নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

দাম্ভিকতার কাছে নৈতিকতার পরাজয়

১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৪




দাম্ভিকতার কাছে নৈতিকতার পরাজয়
ফকির ইলিয়াস
==============================
ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতেছেন। হেরে গেছে আমেরিকা! না, ঠিক এমনটি বলা যাবে না। কারণ এ দেশের মানুষ ভোট দিয়েই ট্রাম্পকে ক্ষমতায় এনেছেন। এবারের নির্বাচনে পপুলার ভোট খুব কমই ব্যবধান ছিল হিলারি-ট্রাম্পের মাঝে। কেন এমন হয়েছে? এর বিশ্লেষণ অনেকভাবে করা যায়। মিডিয়া জরিপে হিলারি এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু মানুষের মন জয় করতে পারলেন না কেন? পারেননি, কারণ তার রাজনীতি মার্কিনিদের পরিচিত। তারা আর পরিচিত মুখ দেখতে চায়নি। হ্যাঁ, হিলারির স্থলে যদি বার্নি স্যান্ডার্স ডেমোক্রেটিক মনোনয়ন পেতেন তাহলে অবস্থা অন্য রকম হতো। না, ডেমোক্র্যাটরা সেই সুযোগ দেননি। এবার যে রিপাবলিকানরা ক্ষমতায় আসবে তা প্রায় নিশ্চিত ছিল। কিন্তু একটাই চান্স ছিল, রিপালিকান প্রার্থী একজন নারী নিপীড়ক, লম্পট, অরাজনীতিক, বেফাঁস কথক। তার পরও এ দেশের মানুষ তাকে মেনে নিলেন! কেন মেনে নিলেন?

এর অন্যতম কারণ হলো, ‘আই উইল মেক এ চেঞ্জ’ বলে বারাক ওবামা ক্ষমতায় এসেছিলেন। তাকে আট বছর সুযোগ দিয়েছিল মার্কিনিরা। তিনি খুব বেশি কিছুই পারেননি। বরং আমেরিকানদের হেলথ কেয়ারের বারোটা বাজিয়েছেন। হেলথ ইন্স্যুরেন্স বাড়িয়েছেন। সুবিধা কমিয়েছেন। এ জন্য ক্রমশ ক্ষেপতে শুরু করেছিলেন মার্কিনিরা। ওবামা দরদ দেখিয়েছেন এমন কিছু শক্তির প্রতি যাদের মূলত মোটিভ কী তা বিশ্ববাসীর অজানা। তিনি ‘শরণার্থীদের’ সুবিধা দেয়ার নামে আমেরিকার দরজা খুলে দিতে চেয়েছেন। সিরিয়া থেকে শরণার্থী যারা আসবে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী তা কি জানে আমেরিকানরা? না জানে না। তাহলে এরা খুনি না দস্যু তা জানবে কে? ট্রাম্প এই ভীতি ঠিকমতোই আমেরিকানদের মনে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। আর পেরেছিলেন বলেই তারা বলেছে, আমেরিকা আমাদের। এখানে বহিরাগতদের পোদ্দারি আমরা মেনে নেব না।

ট্রাম্প প্রথম ১০০ দিনে যা করবেন তার একটা হিসাব তিনি ইতোমধ্যে দিয়ে দিয়েছেন। সেগুলো খুবই ইন্টারেস্টিং। এগুলোর মাঝে আছে- যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০ লাখের বেশি অপরাধী ও অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করার প্রক্রিয়া শুরু করা। যেসব দেশের সরকার তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানাবে তাদের ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা বাতিল করা। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সব ধরনের নির্বাহী আদেশ রদ করা। হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের লবিংয়ের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা। কংগ্রেস সদস্যদের দায়িত্বে থাকার মেয়াদ কমিয়ে আনা। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় জাতিসংঘের নেয়া প্রকল্পগুলোতে অর্থ দেয়া বন্ধ করা। ওই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামোগত সংস্কারে কাজে লাগানো। চীনকে ‘কারেন্সি ম্যানিপুলেটর’ দেশ ঘোষণা করা। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ এবং নির্মাণ খরচ মেক্সিকো সরকারের কাছ থেকে আদায়ের কথা নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন পর্যন্ত বলে এসেছেন ট্রাম্প। জয়ের পর এ বিষয়ে নিজের সমর্থকদের পুনরায় আশ^স্ত করেছেন তিনি। তবে কবে নাগাদ বা কিভাবে কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে কিছু বলেননি। কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে ‘নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড’ চুক্তি নিয়ে ট্রাম্প নতুন করে আলোচনা শুরু করতে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

ইরানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ছয়টি ধনী দেশের সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তির ভবিষ্যৎ ট্রাম্পের জয়ের কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ট্রাম্প ওই চুক্তি ভেস্তে দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন। যদিও ১২ বছরের পরিকল্পনার পর ইরানের সঙ্গে ছয়টি দেশের একযোগে করা এ চুক্তি থেকে কত দ্রুত ট্রাম্প সরে আসতে পারবেন তা এখনো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এবং সিনেট রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত বলে ট্রাম্প কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন বলেই আপাতত ধরে নেয়া যায়। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, ট্রাম্প একটা বড় পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন এবং একটি গোষ্ঠী তাকে পাঠিয়েছে। এরা কারা? তাদের স্বার্থ কী? তাও আমরা জেনে যাব আগামী এক বছরের মাঝেই।

যে কথাটি না বললেই নয় তা হলো হিলারি যে খুব যোগ্য প্রার্থী ছিলেন, তা কিন্তু নয়। তিনি ফার্স্ট লেডি ছিলেন। তিনি নিউইয়র্কের সিনেটর ছিলেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তার মুখ আমেরিকানরা অনেক দেখেছে, আর দেখতে তারা রাজি ছিল না। অন্যদিকে ট্রাম্পের নৈতিকতা কী জঘন্য, তা আর কি বলতে হবে! আমরা দেখেছি- আফ্রিকান-আমেরিকান, স্প্যানিশ ভাষী ল্যাটিনো, নারী, শ্বেতাঙ্গদের ভোটে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার আশায় ছিলেন হিলারি। এর আগে ২০১২ সালে ওবামা আফ্রো-আমেরিকান ভোটারদের এ অংশ থেকে পেয়েছিলেন ৯৩ শতাংশ ভোট। আর হিলারি এবার পেয়েছেন মাত্র ৮৮ শতাংশ ভোট। একই অবস্থা দেখা গেছে ল্যাটিনো ভোটের ক্ষেত্রেও। ২০১২ সালে ওবামা ল্যাটিনো ভোটের ৭১ শতাংশ পেয়েছিলেন। আর এবার হিলারির ক্ষেত্রে তা নেমে এসেছে ৬৫ শতাংশে। ওবামা ২০১২ সালে নারীদের মধ্য থেকে ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। আর হিলারির জুটেছে ৫৪ শতাংশ। তরুণদের ভোট হিলারি পেয়েছেন মাত্র ৫৫ শতাংশ। ২০১২ সালে ওবামা পেয়েছিলেন ৬০ শতাংশ ভোট।

বন্দুক নিয়ন্ত্রণ, সমকামীদের অধিকার, ইরান ও কিউবার সঙ্গে নতুন সম্পর্ক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এমন বেশ কিছু নীতির প্রবল বিরোধী রিপাবলিকানরা। ফলে ব্যালটে সেই বিরোধিতারই স্বাক্ষর রেখে ট্রাম্পের হাতে তুলে দিয়েছেন তারা আমেরিকার ক্ষমতাভার। তিনি আগামী চার বছরের প্রেসিডেন্ট এটাই সত্য। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকার কথা স্বীকার করে নিলেও প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, আমরা সবাই এখন তার সাফল্যই কামনা করছি। ট্রাম্পের কাছে সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে কাজ করে যাবেন বলেও জানিয়েছেন ওবামা।

হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে এক বিবৃতিতে ওবামা বলেছেন, ‘দেশকে একতাবদ্ধ করা এবং নেতৃত্ব দেয়ার ব্যাপারে আমরা সবাই এখন ট্রাম্পের সাফল্য কামনায় অবিচল রয়েছি।’ নির্বাচনে হিলারির পরাজয়ে মুষড়েপড়া ডেমোক্র্যাটদেরও হতাশা দূরে সরিয়ে রাখার আহ্বান জানিয়ে ওবামা তার বক্তব্যে ইতিবাচক সুরে কথা বলেন। শান্তিপূর্ণভাবে ট্রাম্পের হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন জানিয়ে ওবামা বলেন, ‘এটি আমাদের গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য। আগামী কয়েক মাসে আমরা বিশ্বকে তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দেখাব।’

ইলেকশনের পর দিন ৯ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মিছিল হয়েছে। মিছিলকারীরা বলেছে, ট্রাম্প আমাদের প্রেসিডেন্ট নয়। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার ভোরে বার্কলে ও ওকল্যান্ড শহরে কয়েকশ মানুষ রাস্তায় নেমে ট্রাম্প ‘আমার প্রেসিডেন্ট নয়’ বলে স্লোগান দেয়। পিটসবার্গ, সিয়াটল, পোর্টল্যান্ড ও ওরেতেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। পেনসিলভেনিয়া থেকে ক্যালিফোর্নিয়া, ওরেগন থেকে ওয়াশিংটন স্টেট সব জায়গায় শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। ওরেগনে বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধের পাশাপাশি রেল চলাচলেও বাধা তৈরি করে। নিউইয়র্কে কয়েক হাজার মানুষের মিছিল যখন ট্রাম্প টাওয়ারের দিকে যাচ্ছিল তখন আমি ফিফথ অ্যাভিন্যুর ওপর দাঁড়িয়েই মিছিলটি দেখছিলাম।

অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, ‘ভাগ হয়ে যাওয়া’ আমেরিকাকে এক করার সময় এখন। যারা অতীতে আমাকে সমর্থন দেননি, তারা সংখ্যায় কম হলেও আমি তাদের কাছে সাহায্য ও দিকনির্দেশনার জন্য যাব। যার মধ্য দিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারব, দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারব।’ তিনি বলেন, ‘আমেরিকাকে আমি সব সময় শীর্ষে রাখব।’ তিনি বলেছেন, ‘হিলারি অনেক দিন ধরে পরিশ্রম করেছেন। দেশের জন্য তার অবদান আমাদের ঋণী করেছে।’

আমরা যারা ট্রাম্পকে ভোট দেইনি, এখন তিনিও আমাদের প্রেসিডেন্ট। এটাই আমেরিকার গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সত্য আমাদের মানতেই হবে। ট্রাম্পকে জিতিয়ে দিতে আরো কিছু কাজ হয়েছে। তা হলো- এখানে গোত্রগত, ধর্মগত বিশ্বাসী কিছু মানুষের লম্পঝম্প। তারা হিলারির পক্ষে এমনভাবে খেটেছেন, যেন হিলারি অন্যান্য দেশের রাজনীতিও নিয়ন্ত্রণ করবেন। আবারো বলি, ধনকুবের হলে রাজনীতিক না হলেও চলে। তা প্রমাণ করেছেন ট্রাম্প। নীতি সেখানেই মার খেয়েছে। এই ধারা বিশ্বের অন্যান্য দেশেও অনুসরণ করা হবে, যা বিশ্ব রাজনীতির জন্য শুভ নয়। অবশ্য মার্কিনি জাঁদরেল রাজনীতিকরা ট্রাম্পকে গাইড দিয়ে এগিয়ে নেবেন, সেই ভরসা রেখেই এগোচ্ছেন এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষ।
--------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০১৬

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: ট্রাম্প কি করে তা’ দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.