নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা যখন সাহসী বাংলাদেশের মুখের দিকে তাকাই

০৫ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৩৩






আমরা যখন সাহসী বাংলাদেশের মুখের দিকে তাকাই
ফকির ইলিয়াস
-------------------------------------------------------------------------

বাংলাদেশ জিতেছে। জিতেছে মহান স্বাধীনতার মাস। আমি ক্রিকেট খেলার ভক্ত নই। খেলা আমি বুঝি না। তারপরও বাংলাদেশ জিতলে আমি জিতে যাই। পরবাসে থেকে দুফোঁটা অশ্রæ গড়িয়ে পড়ে আমার চোখে। আমি জন্মমাটির প্রতি কৃতজ্ঞ হই। অনুগত হই আবারো আমার স্বজাতির প্রতি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই খেলা দেখেছেন সরাসরি। বিজয়ের পরে তার চোখেও আমরা আনন্দাশ্রæ আমরা দেখেছি। একটি রাষ্ট্রের প্রধান এভাবেই তার নাগরিকদের সাহস জোগান। এভাবেই এগিয়ে নিয়ে যান। আমরা জানি, রাজনীতিকরা দেশ পরিচালনা করেন। তারা দিকনির্দেশনা দেন। একজন রাজনীতিকের ভুল সিদ্ধান্ত একটি জাতিকে আঁধারে নিপতিত করতে পারে। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একটি বক্তব্য দেশে- বিদেশে বেশ আলোচিত হচ্ছে।

ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবদের ইঙ্গিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, কিসের ভয়? আওয়ামী লীগ-বিএনপি এক থাকলে অন্য কেউ ক্ষমতা নিতে পারবে না। আমাদেরকেও জেলে নিতে পারবে না। গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিগত আন্দোলনে নিহত ও আহত বিএনপি কর্মীদের পরিবারের মধ্যে আর্থিক অনুদান তুলে দেয়ার জন্য জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম শাখা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। খালেদা জিয়া বলেন, আমরা যদি একসঙ্গে থাকতাম, তাহলে কিচ্ছু করার সাহস তাদের ছিল না।

খালেদা জিয়া বলেছেন, যদি দেশে গণতন্ত্র থাকে, আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ মেজর পার্টিগুলো যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তাহলে কেউ এসে ক্ষমতা নিয়ে যাবে, আমাদের জেলে পুরে দেবে, তা পারবে না। খালেদা জিয়া বলেন, ওয়ান ইলেভেন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই কথা উঠিয়েছেন। কিন্তু তিনিই তো তাদের কাছে শপথ নিলেন, মিডিয়ার সামনে বললেন, ওয়ান ইলেভেন আমাদের আন্দোলনের ফসল। তিনি তো এর দায় অস্বীকার করতে পারেন না। খালেদা জিয়া যে কথাটি বলেছেন, সেটা একটি পরিশুদ্ধ গণতন্ত্রের পথ-পরিক্রমা। এরকম, এই বাংলাদেশে হতে পারত। হতে পারত যদি বিএনপি নামক দলটি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত হতো। এ বিষয়ে আরো কিছু কথা বলা দরকার। একটি জাতিসত্তার প্রতি একজন ব্যক্তি, একটি দল কিংবা কোনো গোষ্ঠী কতটা অনুগত তা নির্ভর করে তার মৌলিক আচরণ প্রকাশের ওপর। আচরণটিও দুরকম হতে পারে। একটি লোক দেখানো, অন্যটি আত্মিক। যারা মনে-প্রাণে কোনো জাতিসত্তাকে স্বীকার করে, কল্যাণ চায় এবং ভালোবাসে তাদের দেশপ্রেম নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে না।

