নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুইজন বরেণ্য মানুষের চিরবিদায়

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৫৩

দুইজন বরেণ্য মানুষের চিরবিদায়
ফকির ইলিয়াস
============================================

অবিচ্যুয়ারি লিখতে আমার হাত কাঁপে। চিরবিদায় শব্দটি শুনলেই বুক কেঁপে ওঠে। তারপরও আমাদের তা মানতে হয়। দিতে হয় বিদায়। দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধূরী চলে গেলেন। বড় মর্মান্তিক তার এ চিরবিদায়। তিনি বাস চাপায় নিহত হয়েছেন। পাবলিক বাস থেকে পড়ে গিয়ে নিহত হন এ বরেণ্য মানুষটি। বাংলাদেশের সে কজন সাংবাদিক আমার কাছে নমস্য- এর মাঝে তিনি ছিলেন একজন। আমরা একই বিভাগ থেকে এসেছি। সিলেটের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে দেখেছি, কথা বলেছি কাছে থেকে। একজন মহান মানুষের যা গুণ থাকা দরকার, সবই তার মাঝে ছিল। তার মৃত্যু আমাকে কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি করেছে। তিনি টিভির একটি টকশোতে অংশ নেয়র জন্য যাচ্ছিলেন। ঐ অনুষ্ঠানটি যারা হোস্টিং করেন তারা নিশ্চয়ই কর্পোরেট ব্যবসায়ী। যারা স্পন্সর করেন নিশ্চয়ই তাদের মুনাফার বিজ্ঞাপন যায় অনুষ্ঠান বিরতিতে। তাহলে একজন বরেণ্য সাংবাদিককে কেন পদব্রজে ঐ টকশোতে যেতে হবে? কেন তারা কোম্পানির, টিভির গাড়ি পাঠিয়ে ঐ বরেণ্য মানুষটিকে অনুষ্ঠানে নেয়া-আসা করে না? অনেকে বলেন বাংলাদেশ এগিয়েছে। কোথায় এগিয়েছে? কালো টাকায়? দুর্নীতিতে? দখলে?

বিশিষ্ট সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধূরীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘জগলুল আহমেদ চৌধূরীর মৃত্যুর কারণ নির্ধারণ, দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিতকরণ ও প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা প্রণয়নে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিনদিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’ বিআরটিএ পরিচালক (প্রশাসন) মশিউর রহমানকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ট্রাফিক পুলিশের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ, ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নগর পরিকল্পনাবিদ নাহমাদুল হাসান ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের (উত্তর) ট্রাফিক কর্মকর্তা খন্দকার মাহবুবুর রহমান। এটা খুবই বেদনাদায়ক, একটি রাষ্ট্র তার কৃতী সন্তানদের মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যর্থ হচ্ছে এ সমাজ। আমরা সংবাদে পড়েছি, জগ্লুল আহ্মেদ চৌধূরীকে প্রথমে যে ক্লিনিকে নেয়া হয়েছিল, সে ক্লিনিক তার উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা দেয়নি।

কেন দেয়নি? খবর বেরিয়েছে, দুর্ঘটনার পর সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধূরীর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে মোহনা হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা হাসপাতালটি ঘুরে দেখে এর কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে প্রতিনিধিদলটি হাসপাতালের কার্যক্রম দেখে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ইমরুল কায়েস নামের এক যুবক জানিয়েছিলেন, তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পান্থপথ মোড়ে মোহনা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাকে চিকিৎসা দিতে অপারগতা জানানো হয়। পরে তাকে আরেকটি হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবসার নামে কি চলছে তা কারো অজানা নয়। অনেকেই বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেশ এগিয়েছে। হ্যাঁ, এগুবারই কথা। কারণ বিশ্ব থেমে নেই। তবে কথা হচ্ছে কিছু কিছু সেক্টরে যেভাবে সততা নিয়ে বর্তমান দুনিয়া অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ সেভাবে পারছে না। আর পারছে না শুধুমাত্র দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। বিশ্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রসরতা এ সময়ে একটি বহুল আলোচিত ঘটনা। প্রাণের সন্ধানে দিনরাত গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। আর এর বিপরীতে বাংলাদেশে হচ্ছেটা কি?

