![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
চারপাশে যখন সুবিধাবাদীরা অবস্থান নেয়
ফকির ইলিয়াস
=========================================
বাঙালি জাতি আরেকটি বাংলা নতুন বছরে প্রবেশ করল। ১৪২৩ এল আমাদের জীবনে নতুনের বারতা নিয়ে। বৈশাখ বাঙালির প্রাণের জাগরণের মাস। এই মাসে গ্রীষ্মকাল শুরু হয়। বৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে ওঠে বাঙালি প্রজন্মের জীবন। দিন যতই যাচ্ছে- আমরা লক্ষ করছি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে গ্রাস করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আমাদের মনে আছে ৬ মার্চ ১৯৯৯-এর কথা। দশটি অমূল্য প্রাণ গিয়েছিল হন্তারকের নৃশংসতায়। পঙ্গু হয়েছিলেন যারা তারা আজো অসহায়। আজো তারা অমানবিক জীবনযাপন করছেন। এরা তো নতুন জীবন প্রত্যাশা করে ঐতিহ্যবাহী বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতিকেই তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। তাতে কেন বাদ সাধল সন্ত্রাসী মৌলবাদী জঙ্গিরা? ধর্মান্ধতার নেকাব পরে ধর্মভীরু সরলপ্রাণ মানুষকে হত্যা করতেও ওদের মনে সামান্য দ্বিধা ছিল না। ২০০৫ সালে নেত্রকোনায় উদীচী অফিসের সামনে বোমা হামলায় প্রাণ হারান উদীচীর সংগঠক হায়দার এবং সুদীপ্তাসহ ছ’জন।
আক্রমণ এভাবেই চলেছে। এই কায়দা এখন বদলেছে মৌলবাদীরা। এরা ঢুকে পড়েছে ক্ষমতাসীনদের আস্তিনের নিচে। ওলামা লীগ নামে একটি সংগঠন আওয়ামী লীগ এর চেতনাবিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এটি আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন নয়। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এ রকম সংগঠন নিয়ে সক্রিয় হতে কোনো নির্দেশনাও দেয়া হয়নি। তারপরও এই নামে দুটি সংগঠনের সা¤প্রতিক নানা কর্মকাণ্ডের দায় নিতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বেশ আগেই জানিয়েছেন, ‘ওলামা লীগ নামে আমাদের কোনো সংগঠন নেই। এক সময় আলেমদের নিয়ে আমরা একটি সংগঠন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকজনের নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বের দ্ব›দ্ব আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়।’
সাম্প্রতিককালে এই ওলামা লীগের বক্তব্য আবার আলোচনায় এসেছে, বাংলা নববর্ষ নিয়ে তাদের নেতিবাচক কথাবার্তার পর। এর প্রতিবাদে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চার বক্তারা বলেছেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তি স্বাধীন বাংলাদেশে মেনে নেয়া হবে না। ওলামা লীগকে রাস্তায় দেখা গেলে আমরাও রাস্তায় নামব।’ এ সময় তিনি ওলামা লীগের সংবাদ প্রচার না করতে গণমাধ্যমকে অনুরোধ করেছেন এই সংগঠনের আহ্বায়ক বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান। গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের নেতা কামাল পাশা চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ওলামা লীগ তাদের সংগঠন নয়। কিন্তু এটি পরিষ্কার হওয়া উচিত। তিনি ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কের বিষয়টি স্পষ্ট করতে পত্রিকায় বিবৃতি দেয়ার দাবি জানান। শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান তৌহিদ রেজা নূর বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, তাদের দলে ঠাঁই না দেয়ার জন্য রাজনীতিবিদদের অনুরোধ করব। আওয়ামী লীগেও দেখেছি অনেকে ফুল দিয়ে যোগদান করে। তাদের যত কাছে নেবেন নতুন প্রজন্ম তত দূরে সরে যাবে। এর মাঝেই বক্তব্য এসেছে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড থেকে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলছেন, ওলামা লীগ বাটপারদের সংগঠন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওলামা লীগ নামের এই সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই।
কথা হচ্ছে এই ওলামা লীগ এত আসকারা দেখানোর সুযোগ পেল কিভাবে? পহেলা বৈশাখকে অপসংস্কৃতি উল্লেখ করে এই দিবসে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা এবং আর্থিক সহযোগিতা বন্ধের দাবি জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এই ওলামা লীগ। এছাড়াও সংগঠনটি বর্তমান শিক্ষানীতিকে ধর্মহীন উল্লেখ করে শিক্ষা আইন বাতিলসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে। মানববন্ধনে আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মো. আবুল হাসান শেখ বলেন, পহেলা বৈশাখে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো, উলুধ্বনি দেয়া, শাঁখ বাজানো, মঙ্গল কলস সাজানো, ঢাকঢোলের ব্যবহার, মুখোশ পরে শোভাযাত্রা, মুসলিম মহিলাদের সিঁথিতে সিঁদুর দেয়া বিধর্মীদের কাজ। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন হিসেবে এমন সংগঠন আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে আবারো। এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ওলামা লীগ! এটা কী খায় না মাথায় দেয়? পহেলা বৈশাখ এর বিরুদ্ধে যারা বলে তারা আওয়ামী লীগের কেউ না, দায়িত্ব নিয়ে বলছি। শেখ হাসিনা প্রথম সরকার প্রধান যিনি বৈশাখী ভাতা চালু করেছেন। যে সব অতি বিপ্লবী বঙ্গবন্ধুর দল মুসলিম লীগ হয়ে গেছে বলে নাকি কান্না জুড়ে দিয়েছেন তারা দয়া করে থামুন। এদেশ, বাঙালি সংস্কৃতি এবং মানুষের জন্য শেখ হাসিনার দরদ আমার আপনার চেয়ে কম নয়। আমরা একটি বিষয় লক্ষ্য করছি- আওয়ামী লীগের নব্য দরদী হয়ে এখন অনেক সংগঠন গড়ে উঠেছে যত্রতত্র।
