![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
দেশে-বিদেশে প্রতিক্রিয়াশীলদের শকুনচক্ষু
ফকির ইলিয়াস
========================================
নিউইয়র্ক নগরীতে বেশ কিছু ‘শহরকুতুব’ থাকেন। তারা প্রায়ই নানা ধরনের উদ্ভট তথ্য দিয়ে বেড়ান। এরা মনে করেন- বাংলাদেশটি এগিয়ে যাক, তবে এতে রাজাকারদেরও ‘স্বাধীনতা’ থাকুক। তারা মনে করেন- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো বিষয় না! দেশে ‘গণতন্ত্র’ আসুক। এবং সে জন্য একাত্তর বিরোধীদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা গেলেও ক্ষতি নেই।
নিউইয়র্কে সদ্য কিছু নতুন ধনপতি নাজেল হয়েছে। এরা স্পন্সর করে বিভিন্ন ‘মনিষী’র মগজ কিনে নিচ্ছে। সম্প্রতি নিউইয়র্কে ‘একাত্তরের কণ্ঠযোদ্ধা’দের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান হয়ে গেল। সেই অনুষ্ঠানে ঢাকার সাবেক একজন মেয়র উপস্থিত ছিলেন- যার দল ও সরকার এই বাংলাদেশে আলবদর রাজাকারদের মন্ত্রী করেছিল। যারা এই দেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিল। অথচ এই অনুষ্ঠানের যারা অনুঘটক ছিলেন- এরা নিজেদের প্রগতিবাদী দাবি করেন। তাহলে কি স্পন্সরের জন্য তারা বিক্রি হয়ে যাবেন অপশক্তির কাছে? হ্যাঁ- সেটাই হচ্ছে।
আমাদের জানা আছে, বাংলাদেশের একটি তরুণ শ্রেণিকে চিকিৎসা, চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদির প্রলোভন দেখিয়ে একাত্তরের পরাজিত রাজাকার শক্তি কিনে নিয়েছে। এদের বলা হয়েছে- পেটে ভাত না থাকলে ‘গণতন্ত্র’ দিয়ে কি হবে! ব্রেনওয়াশ করেই গড়ে তোলা হয়েছে জঙ্গিবাদী নেটওয়ার্ক। ওরা যে বসে নেই- তা আমরা আবারো দেখছি। ঢাকায় পাকিস্তান হাই কমিশনের এক ক‚টনীতিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে তৎপর জঙ্গিদের সঙ্গে যোগসাজশের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা পুলিশ কয়েকজন সন্দেহভাজন জেএমবি সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই তথ্য পায়। আটক সন্দেহভাজনদের একজন এই তথ্য দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। পাকিস্তান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) পদে কর্মরত ওই কর্মকর্তার নাম ফারিনা আরশাদ।
রাজধানীর উত্তরা ও খিলগাঁও এলাকা থেকে ইদ্রিস শেখ নামের এক ব্যক্তিসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, আটকদের মধ্যে ইদ্রিস ও মকবুলের কাছে পাকিস্তানি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে তাদের। মনিরুল জানিয়েছেন, ‘ইদ্রিসের কাছে একটি ‘স্পাই মোবাইল’ পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে তিনি দেশের বাইরে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং তথ্য আদান-প্রদান করতেন। একটি হাইকমিশনের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গেও তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। ’মহানগর হাকিম আব্দুল্লাহ আল মাসুদের কাছে ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিতে ইদ্রিস ওই নারী কর্মকর্তাকে পাকিস্তান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনা আরশাদ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
এই সংবাদ বের হওয়ার পর প্রতিবাদ করেছে ঢাকার পাকিস্তানি দূতাবাস। বাংলাদেশে কর্মরত নিজ দেশের এক ক‚টনীতিকের জঙ্গি ‘যোগসাজশের’ ‘ভিত্তিহীন’ খবরের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) দায়ী করেছে পাকিস্তান হাইকমিশন। ওই খবরটি ‘কাল্পনিক’ দাবি করে প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, ‘জানা গেছে, এই ‘কাহিনীটি’ গণমাধ্যমে ফাঁস করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। আর গণমাধ্যমের একটি অংশ যাচাই না করেই খবরটি ছাপিয়ে দিয়েছে। ম’দূতাবাস বলেছে- ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশে ঘটা সর্বশেষ ঘটনা হোক এটি। এই প্রত্যাশা করে পাকিস্তান হাইকমিশন বলেছে, একটি শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশই পাকিস্তানের শক্তি বাড়াতে পারে, অন্য যে কোনো কিছু তা ব্যাহত করবে। কি বলছে তারা? তারা যে গত কয়েকদিন আগে সাকা চৌধুরী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের পক্ষে কথা বলে বাংলাদেশের বিচার বিভাগকেই কটাক্ষ করেছে।
