে। আইনের শাসনকে সম্মান দিতে হবে। এই অঙ্গীকার যত সুদৃঢ় হবে, ততই মঙ্গল হবে দেশ ও মানুষের।
----------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৪ প্রকাশিত
©somewhere in net ltd.