নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের বিজয়, আমাদের প্রজ্ঞার পথ

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৯



আমাদের বিজয়, আমাদের প্রজ্ঞার পথ
ফকির ইলিয়াস
================================================
বাঙালির বিজয়ের মাসে একটি চমৎকার আনন্দ সংবাদ দিয়ে লেখাটি শুরু করি। যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ‘ফরেন পলিসি’-তে প্রকাশিত বিশ্বের নেতৃস্থানীয় ১০০ চিন্তাবিদের এক তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জলবায়ু পরবির্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকার জন্য এই তালিকায় ‘ডিসিশন মেকার্স’ ক্যাটাগরিতে বিশ্বের শীর্ষ ১৩ বুদ্ধিজীবীর মধ্যে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
একই ক্যাটাগরিতে এ বছর শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেল, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং মরিশাসের প্রেসিডেন্ট আমিনাহ গুরিব-ফাকিম।
ফরেন পলিসি প্রতি বছর ‘১০০ লিডিং গ্লোবাল থিংকার্স’ শিরোনামে এই তালিকা প্রকাশ করে। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই তালিকা ফরেন পলিসির সর্বাধিক পঠিত ফিচারগুলোর মধ্যে থাকে। একজন বাঙালি নেতার এই স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে আলোকিত করছে আমাদের প্রজন্মকে। হ্যাঁ, শেখ হাসিনা কাজ করছেন। এই স্বীকৃতি তারই প্রমাণ।
ডিসেম্বর মাসটি আমার অত্যন্ত প্রিয় মাস। এর কয়েকটি কারণ আছে। প্রথমত এটি বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। দ্বিতীয়ত এটি আমার জন্মমাস। তৃতীয়ত এই মাসের বাংলাদেশি নিসর্গ আমার কাছে ছিল খুবই প্রিয়। ছিল বলছি এজন্য, বাংলাদেশের ডিসেম্বর আমার দেখা হয়নি দীর্ঘদিন। শীত আসছে। ঝরছে কুয়াশা। পথিক সড়ক বাদ দিয়ে ‘কোনোকুনি’ পথে পার হচ্ছে মাঠের পর মাঠ। ফসলের আনন্দ আর অগ্রহায়ণ-পৌষের হাওয়া আমাকে দিতো এক অনাবিল শান্তি। শীতের সবজি আর ফলমূলগুলো আমাকে টানে বড় মমতায়। প্রবাসে থেকে বাংলাদেশকে আমি খুব মিস করি। মিস করেন আমার মতো লাখো অভিবাসী। কিন্তু আমাদের আগামী প্রজন্ম কী এভাবে মিস করবে? না, করবে না। কারণ, তারা ওই দেশে জন্মগ্রহণ করেনি। মুখে যা-ই বলা হোক না কেন, বাংলাদেশ কী তার মৌলিক কাঠামোর ওপর দাঁড়াতে পেরেছে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
আমরা জানি যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বের প্রধান শক্তি। তারা কাজে-অকাজে যে কোনো দেশে নাক গলায়।আমাদের বিজয়, আমাদের প্রজ্ঞার পথ
বাংলাদেশ ইস্যুতে বিভিন্ন সময়ে আমিও কথা বলেছি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়াশিংটন শাখার সঙ্গে। মুখপাত্ররা বারবার বলেছেন, বাংলাদেশের বিষয়টি সে দেশের মানুষকেই সমাধান করতে হবে। একই কথা এবারে ঢাকায় বলে এসেছেন নিশা দেশাই বিসওয়াল। আমরা জানি মার্কিন প্রশাসন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। আবার এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশকে ‘উদার গণতান্ত্রিক মুসলিম দেশ’ -এর তকমা দিয়েছিল। প্রশ্ন এসেছিল- এর সংজ্ঞা কী?
