![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
শিক্ষার নামে কী শেখানো হচ্ছে?
ফকির ইলিয়াস
====================================
অনেক কিছুই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে। খবর বেরিয়েছে, রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রীর পরিচালিত ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বাড্ডা থানা শাখার আমিরসহ ১৮ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মানববতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি হওয়া জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামী ওই স্কুলের প্রিন্সিপাল বলে জানিয়েছে পুলিশ। শামসুন্নাহার নিজামী নিজেও জামায়াতের নেতা। তিনি দলটির মহিলা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল জানিয়েছেন, ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলটির দু’টি শাখা রয়েছে। একটি গুলশানে আর অন্যটি মেরুল বাড্ডার যে স্কুলটিতে অভিযান চালানো হয়েছে সেটি। দু’টি শাখারই অধ্যক্ষ শামসুন্নাহার নিজামী। এম এ জলিল জানিয়েছেন, বাড্ডা থানা জামায়াতের আমির ফখরুদ্দিন মো. কেফায়েতুল্লাহ স্কুলটির ভাইস প্রিন্সিপাল। তিনিই এই শাখাটি চালাতেন। তাকে আটক করা হয়েছে। তার পরিবারের অন্য সদস্যদেরও আটক করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। বাড়ির মালিক বিল্লাল হোসেনসহ মোট ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ রকম আরো কিছু সংবাদ পড়া যাক; যা এই কয়েক সপ্তাহে ঘটেছে।
১. কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রীদের একমাত্র হল নবাব ফয়জুন্নেছা ছাত্রী হল থেকে জঙ্গি সংগঠনের ৩ মহিলা সদস্যকে ২৬ জুলাই বুধবারের মধ্য রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী কানিজ ফাতেমা বাতুল, অর্থনীতি বিভাগের ছাত্রী সালমা আক্তার, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী সম্পা। ছাত্রীদের গ্রেপ্তার ও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুর রশীদ জানিয়েছেন, ছাত্রীরা নিজেরাই স্বীকার করেছে যে তারা জড়িত রয়েছে। তাদের কাছে বিপুল পরিমাণ ডা. জাকির নায়েকের বইপত্র, আফগানিস্তানের বিভিন্ন বইসহ জিহাদি বই পাওয়া গেছে।
২. আরো ভয়াবহ সংবাদ। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৪ মহিলা জঙ্গিকে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। তাদের ব্যবহৃত ল্যাপটপ জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সন্ধান পাওয়া গেছে, বড় ধরনের মহিলা জঙ্গি নেটওয়ার্কের তথ্যও। নারী জঙ্গিরা জেলা পর্যায়ে পাড়া-মহল্লায় ধর্ম প্রচারের নামে ও ছোট ছোট সাপ্তাহিক ধর্মসভার আড়ালে কাজ করছে। পুুরুষদের পাশাপাশি জঙ্গিবাদে মহিলাদের তৎপরতায় শঙ্কা বাড়ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে যেমনি, তেমনি জনগণের মধ্যেও। শুধু ঢাকায় নয়, নারী জঙ্গি আটক করা হয়েছে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, লক্ষীপুর, ঝিনাইদহ থেকেও।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতা পরিকল্পনা করার পর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ ও অস্ত্র নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সব কাজেই এখন নারী জঙ্গিদের ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি অর্থায়নের মাধ্যমে নারীদের দিয়ে গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। সারা দেশেই জামায়াত-শিবিরের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী ও সংগঠনে নারীদের নিয়োগ করা হচ্ছে।
এরা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের অনেক প্রত্যন্ত এলাকায়। জঙ্গি সংগঠনগুলো এই নারী জঙ্গিদের দিয়ে ধর্মীয় ও জিহাদি কথা বলে ধর্মপ্রাণ মা-বোনদের উদ্বুদ্ধ করে এবং আর্থিক সহায়তা নিয়ে থাকে। কিন্তু আড়ালে তারা জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। যে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিল প্রকাশ্য নারী বিদ্বেষী, সেই তারাই গড়ে তুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক ইসলামী ছাত্রী সংস্থা। তাদের একটি অংশকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে এই সংস্থার সদস্য প্রায় আট হাজার। এর মধ্যে এক হাজার সাতাত্তর জন জঙ্গিবাদে দীক্ষিত। এমন রিপোর্টই বের হচ্ছে বিভিন্ন মিডিয়ায়।
দেশব্যাপী প্রশিক্ষণে বিশাল নেটওয়ার্ক নিয়ে নেমেছে এই নারীরা। গ্রেপ্তার হয়েছে যারা, তাদের কাছে ককটেল, গ্রেনেড তৈরির উপকরণ, জিহাদি গ্রন্থ, লিফলেট, প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচিসহ নানা তৎপরতার তথ্য পেয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণীরাও জড়িত হয়ে পড়েছে। জামায়াত পরিচালিত ও অর্থায়নে গড়ে ওঠা বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানগুলো জঙ্গি মনমানসিকতা তৈরি করে আসছে। শিক্ষিত তরুণীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে জঙ্গিপনার যোগসূত্রগুলো কাজে লাগাচ্ছে। এই যে শিক্ষার নামে এক ধরনের সন্ত্রাসী উন্মাদনা তা কে ঠেকাবে, কিভাবে ঠেকানো যাবে?
