নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরাশক্তির চোখের দিকে তাকিয়ে

৩০ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৭:২৯




পরাশক্তির চোখের দিকে তাকিয়ে
ফকির ইলিয়াস
============================
সত্তরের দশকে আমরা বেড়ে উঠেছি পরাশক্তির লাল চোখের দিকে তাকিয়ে। আশির দশকে তা বেশ বড় পাথর হয়েই বেড়ে উঠেছিল। তারপর পতন। পরাশক্তি বলতে আমরা এক সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন-যুক্তরাষ্ট্রকেই বুঝতাম। ‘গ্লাসনস্ত’, ‘পেরেস্ত্রেইকা’-এর খেলায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ে। সব কৃতিত্বই আমেরিকার, বলেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। এরপর বিশ্ব অতিক্রম করেছে আরো কয়েক দশক। কিন্তু পরাশক্তির লাল চোখ কি থেমেছে? বিশ্বে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ এখন একটি বড় আলোচিত বিষয়। এই জঙ্গিবাদের উৎপত্তি কোথা থেকে? কে এদের পৃষ্ঠপোষক? তবে কি এরাও এখন বিশ্বে ছায়া পরাশক্তি? এমন অনেক কথাই আমরা শুনছি প্রতিদিন।

আমরা ইতিহাস থেকে জানছি, যুক্তরাষ্ট্র একটি যুদ্ধবাজ জাতি। বেলজিয়ামের সাংবাদিক মিশেল ক্লুন ‘শান্তির অক্ষ’ বা ‘অ্যাক্সিস ফর পিস’ নামক বইয়ে গত ৫০ বছরের নানা যুদ্ধে মার্কিন ভূমিকা সম্পর্কে লিখেছেন- ‘মার্কিন সরকার নানা গণমাধ্যমের সহায়তায় বিভিন্ন সময়ে যখনই যুদ্ধের আগুন জ্বালানোর সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছে শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছে, আর এ জন্য যত মিথ্যা প্রচারণা চালানো যায় তা চালিয়েছে। সেসব মিথ্যাচার প্রকাশিত হওয়ার ফলে পরবর্তীতে বার বার কলঙ্কিত হওয়া সত্ত্বে। আর এসবই করে যাচ্ছে তাদের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধগুলোকে বৈধতা দেয়ার নামে।’ এই লেখক মিথ্যা অজুহাতে চাপিয়ে দেয়া দশটি মার্কিন যুদ্ধের দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেছেন। তার মতে, এসব যুদ্ধ হলো- ভিয়েতনাম, গ্রানাডা ও পানামার যুদ্ধ, ইরাকের ওপর ১৯৯১ ও ২০০৩ সালের যুদ্ধ, ইয়োগোস্লোভিয়া, আফগানিস্তান এবং ভেনিজুয়েলা ও ইকুয়েডরের যুদ্ধ। গণমাধ্যমে যেসব অজুহাত দেখিয়ে এসব যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে পরবর্তীতে দেখা গেছে যে, সেসব তথ্য ছিল মিথ্যা এবং এসব মিথ্যাচারের ফলে নিহত হয়েছে লাখ লাখ স্থানীয় বেসামরিক নাগরিক ও ঘটেছে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ।

আজ যে তালেবানের কথা বলা হয়, এরাও এক সময় মদদ পেয়েছিল মার্কিনিদের। রাশিয়াকে আফগানিস্তান থেকে বিদায় করতে তালেবানদের হাতেই অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছিল। পরে এই তালেবানই বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে।

তালেবানরা ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বরে ইরান-সীমান্তবর্তী হেরাত প্রদেশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। এর এক বছরের মাথায় তারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখলে নিয়ে নেয়। তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট বোরহানউদ্দিন রব্বানী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী আহমদ শাহ মাসুদকেও পরাজিত করে তারা। এরপর ১৯৯৮ সালের দিকে তারা আফগানিস্তানের ৯০ ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে সক্ষম হয়। তালেবানদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও স্থাপনা ধ্বংসের অভিযোগ ওঠে। ২০০১ সালে তারা আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে বামিয়ানে গৌতম বুদ্ধের ঐতিহ্যবাহী মূর্তি ভেঙে ফেলে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতাসীন থাকার সময়ে মাত্র তিনটি দেশ তাদের স্বীকৃত দিয়েছিল। দেশ তিনটি হলো- পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে সে সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আফগানিস্তান জাতিসংঘের স্বীকৃতি হারিয়েছিল এবং ইরান, ভারত, তুরস্ক, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্য-এশিয়ার অধিকাংশ দেশ তালেবান শাসনের বিরোধিতা করেছিল এবং তালেবান-বিরোধী আফগান নর্দার্ন অ্যালায়েন্সকে সাহায্য করেছিল। পরবর্তী সময়ে এই জিহাদি জোশ আধুনিক রূপ পায়। এরা জেহাদকে জঙ্গিবাদী ইসলাম হিসেবে বিশ্বাস করে এবং জঙ্গিবাদ প্রচার ও চর্চা করে।

