![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
আমাদের হতাশা বাড়ছে কেন?
ফকির ইলিয়াস
====================================
দেশটি ষোলো কোটি মানুষের। এমন একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দেশে সবকিছু ঠিকঠাক রাখা কঠিন কাজ! এই কথাটি কেউ কেউ বলেন। কিন্তু কথাটি কি যুক্তিযুক্ত? দেশে মানুষ বেশি থাকলে সমস্যা থাকবে। অপরাধ থাকবে। তাই অপরাধ দমনে, আইনও হতে হবে কঠোর। সরকারকে হতে হবে শক্ত। তা না করে, যদি কোনো কৃপা পেয়ে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়, তাহলেই এসব অজগর ফণা তুলতে পারে সরকারের বিরুদ্ধেই।
এই কয়েক দিনে বাংলাদেশে বেশ কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। খবর বেরিয়েছে, হলি আর্টিজান হত্যাকাণ্ডের সম্পৃক্ততা থেকে তাহমিদকে জামিন দেয়া হয়েছে। হাসনাতেরও কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ। গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় হাসনাত রেজা করিম ও তাহমিদ হাসিব খান জড়িত কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এ মামলায় গ্রেফতার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে এরই মধ্যে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (টিআইএস) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন এবং তার জবানবন্দির তথ্য মেলানোর পরই জানা যাবে এ ঘটনায় হাসনাত জড়িত কিনা। তাহমিদের বিষয়েও জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাননি তদন্ত কর্মকর্তারা। তথ্য গোপন এবং তদন্ত সংস্থাকে অসহযোগিতার অভিযোগে তাহমিদকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল। তাকে জামিন দিয়েও গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এসব তথ্য দিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, গুলশানের ঘটনায় তাহমিদ জড়িত নয় এমন কথাও বলা যাবে না। ভবিষ্যতে তদন্তে যদি তার বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় তবে তাকে সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার করা হবে। এদিকে গুলশান হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র ভারত থেকে এলেও এর উৎস সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অপরদিকে গুলশান হামলার অর্থ মধ্যপ্রাচ্য থেকে এলেও অর্থদাতাকে এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে উল্লেখ করেন মনিরুল ইসলাম। মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ অভিযানে নিহত হয়েছে বা আত্মহত্যা করেছে। কেউ কেউ পলাতক। তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে রহস্য উন্মোচন করা যাবে। তাহমিদ জামিন পেয়েছেন। হয়তো এখন হাসনাতও জামিন পাবেন। তাহলে বিভিন্ন মিডিয়ায় আমরা অস্ত্র হাতে যে তাহমিদকে দেখলাম- তার কি হলো? নাকি বিশেষ কোনো কায়দায় তাহমিদ, হাসনাতকে মামলা থেকে বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে? এসব প্রশ্নের জবাব কি? কেন এমন আঁধার ঘিরে ধরছে আমাদেও চারিপাশ?
সিলেটে খাদিজা আক্তার নার্গিসকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছে বদরুল আলম নামের একজন ছাত্র নামধারী দুর্বৃত্ত। তার আরেকটি পরিচয় আছে। সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার সহকারী সম্পাদক। বদরুল সম্পর্কে অনেক কথা ইতোমধ্যে মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। হামলাকারী শাবি ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের বিরুদ্ধে হলে ভাঙচুর ও লুটপাটসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) ভর্তির পর থেকেই বেপরোয়াভাবে চলাফেরা শুরু করে। বেপরোয়া চলাফেরার কারণেই মূলত তার উত্থান। সে ক্যাম্পাসে উগ্র মেজাজি হিসেবে পরিচিত ছিল। শাবি সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার চেচানবাজারের সোনাইগাতি গ্রামের সৌদি প্রবাসী সাইদুর রহমানের ৪ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে বদরুল দ্বিতীয়। পারিবারিক সচ্ছলতা তেমন নেই। ২০১১ সালে তার বাবা সাইদুর রহমান দেশে ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দিশেহারা পরিবারের হাল ধরেন বদরুলের বড় ভাই। তিনি পেশায় দর্জি ব্যবসায়ী। পরিবারের মেধাবী সন্তান হিসেবে বদরুল মূল্যায়িত হওয়ায় তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখতে থাকেন পরিবারের সদস্যরা। তার ছোট ভাই কৃষিকাজ করে। ছোট বোন ও আরেক ছোট ভাই লেখাপড়া করছে। এলাকায় তেমন একটা পরিচিতি ছিল না বদরুলের। শাবি ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে সে নিজেকে পরিচিত করতে এলাকায় রাজনৈতিক সহযোগীদের নিয়ে যাতায়াত করত। এভাবেই সে ক্রমশ খুনি হয়ে ওঠে। এখানে যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো, ছাত্রলীগের যে নতুন কমিটি গত কয়েক মাস আগেই হয়েছে, তাতে তাকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এখন এটা জানা যাচ্ছে, সে একটি উচ্চ বিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করছে গেল প্রায় দুই বছর ধরে। এই কথাটি স্বীকার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। তিনি মিডিয়াকে বলেছেন, ‘আপনারা এরই মধ্যে দেখেছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রেস রিলিজে বলা হয়েছে, বদরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত নয়। সে বর্তমানে সুনামগঞ্জের ছাতকের আলহাজ আয়াতুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছে। সুতরাং সে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগের কর্মী নয়।’
