![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]
পরাশক্তির কক্ষপথে বিশ্বের আগামী
ফকির ইলিয়াস
------------------------------------------
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের সিংহভাগ চীনের দখলে। ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, তিনি এ অবস্থা কাটিয়ে উঠবেন। তিনি বলেছিলেন, চীনকে একচেটিয়া ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। কীভাবে হবে না? তা ঠেকানো হবে কীভাবে? তা দেখার সময় ঘনিয়ে আসছে। এটা অনেকেরই জানা চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সম্পর্ক মধুর নয়। কারণ মার্কিনি একক পরাশক্তি কোনো সময়ই অন্য কারো তাঁবেদারি মেনে নেয়নি। নিতে চাইবেও না।
খবর বেরিয়েছে- ২০১৭ সালে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে ট্রাম্প প্রশাসনের। যুক্তরাষ্ট্রের হিউসটনে সফরে আসছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইয়ং ওয়েনের। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সাক্ষাত হবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। তবে এমন সম্ভাবনার পক্ষেই কথা বলেছেন ট্রাম্প। যদি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার কথা হয়, সাক্ষাত হয় তাহলে তাতে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে টান পড়তে পারে।
এ ছাড়াও নির্বাচনে রাশিয়ার হ্যাকিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্প। বিশ্ব মিডিয়াগুলো বলছে- তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাব্যতাকে উন্মুক্ত রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইয়ং ওয়েনের যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে ৭ জানুয়ারি। ওইদিন তিনি হিউসটনে থাকবেন। তারপর আবার ১৩ জানুয়ারি থাকবেন সানফ্রান্সিসকোতে। এ সময়ে তার সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে ট্রাম্পের।
তিনি তার মার-এ-লাগো এস্টেটে নতুন বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন কিনা। জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমরা বিষয়টি দেখবো। পরে সাংবাদিকদের পীড়াপীড়িতে তিনি বলেন, প্রটোকল অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যতদিন ক্ষমতায় থাকবেন ততদিন বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তিনি সাক্ষাত করবেন না। কিন্তু ট্রাম্প কি তা মানবেন? এটাই এখন আলোচিত হচ্ছে গোটা বিশ্বজুড়ে। কাছে থেকে নজর রাখছে চীনও।
গেলো ৮ নভেম্বর নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার অল্প পরেই ট্রাম্পকে ফোন করেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট। তিনি তাকে অভিনন্দন জানান। ট্রাম্প ওই ফোন ধরার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে চীন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের গড়ে উঠেছে ‘ওয়ান-চায়না’ নীতি। এ সম্পর্ক কয়েক দশক ধরে চলছে। কিন্তু তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার কারণে বেইজিং ক্ষুব্ধ হয়। এখন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতি নিয়ে ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্কে আরো বড় ধরনের ফাটল ধরতে পারে।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হ্যাকিংয়ের জন্য রাশিয়াকে দায়ী করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন হ্যাকিংয়ের বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ আছে বলে দাবি করলেও ট্রাম্প বলেন, আমরা মনে করি এটা ঠিক না। এটা হতে পারে অন্য কেউ। যে কোনো কম্পিউটারই হ্যাক হতে পারে। কোনো কম্পিউটারই নিরাপদ নয়। তাই তারা যা বলছে তাতে আমি পরোয়া করি না।