এই অধিকার তারা কোথায় পেয়েছিল? বাংলাদেশের কল্যাণ চায় না পাকিস্তান। তা বারবারই আমরা দেখছি। বর্তমান সময়ে তালেবান এবং আলকায়েদার চারণভূমি বলে পরিচিত ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্রটি চায় না বাংলাদেশে স্থিতিশীল অবস্থা চালু থাকুক। এর অন্যতম একটি কারণ আছে। আর কারণটি হচ্ছে তাদের এই মানসিকতা যে, ‘আমাদের শাসন থেকে মুক্তি পেয়ে তোমরা কি সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে? ’এই হীন মানসিকতা সিংহভাগ পাকিস্তানির মধ্যে। কথাটির অনুরণন আমরা এখনো শুনতে পাই। কয়েক বছর আগে একটি আড্ডায় পাকিস্তানি-আমেরিকান একজন শিক্ষকের কথা শুনে আমার স্পষ্টই মনে হয়, ওরা এখনো বাংলাদেশের সুখ দেখতে নারাজ। এই শিক্ষকের নাম শওকত আফসার। তিনি নিউইয়র্কে একটি কলেজে সমাজবিজ্ঞান পড়ান। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রসঙ্গ আসলে শেখ মুজিবকে দোষারোপ সিংহভাগ পাকিস্তানিই করে। সঙ্গে তারা যোগ করে জুলফিকার আলী ভুট্টোর নামও। মুজিব-ভুট্টো এই দুজনে ক্ষমতা ভোগ করার জন্যই ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্রটিকে ভাগ করেছিলেন- এমন একটি উষ্মা প্রকাশ করেই পাকিস্তানিরা আলোচনা শুরু করে। সত্তরের নির্বাচনের আগে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় অবস্থাটি কেমন ছিল? কেমন ছিল অখণ্ড পাকিস্তানের গতি-প্রকৃতি, রাজনীতির ভবিষ্যৎ? এই প্রশ্নটির উত্তর অনেকেই জানেন। ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের উত্তরসূরি জে. ইয়াহিয়া খান সামরিক জাঁতাকলই চালু রেখেছিলেন অখণ্ড পাকিস্তানে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো ইচ্ছেই এসব জান্তাদের ছিল না। ছিল না এ জন্য, কারণ ‘ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন হলেই সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ভোটের কাছে পাকিস্তানিরা হেরে যাবে, তা নতুন কোনো বিষয় ছিল না। তাই সামরিক নিষ্পেষণের মাধ্যমে বাঙালিকে দমিয়ে রাখা হোক সেটিই ছিল পাকিস্তানিদের সহজ পথ। জাতিগতভাবে পাকিস্তানিদের স্বরূপ-চরিত্র কেমন, তা একটু লক্ষ করলেই যে কোনো বাঙালি সহজভাবে বুঝতে পারবেন। তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে অন্যের সহানুভূতি নিতে চাইলেও পবিত্রতম ধর্ম পালনে নিজেরা সব সময়ই উদাসীন। সেই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যিনি ‘জিন্নাহ টুপি’ মাথায় রেখে রাজনীতি করতেন, তার ব্যক্তিগত জীবনাচার ছিল উ™£ান্ত কোনো পাশ্চাত্য নাগরিকের মতোই। বিভিন্ন ইতিহাসবেত্তারা বারবারই এ প্রসঙ্গে বলেছেন।
ফিরে আসি সেই পাকিস্তানি শিক্ষক শওকত আফসারের সঙ্গে আড্ডা প্রসঙ্গে। তিনি বললেন, ইসলামি মূল্যবোধ ধারণ করে অখণ্ড পাকিস্তান বহাল থাকলে আজ সে রাষ্ট্র ইউরোপের মতো সমৃদ্ধ হতে পারত! আমি বললাম, তাহলে আপনারা একাত্তরে বাঙালিদের ওপর নেতৃত্বটা ছেড়ে দিলেই পারতেন! তিনি এর মৃদু প্রতিবাদ করলেন। বললেন, পাকিস্তানিরা অন্য যে কোনো জাতির চেয়ে কর্মঠ জাতি। তারাই পারত অখণ্ড পাকিস্তানের নেতৃত্ব দিতে। আমি বললাম তাহলে তো আর গণতন্ত্র মানার পক্ষে আপনি সায় দিচ্ছেন না। তিনি বললেন, গণতন্ত্র তো ‘গরিব লোক’দের জন্য নয়। তাই আমাদের উচিত ছিল যোগ্যতার ভিত্তিতেই পাকিস্তানের নেতৃত্ব নির্ধারণ করা। আমি কিছুটা রাগত স্বরেই বললাম এটা তো গাদ্দারি ভাষা। উপস্থিত অন্যরা যোগ দিলেন আলোচনাটা থামিয়ে দিতে। আমিও কোনো গাদ্দার মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বাড়াতে রাজি হলাম না। ওদের