আমাদের মনে আছে, ’৭৫-এর নৃশংস হত্যাকা-ের পরই বাংলাদেশে জেঁকে বসে রাজাকাররা। শাহ আজিজ, ড. আলীম আল রাজী, খান এ সবুর, মশিউর রহমান যাদু মিয়ারা পাখনা মেলে। তৎকালীন খুনি স্বৈরশাসক জে. জিয়ার সামনে একটাই আকাক্সক্ষা ছিল, পরাজিত দালাল শক্তিকে একত্র করে রাষ্ট্রক্ষমতার স্থায়ী ইজারা নেয়া। এবং সেটাই করেছিলেন তিনি। এরপর থেকেই ধর্মকে ক্ষমতায় থাকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের প্রবণতা বেড়ে যেতে থাকে বাংলাদেশে। আরেক স্বৈরশাসক হু মু এরশাদ ক্ষমতায় এসে সেই একই কায়দা অনুসরণ করেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আব্দুল আলীমের খুনি, কুমিল্লার দাগি আলবদর মাওলানা মান্নানকে ধর্মমন্ত্রী করার মধ্য দিয়ে দেশে গড়ে তোলা হয় একটি নেটওয়ার্ক। জমিয়াতুল মোদাররেসীন নাম দিয়ে দেশের মাদরাসাগুলোতে একটা বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা হয়, এই ধর্মীয় শক্তিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য। রাষ্ট্রের সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে লিজ দিয়ে গড়ে তোলা হয় ইনকিলাব ভবন। এই ভবন থেকে পরবর্তী সময়ে পরোক্ষ মদদ পেতে থাকে মৌলবাদী, জঙ্গিবাদী, জামায়াতী শক্তিরাও।
এরশাদই পাস করেন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংশোধনী। এভাবেই দেশে লাই পেতে থাকে ধর্মীয় উন্মাদনার নামে এক ধরনের পেশিবাদ। আর এর নিয়ামক হয়ে ওঠে একাত্তরে পরাজিত সেই চক্রটিÑযারা ঘাপটি মেরে বসেছিল। ২০০১-এর নির্বাচনে রাজাকারÑজাতীয়তাবাদী চারদলীয় জোট জিতে আসার পরই যুক্ত হয় এই তকমাটিÑ উদার গণতান্ত্রিক মুসলিম দেশ। প্রশ্ন হচ্ছে উদারের সংজ্ঞা কী? কাকে বলে উদারতা? মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অধিকাংশই হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। আর সেগুলো মূলত মুসলিম ডোমিনেটেড কিংডমস। সেখানে অন্য দেশের মানুষের সঙ্গে আচরণ, প্রভু-ভৃত্যের মতো। অনেকটা সেই আদলেই গণতন্ত্রের ঝা-া উড়াবার
খায়েশে এই মহলটি ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশকে নতুন অভিধা দিতে।
আমরা জানি, মহান মুক্তিযুদ্ধ যখন সংঘটিত হয় তখন সেই সংগ্রামে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, গারো, হাজং, মনিপুরী, মারমা সব মানুষের আন্তরিক অংশগ্রহণ ছিল। তখন কেউ মুসলিম ডোমিনেটেড কান্ট্রি বলেনি। যারা বলেছিল, তারা ছিল পাকি-দালাল। খান সেনাদের দোসর। লাখো শহীদের রক্তে গড়া সেই বাংলাদেশ এখন নব্য ডোমিনেটিং ইজমের লীলাভূমি। তাহলে কী এই দেশও প্রভু-ভৃত্য প্রথা চালু করে মানবতাকেই ঘায়েল করতে চায়?
