নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

জন কেরির ঢাকা সফর ও একাত্তরের যুক্তরাষ্ট্র

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:৩৬




জন কেরির ঢাকা সফর ও একাত্তরের যুক্তরাষ্ট্র
ফকির ইলিয়াস
=====================================
আমেরিকার বিদেশ বিষয়কমন্ত্রী জন কেরি ঢাকা সফর করে এলেন। তিনি ঢাকায় একটি খুব দরকারি সত্য বলেছেন। তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তিনি আরো বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন। তাই বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়েও বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকবে বলে প্রত্যাশা করছে ওয়াশিংটন। কেরির ঢাকা সফর সংক্ষিপ্ত হলেও সেটা দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ওপর গভীর ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই সফরের পর ঢাকা-ওয়াশিংটন উভয় পক্ষ একই আশা ব্যক্ত করেছে। জন কেরি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়তে বাংলাদেশের অভিযাত্রায় বন্ধু হিসেবে সঙ্গী হতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে যেতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের দর্শনার্থী বইয়ে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে মানুষের অনন্য সাধারণ এক সাহসী নেতার জীবনাবসান হয়েছে। কিন্তু আজ বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে, তারই কন্যার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়তে বাংলাদেশের এই অভিযাত্রায় বন্ধু হিসেবে সঙ্গী হতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত। শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে একসঙ্গে কাজ করে যেতে চাই আমরা।’

আমরা ভুলে যাইনি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেস ও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মধ্যে দ্ব›দ্ব দেখা দিয়েছিল শুরুতেই। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সহায়তা করবে কিনা- এ নিয়ে দ্বিমত দেখা দেয়। কারণ এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়লে সোভিয়েত ইউনিয়নও জড়িয়ে পড়বে- এ ভয় ছিল। ১৯৭১ সালের ৬ মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধিকার আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সিআইএ’র সমন্বয়ে গঠিত সিনিয়র রিভিউ কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সম্ভাব্য ভাষণ, ২৫ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান, পূর্ব-পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলন ও সামরিক উপায়ে সংঘাত মোকাবিলা এবং ভারতের ভূমিকা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। অর্থাৎ বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন যখন স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ নিতে শুরু করল, তখন থেকে ঘটে যাওয়া সব কিছুতে কলকাঠি নেড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সব ঘটনাই সংঘটিত হয়েছে আমেরিকার জ্ঞাতসারে। ২৫ মার্চ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত সময়কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধে না জড়িয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে। জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার গোপনে পাকিস্তানের সহায়তায় চীন সফর করেন। ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মৈত্রী চুক্তির প্রতিপক্ষ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নয়ন হয়। এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ সমস্যার ক‚টনৈতিক সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে এবং ভারতকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ না গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানায়।

এর পরের ঘটনাগুলো আরো জটিল। সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত ভারতীয় সেনা সদস্যরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সামরিক সরকার ও বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের (যারা ভারতে অবস্থান করেছিলেন) মধ্যে গঠনমূলক একটি রাজনৈতিক সংলাপ আয়োজনের চেষ্টা করে। কিন্তু তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সময়ে বাংলাদেশের যুদ্ধ উপমহাদেশে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে উপমহাদেশের সংঘাতের জন্য মুখ্যত ভারতকে দায়ী করে। ৪ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে হেনরি কিসিঞ্জার নিরাপত্তা পরিষদের আহ‚ত অধিবেশনে যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি সম্বলিত মার্কিন প্রস্তাব পেশ করার প্রস্তুতি নেন। নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার পর মার্কিন প্রতিনিধি জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা, ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্য স্ব-স্ব সীমান্তের ভেতরে ফিরিয়ে নেয়া এবং সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবকে ক্ষমতা প্রদান করার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এভাবেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্র।

বঙ্গবন্ধু হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কি ছিল সে বিষয়ে অনেক কথা আছে। বাংলাদেশ : দি আনফিনিশড রেভুলিউশন, বইয়ে লরেঞ্জ লিফসুলজ লিখেছেন- ‘মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার এবং পাকিস্তানের ভুট্টো যে বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রে জড়িত, এর প্রমাণও রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রবল প্রতাপশালী দেশের বিরোধিতা সত্ত্বেও মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। কিসিঞ্জারের সাবেক স্টাফ অ্যাসিস্ট্যান্ট রজার মরিস এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিবের প্রতি তার (কিসিঞ্জার) ঘৃণার কথা স্বীকার করেছেন। মরিস জানান, ‘শেখ মুজিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে কিসিঞ্জার তার ব্যক্তিগত পরাজয় বলে মনে করতেন। কিসিঞ্জারের বিদেশি শত্রুর তালিকার সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তিরা হচ্ছেন আলন্দে, থিউ ও মুজিব। এ তিনজন তার বিভিন্ন পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দেন। মুজিব ক্ষমতায় আসেন সবকিছু অগ্রাহ্য করে। আমেরিকা ও তার অনুগ্রহভাজন পাকিস্তানকে সত্যিকারভাবে পরাজিত করে এবং মুজিবের বিজয় ছিল আমেরিকার শাসকদের পক্ষে অত্যন্ত বিব্রতকর।’

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- শেখ মুজিবকে হত্যার চার দিন পর ১৯৭৫ সালের ১৯ আগস্ট দিল্লিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম স্যাক্সবের প্রতিবেদনে বলা হয়, দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত উপপ্রধান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবের কাছে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার একটি প্রতিবেদনের সমালোচনা করেছেন। স্যাক্সবে তারবার্তায় লিখেন, ‘তার সহকর্মী যুগ্ম সচিবকে বলেছেন- বাংলাদেশের সামরিক অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে জড়িয়ে ভারতের গণমাধ্যমে অব্যাহত অভিযোগের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নেব। এ ধরনের অভিযোগ অবমাননাকর ও ভারত সরকারের নিজস্ব বিধি-নিষেধের লঙ্ঘন এবং এটি যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’ তারবার্তায় বলা হয়, ‘এ ধরনের অভিযোগ সংবাদ আকারে প্রকাশ বন্ধ করতে নিজস্ব বিধিবিধান প্রয়োগের পদক্ষেপ নিতে ভারত সরকার কেন প্রস্তুত নয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। বাংলাদেশের ব্যাপারে লেখালেখির ক্ষেত্রে বিদেশি প্রতিনিধিদের সতর্ক করেছে ভারত সরকার। সুতরাং দূতাবাস আশা করে, নিজেদের সংবাদকর্মীদের বিষয়েও অন্তত তারা একই কাজটি করবে।’ এরও দুই দিন পর ২১ আগস্ট স্যাক্সবে আরো একটি তারবার্তা পাঠান। এতে ভারতের ব্লিটজ ম্যাগাজিনে মুজিব হত্যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সমালোচনা করা হয়।

মনে রাখা দরকার সেই অবস্থা এখন আর নেই। আর নেই বলেই এখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশকে পাশে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। সময় বদলেছে। মানুষকে এগোতে হবে। আর তা হতে হবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে। বাংলাদেশকে নিজেদের স্বার্থরক্ষা করতে হবে। আশার কথা, বাংলাদেশ এখন একটি প্রকৃত উন্নয়নশীল দেশ। তাই অনেকের চোখই এখন বাংলাদেশের দিকে। রাষ্ট্রপক্ষকে সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে সব সময়।
----------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.