নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিতে চাইছে কারা?

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৬




ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিতে চাইছে কারা?
ফকির ইলিয়াস
=======================================
বিএনপি এখন বিষয়টি অস্বীকার করছে। কিন্তু মিথ্যা বলার সুযোগ আজকাল নেই। এখন সাংবাদিকরা ফোনেই ভিডিও করে রাখেন। তিরিশ লাখ শহীদ নিয়ে খালেদা জিয়া যা বলেছেন তার ভিডিও অনেকেই দেখেছে, তাহলে এখন মিথ্যা দিয়েই মিথ্যা ঢাকতে চাইছেন মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর? বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি নিয়মিত স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যেতেন। কুচকাওয়াজে সালাম নিতেন। দিবসগুলোতে তার বাণী পড়তো জাতি। তিনি বলতেন, ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের বিজয়, আমাদের স্বাধীনতা। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এই দেশের সংবিধান আছে। আছে রাজনৈতিক ইতিহাস। ওই ইতিহাস তিরিশ লাখ শহীদ আর দু’লাখ নারীর ইজ্জতের বিনিময়ে লেখা। খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন- একবারও এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তার দোসরদের কেউ কেউ তা নিয়ে আড়ালে আবডালে কথা বলেছেন। তিনি দূরে থেকেছেন। এখন তিনি সরাসরি ফ্রন্ট লাইনে চলে এসেছেন। বলেছেন, একাত্তরে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে! কিসের সেই বিতর্ক? কে করেছে বিতর্ক? একাত্তরের পরাজিত দালালরা ? রাজাকাররা? ওদের কথাও শুনতে হবে বিজয়ী বাঙালি প্রজন্মকে? খালেদা জিয়ার এই ‘বিতর্ক’ ফতোয়া বয়ানের পরপরই মাঠে নেমেছেন বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির আরেক নেতা বাবু গয়েশ্বর রায়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন- ১৪ ডিসেম্ব^র ১৯৭১ পর্যন্ত বুদ্ধিজীবীরা কেন দেশে ছিলেন? কেন তারা পাকিস্তানের বেতন ভাতা নিয়েছিলেন ? তারা ‘নির্বোধ’ ছিলেন বলেও

মন্তব্য করেছেন গয়েশ্বর রায়। এখানে একটি বিষয় খোলাসা হওয়া দরকার। একাত্তরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের লোকসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। এক কোটিরও বেশি শরণার্থী সেই সময়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সকলেই কি চলে যেতে পেরেছিলেন? না পারেন নি। একটি উদাহরণ দিই। কবি শামসুর রাহমান ভারতে যেতে পারেননি। তিনি বাংলাদেশেই থেকে গিয়েছিলেন। দৈনিক বাংলায় চাকরিও করেছেন।

তাতে দোষের কি ছিল ? শামসুর রাহমান ওই সময়ে কলকাতার ‘দেশ’ ম্যাগাজিনে কবিতা লিখতেনম ‘মজলুম আদিব’ নামে। যা পরে তার বই ‘বন্দী শিবির থেকে’-তে ছাপা হয়েছে স্বনামে। এরকম অনেক কবি, লেখক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ নানা পেশার মানুষ মাটির টানেই স্বদেশে থেকে গিয়েছিলেন। তা কি দোষের কিছু ছিল? না ছিল না। আর বেতন-ভাতা ? কেন তারা বেতন নেবেন না ? এই মাটি ছিল বাঙালিদের। এই রাষ্ট্রক্ষমতা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে বাঙালিদেরই পাওয়ার কথা ছিল। বাঙালিরা পায়নি- পাকিস্তানিদের গাদ্দারী আর বিশ্বাসঘাতকতার কারণে। সেই ইতিহাস সকলেরই জানা। প্রশ্ন হচ্ছে- তাহলে আজ বুদ্ধিজীবীদের ‘নির্বোধ বলার মতো ধৃষ্টতা গয়েশ্বর রায়ের মতো রাজনীতিকরা দেখাবেন কেন? কি মতলব তাদের? বাবু গয়েশ্বর রায় যা বলেছেন তা আরেকবার পড়া যাক। তিনি বলেছেন- ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা ঠিক আছে, করছেন ভাল হইছে। কিন্তু যারা পাকিস্তানের বেতন-ভাতা খাইসে শেষ দিন পর্যন্ত তারা নির্বোধের মতো মারা গেলো। আর আমাদের মতো নির্বোধরা তাদের শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে ফুল দেই প্রতি বছর। না গেলেও আবার পাপ হয়।’

