![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
আমাদের লুণ্ঠিত মুখমণ্ডল
ফকির ইলিয়াস
==================================
রাজনীতি বড় কঠিন জিনিস। দেশে-বিদেশে সবখানেই। একটি আঙুল সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। একটি নির্দেশ কাউকে চেয়ারে বসায়। আবার সরিয়ে দেয়। এটাই নিয়ম। গণতন্ত্র সবসময়ই একটি ছায়া বহন করে। এই ছায়াটি কোনো এক অদৃশ্য শক্তির। মূলত সেই শক্তিই বিশ্বে মানুষের ভাগ্য নিয়ে মাপাজোখা করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান পদত্যাগ করেছেন। তা না করে তার কোনো উপায় ছিল না। তাকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল। আবার সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর নেপথ্যে কি অন্য কোনো কারণ? তাকে কি কেউ তাদের দরকারে ব্যবহার করে ছেড়ে দিল! এমন প্রশ্ন আসতে পারে খুব সঙ্গত কারণেই।
ড. আতিউর রহমানের সময়ে দেশে অনেক বড় বড় অর্থ কেলেঙ্কারি ঘটে গেছে। সরকারি-বেসরকারি আটটি ব্যাংকে গত কয়েক বছরে কমপক্ষে ১৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের তথ্য মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ও কৃষি ব্যাংকেই প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংক আইএফআইসি, প্রাইম, বেসিক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের কমপক্ষে পাঁচশ কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনা রয়েছে। দুদক কর্মকর্তারা মিডিয়াকে বলেছেন, ব্যাংকের পরিচালকদের অনেকেই এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছেন। দুদকের অনুসন্ধানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পর্ষদের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
ঋণ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পর্ষদের কর্মকর্তারা দালিলিকভাবে দায়িত্ব পালন করায় তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে সহজেই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আবার ওই বরাদ্দের ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের প্রভাব খাটানোর বিষয়ে অভিযোগ থাকলেও দালিলিক প্রমাণ না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে আপাতত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। মামলা দায়েরের পর আদালতে আসামিদের ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে দোষী পরিচালকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে দুদক।
আমাদের মনে আছে, সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে ২০১০-১২ সময়ের মধ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপই হাতিয়ে নিয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। এর কোনো সুবিচার হয়েছে কি? কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কি? দেশবাসী তা জানতে চান।
ভয়াবহ কাণ্ড ঘটেছে বেসিক ব্যাংকে। বেসিক ব্যাংক লিমিটেডে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৯৫৬ কোটি টাকার আত্মসাতের ঘটনায় অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগ অনুযায়ী ব্যাংকের পরিচালক আনোয়ার হোসেন ও জাহাঙ্গীর আকন্দ সেলিমের যোগসাজশে নামে-বেনামে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে ব্যাংকের গুলশান শাখায় এসএম সুহী শিপিংয়ের নামে ৪৫ কোটি টাকা, এস রিসোর্স শিপিংয়ের ৬৫ কোটি টাকা, শিপান শিপিং ৫০ কোটি টাকা, আমিরাত শিপিং ৯০ কোটি টাকা, এসএফজি শিপিং ৭৫ কোটি ও গ্রিন বাংলা শিপিংয়ের নামে ১৩০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া একই শাখায় এলসি জালিয়াতি, ভুয়া অ্যাকাউন্ট, পে-অর্ডার জালিয়াতি, ও ভুয়া মর্টগেজসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ভাসাবি গ্রুপের নামে ১১০ কোটি, গ্রিন বাংলা হোমটেক্সের ৮০ কোটি, এবি ট্রেডলিংকের ৬৫ কোটি, পপুলার টেক্সটাইলের ৩০ কোটি, কেমিও ইউএস নিটওয়্যারের ৪০ কোটি, ম্যাভিন ফ্যাশনের ৩৮ কোটি, আরভা টেক্সটাইলের ২৮ কোটি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির ৭৫ কোটি, বিএনএস প্রপার্টিজের নামে ১১ কোটি, এককিউ হাইস লিমিটেডের নামে ১৬৫ কোটি, ওপিই প্রপারসিটের ১১ কোটি, সুন্দরবন সায়েন্টিফিকের ৫৫ কোটি, তাহমিনা ডেনিমের ৪৫ কোটি, লাইফ স্টাইল ফ্যাশনের ৩৫ কোটি, আজাদ ট্রেডিংয়ের ৬০ কোটি ও লিটিল ওয়ার্ডের নামে ৫৫ কোটি টাকার ঋণ কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে ব্যাংকটির ঢাকার কারওয়ান বাজার, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ও রাজশাহীর একাধিক শাখায় ঋণ কারসাজির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লোপাটের ঘটনায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নাজনীন সুলতানা এবং মো. আবুল কাসেমের সঙ্গে সরকারের চুক্তি বাতিলের আদেশ জারি করা হয়েছে। ১৬ মার্চ ২০১৬ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আলাদা আদেশে ১৫ মার্চ থেকে চুক্তি বাতিল করে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, ‘অর্থ চুরির পুরো ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে বের করাই হবে আমার প্রথম কাজ’। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। এছাড়া রিজার্ভ চুরির ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকট সমাধানেরও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