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিবাহিত কিংবা চাকরিজীবী কেউ এর সদস্য হতে পারবে না। তাহলে কি নতুন কমিটি হওয়ার আগে, কেন্দ্রীয় নেতারা বিষয়টি খতিয়ে দেখেননি? তাহলে পুরো দেশেই এমন অনেক নেতাকর্মী রয়েছেন যারা বিবাহিত কিংবা চাকরিজীবী? এ বিষয়ে বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতারা কি কিছু করছেন? তারা খতিয়ে দেখছেন কি, তাদের গঠনতন্ত্র সমুন্নত থাকছে কিনা? সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে মুখোমুখি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কলেজ ছাত্রী হত্যা চেষ্টার ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না, প্রত্যেককে আইনের আওতায় নেয়া হবে। তারপরও আমরা যেন আশাবাদী হতে পারছি না। কারণ দেশে এখন একটা নতুন রেওয়াজ চালু হয়েছে। যারা সরকারি মদদপুষ্ট, তারা নানাভাবে যেন পার পেয়ে যাচ্ছে। তাদের বিদেশ পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হচ্ছে। তাদের জেল থেকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের ক্ষমা করে দেয়া হচ্ছে। আমি একটি প্রশ্ন করতে চাই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরবের ইতিহাস কি আজকের সব নেতাকর্মী জানেন? তারা সবাই কি তা পড়েছেন? যদি পড়ে থাকেন তাহলে তারা এমন খুনি হতে যাবেন কেন?
মনে রাখা দরকার ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি সময়ের দাবিতে জন্ম হয়েছিল এই সংগঠনের। সময়ের প্রয়োজন মেটাতেই এগিয়ে চলা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। জন্মের প্রথম লগ্ন থেকেই ভাষার অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধের গণঅভ্যুত্থান, সর্বোপরি স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের ছয় দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় রাজ পথে ছিলেন সদা সোচ্চার। উর্দুর বিপক্ষে ধর্মঘটে তিনি ও তাঁর বন্ধুদের কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ছাত্রলীগই প্রথম বাংলা ভাষার জন্য ১০ দফা দাবি উত্থাপন করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আন্দোলন জোরাল করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের ভূমিকা প্রণিধানযোগ্য। ১৯৬২ সালের তৎকালীন আইয়ুব খান সরকার কর্তৃক গঠিত শরিফ কমিশন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর লক্ষ্য ও স্বার্থের অনুক‚লে একটি গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিল। সেই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব প্রধান প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গণআন্দোলন ও গণজাগরণ তৈরি করে। সেই বাষট্টির রক্তঝরা দিনগুলোতে রক্ত ঝরেছে অসংখ্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর।
একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বের সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের দীর্ঘ পথ চলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হারিয়েছে তার সহাস্রাধিক নেতাকর্মীকে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ, বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের সমাবেশে বলেছিলেন, দানবের সঙ্গে লড়াইয়ে যে কোনো পরিণতিকে মাথা পেতে বরণের জন্য আমরা প্রস্তুত। তেইশ বছর রক্ত দিয়ে এসেছি। প্রয়োজনবোধে বুকের রক্তে গঙ্গা বহাইয়া দিব। তবু সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও বাংলার বীর শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করব না। সেই প্রেরণায় মুক্তিযুদ্ধে এই সংগঠনের ১৭,০০০ (সতের হাজার) বীরযোদ্ধা তাঁদের বুকের তাজা রক্তে এঁকেছেন লাল-সবুজের পতাকা, এঁকেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ কিলোমিটারের এক সার্বভৌম বাংলাদেশের মানচিত্র। এরপরের অনেক ঘটনা ছাত্রলীগের নেতাদের কি বলতে হবে?
দেশে আজ ভোগের রাজনীতি কোনো আইনই মানছে না। আর মানছে না বলেই কেউ কেউ খুব তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনি হয়ে উঠছে। ইভটিজিংয়ে সাড়া না দেয়ায় খুন করে ফেলা তো তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনাই। আমরা হতাশ হচ্ছি। বার বার হতাশ হচ্ছি। এই হতাশার শেষ কোথায়, সে কথা একমাত্র জানেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কারণ তিনি জানেন অনেক কিছু। এই জানার মাঝে এই দেশের মানুষের আশাগুলো স্থান পাবে- সেটাই প্রত্যাশা।
-----------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৮ অক্টোবর ২০১৬
©somewhere in net ltd.