নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বেচ্ছান্ধ সমাজ ও নিখোঁজ মানুষ

২৩ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:০৪





স্বেচ্ছান্ধ সমাজ ও নিখোঁজ মানুষ
ফকির ইলিয়াস
======================================
একটি চলমান সমাজে যারা সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে তাদের বলা যায় স্বেচ্ছান্ধ। এরা স্ব-ইচ্ছায় অন্ধ জীবনযাপন করতে ভালোবাসে। এটা সমাজের পুরনো একটি ব্যাধি। এর সঙ্গে নতুন যে ব্যাধিটি যুক্ত হয়েছে- তা হলো স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। যারা স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হচ্ছে এরা যাচ্ছে কোথায়? তারা কি দেশান্তরি হচ্ছে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য? তারা কি ব্রিটিশ আমলের বাঙালি মানুষের মতো যাপন করতে চাইছে ‘কালিমাটি জীবন’? হ্যাঁ- কলকাতার কালিমাটি হয়েই মানুষ জাহাজে চেপে বসত জীবিকার সন্ধানে। যেত ইউরোপ আমেরিকায়।

বাংলাদেশের একটি যুবক শ্রেণি ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাচ্ছে! এরা যাচ্ছে কোথায়? কী মতলব তাদের? তাদের নেপথ্য শক্তিটি কী? গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর বাংলাদেশে বিষয়টি নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দেখা গেছে, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল এরা সবাই আগেই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তারা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। সম্প্রতি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই নিখোঁজদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সারা দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নিখোঁজ ২৬১ জনের একটি তালিকা দিয়েছে র‌্যাব। গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় ঘরছাড়া তরুণদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশের পর নিখোঁজদের অনুসন্ধানে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর আগে তাদের পক্ষ থেকে নিখোঁজ ১০ যুবকের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

সবাইকে অবাক করে দিয়েছে আরেকটি সংবাদ। দেশের অনলাইন মিডিয়া বিডিনিউজ২৪ ডটকমের একটি রিপোর্টে জানা গেছে, গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলায় ঘরছাড়া তরুণদের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশের পর নিখোঁজদের অনুসন্ধানে গিয়ে ঢাকার এক চিকিৎসকের পুরো পরিবার নিয়েই উধাও হওয়ার তথ্য মিলেছে। শিশু চিকিৎসক খন্দকার রোকনুদ্দীন (৫০) তার স্ত্রী নাইমা আক্তার (৪৫), দুই মেয়ে রেজওয়ানা রোকন (২৩) ও রামিতা রোকন (১৫), জামাতা সাদ কায়েসকে (৩০) নিয়ে সিরিয়া হয়ে আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে পরিবারের ধারণা। রোকনুদ্দীনের গাড়ি চালক হিসেবে আট বছর কাজ করেছিলেন জানিয়ে হেলাল নামের একজন বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে থেকে তাদের (রোকনুদ্দীনের পরিবার) কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন- ‘প্রথমে তারা মালয়েশিয়া যাবে, এরপর অন্য কোনো মুসলিম দেশে যাওয়ার কথা বলেছিল। এরপর থেকে আর কিছু জানি না।’ এই হলো একটি সংবাদ। এ রকম আরো সংবাদ হয়তো লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- কেন এমনটি ঘটছে?

মানুষ শান্তি চায়। জীবনে আনন্দ-সুখ চায়। এই শান্তির ছায়া বিসর্জন দিয়ে সে আত্মঘাতী জীবন বেছে নিচ্ছে কেন? কেন দেখাচ্ছে এই মানসিক বৈকল্য? গোটা বিশ্বজুড়ে এখন একটি কালো শক্তি দাঁত দেখাচ্ছে শান্তিকামী মানুষকে। এরা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে। কোনো ধর্ম মানুষ হত্যার মাধ্যমে শান্তির পায়রা উড়াতে পারে, তার উত্তর তাদের কাছে আছে কি?

বাংলাদেশে ঘটছে বিভিন্ন ধরনের মাঠ দখলের প্রতিযোগিতা। বিশ্বের এই রক্তাক্ত প্লটগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে উত্তপ্ত করতে চাইছেন কেউ কেউ। উঠছে এমন অভিযোগও। গুলশানে হামলার সময় তারেক রহমান পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন দাবি করে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, এই হামলায় বিএনপি নেতৃত্বের সম্পৃক্ততা আছে কি না- তা খতিয়ে দেখতে হবে। বিএনপির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘যখন গুলশানে ঘটনা ঘটেছিল তখন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে অনেকের সঙ্গে এবং তার এক কাজের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। এই হামলার পরে খালেদা জিয়া বলেছেন, সরকার ব্যর্থ হয়েছে। তিনি জঙ্গিদের আড়াল করতে এটা বলেছেন কি না, পরোক্ষভাবে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না, তা খুঁজে দেখতে আমি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলব।’

একটা প্রশ্ন এখানে আরো জটিল। বিএনপি-জামায়াত যে জাতীয় সংলাপের কথা বলছেন, তার নেপথ্যে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন লুকায়িত নয়তো? তা না হলে রক্তপাত বন্ধ করতে হলে তারা ‘সংলাপ’ এর দোহাই দিচ্ছেন কেন বার বার? কেন তারা নিজের শক্তি দিয়ে জঙ্গিবাদ ঠেকাতে এগিয়ে আসছেন না?