ঢাকায় প্রকাশ্যেই তৎপরতা চালাচ্ছে দা’ওয়াতে ইসলাম নামের উগ্র মৌলবাদী একটি সংগঠন। মোহাম্মদপুরের একটি চারতলা বাড়ি ভাড়া নিয়ে রীতিমতো সাইনবোর্ড টাঙিয়ে চলছে কার্যক্রম। মাস দুই আগ থেকে সংগঠনটি মহিলা শাখার কার্যক্রম চালাচ্ছে। সংগঠনটির বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত থাকার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের হয়ে কর্মী সংগ্রহ করার অভিযোগ রয়েছে। দেশের ১৭ জেলায় থাকা ৭০টি বিহারি ক্যাম্প ও জামায়াত-শিবিরের প্রভাব থাকা জেলাগুলোতে প্রায় তিন বছর ধরে গোপন তৎপরতা চালাচ্ছে সংগঠনটি। তবে আচমকা ঢাকায় হেড অফিস খুলে তৎপরতা চালানোর ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা যাচ্ছে, দাওয়াতে ইসলামী একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠন হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিহ্নিত। জঙ্গিবাদ নিয়ে গবেষণা করা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাতের গবেষণা মোতাবেক দেশে জঙ্গি ও উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের সংখ্যা ১২৫। এর মধ্যে দা’ওয়াতে ইসলাম অন্যতম। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও সংগঠনটিকে অর্থায়ন করছে।
বাংলাদেশে তরুণদের বিপথগামী করে এই কালো আঁধারে নামাচ্ছে কারা? আমাদের স্মরণ আছে, ১৯৯৯ সালে কবি শামসুর রাহমানকে হত্যাচেষ্টার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়। ২০০৪ সালের ২৭ ফেরুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে টিএসসিতে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে লেখক হুমায়ুন আজাদকে আহত করা হয়। পরবর্তীতে বিদেশে তার মৃত্যু, ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের ব্লুগার ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা, ২০১৩ সালের গত ৯ এপ্রিল দিনদুপুরে বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতা ও যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আবাসিক ছাত্র আরিফ রায়হান দীপকে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ওয়ারী থানাধীন রামকৃষ্ণ (আর কে) মিশন রোডের বাড়িতে জবাই করে ইমাম মাহদীর প্রধান সেনাপতি ও বিশ্বত্রাণ কর্তা দাবিদার লুৎফর রহমান ফারুক (৫৫), তার ছেলে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সদরঘাট শাখার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সানোয়ারুল ইসলাম মনির (৩০), গৃহকর্মী হিসেবে ওই বাড়িতে থাকা লুৎফুর রহমানের সেবক বা খাদেম মঞ্জুর আলম (২৮), মুজিবুল সরকার (৩২), শাহীন (২৪) ও রাসেলকে (৩৭) হত্যা, ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাড়িতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের শান্তির পথে ও কাফেলা নামক ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুুরুল ইসলাম ফারুকীকে জবাই করে হত্যা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিত রায়কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা ও তার স্ত্রীকে আহত করা হয়। রাজধানীতে ব্লুগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যাকালে দুই মাদ্রাসা ছাত্র হাতেনাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর উগ্র মৌলবাদী সংগঠন ব্যাপক আলোচনায় চলে আসে। এসব হত্যাকাণ্ডে উগ্র মৌলবাদী সংগঠন জড়িত বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা এক প্রকার নিশ্চিত।
সবচেয়ে অবাক করা কথা হচ্ছে, এক ধরনের শিক্ষার নামে এদের গড়ে তোলা হয়েছে। যার ফলশ্রæতিতে হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ায় জঘন্য আক্রমণ করা হয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে জঙ্গিবাদের প্রসার আমাদের সবার জন্যই শঙ্কার কারণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ একদিন শিক্ষিত মানুষের দেশ হবে। দেশের কোনো ছেলেমেয়েই শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবে না। প্রত্যেক ছেলেমেয়ের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত রাখবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারাই তো আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আগামীতে দেশকে তারাই নেতৃত্ব দেবে। এ জন্য এখন থেকেই তাদের যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। তাই জঙ্গিবাদ নয়, সুস্থ মস্তিষ্কেই বেড়ে উঠবে আগামীর প্রজন্ম। আমরাও এমন প্রত্যাশা করি। কিন্তু এ জন্য সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনোভাবেই যেন অজগর ঢুকতে না পারে।
-------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥শনিবার, ২৭ আগস্ট ২০১৬
©somewhere in net ltd.