নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাক শিল্প

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪৫



বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পোশাক শিল্প
ফকির ইলিয়াস
==========================================
বিশ্ব-বাণিজ্যে নতুন দরজা খুলতে চাইছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, আমরা ব্যবসা করতে চাই। মানুষের ভাগ্য ফিরাতে চাই। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিনেই ‘ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) ট্রেড ডিল’ বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যে তার শ্রমমন্ত্রী হিসেবে ফাস্ট ফুড ফ্যাঙ্কাইজি হার্ডিজ অ্যান্ড কার্লসের প্রধান নির্বাহী অ্যান্ড্রু এফ পুজডারের নাম ঘোষণা করেছেন। ‘ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) ট্রেড ডিল’ বাতিলের ঘোষণা দেয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা ও মেক্সিকোসহ ১২টি দেশ ২০১৫ সালে টিপিপি ট্রেড ডিল করেছিল। যদিও ওই চুক্তি এখনো সব দেশের অনুসমর্থন পায়নি। এই চুক্তির ফলে বিশ্ববাণিজ্যের ৪০ শতাংশের নিয়ন্ত্রক এই দেশগুলো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিনাশুল্ক সুবিধা পাবে। এর ফলে ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিনা শুল্কে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারবে, যেখানে বাংলাদেশকে একই পণ্যের জন্য প্রায় ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি বাতিলের মধ্যে থাকা বাংলাদেশ এই টিপিপি চুক্তির ফলে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের বাজার হারানোর শঙ্কায় গত বছর ওয়াশিংটনে টিকফা বৈঠকে চুক্তিটির ব্যাপারে নিজেদের উদ্বেগ জানায়। আমার মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ খুব শিগগিরই জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে পারে। ট্রাম্প তার নির্বাচনী ওয়াদায় এমনটি বলেছিলেনও। যদি তাই হয়, তবে এই খাতটিকে জোরদার করতে বাংলাদেশকে জোরালো ভূমিকা নিতে হবে। ঢেলে সাজাতে হবে গার্মেন্টস শিল্পকে।

আমার মনে আছে, ২০১১ সালে বিশ্বের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস একটি রিপোর্ট করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে অশান্তির মূল কারণ শ্রমিকদের বেতন নিয়মিত না দেয়া। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে সে সময় ১৮ জন শ্রমিক গ্রেফতার, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়াসহ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি নিউইয়র্ক টাইমসে বিজনেস সেকশনে প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গার্মেন্টস শ্রমিকদেরও ন্যূনতম মাসিক মজুরি ৩ হাজার টাকা (৪৩ ডলার) করা হয়েছে। কিন্তু কিছু শ্রমিক সংগঠন ঘোষিত এই মজুরি মেনে নিলেও গার্মেন্টস শ্রমিকদের কিছু সংগঠন ৫ হাজার টাকা (৭২ মার্কিন ডলার) ন্যূনতম মাসিক মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত। সরকার শ্রমিকদের এ আন্দোলনকে অনিয়মতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে বল প্রয়োগ এবং শ্রমিকদের গ্রেফতার করছে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের গ্রেফতারের হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং ইন্টারন্যাশনাল লেবার রাইটস ফোরাম উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদনে শ্রমিক সংগঠনগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ৩ হাজার টাকা দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এ প্রসঙ্গে মালিকপক্ষ বলেছেন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে এর চেয়ে বেশি মজুরি সম্ভব নয়। মালিকপক্ষ বলেছেন, আর্থিক কারণে ভিয়েতনামের সঙ্গেও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে।