প্রশ্ন ওঠে তাদের দেশপ্রেমের প্রতি, যারা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু ভেতরে ভেতরে সুযোগ খোঁজে জাতিসত্তাকে ধ্বংস করে দেয়ার। মূলত এদের শ্রেণি চরিত্রটি হচ্ছে আত্মপ্রতারকের। তারা একটি দেশে অবস্থান করেও ব্যস্ত থাকে সে দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে। তারা রাষ্ট্র এবং জনগণের পিঠে ছুরি মেরে নিজেদের কায়েমি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিংবা হাত মিলায় পরাজিত মৌলবাদী শক্তির সঙ্গে। খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমান সেই কাজগুলো খুব কৌশলে করেছেন। খবর বেরিয়েছে, বিএনপিতে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের কোনো প্রতিদ্ব›দ্বী পাওয়া যায়নি। আবারো বিএনপি চেয়ারপারসন পদে খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে তারেক রহমান নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, ৪ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা, ৫ মার্চ যাচাই-বাছাই ও ৬ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। ১৯ মার্চ হবে নির্বাচন। ওই দিনই বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল। বিএনপি তার নিজ বলয়ের মাঝেই ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে সাহস নিয়ে। এগোচ্ছে প্রজন্ম। এই প্রজন্মের মুখের দিকে তাকিয়েই আজ সব রাজনীতিকের উচিত, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের স্বরূপ সন্ধান করা। স্বাধীনতা হচ্ছে মানুষের অন্যতম জন্মগত অধিকার। কিন্তু সেই স্বাধীনতা যদি দীর্ঘসময় কোনো অপশক্তি দ্বারা শাসিত হয় তবে তা কতটা অর্থবহ হতে পারে? এ প্রসঙ্গে মহাত্মা মি. এডওয়ার্ড সাঈদকে আবারো স্মরণ করা যেতে পারে। সাঈদ বলেছিলেন, ‘স্বাধীনতার শত্রুরা তৎপর থাকে দিনরাত। আর স্বাধীনতাভোগীরা তৎপর থাকে শুধু দিনের বেলা। তাই ওই শত্রুরা মাঝে মাঝে মহাপরাক্রমশালী হয়ে উঠতে পারে।’ বাংলাদেশের আজকের অবস্থানটি হয়েছে ঠিক তাই। ভোগবাদী একটি চক্র দেশকে গ্রাস করতে চাইছে, যারা আদৌ এই দেশকে, এই মাটিকে ভালোবাসে না। তাদের যোগসূত্র অন্যদের সঙ্গে। তারা চায় পঁয়তাল্লিশ বছরের এই স্বাধীন দেশটাকে ঔপনিবেশিক মৌলবাদীদের হাতে তুলে দিতে। আর এদের সঙ্গে আছেন আলখেল্লা পরা অনেক সুশীলও।

এসব রাষ্ট্রীয় শত্রুদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া এবং মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এদের ‘রাষ্ট্রের শত্রু’ বলার সাহস দেশের সুশীল সমাজের কতটা আছে সে বিষয়ে আমি কিছু প্রশ্ন তুলতে চাই। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে দুরকমের স্বার্থপরতা রয়েছে। একটি হচ্ছে তাৎক্ষণিক ভোগবাদিতা। আর অন্যটি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ভোগবাদিতা। যারা চাঁদাবাজি, টেন্ডার টানাটানি করে দুপয়সা কামানোর ধান্ধা করছে, এরা হচ্ছে তাৎক্ষণিক ভোগবাদী। আর যারা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এগিয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে এরা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি সুদূরপ্রসারী ভোগবাদী।

