![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
উন্নয়নের সারথী বনাম স্বেচ্ছান্ধের দৃষ্টিশক্তি
ফকির ইলিয়াস
=======================================
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের খালেদা জিয়াকে একটি চমৎকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পদ্মা সেতুর অগ্রগতির কাজটি স্বচক্ষে দেখে যান। এটি একটি ভালো আহ্বান। দেশে কি হচ্ছে তা একজন রাজনীতিকের দেখা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন। তার বর্তমান সরকারের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে তিনি জাতিকে অনেক বিষয় জানিয়েছেন। বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় থেকে যায় আওয়ামী লীগ। ভোটের এক সপ্তাহ পর তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। স্যাটেলাইটের কল্যাণে নিউইয়র্কে বসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণটি শোনার সুযোগ আমার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে যে বিষয়গুলো তুলে এনেছেন তার সারাংশ এখানে তুলে ধরা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দুই রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। থ্রি-জি সেবা চালু করা হয়েছে। শিগগিরই ফোর-জি চালু করা হবে। আর্থিক উন্নয়নে এগিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার। দারিদ্র্যের হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ২২ দশমিক ৪ শতাংশে এসেছে। ২০০৬ সালে থাকা অতিদারিদ্র্যের হার ২৪.২ শতাংশ এখন ৭.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী- বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা ১৪ হাজার ৭৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ১২ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। ৪৪ লাখ সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। যোগাযোগ ক্ষেত্রে, হাতিরঝিল প্রকল্পসহ গত ৭ বছরে ছয়টি উড়াল সেতু নির্মিত হয়েছে। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ শেষের পথে আছে। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতুর নির্মাণ শেষ করার আশা ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনা।
২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার টন খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয়েছে। শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ হয়েছে। সাত বছরে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ১৯২ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে। ১ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তি আওতায় আনা হয়েছে। সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। মানুষ বিনামূল্যে ৩২ ধরনের ওষুধ পাচ্ছে সেখানে। মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে বাড়িয়ে ৬ মাস করা হয়েছে। হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের অবসরের বয়স বাড়ানো পাশাপাশি বেতন ১২৩ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। ৮ হাজার ৫০৭টি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী যে বিবরণ দিয়েছেন তা একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্রের জন্য বেশ দরকারি এবং জরুরি বিষয়। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তা বাইরের অনেক দেশও বলছে। কিন্তু তারপরও দেশের ভেতরে থাকা কিছু স্বেচ্ছান্ধ তা দেখছে না। কেন দেখছে না? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- দেশে একটি চক্র এখনো আছে, যারা বাংলাদেশ চায়নি। এরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির আসল উদ্দেশ্য হলো জঙ্গিবাদ উসকে দেয়া, যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, রাজাকার-আলবদরদের রক্ষা করা। আমাদের ওয়াদা ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, রায় কার্যকর হচ্ছে, কেউই বিচার বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। তিনি বলেন, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায় না, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেছেন- একটি দলের নেত্রী ও তার নেতারা, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মাহুতি দানকারী ৩০ লাখ শহীদের প্রতি কটাক্ষ করেছে, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অপমান করেছে। আমি এই ঘৃণ্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ দেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। যারা দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করবে তারা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। তিনি বলেন, গ্যালোপের হোপ ইনডেস্কে এসেছে, সুইজারল্যান্ডের পরেই বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে আশাবাদী মানুষের দেশ। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন পথ রচনায় সক্ষম হয়েছি। দীর্ঘ ৪৪ বছর পর ২০১৫ সালে ভারতের পার্লামেন্টে স্থলসীমানা চুক্তি অনুমোদিত হয়। ফলে ৫২ হাজার ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের মানবেতর জীবনের অবসান হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে আমরা ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। ছিটমহল বিনিময়ে ১০ হাজার ৫০ একর জমি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যোগ হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা এমডিজি ১ থেকে ৬ অর্জন করেছি। বাংলাদেশ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড এবং আইটিউ-এর ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি’ পুরস্কার পেয়েছে। তিনি বলেন, এমডিজির মতো আমরা জাতিসংঘ গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি বাস্তবায়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করায় জাতিসংঘ আমাকে পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করেছে। তথ্য প্রযুক্তি প্রসারের জন্য আইটিইউ আমাদের ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড- ২০১৫’ প্রদান করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছে। ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটকে ‘ইউনেস্কো ক্যাটাগরি-২ ইনস্টিটিউট’-এর মর্যাদা দিয়েছে। বাংলাদেশ ইউনেস্কো সাধারণ পরিষদের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছে। দেশের মানুষ কেমন আছেন তা সবাই দেখতে পাচ্ছে। একটি বিশেষ গোষ্ঠী কখনোই এই দেশে উন্নয়ন দেখেনি-দেখছে না। স্বেচ্ছায় যারা অন্ধত্বের ভান করে, তাদের আলোর পথ কে দেখাবে? কীভাবে দেখাবে?
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও রাষ্ট্রসত্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। আমরা দেখছি, যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করায় গত ২২ নভেম্বর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার সমালোচনা করে বিবৃতি দেয়। ইসলামাবাদের এমন প্রতিক্রিয়ার জবাবে ২৩ নভেম্বর ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলমকে তলব করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর কড়া প্রতিবাদ জানায়। ওই প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছিল, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার সঙ্গে নিজেদের প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা ও সহযোগিতার বিষয়টি আবারো স্বীকার করেছিল পাকিস্তান। এই পাকিস্তানিদের বাংলাদেশ থেকে মদত দিচ্ছে কারা? কি তাদের পরিচয়? গত বছরের ৬ নভেম্বর নিজামীর বিরুদ্ধে রায় নিয়ে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খানের মন্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে আগেই বাংলাদেশ। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার আহমেদ হুসাইন দায়োকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে এই প্রতিবাদ জানানো হয়। পাকিস্তানের মন্ত্রীর মন্তব্যকে বাংলাদেশ ‘অনাকাক্সিক্ষত, যথার্থ নয় এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে। অথচ এই পাকিস্তানের জামায়াত নামের দলটি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়েই যাচ্ছে। এ বিষয়ে খালেদা জিয়া কোনো প্রতিবাদ করেছেন কি? কেন করছেন না?
১৬ কোটি বাঙালির এই দেশকে নিজের মতো করে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। প্রজন্মকে সাহস দিতে হবে। মানুষ এখন আর বোকা নয়। শতকরা ৭১ ভাগ শিক্ষিত মানুষকে আর আই ওয়াশ করে থামিয়ে রাখা যাবে না। এ কথা সব রাজনীতিককেই বুঝতে হবে সমানভাবে।
--------------------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০১৬
©somewhere in net ltd.