নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘটনা মুছে যাচ্ছে, শঙ্কা কাটছে না

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:২২





ঘটনা মুছে যাচ্ছে, শঙ্কা কাটছে না
ফকির ইলিয়াস
=================================
অনেক ঘটনা মুছে যাচ্ছে। মিতু-তনু হত্যা মামলা ভুলে যাচ্ছি আমরা! চাপা পড়ে যাচ্ছে অনেক কিছু। সামনে এখন হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া। কী ভয়াবহ দৃশ্য। এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। তারপরও ঘটে গেল। ঘাতকরা মর্মান্তিক কাণ্ড করতে চেয়েছিল। সেটাই তারা করেছে। বিদেশিদের হত্যা করে বিশ্বব্যাপী হই-চই ফেলতে চেয়েছিল। সেক্ষেত্রে তারা আংশিক সফল হয়েছে। বিদেশি হত্যা কি ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠার কাজের অংশ? না কি সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অংশ? প্রশ্নটি সেখানেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

জঙ্গিদের যে পরিচয় আমরা পাচ্ছি- এরা ধনীদের সন্তান কেউ কেউ। গরিবও আছে। তবে এরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। ভালো লেখাপড়ার প্রত্যয় নিয়ে তাদের পিতামাতা তাদের বিদ্যাপীঠে পাঠিয়েছিলেন। কেউ তাদের ব্রেন ওয়াশ করেছে। এরা কারা? কীভাবে এরা এসব ছাত্রছাত্রীদের জীবনের দখল নিয়ে নিল? এই মুহ‚র্তে এটা নিয়ে অনেক কথা। কেউ কেউ বলছেন সামাজিক বৈষম্য, নিপীড়ন প্রজন্মকে এমন হতে ঠেলে দিচ্ছে। বৈষম্য কোথায় নেই? ইউরোপ-আমেরিকা-মধ্যপ্রাচ্য-এশিয়া কোথায় নেই? রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখে মানুষ আত্মঘাতী হবে? এটা কি কোনো বৈশ্বিক নীতিমালায় পড়ে? বাংলাদেশের রাজনীতির সর্বাংশ মানুষের কল্যাণের জন্য হচ্ছে- তা বলা যাবে না। বিশ্বের সব রাজনীতিই একই দোষে দুষ্ট। কিন্তু তা প্রতিরোধে-প্রতিবাদে গুপ্তহত্যা করে সমস্যার সমাধান করা যাবে? গিয়েছে কখনো?

বাংলাদেশে আরো জঙ্গি হামলা হতে পারে। এমন সংশয় প্রকাশ করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও নিজ নিজ এলাকায় আরো সচেতন থাকতে হবে। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আরো সচেতন রাখতে হবে। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও আমি বলব, তথ্য সংগ্রহ করা, নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করা এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।’ জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসীরা দেশে আরো হামলার পরিকল্পনা করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- ‘২০১৫ সালের তিনটি মাস যেভাবে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সহযোগীরা মিলে সারা দেশে অগ্নিসন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার মতো জঘন্য কার্যক্রম করতে পেরেছিল তারা কিন্তু থেমে থাকবে না। তারা জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েই কাজ করবে। কাজেই এ ব্যাপারে আরো সচেতন থাকতে হবে।’ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন- ‘আমি মনে করি, আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমন করতে হবে। বাংলাদেশকে এই সন্ত্রাসী বা জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত করতে হবে। মানুষের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’

গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলা গোটা বিশ্বের অনেক দরজায় কড়া নেড়েছে। কারা জঙ্গিদের প্রভাবিত করছে- তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে ভারতের একজন বক্তা ডা. জাকির নায়েকের নাম এসেছে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কে এই জাকির নায়েক, তার উদ্দেশ্য কি? তা নিয়ে কথা বলছেন নতুন করে উপমহাদেশের হাক্কানি আলেমরা। কি বলছেন এই জাকির নায়েক? তার কিছু বর্ণনা এখানে দেয়া যাক।

১। ডা. জাকির নায়েক বলেন, আল্লাহতায়ালাকে ব্রাহ্ম, বিষ্ণু নামে ডাকা যাবে তবে তা সুন্দর হতে হবে। (দ্রষ্টব্য : ডা. জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র, ভলিয়ম নং-২, পৃষ্ঠা : ৩৮০)

২। ডা. জাকির নায়েক বলেন, ‘উল্লিখিত দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামে চারজন মহিলা নবী এসেছেন। তারা হলেন- বিবি মরিয়ম আ., বিবি আছিয়া আ., বিবি ফাতিমা রা. এবং বিবি খাদিজা রা.।’ (লেকচার সমগ্র ভলিয়ম নং-১ পৃষ্ঠা : ৩৫৫)