গয়েশ্বর রায় বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, বিতর্ক আছে। উনি কমও বলেননি, বেশিও বলেননি। বলেছেন সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। এই বিতর্কের কথাটা কিন্তু পার্লামেন্টে উঠেছিল ১৯৯১ সালে। পার্লামেন্ট সদস্য প্রয়াত কর্নেল আকবর হোসেন প্রশ্নটা উত্থাপন করেছিলেন। ‘এরপরেই মিঃ রায় সাংবাদিকদের আহ্বান করেছেন জরিপ চালাতে।ইতিহাসের পাতা পাল্টে দিতে চাইছে কারা?
এক সাথে অনেকগুলো কথাই বলেছেন তিনি।

আমাদের মনে আছে, বিএনপি আজ যা বলছে বাংলাদেশে মৌলবাদী আলবদর রাজাকাররা তা অনেক আগে থেকেই বলে আসছে। এখানে আমি বিএনপির হাইকমান্ড বরবরে তিনটি প্রশ্ন রাখতে চাই। এক, বিএনপির কর্নেল (অবঃ) আকবর হোসেন যখন এই বিতর্ক তুলতে চেয়েছিলেন তখন সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থান কি ছিল? দুই, বিএনপি যদি তিরিশ লাখ শহীদের সংখ্যা অবিশ্বাসই করতো- তাহলে তারা নিজেরাই জরিপের উদ্যোগ সে সময়ে নেয়নি কেন? তিন, বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রপ্রধান যে বিশ্বাস নিয়ে শপথ গ্রহণ করে ক্ষমতায় গিয়েছিলেন- তিনি যদি সেই বিশ্বাস থেকে সরে এসে রাষ্ট্রের মানুষকে মিথ্যা ধুয়া তুলে প্রতারিত করতে চান, তাহলে তার রাজনৈতিক ও সামাজিক বিচার কি হওয়া উচিত? বাংলাদেশে বিএনপি চোখে রাজনৈতিক সর্ষেফুল দেখছে। তার অর্থ এই নয় তারা জাতিকে বিভ্রান্ত করবে। তার অর্থ এই নয় তারা জাতির মহান শহীদদের অবমাননা করবে। বুদ্ধিজীবী হত্যা বাঙালি জাতিকে একশ বছর পিছিয়ে দিয়েছিল। বাংলাপিডিয়া আমাদের জানাচ্ছে, ৯৯১ জন শিক্ষাবিদকে ওই সময়ে হত্যা করা হয়। কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চিকিৎসক কেউই বাদ যাননি ঐ তালিকা থেকে। এ চক্রান্তের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল যুদ্ধের পর উদ্ধার করা রাও ফরমান আলীর ডায়েরি থেকে। রাজাকার, আলবদরদের সাহায্য নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে মার্কিন দলিলেও এ চক্রান্তের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। এসব কোনো তথ্যই আজ খালেদা-গয়েশ্বর গংদের কাছে বিবেচ্য

বিষয় নয়। কেন নয় ? ২০১৫-এর জানুয়ারি-মার্চের কথা পাঠকের মনে আছে? কি করেনি বিএনপি-জামায়াতি মৌলবাদী জোট! জ্বালাও-পোড়াও-এর খতিয়ানের হিসেব এখনও মিলাতে পারেনি বাংলাদেশ। তারপরও ওদের শিক্ষা হয়নি ? তাদের কি বুঝতে বাকি- এদেশ মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের।র এক কোটি তরুণ প্রজন্ম ভোট দিয়েই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জোটকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসিয়েছিল। আজ গয়েশ্বর রায়রা বলছেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, ভালো হয়ছে।

