![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ও গণমানুষের প্রত্যাশা
ফকির ইলিয়াস
====================================================
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। দলে গুরুত্বপূর্ণ রদবদল হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এসেছেন, বিশিষ্ট রাজনীতিক ওবায়দুল কাদের। তাঁর একটি সুসংহত রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে। বলা দরকার, তিনি তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতা। ছাত্রলীগ করেছেন। জেল-জুলুম সহ্য করেছেন। নিষ্ঠ থেকেছেন জাতির জনকের আদর্শের প্রতি। দলে গণতন্ত্র দরকার। এটি একটি প্রয়াস। বাংলাদেশের মতো দেশে দলীয় সভাপতি বদলানো সহজ কাজ নয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই- মানুষ বাংলাদেশে দলের চেয়ে নেতা-নেত্রীর নামকেই প্রাধান্য দেয়। এবারও তাই হয়েছে। দলীয় প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাই থেকেছেন। তিনি দলের ঐক্যের প্রতীক, তা বারবারই প্রমাণিত হয়েছে।
এবারের কাউন্সিলের পরও শেখ হাসিনা জাতির প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন- তা আমার কাছে তার দূরদর্শী রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বহন করেছে বলে হয়েছে। তিনি বলেছেন- ‘আমি অনুরোধ জানাবো, আপনারা আপনাদের নিজ নিজ এলাকায় ইমাম, ধর্মীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখবেন। প্রত্যেক মসজিদে যেন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়। কোনো এলাকায় জঙ্গিবাদ থাকবে না, এ সিদ্ধান্ত নিয়ে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।’ তিনি আরো বলেছেন- ‘বিশ্বব্যাপী এ জঙ্গিবাদ বিরাট সমস্যা। এ সমস্যার সমাধান আমাদের নিজেদের করতে হবে। কারো মুখাপেক্ষী থাকলে চলবে না।’
তাঁর এ কথাটি খুবই সমসাময়িক ও জরুরি। যা আজ গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে তুলেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে যোগ করেছেন- ‘আমরা চাই বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হোক। আমরা যে উন্নয়নগুলো করেছি, এ উন্নয়নের প্রচারটা করতে হবে। জনকল্যাণে মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে কাজ করতে হবে। সামনে ইলেকশন, মনে রাখতে হবে। ইলেকশনের প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণের জন্য কী কী কাজ করলাম, জনগণকে তা জানাতে হবে। আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে আরো উন্নয়ন হবে। অর্থনীতিকে সুসংহত করার জন্য যে কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি- এ কথাগুলো না বললে মানুষজন জানবে কীভাবে?’
২২, ২৩ অক্টোবরের কাউন্সিল ওবায়দুল কাদেরকে তিন বছরের জন্য এ পদটি দিয়েছে। তিনি একজন চৌকস মন্ত্রী। মাঠে-ঘাটে তাঁকে দেখা যায়। তিনি জানিয়েছেন, দলের তৃণমূল পর্যায়ে তাঁর অথরিটি ছিল না। এখন তিনি তা পেয়েছেন। দলকে গোছাতে এখন বেশি সময় দেবেন। তিনি বলেছেন- ‘আমি আমার পরিশ্রমের পুরস্কার পেয়েছি। আমি আমার রাজনীতির জীবনের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পেয়েছি। শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ স্বীকৃতি আমাকে দিয়েছেন।’
আমরা দেখেছি, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার যে ডাক দিয়েছেন, সে অনুযায়ী শক্তিশালী ‘টিমওয়ার্ক’ গড়ে তোলা, তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত গণসংযোগ দৃঢ় করা একটি প্রধান কাজ। জনগণের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আচরণ পরিবর্তন করার কথাও বলেন নতুন সাধারণ সম্পাদক।
তাঁর কথাগুলোতে দৃঢ়তা আছে। তিনি বলেছেন- ‘এখন আমার সুবিধা হবে। আমি এখন রাস্তায় যাবো, তৃণমূলে যাবো। আমি এখন একদিকে রাস্তা দেখবো, অন্যদিকে- আগে যেহেতু আমার অথরিটি ছিল না, সে জন্য আমি সমাধান দিতে পারতাম না, শুধু শুনতাম। এখন আমি সামাধান দিতে পারবো, প্রয়োজনে মোবাইল ফোনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলীয় সভাপতির সঙ্গে কথা বলে বা অন্য কারো সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে স্পটেই সিদ্ধান্ত দিতে পারবো।’ তিনি এ কথাও যোগ করেছেন- ‘আওয়ামী লীগ একটি বিশাল দল। এ দায়িত্ব সুবিশাল। আমি একটি অঞ্চলের হলেও আমার মধ্যে কোনো আঞ্চলিকতা থাকবে না। আমি যখন এখানে আসি, তখন একটি অঞ্চলের শ্লোগান শুনেছি। তবে এখন আমি আঞ্চলিকতার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করবো। সবার ওপরে দেশ।’