এমন মানসিকতা নতুন নয়, এরা সব সময়ই কর্তৃত্ব নিজের হাতে রেখে ‘হাম ভি মুসলিম, তুম ভি মুসলিম’ এমন বুলি অনেক আওড়িয়েছে। এখনো আওড়াতে চায়। কিন্তু আদতে তারা বাংলাদেশের কোনো কল্যাণই চায় না মনে-প্রাণে। ভুলে গেলে চলবে না পাকিস্তান ও তার অনুসারী ধর্মের ধ্বজাধারীরা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল পঁচাত্তরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর। পাকিস্তানে বর্তমানে যে তালেবানি আগ্রাসন চলছে, তারা তা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চায়। এর জন্য তারা পাকিস্তানি তো বটেই এমনকি ভারতীয় মুসলিম জঙ্গি গ্রুপকে ব্যবহার করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছুদিন থেকেই পাকিস্তানি জঙ্গি গ্রুপের লোক বাংলাদেশে ধরা পড়ছে। শুধু তাই নয়, ঢাকার পাকিস্তানি দূতাবাস বাংলাদেশের ডানপন্থী মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সখ্য বজায় রেখেই চলেছে। এনজিওর নামেও তারা সাহায্যের প্রজেক্ট হাতে নিয়ে বিস্তৃত রেখেছে নানা কর্মকাণ্ড। যা সরকারের ঘনিষ্ঠভাবে খতিয়ে দেখা উচিত।
এটা বর্তমান বাংলাদেশের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যের কথা যে, এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী এখনো মানসে পাকিস্তানি তমদ্দুন লালন করেন। এখনো তারা বলে বেড়ান ভারতই বাংলাদেশের প্রধান শত্রু। প্রতিবেশী কোনো রাষ্ট্র কেন শত্রু হবে? এর স্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিয়েই তারা ‘ভারত নিয়ে নিল’ এমন জুজুর ভয় দেখাতে সব সময়ই তৎপর। অথচ এই ভারত মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছিল, বিষয়টি এসব বুদ্ধির ঢেঁকিরা বেমালুম চেপে যান। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, খাবার, কৃষ্টি, সভ্যতা, সামাজিকতার দিক দিয়েও ভারত রাষ্ট্র সত্তাই, বাংলাদেশ রাষ্ট্রসত্তার অনেক কাছাকাছি। বিষয়টি তারা তো চেপে যানই, বরং তাদের ক্ষোভ এতই বেশি যে আর কিছুদিন পর তারা যদি বাঙালি নারীদের শাড়ি আর পুরুষের পাঞ্জাবি-পায়জামা পরার ওপরও ফরমান জারি করেন তবুও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে কটাক্ষ করেছেন সেই সব খিস্তিখেউড় মার্কা বুদ্ধিজীবীরা। কারণ সেটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন। এরা পহেলা বৈশাখ পালনকেও হিন্দু সংস্কৃতির অংশ বলে ফতোয়া দিয়েছে। অথচ তাদের পেয়ারা তালেবানি রাষ্ট্র পাকিস্তানের বশ্যতা স্বীকারে এখনো কুণ্ঠাবোধ করে না। এসব বিষয় বর্তমান প্রজন্মকে খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। একাত্তরে যারা বাঙালি নারীকে ‘গনিমতের মাল’ বলে আখ্যায়িত করেছিল সেই সব হায়েনা এখনো বাংলাদেশে তৎপর। একাত্তরের ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রাক্কালে তারা গর্ত থেকে বেরিয়ে কচ্ছপের মতো উঁকি দিচ্ছে। তারা নানাভাবে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের পাঁয়তারা করছে। এটা অত্যন্ত স্পষ্ট, পাকিস্তান এখনো ওদের পরাজয় ভুলে যায়নি। এই বিষয়গুলো বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের নজরে রাখা উচিত। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মানেই, মহান মুক্তি সংগ্রামে গণহত্যার বিপক্ষে নৈতিক বিজয়। এই বিজয় বাঙালি জাতিকে অর্জন করতেই হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কাজটি সাহসিকতার সঙ্গেই করছেন। এজন্য তাকে সবার সাহায্য-সহযোগিতা করা দরকার। ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। থাকবে। এদের চিনতে হবে। জেনে রাখতে হবে ওদের মোটিভ- ওদের গন্তব্য। অর্থের কাছে আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী যদি বিক্রি হয়ে যান তবে আমাদের লজ্জা ঢাকার আর কোনো আশ্রয় থাকবে না।
---------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:০৮
মেহেদী হাসান শীষ বলেছেন: হুম