কিছুদিন আগে একটি টিভিতে বাংলাদেশের কিছু হাসপাতাল, ক্লিনিক নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদক দেখলাম। সে প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, হাসপাতালের সুইপার, ওয়ার্ডবয়রা অপারেশন করে ফেলে। ক্লিনিকে ডাক্তার সেজে বসে আছে ভুয়া চিকিৎসক। যার চিকিৎসা শাস্ত্রে আদৌ কোনো লেখাপড়া নেই। সবচেয়ে বেদনাদায়ক কথা হচ্ছে এসব সামাজিক শত্রুরা প্রশাসনের সহযোগিতা পায়। ভাগ-বাটোয়ারা দেয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে।

অন্যদিকে ক্লিনিক, ওষুধ ব্যবসার নামে দেশে চলছে চরম নৈরাজ্য। হেকিমি, কবিরাজি প্রথার কিছু অসদুপায়কে অনুসরণ করে আধুনিক চিকিৎসার নামে লুটপাটকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কিছু ব্যবসায়ীরা। কিছু ডাক্তারদের সহযোগিতায় তারা চালিয়ে যাচ্ছেন নানা অপকর্ম। অপকর্ম এ জন্য বলছি, ঢাকার বেশ কয়েকটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বিশেষ করে কিডনি বেচাকেনার অভিযোগ ইতোমধ্যে পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে এবং হচ্ছে। তাছাড়া বিদেশে শিশু এবং নারী পাচারেও কোনো কোনো ক্লিনিকের পরোক্ষ হাত আছে বলেও শোনা যাচ্ছে। কত জঘন্য মানসিকতা হলে সেবা প্রদানের নামে এমন কর্মকাণ্ড চালানো সম্ভব! সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর অধিকাংশই এখন দুর্বৃত্তদের দুর্গে পরিণত হয়েছে। গ্রামীণ জনপদ থেকে ছুটে আসা মানুষের কাছ থেকে এরা পদে পদে আদায় করছে টাকা। রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে চিকিৎসা পর্যন্ত উৎকোচ দিতে দিতে একজন রোগী মানসিকভাবে চরম বিপন্ন হয়ে পড়েন। ভেঙে যায় তার মনোবল। সামান্যতম মানবিকতার দেখাও রোগীরা সেখানে পান না। এ প্রসঙ্গে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার একটি খণ্ডচিত্র তুলে ধরতে চাই। সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৯৯৪ সালের সেই দিনগুলোর কথা আমার মানসপটে জাগ্রত থাকবে সারা জীবন। বিভিন্ন প্রতিক‚লতাকে অনুক‚লে নিয়ে আসতে মাথার ঘাম পায়ে ঝরেছিল আমার। আমার সন্তান জন্ম নেয়ার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পালা। আমার নবজাত সন্তানের জন্ম সনদ অর্থাৎ বার্থ সার্টিফিকেট দরকার। প্রসূতি বিভাগের ডাক্তারের শরণাপন্ন হলাম। তিনি বললেন, এর জন্য সময় লাগবে। রেজিস্ট্রেশন বিভাগে গিয়ে যোগাযোগ করতে বললেন। সেখানে গেলাম। এ জন্য নির্দিষ্ট কারো দায়িত্ব নেই। অমুক-তমুকের কাছে পাঠাতে থাকলেন আমাকে। হাসপাতালের বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে কয়েক ঘণ্টা ঘুরে ভীষণ বিরক্ত হয়ে পড়লাম আমি। কেউ হদিস দিতে পারছে না বার্থ সার্টিফিকেটটি আমি কিভাবে দ্রুত পেতে পারি। একজন মধ্যম শ্রেণির কর্মচারী এগিয়ে এসে ৫ হাজার টাকা দাবি করলেন। বললেন সব ইনফরমেশন দিয়ে যান। এক মাস পরে এসে বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে যাবেন। আমি বললাম, না বার্থ সার্টিফিকেট আমার আজই দরকার। ডিসচার্জ করার সঙ্গে সঙ্গে বার্থ সার্টিফিকেট নিয়েই আমার স্ত্রী হাসপাতাল ত্যাগ করবেন। কর্মচারীরা একে একে মুখ ভেংচিয়ে আমার সামনে থেকে সরে গেলেন।