প্রতিবেদনে তুলনামূলক বিশ্লেষণে বলা হয়, ওয়াল মার্ট এবং এইচ অ্যান্ড এম-এর মতো পাশ্চাত্যের বড় বড় স্টোরের কাপড় প্রস্তুতকারী এসব গার্মেন্টস শ্রমিক প্রতিদ্ব›দ্বী দেশের তুলনায় অনেক কম মজুরি পাচ্ছে। টাইমসে প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা হয়েছিল চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হচ্ছে মাসিক ১১৭ ডলার। সেই তুলনায় বাংলাদেশি শ্রমিকরা পাচ্ছে মাত্র ৪৩ ডলার। প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার এবং শ্রমিক সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন এবং গ্রেফতারের বিষয়টি হাইলাইট করা হলেও আন্দোলনের নামে ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের উল্লেখ সে সময় করা হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইন্টারন্যাশনাল লেবার এবং হিউম্যান রাইটস অ্যাডভোকেসি গ্রুপ আন্দোলন দমনে সরকারের প্রতি নির্যাতন অভিযোগ করেছেন এবং তারা গ্রেফতারকৃতদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এর পরে আসা যাক আন্দোলনের বিষয়ে। শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ড দেশে বিদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কবলে পড়েছে দেশের গার্মেন্টস শিল্প। সহিংসতা ও সংঘাত সৃষ্টি করে গোটা গার্মেন্টস শিল্পকে হুমকির মধ্যে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিকে সামনে রেখে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির নামে গার্মেন্টস সে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য গার্মেন্টস শ্রমিকদের উসকে দেয়া হচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্পে অশান্ত, উত্তপ্ত ও অস্থিরতা সৃষ্টির নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে কয়েকটি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী নিজে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও গার্মেন্টস শিল্পের সংঘর্ষ, সংঘাত, অবরোধ, ভাঙচুর ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড অব্যাহত আছে বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা জানায়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি তো দূরের কথা, সময় মতো পরিশোধও করা হয় না। বেশিরভাগ গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকদের ছুটি, কর্মঘণ্টা, পিসরেট, শ্রমিক ছাঁটাই, মানবিক আচরণ পালিত হয় না। শ্রমিকদের সঙ্গে অসদাচরণ, এমন কি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব কারণে গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকদের মধ্যে এমনিতেই অসন্তোষ, ক্ষোভ বিরাজমান। এসব ক্ষোভ ও অসন্তোষকে পুঁজি করে এখন গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে শ্রমিকদের কৌশলে উসকে দেয়া হচ্ছে এই অভিযোগের পাশাপাশি আরো অভিযোগ ছিল। বলা হচ্ছিল, গার্মেন্টস শ্রমিকদের উসকে দেয়ার নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে কয়েকটি গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন।

নিকট অতীতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গার্মেন্টস শিল্পে সহিংসতা ও সংঘাত ছড়িয়ে দেয়ার নেপথ্যে কাজ করে যাচ্ছে গার্মেন্টস শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম নিহত হওয়ার আগে যে শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সেই শ্রমিক সংগঠনটি। আরো অভিযোগ আছে, গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের বেশ কিছু নেতার সঙ্গে বিদেশি প্রভাবশালী মহলের যোগাযোগ আছে। এটাই যদি বাস্তবতা হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে-কোথায় চলেছে বাংলাদেশ? আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল তা যদি পরিকল্পিত হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে, তীব্র শঙ্কার দিকে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। এসব ঘটনার বিচার হয়েছে কি? কেন হয়নি সুষ্ঠু বিচার?

এটা খুবই স্বীকৃত বিষয়, আমেরিকার মেসি’স, জে সি পেনি, সিয়ারস, ওয়ালমার্টসহ অনেক বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এখন বাংলাদেশের পোশাকে সয়লাব। যা গোটা জাতির জন্য গর্বের বিষয়। জাতিগতভাবে আমরা কি এ গৌরব ধরে রাখতে পারব না? এই যে এত আহ্বান, তার কি কোনো সুরাহা হয়েছে? না হয়নি। কেন হয়নি? নিশ্চিন্তপুর ট্র্যাজেডি নিয়ে জাতীয় শোক পালিত হয়েছে। কিন্তু এই যে অশনি সংকেত, তার যদি স্থায়ী সমাধান হয়েছে কি? না হলে- এতে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে যেতে পারে, তা কেন আমরা ভুলে যাচ্ছি।

আসল কথা হচ্ছে, যে কোনো অপশক্তিই এসব কর্মকাণ্ডের পেছনে জড়িত থাক না কেন, ওদের চিহ্নিত করা হোক; বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক। গার্মেন্টস শিল্প রক্ষায় ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। তারা বলেছিলেন, তাদের এই গোয়েন্দারা সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পূরক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। উদ্যোগটি খুবই ভালো ছিল, তাতে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিরতা তৈরির একটি প্রবণতা প্রায়ই লক্ষ করা যায়। এটা কারা করছে, কেন করছে- তা ব্যবসায়ী নেতারা হয়তো জানেন। হয়ােতা জানে রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। তা জানারই কথা। কারণ রাষ্ট্রে এমন কোনো অশুভ তৎপরতা চলতে পারে না, যা রাষ্ট্রের ব্যবসায়-বাণিজ্য ও রপ্তানিকে ব্যাহত করে। অধুনা বিশ্বে গার্মেন্টস শিল্প একটি লাভজনক ব্যবসা। বিশেষ করে শ্রমের মূল্য যেসব দেশে তুলনামূলক কম সেসব দেশে পাশ্চাত্যের দেশগুলো তাদের প্রস্তুতকারক এজেন্ট নিয়োগ দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুরো বাজার দখল করে নিয়েছে চীন। ‘মেড ইন চায়না’ তা এখন একটি কমন দ্রষ্টব্য বিষয়। তা ছাড়াও ভারত, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও মেক্সিকো প্রভৃতি দেশেও ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরি গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক বিক্রেতারা। এর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে- মূল্যের সাশ্রয়। বিশেষ করে কম শ্রমমূল্যে ভালো কোয়ালিটির তৈরি পোশাক বাজারজাত করা।