চলমান ঘটনায় সরকার বসে নেই। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার। তারপরও মন্ত্রীদের কথাবার্তা আরো শঙ্কিত করে তুলছে সাধারণ মানুষকে। পঁচাত্তরের পুনরাবৃত্তি রুখতে সবাইকে ‘সজাগ’ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। অন্যদিকে সম্প্রতি নিউইয়র্কে সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ বলেছেন- পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের উচিত ‘জাতীয় সংলাপের’ আয়োজন করা। গুলশান ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য গড়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। জাতীয় পার্টির আরেক নেতা রওশন এরশাদ জাতীয় সংসদে একটি দরকারি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন- ‘যখন ব্লুগার মারা হলো তখন তো আমরা গোড়া খুঁজতে যাইনি, গুরুত্ব দিইনি। আমরা গভীর চিন্তা করি না। সব কিছু ভাসাভাসা দেখি।’ রওশন এরশাদ আরো বলেন, ‘একদিনে এ ঘটনা ঘটেনি। অনেকদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা মিলে এই ঘটনা ঘটেছে। জনগণকে কি আমরা শান্তি দিতে পেরেছি?’ তিনি বলেছেন- ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি পড়াশোনা হচ্ছে, খোঁজ নিতে হবে। কেউ তো যায় না সেখানে খোঁজ নিতে। একটা শিক্ষিত ছেলে জাস্ট একটা টাইম বোমা হয়ে বেড়ে উঠবে?’ প্রশ্ন রেখেছেন তিনি।

বাংলাদেশে এখন যা ঘটছে তা রুখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, জঙ্গি তৎপরতা থেকে ফিরে আসলে তাদের প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে দেয়া হবে। আর জঙ্গি তৎপরতায় জড়িতদের বিষয়ে তথ্যদাতা একেকজনকে পাঁচ লাখ টাকা করে দেয়া হবে।

সময় এগিয়ে যাচ্ছে। পাল্টাচ্ছে আক্রমণের ধরন। তাই তা ঠেকাতে রাষ্ট্রকেও নতুন ভাবনা নিয়ে এগোতে হবে। জঙ্গিদের জামিন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন- ‘জামিন ঠেকাতে সকল জঙ্গির নাম-ঠিকানা সংবলিত একটি প্রযুক্তিগত অ্যাপলিকেশন দরকার। যেখানে বোতাম চাপলে কোন জেলার জঙ্গি কে কে আছে এবং তাদের জামিন কখন হয়েছে বা তাদের জামিনের আবেদন কখন করা হয়েছে, এটা যেন আমরা জানতে পারি’। তিনি আরো বলেছেন, ‘শুধু এ ধরনের সেল থাকলেই হবে না, তাদের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। এ ব্যাপারে ইনফরমেশন টেকনোলজির যত অ্যাপলিকেশন হবে, তত এটা দ্রুতগতির হবে। একটা সেল থাকা দরকার, শুধু তাদের ব্যাপারে পর্যালোচনা করার জন্য। আর সেই সেলকে শুধু ঘরে বসে থাকলে হবে না, তাদের অনবরত যোগাযোগ করতে হবে পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের সঙ্গে, অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সঙ্গে’।

সমাজে যারা বিপথগামী হচ্ছে তাদের ফিরিয়ে আনতে সরকারকেও উদার হতে হবে। এদের পুনর্বাসনের সুযোগ দিতে হবে, যদি তারা নিজেদের ভুল বুঝে সমাজে ফিরে আসতে চায়। হ্যাঁ একটি পরিবারই একটি রাষ্ট্রের অন্যতম প্রহরী। একজন অভিভাবক যদি তার প্রজন্মের বিষয়ে সত্য গোপন না করেন তবেই রাষ্ট্র তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে পারে। মনে রাখা দরকার আত্মঘাতী হামলাকারীরা তাদের পরিবার-পরিজনকে নিয়েই ‘জান্নাতবাসী’ হতে চাইছে। বিশ্বে এমন অনেক নজির স্থাপিত হয়েছে ইতোমধ্যে। তাই এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রথমে সেই পরিবারের অন্যান্য সদস্যকেই দাঁড়াতে হবে জোরালো ভূমিকা নিয়ে।
------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২৩ জুলাই ২০১৬

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.