ব্যাংকিং খাতে অনেক কিছুই ঘটে যাচ্ছে বাংলাদেশে। ঋণে অনিয়ম নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দিতে সময় নিয়েও তা দেননি অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদ। রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকটির এই কর্মকর্তাকে কেন অপসারণ করা হবে না, জানতে চেয়ে গত ১৭ ফেরুয়ারি নোটিস দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাকে ৩ মার্চের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। অপসারণের আগে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৬ ধারা অনুযায়ী কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়ার নিয়ম রয়েছে। চিঠি পেয়ে হামিদ জবাব দিতে এক মাসের সময় চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাকে ১৩ দিন সময় বাড়িয়ে ১৬ মার্চের মধ্যে জবাব দেয়ার নির্দেশনা দেয়। মুন গ্রুপসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন মিডিয়াকে।
পেছনে ফিরে তাকালে আমরা দেখি, ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটি (জিএফআই) বলছে, শুধু ২০১৩ সালেই অবৈধ পথে বাংলাদেশের বাইরে চলে গেছে ৯৬৬ কোটি ডলারের বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। ‘ইলিসিট ফিন্যান্সিয়াল ফ্লোস ফ্রম ডেভেলপিং কান্ট্রিজ : ২০০৪-১৩’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জিএফআই। ওই প্রতিবেদনেই অর্থ পাচারের এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন জিএফআইয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেভ কার ও অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্পেনজারস। অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক লেনদেন বা মিসইনভয়েসিং, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে এ অর্থ পাচার হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১৩ এক দশকে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাচার হয়েছে ২০১৩ সালে; যার পরিমাণ ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর আগের বছর পাচার হয় ৭২২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে অবৈধ অর্থপ্রবাহ বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। এছাড়া ২০০৮ ও ২০০৯ সালেও অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে চলে গেছে। ওই দুই বছরে পাচার হয় যথাক্রমে ৬৪৪ কোটি ৩০ লাখ ও ৬১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
এসব কি হচ্ছে বাংলাদেশে? তা জানার অধিকার এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের আছে। ড. আতিউর রহমান আর বাংলাদেশ ব্যাংকে নেই। তিনি শিক্ষকতা পেশায় ফিরে গেছেন। এখন তিনি আর কোনো রাজনীতির কাছে দায়বদ্ধ নেই। তাই তিনি মুক্তভাবে কথা বলতে পারবেন। এই প্রত্যয় নিয়ে আমি তাকে তিনটি প্রশ্ন করতে চাই।
১। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পর পর তিনি তাৎক্ষণিক কি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? তিনি কি বিষয়টি সামান্যও এর আগে আঁচ করতে পারেন নি?
২। তার সময়েই দেশের ব্যাংকগুলোতে নজিরবিহীন দুর্নীতি হয়েছে। তিনি সে সময় কি ভূমিকা রেখেছিলেন? তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ করে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে পদত্যাগ করেন নি কেন?
৩। তিনি নিজ ক্ষমতায় থেকে এই সাগরচুরির বিরুদ্ধে দাঁড়ান নি কেন? নাকি কোনো মহলকে পার পাইয়ে দিতেই তিনি সরে গেলেন?
আমাদের মুখমণ্ডল লুট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের চোখ, কান, বাহু, পেশি, পাঁজর সবই দখল হয়ে যাচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্যই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। তাহলে আজ এই জাতির সম্পদ লুট হয়ে যাচ্ছে কেন? কারা লুট করছে? কোথায় যাচ্ছে প্রজন্মের স্বপ্নের বাংলাদেশ। আমরা এসব প্রশ্নগুলোর জবাব চাই। আমরা ন্যায়বিচার চাই রাজনীতির কাছে। রাজনীতিবিদদের কাছে। রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে।
-----------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৯ মার্চ ২০১৬
২| ২০ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৩০
ঢাকাবাসী বলেছেন: ঐ ভদ্রলোক আর তার বসরা সবাই খাইসে হুসনি
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২৩
দায়ী বলেছেন: ভাগ বাটোয়ারা করতে বেশী সময় লাগবে বলেই এই অবসর