আমি নিরুপায় হয়ে হাসপাতালের মহাপরিচালকের দপ্তরে গিয়ে ঢুকলাম। কর্নেল ফাহিম আহমদ চৌধুরী। অত্যন্ত কর্মঠ, নিষ্ঠাবান এবং নীতিবান মানুষ। আমার পরিচয় পেয়ে আমাকে সম্ভাষণ জানালেন। তাকে আমার সমস্যার কথা বললাম। বললেন, ‘আমাদের তো ছাপা করা কোনো নির্দিষ্ট বার্থ সার্টিফিকেট নেই। এটা সিলেট অঞ্চল। প্রবাসীর সংখ্যা লাখ লাখ। প্রবাসীরা সবাই তাদের সন্তানদের বার্থ সার্টিফিকেট চান। এ জন্য আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বারবার চিঠি লিখেছি। বাট দে ডোন্ট কেয়ার এবাউট ইট। হোয়াট ক্যান আই ডু এলোউন?’ বুঝলাম ব্যবস্থার প্রতি তিনিও খুব ক্ষিপ্ত। আমাকে বললেন, আপনি বাইরে থেকে গিয়ে বার্থ সার্টিফিকেট কম্পোজ করিয়ে আনুন। আমি সব ব্যবস্থা করে দেব। তিনি নমুনা লিখে দিলেন। আমি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা তৈরি করে এনে হাজির করলাম। তিনি প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর এবং সিলমোহরের ব্যবস্থা করলেন। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্ত্রী-সন্তান এবং বার্থ সার্টিফিকেট নিয়েই বাড়িতে ফিরলাম।

প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার এই যে চরম দুরবস্থা- তার সত্যতা, বারবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী পরিবর্তনও প্রমাণ করে। কিন্তু কোনো উন্নয়ন নেই। শুধুই টাকার খেলা। ভালো চিকিৎসা নেই। বড় বড় নেতা, ব্যবসায়ী আর কোটিপতিরা সর্দি-কাশি হলেই ছুটে যান সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, ভারতে। কখনো লন্ডন-নিউইয়র্কে। কিন্তু দেশের খেটেখাওয়া মানুষগুলো কোথায় যাবে? মানুষের আর্তনাদ কি সামান্যতমও কর্ণকুহরে পৌঁছবে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের?