আমাদের মনে আছে এই দাবি ১৯৯২ সালেই জানিয়েছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। ওই সময়েই ঘাতক শিরোমণি গোলাম আজমকে বাংলাদেশে দায়ী করা হয়। আর ক্ষমতায় ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার আসল রূপ বেরিয়ে আসছে তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। তিনি ঘাপটি মেরে বসেছিলেন। এখন ফণা মেলে বেরিয়ে এসেছেন। গর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে তার সাঙ্গপাঙ্গরাও। বিএনপি নিজেদের একজন মুক্তিযোদ্ধা-সেক্টর কমান্ডারের দল বলে দাবি করে। সেই জিয়াউর রহমান কি কখনও ৩০ লাখ শহীদ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন ? কোনো প্রমাণ আছে ? না নেই। আজ তা নিয়ে জরিপ-গবেষণার কথা বলছেন, তারা কার্যত জিয়ার নীতি থেকেই সরে আসছেন। বিষয়টি বিএনপির নবিসদের ভেবে দেখা দরকার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গোটা বিশ্বের আর্কাইভে অনেক তথ্য সংরক্ষিত আছে। গলে সার্চ দিয়ে তা দেখতে পারে এই প্রজন্ম। বিষয়টি বিশ্বাস এবং বিশ্বাসের। যারা বিশ্বাস করবে না, যারা কোনো যুক্তি মানবে না, যারা কোনো ইতিহাস সাক্ষী মানবে না- তাদের কে বুঝাবে ? কীভাবে বুঝাবে? আসল বিষয়টি হচ্ছে ক্ষমতার মোহ। বেগম খালেদা জিয়া ও তার মৌলবাদী বন্ধুরা জেনে গেছে, ক্ষমতা থেকে তাদের আরও বহু বছর দূরে থাকতে হতে পারে। তাই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করলেও এখন পৌরসভা নির্বাচনে তারা লড়ছেন সদলবলেই। এটাই হওয়া উচিত ছিল। এটা না করে বিএনপি ভুল করেছে। তাদের এই ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে। এ জন্য দেশবাসী তো দুর্ভোগ পোহাতে পারে না। এ জন্যতো দেশবাসীকে মিথ্যা ইতিহাস শুনিয়ে প্রতারিত করা উচিত নয়।

গণহত্যা অস্বীকার করা রাজনৈতিক অপরাধ। ইউরোপে ‘ল অ্যাগেইনস্ট ডিনায়াল অব হলোকাস্ট’-এর কথা আমরা অনেক বিজ্ঞজনের কাছেই জেনেছি। বাংলাদেশে এই দাবি উঠেছে। একটা কথা আছে অর্ধশিক্ষিতরা অশিক্ষিতের চেয়ে ভয়ংকর। আজকের বাংলাদেশে এমন ভয়ানক কিছু চরিত্রের আবির্ভাব হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। ফেসবুক, ব্লগ, ওয়েবম্যাগ, টুইটারের বদৌলতে নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য-ছবি ছড়ানো হচ্ছে যত্রতত্র। এটা বাঙালি জাতির জন্য ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধি। রাজনৈতিক বিষফোঁড়া তো বটেই।

তিরিশ লাখকে অস্বীকার করা মানে গোটা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেই অস্বীকার করা। সেই কাজটি করার মাধ্যমে বিএনপি তাদের তরীর পাটাতনে শেষ পেরেকটি বিদ্ধ করছে। আত্মঘাতী এসব বচন উন্মোচন করছে বিএনপির মূল মুখোশ। যে মুখোশের রাজনীতির প্রবক্তা জিয়া বলেছিলেন- আই ইউল মেক পলিটিক্স ডিফিকাল্ট ফর দ্যা পলিটিশিয়ানস। হ্যাঁ, আমরা আইন চাই। আমরা শহীদের পবিত্র রক্তের সুরক্ষা চাই। এজন্য আগামী জাতীয় সংসদ অধিবেশনেই বিল উত্থাপন করা হোক। আইন পাস করা হোক। একাত্তর, গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধ, সম্ভ্রমহারা নারীর আকুতি বিবেচনা করা হোক। শাহবাগের আন্দোলন অনেক কিছুই পাল্টে দিয়েছিল। বাংলাদেশ আবার গর্জে উঠুক এসব নব্য হায়েনাদের বিরুদ্ধে। যারা পাল্টে দিতে চাইছে আমাদের রক্তধারার ঐতিহ্যের ইতিহাস।
-----------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক আজকের পত্রিকা ॥ ঢাকা ॥ ০৫ জানুয়ারি, ২০১৬ মঙ্গলবার

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৭

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন: ভাল লিখেছেন

২| ০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:০৩

পথিকের পাঁচালী বলেছেন: খালেদা জিয়া শহীদের সংখ্যা নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করার পর থেকে বিএনপির কিছু বুদ্বিজীবি বিভিন্ন টক শো তে ইনিয়ে বিনিয়ে বোঝতে চাচ্ছেন এটা খালেদা জিয়ার একটি নির্দোষ নির্বিষ নিষ্কলঙ্ক মন্তব্য । খালেদা জিয়া শহীদের সংখ্যা নিয়ে কোন সন্দেহ করেন নি কেবল তিনি শহীদের একটি তালিকা থাকার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন । কিন্ত খালেদা জিয়ার বক্তব্যের শব্দচয়নে কি বোঝা যায় তা বোঝার জন্য ভাষা বিশারদ হবার প্রয়োজন নেই আর লাইভ দেখলে তার বলার ধরনে স্পষ্ট বোঝা যায় সে শহীদের সংখ্যাধিক্যে স্পষ্টত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৫

ইফতেখার রাজু বলেছেন: good write up.....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.