যুক্তরাষ্ট্রে সিয়ার্স, জেসি পেনি কিংবা মেসিজের মতো বৃহৎ স্টোরগুলোতে বাংলাদেশি তৈরি পোশাক যে পাওয়া যায় না, তা নয়। পাওয়া যায়। তবে তা তুলনামূলক হারে কম। চীনই এখন দখল রেখেছে প্রথম স্থান। এই প্রথম স্থানটির রেকর্ড ভাঙার একটি প্রচেষ্টা চলছে বেশ জোরালোভাবে। সে চেষ্টা করছেন খোদ তৈরি পোশাক বিক্রেতারাই। এই দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবলে বাংলাদেশ একটি ভালো ম্যানুফ্যাকচারিং জোন হতে পারে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তা গড়ে তুলতে স্বাগতিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সঠিক ভূমিকা রাখতে পারছে তো? এই প্রশ্নটি আসছে বিভিন্ন কারণে। এ কথাটি আমরা সবাই জানি বাংলাদেশে শ্রমের মূল্য বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের তুলনায় অত্যন্ত কম। যারা গার্মেন্টসে কাজ করে তারা গেল দেড় দশক আগে অন্য পেশায় ছিল। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোর বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই এই পেশায় যোগ দেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই শিল্পের বিকাশের তুলনায় গার্মেন্টস কর্মীদের ভাগ্য ফিরেছে কি? না, ফিরেনি। বরং তুলনামূলক চাকরির বাজারে বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা। তাদের জীবন ধারণের চাহিদার তুলনায় প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নিতান্তই অপ্রতুল। এটা খুবই দুঃখের কথা বাংলাদেশে শ্রমক্ষেত্রে ‘ওভারটাইম’ পদ্ধতি এখনো শক্তভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেনি। অতিরিক্ত ঘণ্টা কাজ করিয়েও ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করা হয় না। এই ব্যবস্থার অবসান দরকার।

বাংলাদেশে শ্রমক্ষেত্রে শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার প্রবণতা দীর্ঘদিনের। শ্রমিকদের ইউনিয়ন বিদেশেও আছে। কিন্তু সেসব ইউনিয়ন এতই শক্তিশালী এবং সুসংহত যে, তারা সব সময় শ্রমিকের অধিকারকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি। অথচ বাংলাদেশের শ্রমিক ইউনিয়নগুলো সব সময়ই আপসকামী। তারা সরকার কিংবা বিরোধীদলের সঙ্গে আঁতাত করে সব সময়ই লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে ব্যস্ত থকে। সরকারি শ্রমিক ইউনিয়ন বনাম বিরোধীদলীয় শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিযোগিতায় পিষ্ট হয় সব সময় সাধারণ শ্রমিক। আর নেতারা ফুলেফেঁপে কলাগাছ হয় রাতারাতি।

একটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সব সময়ই অর্থনীতির রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত হয়। রাজনৈতিকভাবে শান্তি না থাকলে সমাজও এগোতে পারে না। বিশেষ করে গেল দুই দশকের এই রাজনৈতিক অস্থিরতাই বাংলাদেশে উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হয়েছে। সেই সুযোগে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দুষ্ট দুর্নীতিবাজ চক্র। তারা সরকার এবং বিরোধী দল উভয়ের ছত্রছায়ায় কায়েম করেছে নিজ নিজ রাজত্ব। এই রাজত্বের দীর্ঘসূত্রতা এবং সঞ্চিত অপশক্তিই আজ দেশে সব উন্নয়নকে চ্যালেঞ্জ করছে। যা একটি দেশের জন্য চরম বিপজ্জনক সংকেত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজনে শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়ানো খুবই দরকারি কাজ। গার্মেন্টস শিল্প এবং শ্রমিকের মূল্যায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী এক্সপোর্ট জোন গড়ে তোলা খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কিছু বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।

বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে আরো লাভজনক করতে হলে তুলনামূলক মূল্য নির্ণয়ের মাধ্যমে বিশ্বে নতুন বাজার খুঁজতে হবে। ক্রেতাদের বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের গুণগত মানের বিশেষত্ব দেখাতে হবে। বাইরের শক্তির সব ষড়যন্ত্র রুখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে এই শিল্পের ক্ষতি হলে গোটা দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে অর্থনৈতিকভাবে। শিল্পের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ভ্যালু বাড়াতে হবে। এই তদারকির কোনোভাবেই যেন গাফিলতি না হয়। শ্রমিককে যথার্থ পারিশ্রমিক দিতে হবে। শিশুশ্রম বিষয়টিকে কোনোভাবেই পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত নয়। ন্যায্য ওভারটাইম মানি যাতে সবাই পায় সেদিকে ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। গার্মেন্টস শিল্পে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির সব প্রবণতাকে রুখতে হবে। মালিকদের মনে রাখতে হবে, ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিলে সুনাম পুনরুদ্ধার বেশ কঠিন কাজ। তাই রাজনৈতিক মারমুখী নীতি কোনোভাবেই যেন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।

গোয়েন্দা সংস্থা পুষে ভেতরের আগুন নেভানো যাবে না যদি শ্রমিক তার ন্যায্য পাওনা না পায়। এ ছাড়া আমরা দেখছি অত্যন্ত অপরিসর, অস্বাস্থ্যকর ছোট চিলেকোঠায়ও গড়ে উঠছে অনেক গার্মেন্টস কারখানা। এর অবসান হওয়া দরকার। কারণ এমন ছোট পরিসর স্থানে আগুন লেগে বেশ কিছু গার্মেন্টসে কর্মী মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তা ছাপাও হয়েছে দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকায়, যা বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বিদেশে। এই অবস্থার দ্রুত অবসান প্রয়োজন।

প্রতিটি গার্মেন্টস স্থাপনায় কর্মীদের কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। ফায়ার এলার্ম, ফায়ার এক্সিট, নিয়মিত চেক করা হোক। সরু কিংবা গলির মাঝে যারা ব্যবসা ফেঁদে বসেছে, তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হোক অথবা অন্য বড় স্থানে স্থানান্তরের তাগিদ দেয়া হোক।

কেউ ব্যাংকের লোন, বায়ারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ আত্মসাতের মতলবে ব্যবসা ফাঁদছে কিনা তা নিয়মিত মনিটর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং রপ্তানি ব্যুরোর সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে দুর্নীতিবাজদের শায়েস্তার ব্যবস্থা করতে হবে। ঋণখেলাপিদের ব্যবসা সরকারি হেফাজতে নিয়ে নিলাম অথবা জব্দ করতে হবে- এরা যতই শক্তিশালী হোক।

দেশি-বিদেশি যে কোনো চক্রই এই সেক্টরকে ধ্বংস করার চেষ্টা করুক না কেন, তা দমন করতে হবে কঠোর হাতে। শুধু শিল্প পুলিশই নয়, প্রয়োজনে অভ্যন্তরীণ সিকিউরিটি নিয়োগ করতে হবে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, শ্রমিকরা যদি তাদের ন্যায্য পাওনা পায় তবে অনেকাংশেই কমে যাবে সব প্রকার অনিশ্চয়তা। কেউ বিলিয়ন ডলার কামাবে, আর কেউ তার ন্যায্য কানাকড়িও পাবে না- তা হতে পারে না। যে শোক বহন করেছে জাতি, তার অবসান দরকার। তাজরীন ফ্যাশনের এই মর্মান্তিক ঘটনা কিন্তু বাংলাদেশ ভুলে যায়নি। জাতির অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে ঐক্যের বিকল্প নেই। নাশকতা যারা করতে চাইবে এরা জাতির শত্রু। আর যদি কোনো রাজনৈতিক দল এদের পৃষ্ঠপোষক হয় তবে এরা জাতীয় শত্রু। অন্যদিকে যারা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে দুর্নীতিবাজদের সহচর হবে, নজর রাখতে হবে তাদের প্রতিও।
-----------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:১৪

ঢাকাবাসী বলেছেন: এদেশের প্রায় সব গার্মেন্টস মালিকরা পৃথিবীর নিকৃস্টতম লোভী করাপটেড, মিথ্যুক নীতিহীন কৃপন নীচু মনের মানুষ।

২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৫৬

আখেনাটেন বলেছেন: সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, শ্রমিকরা যদি তাদের ন্যায্য পাওনা পায় তবে অনেকাংশেই কমে যাবে সব প্রকার অনিশ্চয়তা। কেউ বিলিয়ন ডলার কামাবে, আর কেউ তার ন্যায্য কানাকড়িও পাবে না- তা হতে পারে না।[/sb

নতুন বছরে সকলেই সুখে থাকুক এই কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.