একটি সংবাদ অবাক করার মতো। ভুঁইফোড় সংগঠনের নাম শুনে চমকে উঠেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। গত ২৭ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভা চলছিল রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে। শেখ হাসিনার বক্তব্যের আগে দলের প্রথম সারির এক কেন্দ্রীয় নেতা বক্তব্য শুরু করলে মিলনায়তনে উপস্থিত যুব মহিলা লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ সংগঠনের নামে স্লোগান দেন। ওই সময় মিলনায়তনের নিচতলায় মঞ্চের বেশ কাছাকাছি সারিতে বসে কয়েক যুবক- ‘বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, নেতা মোদের শেখ মুজিব’ এ স্লোগান দিচ্ছিলেন। মঞ্চে থাকা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা স্লোগান শুনে তাৎক্ষণিক বলে ওঠেন- ‘এটি কী? এটি আবার কবে হলো? আগে তো শুনিনি!’ ঘটনার আকস্মিকতায় মিলনায়তনে উপস্থিত অনেকেই চমকে ওঠেন। তবে যারা স্লোগান দিচ্ছিলেন, তাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এ সময় টিপ্পনি কাটতে শুরু করেন। বিদেশেও আমরা দেখছি একই অবস্থা। তরুণ লীগ, কিশোর লীগ, এমন অনেক নাম। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দোহাই দিয়ে সংগঠন তো আছেই।
দেশের আনাচে-কানাচে এমন অনেক বাণিজ্য এখন। বিভিন্ন সময় ব্যানার-ফেস্টুনে অসংখ্য ভুঁইফোড় সংগঠনের অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে প্রায়ই। এ ধরনের সংগঠনের প্রায় কয়েকশ সংগঠন রয়েছে দেশে। ভুঁইফোড় সংগঠনগুলোর মধ্যে শিশু লীগ, আওয়ামী দর্জি লীগ, আওয়ামী চালক লীগ, জননেত্রী চিন্তা লীগ, আওয়ামী সমবায় লীগ, আওয়ামী প্রচার ও প্রকাশনা লীগ, আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ, আওয়ামী মোটরচালক লীগ, আওয়ামী তরুণ লীগ, হারবাল লীগ, দেশীয় চিকিৎসক লীগ, বঙ্গবন্ধু হোমিওপ্যাথি লীগ, আওয়ামী রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ, আওয়ামী যুব হকার্স লীগ, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী পরিবহন শ্রমিক লীগ, আওয়ামী নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, আওয়ামী ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ, আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু একাডেমি, বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ, ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী ওলামা লীগ অন্যতম। এ বিষয়ে সরকার প্রধান কতটা ওয়াকিবহাল? তিনি কি জানেন এসব? নাকি তাকে আঁধারে রেখে একটি মহল সুবিধা নিতে চাইছে? আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিবর্গকে হুমকি কি পর্যায়ে আছে তার প্রমাণ আবারো পাওয়া গেছে। নববর্ষের শুভেচ্ছা হিসেবে র্যাপিং পেপারে মুড়ানো কাফনের কাপড়, আতর, গোলাপজল ও প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। আমাদের দুর্ভাগ্য, এখনো হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রমনায় বোমা মামলা।
২০০১ সালে পহেলা বৈশাখ রাজধানীর রমনার বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা মেরে হত্যা করা হয় ১০ জনকে। এ ঘটনায় দায়ের হত্যা মামলায় হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ১৪ জঙ্গিকে আসামি করা হয়। বাঙালির বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ ছায়ানটের অনুষ্ঠানে হামলার এই মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দায়রা জজ রুহুল আমিন রায় দেন, তাতে মুফতি হান্নানসহ আটজনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। তবে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়ায় এখনো কারো দণ্ড কার্যকর করা যায়নি। আমরা রাহুমুক্ত বাংলাদেশ চাই। এই রাহু যেমন মৌলবাদ, তেমনি দখলদারও। যারা ভোগবাদী বিলাসে গরিবের ন্যায্য পাওনা প্রতিদিন হরণ করছে- এদের চিহ্নিত করা দরকার। এদের বিরুদ্ধে সরকারি ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তা না হলে, দেশের কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে। প্রজন্ম মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে অনেক কিছু থেকেই।
------------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৬
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ ভোর ৪:৫২
মনিহার বলেছেন: ওলামালীগের এর ২-১ জনকে যদি কখনো এরেস্ট করতো, তবে বুঝতাম, কে কাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।