![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
জাতিসংঘে একুশের ভাস্কর্য ও বাংলা ভাষার অগ্রযাত্রা
ফকির ইলিয়াস
==================================
এটি বাঙালির একটি সাংস্কৃতিক বিজয়। ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’ ও ‘বাঙালির চেতনামঞ্চ’ এর যৌথ উদ্যোগে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সামনে নির্মিত হলো একুশের ভাস্কর্য। এটি থাকবে পুরো ফেব্রুয়ারি মাস। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে দাগ হ্যামারশোল্ড প্লাজায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, ‘এর আগে আমি জাপানে দায়িত্ব পালনকালে প্রবাসীদের সহায়তায় টোকিওতে স্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনে সক্ষম হয়েছি। নিউইয়র্কেও স্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপনে আপনাদের সবার আন্তরিক সহায়তা চাই। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ায় জাতিসংঘের সামনে স্থায়ী একটি শহীদ মিনারের দাবি আজ সার্বজনীনতা পেয়েছে। তাই তা অপূর্ণ থাকবে বলে মনে করি না।’
নিউইয়র্কের ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’ ও ‘বাঙালির চেতনামঞ্চ’ এর উদ্যোগে ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘের সামনে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্য রাতে অস্থায়ী শহীদ মিনার স্থাপন করে প্রবাসী বাঙালিরা শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। তাদের উদ্যোগেই স্থাপিত এবারের ভাস্কর্যটির নকশা করেছেন অলিম্পিক স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিল্পী খুরশীদ সেলিম। আর এটি নির্মাণ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান শিল্পী মৃণাল হক।
উত্তর আমেরিকায় বাঙালির একুশ উদযাপনের দীর্ঘ ইতিহাসে এই ভাস্কর্য স্থাপন একটি যুগান্তকারী ঘটনার সৃষ্টি করেছে। বিশ্বসভায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদায় যেভাবে অমর একুশকে সম্মানিত করা হয়েছে তেমনিভাবে ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত মাসব্যাপী ভাস্কর্যটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে ম্যানহাটানের ১ম এভিনিউ ও ৪৭ স্ট্রিটের কর্নারে। পেছনে জাতিসংঘের সদর দপ্তর আর বিভিন্ন দেশের সারি সারি পতাকা আর তার সামনে থাকছে একুশের এই ভাস্কর্য।
২০১৫ সালের শুরুতে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মাসব্যাপী একুশের ভাস্কর্য স্থাপনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিটি অব নিউইয়র্ক পার্ক অ্যান্ড রিক্রিয়েশন ডিপার্টমেন্ট জানুয়ারি ২০১৬ মাসের প্রথম সপ্তাহে এক চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে এই ভাস্কর্য স্থাপনের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। এর আগে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিনেটর হোজে পেরেটা’র প্রস্তাবনায় ২০১৫ সালে নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেন। ‘মুক্তধারা’ এবং ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ’ নামে দুটি সংস্থা ও সংগঠনের উদ্যোগে বইমেলা শুরু হয় নিউইয়র্কে ১৯৯২ সালে। ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ’ ছিল মূলত একঝাঁক শাণিত তরুণের সাংস্কৃতিক ফোরাম। প্রকাশে বাংলা ভাষা সাহিত্য, সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং লালন করার প্রত্যয় নিয়েই জন্ম নেয় এই সংগঠনটি। মহান ভাষা দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ চত্বরে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন ও শুরু হয় এই মুক্তধারা ও বাঙালির চেতনা মঞ্চের উদ্যোগে। নিজ কাঁধে বইয়ের বাক্স বহন করে ফিরে বইমেলা জমাবার প্রত্যয়ী ছিলেন মুক্তধারার কর্ণধার শ্রী বিশ্বজিত সাহা। আমি দেখেছি, চোখে বুকে একটিই স্বপ্ন, প্রবাসে পরিশুদ্ধ পাঠক শ্রেণি গড়ে উঠবে। আমি এখনো ভাবি, এক সময়ের তুখোড় সাংবাদিক বিশ্বজিত সাহা তো প্রবাসে এসে অন্য পেশাও গ্রহণ করতে পারতেন। তিনি তা করেননি কেন? করেননি এ জন্য, বাংলা ভাষা-সাহিত্য সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন প্রবাসী বাঙালির মাঝে। প্রশ্নটির উত্তর আমি এখন পেয়ে যাই খুব সহজে। যখন দেখি জ্যাকসন হাইটেসের সুপরিসর ‘মুক্তধারা’ গ্রন্থকেন্দ্রে বসে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিংবা ড. হুমায়ুন আজাদ, আনিসুল হক, হাসান আজিজুল হক, সমরেশ মজুমদার তাদের বইয়ে পাঠককে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন, দিয়েছেন। নিউইয়র্কে ১৯৯২ সালে প্রথম বইমেলাটির উদ্বোধক ছিলেন ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত। ১৯৯৩ সালে কবি শহীদ কাদরী মেলা উদ্বোধন করেন। ১৯৯৪ সালে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ১৯৯৫ সালে পুরবী বসু, ১৯৯৬ সালে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, ১৯৯৭ সালে হুমায়ুন আহমেদ, ১৯৯৮ সালে সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, ১৯৯৯ সালে দিলারা হাশেম, ২০০০ সালে ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, ২০০১ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বইমেলা উদ্বোধন করেন। ২০০১ সালে দশম বইমেলার বর্ণিল আয়োজনে একযোগে এসেছিলেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, হুমায়ুন আহমেদ ও ইমদাদুল হক মিলন। ২০০২ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন ড. হুমায়ুন আজাদ। ২০০৩ সালে কবি জয়গোস্বামী আসেন উদ্বোধক হিসেবে। মুক্তধারার উদ্যোগে ২০০৪ সালে দুটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ওই বছর নিউইয়র্কর বইমেলা উদ্বোধন করেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও লসএঞ্জেলেসে রাবেয়া খাতুন। ২০০৫ সালের বইমেলার উদ্বোধক ছিলেন ড. আবদুন নূর। ২০০৬ সালে পঞ্চদশ বইমেলা উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আঙ্গিকে বইমেলা শুরু হয়েছে ২০০৭ সাল থেকে। বইবিপণী ‘মুক্তধারা’র সহযোগী সংগঠন ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশনে’র উদ্যোগে বইমেলা রূপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবে। এই উৎসবের অংশ হিসেবে চারটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৭ সালে। নিউইয়র্কে ড. গোলাম মুরশিদ, ডালাসে ড. আনিসুজ্জামান, লস এঞ্জেলেসে সমরেশ মজুমদার এবং নিউজার্সিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এসব বইমেলা উদ্বোধন করেন।
২০০৮ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি রফিক আজাদ। ২০০৯ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন হাসান আজিজুল হক। ২০১০ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি সৈয়দ শামসুল হক। ২০১১ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন তপনরায় চৌধুরী। ২০১২ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন শামসুজ্জামান খান। ২০১৩ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। ২০১৪ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি মহাদেব সাহা। ২০১৫ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।
খুবই আনন্দের কথা, বিশ্বজিত সাহা ও মুক্তধারা আমাদের এই পঁচিশ বছরে এসব গুণীজনের সান্নিধ্য পাবার সুযোগ করে দিয়েছে। অভিবাসী প্রজন্মের হাতে লেগেছে এসব মহান মানুষের হাতের পরশ। সময় এসেছে অভিবাসী লেখকদের মূল্যায়ন করার। যেসব বাঙালি লেখক উত্তর আমেরিকায় বাংলা ভাষায় লেখালেখি করেন তাদের সম্মান জানাবার। অনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানানো যেতে পারে আমেরিকায় জন্ম নেয়া প্রজন্মকে, যারা ইংরেজি ভাষায় লেখালেখি করছে।
একুশের চেতনা এবং বইমেলাকে উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আরো তৎপরতা বাড়াবার সময়টিও এসেছে এখন। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বড় বড় সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এই বইমেলার স্পনসর হতে পারে। তারা নিজ নিজ স্টেটে সম্মিলিতভাবে গ্রীষ্মকালীন সময়ে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনকে আহ্বান করে বইমেলা করতে পারেন বিভিন্ন উইকএন্ডে। আমি প্রস্তাব করি, ২০১৬ সালের বইমেলায় বিষয়টি বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের সংগঠনগুলোর কাছে প্রস্তাব আকারে পাঠানো হোক মুক্তধারার পক্ষ থেকে। একটি সমন্বয় কমিটি করে বিভিন্ন স্টেটে তৎপরতা শুরু করা হোক।
এবারের একুশের ভাস্কর্য জাতিসংঘের সামনে তাক লাগিয়ে দিয়েছে অনেক পর্যটককে। তারা জানছেন বাংলাদেশ, বাংলা ভাষার কথা। গেল ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের নেতৃত্বে জাতিসংঘের এক প্রতিনিধি দল ভাস্কর্য দেখতে গিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।
নিউইয়র্কে আগামী ২৭ ও ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে একুশের গ্রন্থমেলার ২৫ বছর পূর্তি। জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯ মিলনায়তনে একুশের নতুন গ্রন্থ নিয়ে অনুষ্ঠিত এই গ্রন্থমেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আমন্ত্রিত লেখক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যোগ দিচ্ছেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, আনোয়ারা সৈয়দ হকসহ বিশিষ্ট লেখকরা। একুশ উপলক্ষে প্রকাশিত নতুন বইগুলো এই মেলায় স্থান পাবে। এ ছাড়া প্রকাশিত হচ্ছে একুশ উপলক্ষে বিশেষ স্মারকগ্রন্থ ‘বাঙালির চেতনা’। এই যে চেতনা- এটাই অভিবাসী প্রজন্মের শিকড়ের সন্ধান। বিদেশে বাংলা ভাষার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই।
----------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৯
মোঃ নাইম রানা বলেছেন: Hi.........
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৫:২৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভাসা কোথায়ও যাচ্ছে না; জাতি সংঘে মংঘে কি হচ্ছে কে জানে, হয়তো আড্ডা পাড্ডা