আমরা বাঙালিরা আসলেই আত্মভোলা জাতি! যদি না হতাম তবে অনেক ঐতিহাসিক সত্যই আমরা ভুলে যেতাম না। ২৬ মার্চ কিংবা ১৬ ডিসেম্বর আমাদের সে সব সত্য বারবার মনে করিয়ে দেয়। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গান গাইতে আমাদের বুক কাঁপে। যে ভারতের ১০ হাজার মিত্রবাহিনীর সৈন্য তাদের প্রাণ দিয়েছিলেন আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে সেই ভারত আমাদের অনেকের গায়ের কাঁটা। যে ভারতের প্রতিটি নাগরিক কর দিয়ে আমাদের ১ কোটি শরণার্থীকে সাহায্য করেছিলেন সেই ভারতকে আমরা কথায় কথায় গালি দিই। কী আশ্চর্য জাতিসত্তা আমাদের। তাই বলে আমি বলছি না, ভারতের কোনো চোখ রাঙানি আমরা মেনে নেব। অথচ বাংলাদেশের ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো জোট করে যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, তখন নেপথ্যে তারাও ভারত তোয়াজ কম করেনি। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে কীভাবে? বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে জামায়াত নতুন করে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এমন একটি খবর বাজারে রয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে মৌলবাদী রাজনীতির নতুন সংস্করণ তৈরি হতেই পারে। এরা তাদের পুরনো এজেন্ডা নিয়েই মাঠে থাকবে। যে বিষয়টি নিয়েও রাষ্ট্র ও মানুষকে ভাবতে হবে। আমাদের মনে রাখা দরকার, আজ যে পাকিস্তানকে ক্রিকেটে বাংলাদেশ হারিয়েছে, সেই পাকিস্তানে ২০০৯ সালে আক্রান্ত হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট খেলোয়াড়রা। কি জঘন্য মানসিকতা। এই সেই বিষধর জঙ্গিবাদি পাকিস্তান- যারা খেলোয়াড়কে খেলতে দেবে না, গায়ককে গাইতে দেবে না, শিল্পীকে আঁকতে দেবে না, লেখককে লিখতে দেবে না। তারপরও মানুষ কি হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? কিছুই করবে না- করতে পারবে না এদের বিরুদ্ধে? পারতে হবে। না পেরে উপায় নেই। এই অপশক্তি সমাজে আসকারা পেলে মানবিকতা হারিয়ে যাবে চিরতরে। এরা জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎকর্ষকে শুধু অস্বীকারই করছে না, বরং শিল্প-সংস্কৃতির মননও হরণ করতে চাইছে। সেই পাকিস্তান থেকেই একদিন স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ। বিশ্বে আজ সভ্যতার বিবর্তন ঘটছে। আর তা ঘটছে মানুষের আদিমতা পরিহারের পর থেকেই। মানুষ তার নিজস্ব অভিধায় অভিষিক্ত করছে নিজেকে। এই অভিধা সৃজনের। এই প্রচেষ্টা নতুনকে বরণ করে নেয়ার। এর মাঝে কোনো ধ্বংস নেই। নেই ভাঙনের কোনো জোয়ার। তারপরও যারা রক্তাক্ত মৃত্তিকার ধূলিতে দাঁড়িয়ে উল্লাসে নাচে, এরা আসলে কি চায়? তাদের সুপ্ত ইচ্ছেটি কি? তাদের লক্ষ্যবিন্দুই বা কোথায়?

মানবতার পক্ষে দাঁড়াবে বলে মানুষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল। প্রতিটি ধর্ম সে চেতনাটি ধারণ করেছে। ‘নরহত্যা মহাপাপ’-তা প্রতিষ্ঠিত যে কোনো ভাষাতেই। যে কোনো ধর্মগ্রন্থে। তাহলে এখন বিশ্বে যে যুদ্ধ চলছে তা কি ধর্মযুদ্ধ? ধর্মপ্রতিষ্ঠার যুদ্ধ? ধর্ম তো শান্তির কথা বলে। শৃঙ্খলার কথা বলে। হত্যা করে, ত্রাস সৃষ্টি করে তবে কি শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। প্রশ্ন উঠছে এমন অনেক। আবারও বলি, বাঙালি প্রজন্মকে আজ দেখতে হবে সাহসী জননীর মুখ। এটা স্বাধীনতার মাস। আমাদের জাগরণের মাস। সব অসত্য আর আঁধারের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে দাঁড়াবার মাস। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই- আমরা যদি শিকড়ের সন্ধানে একাত্তরকে বুকে ধারণ করি।
------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৫ মার্চ ২০১৬

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩

বিজন রয় বলেছেন: +++++
ভাল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.