নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

সহজলভ্য সোশ্যাল মিডিয়া ও সৃজনশীল রুচিবোধ

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২৫





সহজলভ্য সোশ্যাল মিডিয়া ও সৃজনশীল রুচিবোধ
ফকির ইলিয়াস
===========================================
পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হলো। ঈদের আনন্দে ত্যাগের মহিমাই ছিল প্রধান উপজীব্য। কুরবানি ছিল এই ঈদের অন্যতম উপমা। আমরা দেখলাম সেই কুরবানি নিয়ে অনেকে এমন কিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেছে- যা রীতিমতো খুব ভয়াবহ কাজ। জবাই করা গরুর ওপর একজন বসে আছে। আরেকজন জবাই করা গরুর মাথা কাঁধে নিয়ে উল্লাস করছে। আরো কয়েকজন জবাই করা গরুর রক্তে পা ভিজাচ্ছে ! কী জঘন্য এমন মানসিকতা! ভাবতে অবাক লাগে, কিছু মানুষ সব নোংরা ছবি প্রতিনিয়ত পোস্ট করছে ফেসবুকে। কেউ তাদের সন্তানদের স্কুলসনদ পোস্ট করছে। কেউ ডাক্তারে গিয়েছিল। ডাক্তার তাকে কি রিপোর্ট দিয়েছে তা ছবি আকারে দিয়ে দিচ্ছে ফেসবুকে। কী এমন হীন রুচিবোধে আক্রান্ত হচ্ছে আজকের সমাজ! সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত জীবনচিত্র প্রদান করা কতটা বুদ্ধিমত্তার কাজ? বিষয়টির গভীরে সবার যাওয়া দরকার। বিখ্যাত নিউজ চ্যানেল সিএনএনের সোশ্যাল রিপোর্টে এসেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ভিত্তিহীন খবর সবচেয়ে বেশি প্রচার করা হয় সোশ্যাল সাইটগুলোতে, যা মিডিয়া সম্পর্কে সমাজে বাজে ধারণা সৃষ্টি করছে।