একটা বিষয় খুব স্পষ্ট- ট্রাম্প প্রশাসন অস্ত্রের বদলে বাণিজ্য দিয়ে বিশ্বকে শাসন করার পরিকল্পনা করছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই বলেছেন, হোয়াইট হাউজে প্রবেশের প্রথম দিন থেকেই তিনি আন্তঃপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অংশীদারিত্ব (টিপিপি) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনতে সব চেষ্টা করবেন। তার এ ঘোষণা চীন গ্রহণ করেছে আনন্দের সাথেই। চীনা গণমাধ্যমগুলোও ট্রাম্পের বক্তব্য সাদরে গ্রহণ করেছে।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ১২টি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত টিপিপি চুক্তিকে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিশ্ব বাণিজ্যের এক-তৃতীয়াংশের বেশির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব ছিল। বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার অনুসারীরা বরাবরই দাবি করে আসছেন, টিপিপি হবে মার্কিন নেতৃত্বের বার্তা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম। বিশেষ করে এমন একটি সময়ে, যখন ক্রমেই এশীয় পরাশক্তি হয়ে ওঠা চীন এ অঞ্চলের নেতৃত্বস্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে দিতে চাইছে। এ অবস্থায় ট্রাম্প প্রশাসন যদি টিপিপি থেকে পিছুটান দেয়, তবে বেইজিং ও ওয়াশিংটন উভয়েরই মিত্র দেশগুলোর চোখে এ অঞ্চলে একটি ভূরাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হবে।
গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স ফার্ম ইউরেশিয়া গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ইয়ান ব্রেমার বলেছেন, ‘এর মানে হলো, এখন থেকে এশিয়ায় আর কেউ যুক্তরাষ্ট্রকে যোগ্য নেতা হিসেবে দেখবে না। সুতরাং বাধ্য হয়েই তাদের চীনা নেতৃত্বের আশ্রয়ে যেতে হবে। বিষয়টি বেইজিংয়ের জন্য আনন্দের উপলক্ষ হয়ে এসেছে।’
তিনি বলেন, চীন এখন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই আঞ্চলিক নেতৃত্বের নতুন স্থাপত্য সৃষ্টিতে সক্রিয় হবে। কারণ বেইজিং বুঝতে পারছে, ওয়াশিংটনকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। ব্রেমার আরো বলেন, ‘ট্রাম্পের জয়ের পর এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে চীনা কর্মকর্তারা সবকিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। এ ব্যাপারে তারা বেশ আনন্দিত।’
পরাশক্তির বাহু দেখাবার একটা অলিখিত মহড়া চলছে- তা এখন ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দেশটি যত দ্রুত সম্ভব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে চায়। এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শেন দানিয়াং বলেছেন, আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) নিয়ে আলোচনার জন্য তার দেশ কাজ করে যাবে। এপেক সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, নিজেদের অর্থনীতিকে আরো বেশি উদার করা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরো বেশি সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে চীন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
শেন বলেন, ‘আরো বেশি মুক্ত ও সুবিধাজনক বৈশ্বিক বাণিজ্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে চীন বহুপক্ষীয় বা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিগুলোয় সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে কাজ করে যাবে; তা আরসিইপি বা টিপিপির ভবিষ্যৎ যা-ই হোক না কেন।’
বিভিন্ন আঞ্চলিক জোট গঠনের মাধ্যমে অনেক দিন ধরেই চীন, যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই নেতৃত্বের শিখরে আরোহণের চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশ দুটি প্রতিনিয়তই একে অন্যকে টেক্কা দিতে সচেষ্ট। এ কারণেই হয়তো ১২ জাতির টিপিপি থেকে বাদ পড়েছে বেইজিং। একইভাবে ১৬ জাতির প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আরসিইপিতে যুক্তরাষ্ট্রের নাম নেই। তাহলে দেখা যাচ্ছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সমান্তরালভাবেই এগোচ্ছে বাণিজ্য প্রতিযোগিতায়। একই সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র মহড়াও চলছে- যা খুব একটা দৃশ্যমান নয় এ সময়ে।
২০১৭ সাল কিংবা এর পরবর্তী সময়ে বিশ্ব যে বড় সংকটের মুখোমুখি হবে তা হলো- যদি কোথাও যুদ্ধ লেগে যায়!