৩। ‘আল্লাহর ক্ষমতা’ সম্পর্কে ডাক্তার জাকির নায়েকের মতবাদ হলো- ‘আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন না। আল্লাহ একজন চিকন-মোটা বা লম্বা-বেটে লোক তৈরি করতে পারেন না। এ রকম হাজার হাজার জিনিস আছে, আমি তালিকা দিতে পারি- যা সর্বশক্তিমান খোদা করতে পারেন না।’

এরকম অনেক কথাই বলেছেন এই জাকির নায়েক। অথচ দেখা গেছে, এসব পালিত জঙ্গিরা তাকে কিছুই বলেনি? কেন বলেনি? ইসলামের প্রতি তাদের প্রকৃত দরদ থাকলে তাদের তো এর তীব্র প্রতিবাদ করার কথা ছিল? তাহলে জাকির কাদের এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন?

ভারতের বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে বাংলাদেশের আলেমরা একমত নন বলে জানিয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এর অন্যতম কারণ হলো, আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মাযহাব মানেন। যেমন ঈমাম আবু হানিফার অনুসারীরা আমাদের দেশে অনেক বেশি। আর জাকির নায়েক, উনি মাযহাব মানেন না এবং উনার যে ফিলোসফি, উনার যে দর্শন, সেই দর্শনটা হলো জামায়াতি দর্শনের খুব কাছাকাছি।’

তিনি বলেছেন- ‘জিহাদ একটি পবিত্র শব্দ ইসলামে কিন্তু জিহাদ আর সন্ত্রাসকে একাকার করার পেছনে মওদুদীর সাহিত্যের প্রভাব অনেক বেশি। নামাজ পড়লে সওয়াব হবে, রোজা রাখলে সওয়াব হবে- এই মনে করে আমরা ইবাদত করি। কিন্তু মওদুদী বলেন, নামাজ হলো একটা ট্রেইনিং। এটা সৈনিক হওয়ার জন্য একটা ট্রেইনিং। মওদুদী আজানকে বলেছেন সেনাপতি যদি বিউগল বাজায় সৈনিকরা মসজিদের যায়।’

ডা. জাকির নায়েকের টিভি, সেলফোন এমন অনেক ব্যবসা আছে। বাংলাদেশে তা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অনেকেই এর বিরোধিতা করছেন। এরা কারা? আজ সময় এসেছে প্রতিটি সেক্টরে ভ্রান্ত মতবাদীদের চিহ্নিত করার। আশার কথা- দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিপথগামী তরুণ শিক্ষার্থীদের নৈরাজ্য, নৈরাশ্য, অন্ধত্ব ও বিপথগামিতার পথ থেকে সুস্থ চিন্তা ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে রাখতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ। দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমে প্রকাশার্থে এক বক্তব্যে তিনি এসব নির্দেশনা দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি উপাচার্যের ৮টি বিষয়ের ওই নির্দেশনায় ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষে ও আবাসিক হোস্টেলে নিয়মিত হাজিরা গ্রহণ নিশ্চিতকরণ, গরহাজির শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে প্রেরণ, প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের নজরদারি বৃদ্ধি করা, সহপাঠ কার্যক্রম (ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড) নিয়মিত অনুষ্ঠিত করে সেসব বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোকে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক অবহিত করা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলো কর্তৃক এসব পদক্ষেপের বাস্তবায়ন মনিটরিং করা, অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি এ বিষয়টির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টিম প্রেরণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধারা প্রতিটি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুসরণ করা দরকার।

খবর বেরিয়েছে- এসব জঙ্গি তৎপরতা রোধ করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় জঙ্গি প্রতিরোধ সেল গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত এই সেল শিক্ষার্থীদের আচরণ মনিটরিংয়ের পাশাপাশি সচেতনতা তৈরি করবে। কোনো শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক আচরণ বা সন্দেহভাজন গতিবিধি দেখলে প্রথমে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীকে মোটিভেশন করা হবে। এতে কাজ না হলে অভিভাবকদের জানানো হবে। এতেও কাজ না হলে সর্বশেষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তাকে সোপর্দ করা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের জঙ্গিবিরোধী প্রচারণা ও সচেতন করতে আরো কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে একটি খসড়া তৈরি করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শিগগির এ সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করতে পারে বলে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

দেখা যাচ্ছে, সরকার যা যা করা দরকার সব দিক থেকে চেষ্টা চালাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে গণমানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ যারা এই দেশ জঙ্গিবাদীদের হাতে তুলে দিতে চাইছে তারা বসে নেই। তাদের মোকাবেলা করার সাহস প্রজন্মকে জোগাড় করতে হবে। তা না করতে পারলে নিজেদের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে। কারণ মনে রাখা দরকার খুনির কোনো স্বজন নেই। থাকতে পারে না।
------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৬ জুলাই ২০১৬

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.