আমরা দেখছি, শুধু ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন, মাইস্পেস, হাইফাইভ, বাদু, নিং ইত্যাদিতেই নয়, বাংলাদেশিদের উপস্থিতি রয়েছে এমন ব্লুগগুলোও অনর্থক আর আজেবাজে প্রচুর কমেন্টে ভরা। এসব সাইটের অপব্যবহার হচ্ছে প্রচুর। যেসব ব্লুগের লেখা খুব বেশি সম্পাদনা করা হয় না সেসব ব্লুগে যার যা খুশি তা-ই লিখে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে ধর্মীয় বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালানো হয়- এ খবর নতুন নয়। অনেক ক্ষেত্রে সফলও হচ্ছে তারা। গুজব তৈরির জন্য তারা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন, গুগল প্লাস ইত্যাদির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে। সম্প্রতি কক্সবাজারের রামু ও উখিয়ায় হামলার নেপথ্যেও ছিল ওই গুজব। সেখানেও সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করেছিল ওই চক্রটি। হলি আর্টিজান ইস্যুতেও এমন মিডিয়া ব্যবহার করা হয়েছিল বলে তথ্য বেরিয়ে আসছে। যারা প্রতিদিন ক্রমশ খুব বেশি ফেসবুকনির্ভর হচ্ছেন তাদের জন্য শঙ্কাজনক খবরও আছে। দেশে-বিদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্মীদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করে অফিস কর্তৃপক্ষ। সেখানে আপত্তিকর কিছু থাকলে কর্মী সম্পর্কে বাজে ধারণার সৃষ্টি হয়; এমন কি কর্মী চাকরিচ্যুতও করা হয়ে থাকে। চাকরিপ্রার্থী বা কর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় যে কোনো নেতিবাচক কার্যকলাপ প্রতিষ্ঠানের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজারদের চোখে পড়ে প্রথমেই। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ ম্যানেজার সোশ্যাল মিডিয়ায় গুরুত্ব দেন। সেখানে বিতর্কিত কোনো পোস্ট বা মন্তব্য থাকলে প্রার্থীকে অন্য দৃষ্টিতে দেখা হয়। আশার কথা, বাংলাদেশে অফিস আদালতে সামাজিক গণমাধ্যমকে আরো কার্যকর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে গেল মার্চ মাসে ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা-২০১৬’ নামে এই নির্দেশিকা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সরকারি প্রতিষ্ঠানে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে দায়িত্বশীল হতে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ থাকলেও সরকারি চাকরিজীবীকে দায়িত্বশীল নাগরিকসুলভ আচরণ ও অনুশাসন মেনে চলতে হবে। এ ছাড়া জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট কোনো আধেয় (কনটেন্ট) প্রকাশ না করাসহ কিছু বিধি-নিষেধও মানতে হবে। এতে বলা হয়, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ৪২ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এর মধ্যে ২৯ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুক্ত আছেন। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৮০ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন। আর আট শতাধিক সরকারি অফিসে দাপ্তরিক কাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও কর্মচারীদের করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, দাপ্তরিক যোগাযোগ ও মতবিনিময়, সমস্যা পর্যালোচনা ও সমাধান, জনসচেতনতা ও প্রচারণা, নাগরিকসেবা সহজ করা ও উদ্ভাবন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ, জনবান্ধব প্রশাসন ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সেবাগ্রহীতার অভিযোগ নিষ্পত্তিতে সরকারি অফিসগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে পারবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট পরিচালনার নির্দেশনায় বলা হয়, অ্যাকাউন্টে কোনো ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করা যাবে না। প্রতিষ্ঠানের কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা তিন থেকে পাঁচজনের একটি মডারেটর দল থাকবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয়প্রতিপন্ন করে এবং লিঙ্গবৈষম্য বা এ সংক্রান্ত বিতর্কমূলক কোনো কনটেন্ট প্রকাশ করা যাবে না। জনমনে অসন্তোষ বা অপ্রীতিকর মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে এমন কনটেন্ট প্রকাশেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, সরকারি প্রতিষ্ঠানকে তিন মাসে একবার নিজ দপ্তরের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের অগ্রগতি ও কার্যকারিতা পর্যালোচনা করতে হবে। এর সবই ইতিবাচক দিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেই ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশে গণসচেতনতা তৈটি হচ্ছে কি? আন্তর্জাতিক সোশ্যাল মিডিয়া এক্সপার্টরা বলছেন- সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকে ব্যক্তিগত তিন তথ্য দেয়া কখনোই উচিত নয়। সেগুলো হচ্ছে- আইডি কার্ড বা ভোটার পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত তথ্য বা ছবি এবং নিজের মেডিকেল রেকর্ড। এগুলোতে ব্যক্তিগত অনেক তথ্যই থাকে যা অপরাধীদের হাতে চলে গেলে তারা বেআইনি কাজ করতে পারে। উত্তেজনার বশে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা আগেই ফেসবুকে পোস্ট করে দেন। সেটাও না করা উচিত। এ তথ্য পেয়ে ফেসবুকে থাকা চোররা আপনার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাড়িতে হানা দিতে পারে। এমনকি পথেও আক্রমণ করতে পারে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য কখনই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ সাইবার অপরাধীরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। এরপর অনায়াসে অ্যাকাউন্ট তছরুপ করতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক চ্যানেলগুলো ও বিশেষ করে ফেসবুক অনেক সমস্যাও সৃষ্টি করেছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ল্যারি রোজেন এক গবেষণায় দেখেছেন, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ফেসবুকের ব্যবহার মানুষের মধ্যে আত্মপূজার মনোভাব সৃষ্টি করে এবং এর ফলে দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের মানসিক অপরিপক্বতা। যেমন- অসামাজিক আচরণ, তীব্র টেনশন বা উত্তেজনা সৃষ্টি, কিশোর ও কিশোরীদের সহিংস আচরণ প্রভৃতি। রোজেনের গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু ও বয়স্কসহ ফেসবুকের বহু গ্রাহক মানসিক রোগের শিকার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে আবেগীয়ভাবে জড়িয়ে আছেন ব্যবহারকারীরা। এ ছাড়া এর নিত্য ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে, তা-ও বের হয়ে এসেছে ওই মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের একটি গবেষণায়। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যবহারকারীদের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহারের ফলে অন্য ব্যবহারকারীর প্রতি ঈর্ষা বা হিংসার জন্ম নিলে তা থেকে বিষণœতা বোধের জন্ম হতে পারে। গবেষণার সঙ্গে জড়িত অধ্যাপক মার্গারেট ডাফি বলেন, যেভাবে ফেসবুক ব্যবহার করেন ব্যবহারকারীরা, তার ফলে এর প্রতি নিজেদের প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, যদি ফেসবুক ব্যবহারকারীরা এর ভালো দিকগুলো বেছে নিয়ে নিজের পরিবার ও পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখেন এবং জীবনের মজার ও গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন, তাহলে ফেসবুক হতে পারে বেশ মজার ও স্বাস্থ্যকর কর্মকাণ্ডের জায়গা। তবে পরিচিত কেউ অর্থনৈতিকভাবে কতটা ভালো আছে, বা পুরনো কোন বন্ধু তার সম্পর্ক নিয়ে কতটা সুখে আছে, তা দেখার জন্য যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন, তাদের মধ্যে ঈর্ষা বা হিংসার জন্ম নিতে পারে। এর ফলে তাদের মধ্যে ক্রমেই বিষণœতাবোধের সৃষ্টি হতে পারে। খুন, ধর্ষণ করে সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। অনেক অপকর্মের সাক্ষী রাখা হচ্ছে ফেসবুক-টুইটার-ব্লুগকে। এতে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। নতুন প্রজন্মের কেউ কেউ ভাবছে এটাই তাদের আইকন। বিশেষ করে গ্রামে গ্রামান্তরে সোশ্যাল মিডিয়ার, ইন্টারনেটের ছড়াছড়ি মানুষকে দিশেহারা করে তুলছে। অনলাইন সাংবাদিকতার নামে কেউ কেউ মানুষকে জিম্মি করে চাঁদাবাজিও করছে। এর প্রতিকার দরকার। সামাজিক প্রতিরোধ দরকার। মানুষের রুচি হওয়া দরকার মানুষের মতো। তাহলে তো পশু আর মানুষে কোনো পার্থক্য থাকল না। এই সাহস ও শক্তি জোগাতে হবে তরুণ প্রজন্মকেই। তাদের হাত উঁচু করে বলতে হবে, থামাও এমন অপব্যবহার। থামাও এমন দূরাচারি মানসিকতা।
-------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা॥ শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৩

একটি পেন্সিল বলেছেন: ইদানীং কিছুদিন ধরে ফেসবুক আর ব্লগ একটু বেশিই ব্যাবহার করা হচ্ছে। কমাবো কিভাবে

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:২৪

আহা রুবন বলেছেন: আমরা আধুনিক হবার আগেই আধুনিক যন্ত্রপাতি হাতে এসে পড়েছে। তাই এই অবস্থা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.