॥ দুই.॥
আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন বরেণ্য শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। তার সঙ্গে আমার একবারই দেখা হয়েছিল ঢাকায়। আড্ডা দিচ্ছিলাম। ছিলেন কবি শামসুর রাহমান। কথা হচ্ছিল ‘কবিতায় মৃত্যু উপমা’ বিষয়টি নিয়ে। শামসুর রাহমান বললেন- আমি তো মৃত্যু চাই না- ইলিয়াস! বেঁচে থাকতে চাই। মৃত্যু ভাবনা নিয়ে যোগ করলেন কাইয়ুম চৌধুরী। বললেন- মৃত্যু মানে হঠাৎ চলে যাওয়া! একটা পাখি আকাশে উড়ে যাবে! আমি বললাম- আপনার চিত্রকর্ম তো জীবনবাদী। সেখানে গোপনে আপনি কি প্রয়াণের ছবি লুকিয়ে রাখেন? কাইয়ুম চৌধুরী মুচকি হাসলেন। বললেন- কিন্তু বিদায় তো অস্বীকার করতে পারব না, হে! হ্যাঁ, সেভাবে ‘আমার আরো একটা কথা বলার রয়েছে’- বলেই উড়ে গেল কাইয়ুম চৌধুরীর প্রাণপাখি। চিরবিদায় নিলেন তিনি। তিনি বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের ঐ মঞ্চেই ঢলে পড়লেন। একটা বিষয় আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, অনুষ্ঠান কিন্তু ১ মিনিট নীরবতা পালন করেই আবার শুরু হলো। হ্যাঁ শ্রদ্ধেয় ড. আনিসুজ্জামান বলেছেন, জীবন চলমান। কাইয়ুম চৌধুরী সঙ্গীত ভালোবাসতেন। আমরা তাকেই স্মরণ করছি এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা মনে পড়ছে। গেল ১৫ আগস্ট নিউইয়র্কে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ঐ দিন ছিল জাতীয় শোক দিবস। জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন। এ নিয়ে নিউইয়র্কে মৃদু প্রতিবাদও হয় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

আয়োজকদের একজন চাল দিলেন অন্যভাবে। তিনি বললেন, জাতির জনক সঙ্গীত ভালোবাসতেন। আমরা গান-বাজনার মধ্য দিয়ে জাতির জনককে স্মরণ করব। তিনি উদাহরণ দিলেন একুশে, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসেও তো গান-বাজনা হয়। কথা হচ্ছে, বিষয়টিকে কিভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কাইয়ুম চৌধুরী ঢলে পড়ার পর ঐ দিনের জন্য তাৎক্ষণিক অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়া যেত। পরদিন আবার শুরু করা যেত। শোকের একটা নির্মম ছায়া থাকে। যে যায়- সে দীর্ঘ যায়। বাকিদের বেঁচে থাকতে হয়। কিন্তু তাই বলে কি শোক সহজে ভোলা যায়? আমাদের সমাজে একটা সময় হয়তো একদিন আসবে, সবকিছুকেই মানুষ মুনাফা ও ক্ষতির বিবেচনায় বিচার করবে। আবেগ মানুষকে শ্রদ্ধাশীল করে তোলে। বাস্তববাদিতায় আবেগের মূল্য নেই ঠিকই, তারপরও মানুষ কাঁদে, বিমূঢ় হয়, বাকরুদ্ধ হয়- এগুলোও অমোঘ সত্য।

আগামী কোনো সময়ে হয়তো, সবকিছুকেই ‘অমুক ভালোবাসতেন- তাই আমরা করছি’ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে। প্রাযুক্তিক জীবন মানুষকে এমনিতেই মহাব্যস্ত করে তুলছে। তার ওপর যদি মানবিক শ্রদ্ধাবোধটুকুও বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে সমাজ কোন বন্ধন নিয়ে সামনে এগোবে? আজকের আধুনিক মানুষ বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই পথ চলবেন, আশা রাখি।

জাতি তার কৃতী ব্যক্তিত্বদের হারাচ্ছে। চলে গেলেন জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। এ শোক সয়ে ওঠার আগেই চলে গেলেন জগলুল আহমেদ চৌধূরী। গেলেন কাইয়ুম চৌধুরী। এরকম মানুষ গড়ে উঠতে কয়েক যুগ লেগে যায়। আমাদের শিল্প-সাহিত্য-সাংবাদিকতা-সংস্কৃতির অঙ্গন থেকে একে একে খসে পড়ছে নক্ষত্র। এ স্থান পূরণ হচ্ছে কি? হ্যাঁ- সূচক জবাব পেতে বড় বেগ পেতে হচ্ছে। আমি- জাতিসত্তার আলোকবর্তিকা, বরেণ্য ব্যক্তিদের আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি।
----------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪ প্রকাশিত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.