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বের সিংহভাগ মানুষই চান না- আরেকটা হিরোশিমা-নাগাসাকি হোক। সমীক্ষাটি বলছে- অন্যান্য সম্ভাবনা বাদ দিলেও- যদি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধ বাধে তাহলে বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। যার ফলে মোটামুটি ২০০ কোটি মানুষের মৃত্যু হতে পারে। প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে মানবসভ্যতা। একটি গবেষণামূলক প্রতিবেদনে এ আশঙ্কার কথা প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণামূলক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিজিশিয়ানস ফর দ্য প্রিভেনশন অব নিউকিয়ার ওয়ার’ ও ‘ফিজিশিয়ানস ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি’ যৌথভাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে খুব ছোট পর্যায়েও পারমাণবিক অস্ত্রের লড়াই হলে বিশ্বের আবহাওয়া মণ্ডলের ব্যাপক ক্ষতি ও শস্যক্ষত্র ধ্বংস হবে। পরিণামে খাদ্যপণ্যের বিশ্ববাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে। খাদ্য-শৃঙ্খলায় দেখা দেবে বিশৃঙ্খলা। এর আগে সংগঠন দুটি ২০১২ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত এক প্রাথমিক প্রতিবেদনে ধারণা দিয়েছিল, এ রকম একটি পারমাণবিক যুদ্ধে ১০০ কোটির বেশি মানুষ মারা যেতে পারে। গবেষণার দ্বিতীয় সংস্করণে সংগঠন দুটি বলেছে, দুই দেশের সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধে চীনের ওপর প্রভাবের বিষয়টি তারা অনেকটাই এড়িয়ে গেছে। তবে বিশ্বের জনবহুলতম এ দেশ মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়তে পারে বলে এতে আশঙ্কা করা হয়। পরমাণু যুদ্ধের ফলে আবহাওয়ামণ্ডলে যে কার্বন অ্যারোসল কণা ছড়াবে, তাতে চীনে প্রথম চার বছর গড়ে ২০ শতাংশ ও পরের ছয় বছর আরো ১০ শতাংশ ধানের উৎপাদন কমে যাবে। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে গমের উৎপাদনও। শুধু প্রতিবেশী দেশ নয়, এ কণার প্রভাবে সুদূর যুক্তরাষ্ট্রেও এক দশক শস্যকণা ও সয়াবিনের উৎপাদন প্রায় ১০ শতাংশ কমে যাবে। প্রতিবেদনের লেখক আইরা হেলফান্দ বলেছেন, ‘উন্নয়নশীল বিশ্বে ১০০ কোটি মানুষ মারা যাওয়া নিশ্চিতভাবেই মানব ইতিহাসের জন্য এক বিপর্যয়। এর সঙ্গে চীনের আরও ১৩০ কোটি মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। এর যে ফল আমরা পাব তা হলো, স্পষ্টতই একটি সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’ হেলফান্দ আরো বলেছেন, ‘আধুনিক যুগের পারমাণবিক অস্ত্র ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা মার্কিন পরমাণু বোমার চেয়ে অনেক শক্তিশালী। ওই বোমায় ২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। না- আমার মনে হয় না বিশ্বের কোনো পরাশক্তিই এমন কিছু করতে চাইবে। অদূর অতীতেও আমরা দেখেছি- কাছাকাছি গিয়েও চীন-আমেরিকা কেউ কাউকে আক্রমণ করেনি। বিশ্ব তথ্য-প্রযুক্তিতে এগোচ্ছে। প্রজন্মকে এ সুবিধা ও শান্তি ভোগ করার জন্য দ্বার উন্মুক্ত করে দিতে হবে। এ জন্য সকল আলোচনার জানালা খোলা রাখতে হবে। পৃথিবী যদি মানুষের জন্যই হয়- তাহলে মানুষকে সম্মান দেওয়ার মাঝেই রয়েছে সকল মানবতাবাদ। এ কথাটি সবাইকে মনে রাখতে হবে।
==================================================
দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ৬ জানুয়ারি ২০১৭ শুক্রবার
©somewhere in net ltd.