প্রমাণিত হতে থাকে, এদের কাছে কুরআনের মানবিক শিক্ষাগুলোর কোনো মূল্য নেই। বরং এরা সাধারণ, নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষকে বোমা, গ্রেনেড হামলা দ্বারা হত্যা করে নিজেদের ‘গাজী’, মারা গেলে ‘শহীদ’ নামকরণ করে। যা শুধু অযৌক্তিকই নয়, অমানবিকও। এদের মধ্যে নেতা হিসেবে লাদেন যতখানি মূল্যায়ন পেয়েছেন, এদের কাছে নবী মুহাম্মদ (সা.) ততখানি মূল্য পান না! আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এদের নেতা লাদেনসহ এরা মুসলমানদের স্বার্থ বিনষ্টকারী সিআইএ ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ-অস্ত্রের কাছে নতজানু হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদী স্বার্থ রক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ দাসের মতোই কাজ করেছে একসময় আফগানিস্তানে। এখানেই তারা মাদক তৈরি যা সমাজতান্ত্রিক আফগানিস্তানে হ্রাস পেয়েছিল, তার চাষ, উৎপাদন ও বাণিজ্যের বড় অংশীদারে পরিণত হয়। এই আলকায়েদা তালেবান আমলে নারী ধর্ষণের হার কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় উল্লেখযোগ্যভাবে এবং এদের হাতে নারী শিক্ষা, সবার জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা, জীবিকা সব কিছুই বন্ধ হয়ে যায়! এদের অমানবিক নিরীহ জনসমাগম স্থানে বোমা গ্রেনেড হামলায় প্রতিদিন আফগানিস্তানে, পাকিস্তানে সাদ্দাম-পরবর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত ইরাকে শত শত নারী, পুরুষ, শিশু নিহত হচ্ছে! এই আলকায়েদা, আই এস, তালেবান দানবের প্রতিদিনের খাদ্য হচ্ছে হাজার হাজার নিরপরাধ নারী-পুরুষ শিশুর প্রাণ যাদের মধ্যে অধিকাংশ সুন্নি ও শিয়া মুসলিম। এ ছাড়া সংখ্যালঘু মুসলিম কুর্দি ও খ্রিস্টান রয়েছে।

বর্তমানে এরা অর্থাৎ পাকিস্তানজাত তালেবান দল আইএসআই নির্দেশিত লক্ষ্যবস্তু-ভারতে, বাংলাদেশে চিহ্নিত করে নানা পন্থায় নাশকতা সৃষ্টি করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

অতীত জানান দিচ্ছে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল। তবে তা কিন্তু ছিল সাময়িক। আমরা দেখছি দুই দশক পর নতুন আঙ্গিকে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ শুরু হয়েছে। তবে পার্থক্যটা হলো স্নায়ুযুদ্ধে এক সময়কালে পক্ষ ছিল দুটি যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। এখন পক্ষ বেশ ক’টি। চীন, ভারত এমন কি ইরানও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর হচ্ছে। এখন দেখতে হবে, এ শক্তিগুলোর মধ্যে সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়। বিশ্বের প্রয়োজন ছিল বাস্তববাদী নীতি গ্রহণ করা। বিশ্ব নেতারা যদি এ বাস্তববাদী নীতি গ্রহণ না করেন, তাহলে বিশ্বে উত্তেজনা থাকবেই। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, এ বাস্তববাদী নীতির বড় অভাব। যুক্তরাষ্ট্র আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ সূচনা করে মুসলিম বিশ্বকে পদানত রাখার পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র শুরু করেছে- এটা পাশ্চাত্যের বিশ্লেষকরাই বলছেন। দেশটি আফগানিস্তানে যে যুদ্ধের সূচনা করেছিল, তা এখন সম্প্রসারিত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। ইরাক-সিরিয়ায় সীমিত যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের সীমানাও পরিবর্তিত হচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়া ও চীনের ওপরও ‘চাপ’ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের রাজনৈতিক দৃশ্যপট দ্রুত বদলে যাচ্ছে এভাবেই।

আমাদের আজ অনেক পরাশক্তি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এই মোকাবিলা যারা করছেন তারা নিরস্ত্র মানুষ। তারা শান্তিকামী। তা বাংলাদেশে হোক কিংবা আমেরিকায়ই হোক। তাই মানুষকে আজ বুঝে-শুনে পা ফেলতে হবে। কারা এই পৃথিবীর পথ রক্তাক্ত করছে তা চিহ্নিত করতে হবে। কথা বলতে হবে। প্রতিবাদ করতে হবে। মানুষের আজ প্রতিবাদ-প্রতিরোধই প্রধান শক্তি, বিশ্বের দেশে দেশে।
-----------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৩০ জুলাই ২০১৬

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.