আমরা ভুলে যাইনি, এই উদারপন্থী (!) বাংলাদেশে ভেঙে দিয়েছে লালনের ভাস্কর্য। তারা ভেঙেছে বলাকা ভাস্কর্য। এরপর তারা মুক্তমত প্রকাশের বিরুদ্ধে আইন করার হুঙ্কার দিয়েছে। তারা বলেছে, এই দেশে কোনো ভাস্কর্যই তারা থাকতে দেবে না। এটাই কী উদার গণতান্ত্রিক মুসলিম দেশের সংজ্ঞা? না, এই দেশে কারো ডোমিনেটিং করার মানসিকতা চলতে পারে না। এই দেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনায়, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। এই দেশে মানুষ কারো ডোমিনেটিং কিংডম গড়ে তোলার চেষ্টা মেনে নেবে না। বাংলাদেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক চায়। কোনো প্রভু চায় না। আমি মনে করি, কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক খারাপ হবে না। হওয়ারও নয়। আমরা দেখেছি, ২০১৪-এর বিজয় দিবসে বাংলাদেশের ইতিহাসে যোগ হয়েছে আরেকটি অর্জন। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে উদ্বোধন হয়েছে ‘বাংলাদেশ লাউঞ্জ’-এর। বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধি ও সুধীজনদের উপস্থিতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের পক্ষে উপমহাসচিব জ্যান এলিয়াসন বাংলাদেশ লাউঞ্জের উদ্বোধন করেছিলেন। বিশ্বে এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের সেই সময়ের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এ কে এ মোমেন জানিয়েছিলেন, সদর দফতরের মূল ভবনের দ্বিতীয়তলায় ‘বাংলাদেশ লাউঞ্জ’ হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ‘লাউঞ্জে থাকবে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক নানাছবি, সাজসরঞ্জাম। মাতৃভাষার জন্য অকাতরে প্রাণ বিসর্জনসহ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্পষ্ট প্রকাশ ঘটবে লাউঞ্জের প্রতিটি পরতে।’ রাষ্ট্রদূত জানান, লাউঞ্জের আয়তন খুব বেশি না হলেও জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভের ৪০ বছর পর নিজেদের পৃথক একটি জায়গা পাওয়ার আনন্দ অনেক। আমরা জানি মহান মুক্তিযুদ্ধে, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশায় কোনো কৃত্রিমতা ছিল না। তারা রক্ত দিয়েই একটি মানচিত্র পাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। তাই প্রাণের বলিদান, আত্মাহুতি কোনো মুখ্য বিষয় ছিল না। সে সময় রাজনীতিকরাও স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন একটি স্বাধীন ভূমির। একটি বলিয়ান জাতিসত্তার। মানুষ রাজনীতিকদের কথায় আস্থা রেখেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধে। সে যুদ্ধে তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। এরপরের দায়িত্বটুকু ছিল জনগণ-রাজনীতিকের সমন্বয় সাধনের। যে কাজটি দ্রুত করতে পারেননি স্বাধীনতা-পরবর্তী রাষ্ট্র শাসকরা। করতে পারলে তাৎক্ষণিক বহুধা বিভক্তির জন্ম হতো না। মানুষও বিভ্রান্ত হতো না। একটি স্থিতিশীলতার পথ দেখতো জাতি।
লেখাটির শেষপর্বে এসে আমি একটি বিষয় তুলে ধরতে চাই। তা হলো, একাত্তরের আলবদর নেতা মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি মতিউর রহমান নিজামীর আইনজীবী বলেছেনÑ‘এগুলো যদি (নিজামী) করেও থাকেন, তবু বয়সের কথা চিন্তা করে তাকে মৃত্যুদ- থেকে অব্যাহতি দেয়া উচিত’। এই কথা পরে অস্বীকার করেছেন নিজামীর আইনজীবী। তা নিয়ে বাকবিত-া চলছে। আমাদের মনে আছে, আরেক আলবদর নেতা দোষ স্বীকার করেই মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন। এটাই জাগতিক সত্য। একসময় বিবেকই তাড়না দেয়। দোষী দোষ স্বীকারে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ যে চেতনা নিয়ে বিজয়ী হয়েছিল- সেটাই বাঙালির প্রজ্ঞার পথ। এই পথেই প্রজন্মকে এগোতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সেই শাণিত প্রজন্ম যে রক্তঢেউ বহন করছে, তা মুক্তিপাগল একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধার। মানুষকে তা ভাবতে হবে। এসব অর্জন বাংলাদেশকে, বাঙালি জাতিকে শাণিত করছে। তা আজকের প্রজন্মকে জানাতে হবে। প্রবাসে আমরা যারা আছি, তাদের তুলে ধরতে হবে আমাদের অর্জনের কড়চা। মানুষ যত বেশি শিক্ষিত হবে, ততই দূর হবে আঁধার।
-------------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক আজকের পত্রিকা ॥ ঢাকা ॥ ০৫ ডিসেম্বর,২০১৫ শনিবার

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.