হ্যাঁ, সবার ওপরে দেশ- এ কথাটিই একজন রাজনীতিকের ব্রত হওয়া উচিত। এখানে আরেকটি কথা বলা খুবই প্রাসঙ্গিক। তা হলো, এবার বিভিন্ন তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা আওয়ামী লীগে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে আসার অনুরোধ করেছিলেন। জয়, তা বিনয়ের সাথেই প্রত্যাখ্যান করেছেন। দলের পদে থাকার অনাগ্রহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘বিদেশে থেকে দলীয় পদ ধরে রাখা ঠিক না। তবে আমি দল ও দেশের জন্য কাজ করতে চাই।’ ২৩ অক্টোবর বিকালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের গবেষণা সেল সিআরআইর স্টল পরিদর্শনে গেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে, জয় রাজনীতির জন্যই নিজেকে তৈরি করছেন। আমরা প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে তাকালে দেখবো, সোনিয়া গান্ধী চাইলে রাহুল গান্ধীকে যে কোনো মন্ত্রী আগেই বানাতে পারতেন। কিন্তি তিনি তা করেননি। বরং সময় নিচ্ছেন। বলা দরকার- এটাই ধীশক্তিসম্পন্ন রাজনীতির প্রবহমান ধারা গোটা বিশ্বব্যাপী। সজীব ওয়াজেদ জয়, বাংলাদেশের গণমানুষের জন্য যা করছেন তা খুবই উল্লেখযোগ্য বিষয়। তিনি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং হাইটেক পার্কে বরাদ্দের ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বেশ আগেই। এর আগে তার নির্দেশেই হাইটেক পার্ক উন্নয়নের দায়িত্ব পাওয়া সামিটের হাইটেক পার্কের জায়গা বন্ধক রেখে ব্যাংক ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করা হয়। তিনি বেশ স্পষ্টই জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে তার নিজস্ব বিনিয়োগেই উন্নয়ন কাজ করতে হবে। কোনো ধরনের অনৈতিক সুযোগ দেওয়া যাবে না। তিনি নৈতিকতা ও সততার সঙ্গে দেশের স্বার্থে দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মকর্তাদের আহবান জানিয়েছিলেন গত নভেম্বর মাসে।
আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দুইদিনই কাউন্সিলররা সজীব ওয়াজেদ জয়কে এবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। এ প্রেক্ষিতে সম্মেলনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সজীব ওয়াজেদ জয় এখনই অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আছে। ও তো আমার উপদেষ্টা।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এবারই প্রথম কাউন্সিলর হয়েছেন ৪৫ বছর বয়সী সজীব ওয়াজেদ জয়। পিতৃভূমি রংপুর থেকে তাকে কাউন্সিলর করা হয়। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনও কাউন্সিলে অংশ নেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে পেয়ে আগের দিনের মতোই উৎফুল্ল ছিলেন দলের নেতারা। শেখ হাসিনাপুত্র কাউন্সিলে যোগ দিলে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাদের শেষ ভরসা। আর এখানে আছেন আরেকজন শেষ ভরসা জয়। জয় আসবে, তার বন্ধুরা আসবে। তিনিই নেতৃত্ব দিয়ে ভবিষ্যতে দলকে এগিয়ে নেবেন।’ একটি আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবারে শেখ হাসিনার বক্তব্যে। তিনি বলেছেন, ‘এ আওয়ামী লীগই আমার পরিবার। আওয়ামী লীগই আমার আপনজন। আওয়ামী লীগকে আমি সবচেয়ে বেশি সময় দিই। আমি নিজের ছেলেমেয়েকেও এত সময় দিইনি। আমার বাচ্চাদের আমি স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছি। আপনাদের বেশি সময় দিয়েছি।’
এগিয়ে যাওয়ার জন্য ‘নতুনভাবে নেতা নির্বাচিত করার’ তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যেখানে যেভাবে থাকি আওয়ামী লীগ থেকে তো বাইরে থাকবো না। আছি আওয়ামী লীগই তো থাকবো। কিন্তু আওয়ামী লীগকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে।’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষকে একটি দেশ দিয়েছে। এ দলের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। এ দলই এ দেশে ঘাতক দালালদের বিচার করেছে। আমার মনে পড়ছে, ঘাতক দালাল নির্মূল সমন্বয় কমিটির বিভিন্ন সভায়, আমি যখন বারবার শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে প্রশ্ন করতাম- ‘তাহলে কীভাবে এ বিচার হবে, মা’? তিনি মুচকি হেসে উত্তর দিতেন- আওয়ামী লীগই এ বিচার করবে। হ্যাঁ, করেছেও। শহীদ জননী দেখে যাননি। কিন্তু বিচার হয়েছে, বিচার চলছে। এটাই শহীদ জননীর দূরদর্শী চিন্তার আলো।
আওয়ামী লীগের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। এ প্রত্যাশা দলটিকে পূরণ করতে হবে। প্রথমত দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিমুক্ত যে সমাজের চেতনায় এ দেশে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, সেই চেতনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে। ভোগের রাজনীতির নামে যারা দলের সুনাম ক্ষুণ্ন করছেন, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এ সব পদলোভীকে দল থেকে ছাঁটাই করতে হবে। দলে বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির প্রচলনকে প্রাধান্য দিতে হবে।
একটি রাষ্ট্রের মানুষের পরম চাওয়া হচ্ছে ন্যায়বিচার ও শান্তি। আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব সেই শাণিত চেতনা ও ঐক্যে এগিয়ে গেলেই প্রজন্ম তাদের সাথে থাকবে এ দেশের সকল মৌলিক প্রয়োজনে।
--------------------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক খোলাকাগজ || ঢাকা || ২৮ অক্টোবর ২০১৬ শুক্রবার
©somewhere in net ltd.